গল্প সুখপাখি পর্ব চার

0
2947

গল্প সুখপাখি পর্ব চার
#লেখক_আলভী_আহম্মেদ

.
সারারাত ঘুমাতে পারে নি আজমান। আজ মনে হচ্ছে
বেচে থাকাটা প্রচন্ড যন্ত্রনার। তামান্নার সাথে
আজমান খুব অন্যায় করেছে,, আজ তা রোদেলা চোখে
আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে।
আজ একবারও রোদেলা অনলাইনে আসে নাই। আজমান
বার বার চেক করেছে। কিন্তু রোদেলাকে পায় নি।
ভোর পাচ টা…
আজমান বারান্দায় বসে আছে। বাইরে এখনও অন্ধকার।
এমন সময় রোদেলার মেসেজ..
: কী হলো আজমান সাহেব? কী সিদ্ধান্ত নিলেন?
আজমান কি রিপ্লাই দিবে তা ভাবছে। কারণ আজমান
এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি।
এমন সময় আর একটা মেসেজ..
: কি হলো আজমান সাহেব? সিন করে রেখে দিলেন যে?
: তোমার বুবু কোথায় এখন?
: নামাজ পড়ছে
: তোমার বুবু কি জানে তুমি আমার সাথে দেখা করেছো
কিংবা আমার সাথে তোমার যোগাযোগ আছে?
: না।
: জানেন তো, বুবু বিশ্বাস করে, একদিন সবটা ঠিক হবে।
আপনাদের সম্পর্ক টা ঠিক হবে। আপনি আবার আগের
মতো করে ভালোবাসবেন আমার বুবুকে।
: আমি দেখা করতে চাই, তোমার বুবুর সাথে।
: আজ বিকালে আমি বুবু নিয়ে পার্কে থাকবো। আপনি
আসবেন।
: আমি চাই না , আমার আসার কথা তোমার বুবু জানোক।
: জী জানবে না।
বিকাল ৪ টা…
রোদেলা ওর বুবুকে নিয়ে আসছে পার্কে। রোদেলা
বলেছে বাসায় খুব বোরিং লাগে তাই সে ঘুরবে। ওর কথা
রাখতেই তামান্না ওর সাথে আসছে। তামান্না আজ খুব
ক্লান্ত। বাসায় থাকলে আজ একটু নিজেকে নিয়ে
থাকতো। কিন্তু রোদেলার জেদের কাছে হার মানলো
সে। তামান্না আকাশী কালার একটা থ্রী পিস পড়ে
আসছে। পার্কের মাঝেই একপাশে দাড়িয়ে আছে
তামান্না। রোদেলা আইসক্রিম কিনতে গেছে।
আসলে রোদেলা তামান্না কে স্পেস দিতে চাচ্ছিল।
তাই আইসক্রীম একটা অজুহাত।
..
তামান্নার সামনে দাড়িয়ে আছে আজমান। তামান্না
এতোক্ষণ খেয়াল করে নি। আর এখন তামান্নার একদম
সামনে দাড়িয়ে আজমান।
: তামান্না
আজমানের মুখে ওর ডাক শোনার আগেই তামান্না
আজমানকে জড়িয়ে ধরলো। উন্মাদের মতো কাদছে
তামান্না। কাঁদতে কাঁদতে কি সব বলছে কিন্তু কান্নার
জন্য বুঝা যাচ্ছে না। রোদেলা পাশ থেকে সবটা দেখছে।
আর সেও হাউমাউ করে কাদছে। এমন সময় তামান্না
রোদেলাকে পাশে দেখে বললো
: রোদ, এটা আজমান। এটা আমার আজমান। তোকে তো
বলছিলাম, আজমান একদিন হঠাৎ করেই আমার সামনে
চলে আসবে। দেখছিস তুই?
: হুম দেখেছি।
পার্কের প্রায় সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
তামান্না এখনও কাদছে। আবার হাসছে আর বলছে,
আল্লাহ তুমি আমাকে নিরাশ করো নাই। তুমি আমার
বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছো।
আর আজমান?
খুব শক্ত করে তামান্নার হাত দুটা চেপে ধরে আছে আর
বলছে আমি ভুল করেছি।
তামান্না এবার নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে, অনেকটাই
স্বাভাবিক এখন তামান্না।
এটা পাবলিক প্লেস আজমান। আমি নিজেকে কন্ট্রোল
করতে পারি নাই। আজ যখন এতো বছর পর তুমি আমার
সামনে হাজির হয়েছো আমি কিন্তু একবারও এটা ভাবি
নি তোমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার আমার নাই।
: তামান্না
: আজমান। আমার কথা শেষ করতে দাও। আমি বলতে চাই
সবটা। আমি বলবো আজ।
: হুম( মাথা নিচু করে?)
