গল্প : বাস্তবতা !!
Writer : Tannoy(পিচ্ছি ফাজিল)
দূরন্ত এই শহরে ছুটে চলা সব গাড়ির মতোই,
ছুটে চলেছে একটা ছেলে, তার দুচোখা ও
অনেক সপ্ন, একদিন বড় হবে ভাল চাকরি করবে গ্রাম থেকে বাবা মাকে নিয়ে আসবে।
প্রতিনিয়ত বাস্তবতার সাথে লড়াই করে যাওয়া
ছেলেটার নাম তন্নয়
সে একটা বিশ্বাস আছে যে লড়তে জানে
তার ফল সে একদিন পাবেই।
টিউশানির টাকায় তাকে চলতে হয়,
তার থাকা খাওয়া পড়াশুনা আর হাত খরচ সব।
এবার মাস শেষ হওয়ার আগেই টাকা
শেষ হয়ে গেছে,
তাই ভাবছে এবার যদি বলে টিউশানীর টাকাটা
আগে পাওয়া যেত।
– রাফি, তোমার মা কোথায়,একটু ডেকে দিবা।
– জ্বী স্যার, ডাকছি।
– সালাম-ওয়ালইকুম আন্টি, একটা কথা
বলার ছিল।
– দেখ তন্নয় বাবা, এই মাসে একটু আমাদের
হাত টান, তাই যদি কয়েকদিন পড় টিউশানীর টাকাটা নিতে একটু ভাল হত।
– ওহহহহ আচ্ছা আন্টি ঠিক আছে,
– তোমার কোন প্রবলেম হবে না তো বাবা।
– না না আন্টি আমি ম্যানেজ করে নিব।
আন্টি চলে গেল।
– স্যার কালকে আমাদের একটু নতুন টিভি
কিনবে।
– কেন তোমাদের তো একটা টিভি আছে।
– ওইটা তো ছোট, এবার অনেক বড় টিভি
কেনার কথা বলে আম্মু টাকা নিয়েছে।
– ও আচ্ছা, আজকে ছুটি কেমন।
বলে চলে আসলাম রুমে।
মানুষ কতো বিচিত্ররে ভাই।
– কেন কী হইছে (রিফাদ)
– আমার স্টুডেন্ট রাফি আছে না।
– হুমমমমম তো কী হয়েছে।
– ওদের টিভিটা নাকি অনেক ছোট, কালকে
ইয়া বড় একটা টিভি কিনবে। আর ওর মা
বলে গেল ওদের নাকি এই মাসে হাত একটু টান।
আমাদের মতো গরিবের কথা কেউ একটু ও ভাবে নারে।
– হুমমমমমরে কী করবি আর বল, বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।
– কেউ খেতে পায় না, আর কারো অনেক
থাকার পড় ও পেঁট ভরে না।
বিকেলে নীলার ফোন।
– হ্যালো সাহরিয়া কই তুমি।
– এই তো শুয়ে আছি।
– এখন শুয়ে থাকার সময় নাকি হুমমম,
তারাতারি পার্কে চলে আসো।
-আচ্ছা যাচ্ছি একটু বসো,
নীলা মেয়েটা খুব ভাল, আমাকে দেখেই
বলে দিতে পারে কী হয়েছে, ওর আর আমার
প্রেমের বয়স বেশি দিন না ২ মাস।
এর মধ্যেই মেয়েটা আমাকে খুব কেয়ার করে।
আমার সব জেনে ও খুব ভালবাসে।
– হেঁটে হেঁটে নীলার কাছে গেলাম,
– এমন মুখটা শুকনো কেন হুমমম।
– ঘুম থেকে উঠে আসলাম তো তাই।
– মিথ্যা বলে কেন, টিউশানীর টাকা পাও নাই
তাই না।
– হুমমমমম।
– চলো সান ফ্রুড রেস্টুরেন্টে।
– সেটা আবার কই, তুমি আজব আজব
রেস্টুরেন্টের নাম বলো না আমি কোনদিন
ওই গুলার নাম ও শুনিনাই।
– হুমমমমম সাহেব চলো এবার।
– খেয়ে দেয়ে, এই যে ভাই বিল কত হল।
– বিল দেখে তো মুখটা মলিন হয়ে গেল ৫০০ টাকা।
পকেটে হাত দিয়ে দেখি ৫০ টাকা আছে।
– ভাইয়া বিল নিয়ে যান। (নীলা)
– তোমাকে ও একদিন একটা দামি রেস্টুরেন্ট এ
নিয়া খাওয়াব দেখ।
– হুমমমমম এখন চলেন।
রিক্সি করে আসছিলাম, নীলাদের বাসা পেয়ে গেছি।
নীলা নেমে গেল।
একটু যেয়ে আবার এসে বলল মামা দাঁড়াও,
– তন্নয় এই টাকাটা রাখ।
– আরে না না আমার হয়ে যাবে লাগবে না।
– আমি যানি কী হবে, ধরো।
– মাথাটা নিচু করে নিয়ে নিলাম, মধ্যবিত্ত
পরিবারের ছেলে গুলার অনেক কষ্ট আমি
বুঝি সেটা।
– এই যাও বাবু।
– চলে আসলাম,
কয়েকদিন পড় আজকে টাকা
পেয়েছি।
নীলাকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম।
– নীলার পাখি অনেক পছন্দ, দুইটা পাখি কিনলাম ।
পাখি নিয়ে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।
তবু মেয়েটা রাগ করে না।
পাখিগুলো গাছের আরালে রাখলাম।
নীলার পাসে বসলাম।
– নীলা একটা গিফট আছে।
– তাই বুঝি।
– হুমমমম চোখটা একটু বন্ধ করো।
– নাও এবার খোল।
– ওয়াও এত্ত কিউট পাখি।
– আজকে টাকা পেয়েছ তাই না।
-হুমমমমম।
– তোমাকে না বলছিলাম, টাকা পেলে আগে
একটা শার্ট কিনবা।
– আরে শার্টতো কিনতেই পারব, কিন্তুু।
– কিন্তুু কী শুনি।
– আরে আমার ও তো মন চায় তোমাকে
কিছু দেই, কি করব বলো আমার
তো তেমন সাধ্য নেই, কিন্তুু আজকে
পেয়েছি তাই নিয়ে আসছি।
– চলো আজকে তোমাকে খাওয়াব।
– তাই বুঝি।
-হুমমমমম চলো,
খেয়ে দেয়ে বিল দিলাম, রিক্সা করে আসছি।
নীলাদের বাসার নিচে এসে পড়ছি।
নীলা নেমে গেল।
– নীলা ৩০ টাকা হবে তোমার কাছে।
– কত করে বললাম আমি বিল দিই শুনলা নাতো।
এই নাও টাকা গুলো ধরো।
– আরে এত টাকা লাগবে না আমার।
– যা বলছি ধরো, খুব টাকা ওয়ালা তো হয়ে
গেছিলা, আর হ্যা আগে একটা শার্ট কিনবা কেমন।
– আচ্ছা ওকে।
– এখন যাও।
– হুমমমমম, চলে আসলাম,
রুমে এসে খেয়ে দেয়ে ভাবছি কার কপালে
এমন প্রেমিকা জুটে।
সকালে গরিব ছোট ছোট বাচ্চাদের এমনি
পড়াই, যাতে দেশটা সুন্দর ভাবে গড়তে পারে।
নীলা ও কখন এসেছে বুঝতেই পাড়ি নাই।
– নীলা কখন এলে।
– এই তো কিছুক্ষণ আগে, তোমার পড়ানো
দেখছিলাম। খুব সুন্দর করে পড়াও তো।
আজকে একটু নদীর পাড়ে যাবে,
– এখন হবে না আজকে একটা চাকরীর ইন্টারভিউ আছে, বিকেলে যাই কেমন।
– আচ্ছা ভাল করে দিও কেমন।
– আমি ভাল করেই দিই বুঝলা, এই যুগে
মামা, খালু না থাকলে না চাকরি হয় না।
– হুমমমমম হয়েছে যাও এবার।
– আচ্ছা, রুমে এসে ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম ইন্টারভিউ দিতে, এসেই দেখি অনেক লোক
দাঁড়ায়ে আছে, আমার সিরিয়াল আসল
রুমে ঢুকতেই আমি অবাক নীলা দাঁড়াই বসে আছে ভিতরে।
না না আমি ভুল দেখছি না তো চোখ ডলতে লাগলাম।
– ভুল দেখনি গাধা আমিই, বসো এবার,
যা বলছিলাম চাকরিটা পেতে পারো যদি প্রতিদিন বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাও।
– হুমমমমম যাব তো।
– তা হলে চাকরিটা পেয়েই গেলা।
– হুমমমমম।
– এবার প্লান কী?
– তেমন কিছু না বাবা মাকে নিয়ে আসব, আর
আমার পরীটাকে বিয়ে করব।
– বাহ ভাল তো।
– আচ্ছা নীলা তুমি এত্ত বড় ঘরের মেয়ে আমাকে ভালবাসতে গেলে কেন।
– তন্নয় আমি তোমাকে অনেক দিন থেকেই ফলো করছিলাম, যেদিন প্রথম আমার চাচ্চুর অফিসে তুমি চাকরি পেলে না তখন থেকে।
তোমাকে খুব ভাল লাগত কেন জানিনা তবে
ভালবেসে ফেলেছিলাস, আর আমি সাধারণ ভাবে থাকতেই ভালবাসি বুঝলা।
– হুমমমমম।
– শুধু হুমমমম।
– তুমি খুব ভাল জানো নীলা।
– দূর গাধা, এখন যাও।
– আচ্ছা।
– বিকেলে আসবা কিন্তুু।
– আচ্ছা।
বিকেলে নদীর পারে দাঁড়াই আছি,
একটু পড়ে নীলা আসল।
– তন্নয় এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে,
কী হয়েছে বলো আমাকে।
– নীলা কে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম,
– আরে বোকা কী হয়েছে বলো।
– বাবা মা আর নেই নীলা, কাকু ফোন
করে বলল ওরা নাকি সিএনজি তে আসার সময় বড় একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগে আর
সব শেষ নীলা।
ভাবছিলাম বাবার জন্য ভালো একটা পাঞ্জাবী
নিয়ে যাব মার জন্য একটা ভালো শাড়ী।
অনেক কষ্টে আমাকে বড় করেছে নীলা জানে।
আগে আমি তিন বেলা খেতে পেতাম না। বাবা
না খেয়ে আমাকে পড়িয়েছে,
বলত খোকা একদিন অনেক বড় হবি।
আজকে তারা আর কেউ নেই নীলা।
মা তার জন্য শাড়ী কিনতনা, আমাকে
পড়ার টাকা দিত জানে আর আজকে তারা কেউ নেই।
– আচ্ছা কেঁদনা আমি তো আছি বোকা।
চলো তোমার গ্রামের বাড়ি যাব।
– হুমমমমম।
– নীলার গাড়ি করে রওনা দিলাম।
এসে দেখি বাবা মাকে খাঁটিয়ার উপরে রাখা
হয়েছে।
খুব কান্না পাচ্ছে ভীষণ কান্না পাচ্ছে কিন্তুু কাঁদতে
পারছিনা।
দাফন করা হয়ে গেল।
দোয়া করে আসছিলাম আর বার বার পিছনে তাঁকায় দেখছিলাম।
মার ঘরে নীলা আছে।
নীলাকে বললাম চলে চলে যাব,
সবাই বলল কীরে চলে যাবি।
– হুমমমম, মিলাদ মাহফিল এর সময় আসব আবার।
নীলা আর আমি হেঁটে হেঁটে আসছি।
আসার সময় বাবা মার কবরটা আমার জিয়ারত করলাম দোয়া করলাম।
আসার সময় নীলা শক্ত করে আমার হাতটা
ধরে ছিল।
গাড়ি চলতেছে।
আর পিছনের সব সৃতি মনে পড়ছে।
আজকে তাদের সন্তান অনেক বড় হয়েছে
কিন্তুু তারাই আজ নেই। অনেক দূরে চলে
গেছে। এটাই হয়তো বাস্তবতা।
হঠাৎ নীলার ফোনে ঘুম ভাংল।
একি তার মানে এতক্ষণ সপ্ন দেখছিলাম।
তারাতারি ব্যাগ গুছিয়ে নীলার কাছে হাজির,
নীলা চলো আমার গ্রামের বাড়ি যাব,
– কীইইই, কেন।
– কোন কেন না এক্ষুনি যাব।
– বলেই নীলাকে গাড়িতে তুললাম, একটা
মার্কেটে গিয়ে বাবার জন্য পাঞ্জাবী মার জন্য শাড়ি, আরো বাজার করে গাড়িতে করে চলতে লাগলাম।
– আচ্ছা বাবা কী হয়েছে বলবা তো।
– আরে ৫ হাজার টাকা দাও,
– কিন্তুু কেন,
– পড়ে বেতন পেলে দিয়ে দেব আগে দাও,
– এই নাও ধরো।
– এবার নীলাকে সব খুলে বললাম।
– খুব কষ্টে বড় হয়েছ তাই না।
– হুমমমমম।
– ওই তো চলে আসছি বাড়িতে।
– নীলা নামো এইটাই আমার বাড়ি।
মা ওমা মা, ওবাবা বাবা
– কই দেখ কে আসছে।(মা)
– নীলা মাকে সালাম করল।
– এইট কেরে।
– তোমার হবু বউ মা।
– ওমা কত্ত সুন্দর, সর আগে থেকে আগে
বউমার সাথে কথা বলব।
– যাক বাবা একদিনেই আমারে ভূলে গেলা।
– মা তোমার নাম কী।
– নীলা।
– বাহ্ বেশ সুন্দর নাম তো।
এর মধ্যে বাবা ও আসল বাবাকে
সালাম করলাম।
– নীলাকে পেয়ে আমাকে সবাই ভুলেই গেছে।
মার হাতে ব্যাগ গুলো দিলাম,
বাবাকে টাকা গুলো দিলাম।
সবাই অনেক খুশি।
মা তো গ্রামের সবাইকে ডেকে আনছে।
তন্নয় বউ আসছে।
সবাই নীলাকে দেখে অবাক।
যে একটা পরী আসছে আমাদের এই বাড়িতে।
তারপরে খাওয়া দাওয়া করে।
আমি আর নীলা নদীর পারে বসে আছি।
এই দিকে সন্ধা হয়ে আসছে।
ওর হাত ধরে হাঁটছি।
– তোমাদের গ্রামের সবাই ভাল বুঝলা তন্নয়।
– হুমমমমম আমার পরীটা।
– গ্রামের সব মানুষ এমন ভাল হয়।
– হুমমমমম প্রায় সবাই ভাল,
-দুই একটা রাখাপ থাকে হি হি।
এমন করেই সরাজীবন ভালবাসবাতো,
হুমমমমম রে পাগলি সারাজীবন।
শুরু হল ভালবাসার নতুন এক অধ্যায়।
>>সমাপ্ত< < >>