: কেনো করেছিলে এমনটা আমার সাথে? আমার দোষ কি
ছিলো আজমান? কেন আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলা?
কেন আমি আমার বাবার মুখ দেখি না , আজ প্রায় ৬ বছর
ধরে। আজমান, আমার কি অনুভুতি নাই? আমার কি কষ্ট হয়
না?
আমার কি দোষ ছিলো? আমি কি তোমার বাবাকে
অপমান করেছিলাম নাকি আমার কোনো হাত ছিলো
তাতে? তাহলে কেন এতো বড় শাস্তি দিলে আজমান?
: আজমান এখনও চুপ করে দাড়িয়ে আছে। চোখে বিন্দু
বিন্দু পানি জমা হয়েছে। রোদেলা নিরব দর্শকের মতো
তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। তামান্না আবার বলতে শুরু
করলো।
: প্রতিটা মুহূর্তে আমার কতটা কষ্ট হয়েছিলো তুমি
জানো? তুমি একবারও বুঝতে চেষ্টা করেছো,যে
তামান্না তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকতে পারতো
না, সে তোমাকে ছাড়া ৯ টা বছর কেমন ছিলো?
না তুমি বুঝো নাই। তুমি কখনও বুঝতে চাও নাই এগুলা।
আজমান আমি তো একটু সুখ খুজেছিলাম তোমার কাছে।
এর বিনিময়ে তুমি পাহাড় সমান কষ্ট দিয়ে আমাকে
বিদায় করে দিলে। আজমান আমি তো আকড়ে ধরে
বাচতে চেয়েছিলাম তোমাকে, আর তুমি আমাকে নিজের
জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিলে? কেনো করলে এমন টা
আজমান। কেনো করলে এমন?
এটা বলতে বলতেই তামান্না সেন্স হারালো। আজমানের
চোখের সামনেই নিস্তেজ হয়ে গেলো তামান্না।
তামান্না সেন্সলেস অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।
রোদেলা ওর পাশে বসে চিৎকার করে কাদছে আর বলছে
আমার বুবুকে তোমরা বাচাও। আমার বুবুকে বাচাও
তোমরা।
তামান্নাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। আজমান
রোদেলা আরও পার্কের কেউ কেউ আসছে ওর সাথে।
রোদেলা এখনও কাদছে আর বলছে, আমি আমার বুবুকে
মেরে ফেলেছি। আমি যদি বুবুকে এখানে নিয়ে না
আসতাম তাহলে এমন কিছু হতো না।
তামান্নাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ডাঃ জানতে
চাচ্ছেন, কি হয়েছে? উনি সেন্স লেস কেমনে হয়েছেন।
আজমান বললো, হঠাৎ একটু বেশী কান্নাকাটি
করেছিলো তারপরই হঠাৎ করে এমনটা হলো। ওকে ওকে
বুঝেছি। আপনারা ওয়েট করেন। আমি বড় ডাঃ কে কল
করেছি। উনি আসছেন।
একজন ডাঃ এসে উপস্থিত হলেন প্রায় ১০ মিনিট পর।
এখনও তামান্নার সেন্স আসে নাই।
রোদেলা এখনও কেদেই যাচ্ছে। রোগীর কাছে উচ্চ স্বরে
কাদা নিষেধ তাই এখন আর আগের মতো চিৎকার করে
কাদছে না রোদেলা।
আজমান, ইমারজেন্সির দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে।
এমন সময় নতুন ডাঃ টা বললনে,
: রোগীর লোক কে?
: জী আমি( আজমান)
: আগের রিপোর্ট গুলা নিয়ে আসেন নি? ওগুলা দেন?
: আগের রিপোর্ট মানে?( রোদেলার দিকে তাকিয়ে?
: হ্যা আগের রিপোর্ট। উনার তো ব্রেইন কেন্সার প্রায় ২
বছর যাবৎ।
: আপনি ভুল করছেন। আমার রোগীর এগুলা হয় নি। ও তো
একটু সেন্স লেস হয়ে গেছে আর কি। আর কিছু না।
: আপনি তামান্না সুলতানার গার্জিয়ান তো?
: জী
: আমি উনার কথাই বলছি। উনার ব্রেইন ক্যান্সার। আর
উনি আমার রেগুলার পেশেন্ট।
এটা শুনে আজমান নিচে বসে পড়লো। ওর কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে
গেছে মনে হচ্ছে। ঠোট দুটো কাপছে ওর।
আর রোদেলা বুবু বুবু বলে আর্তনাদ করছে।
চলবে..

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে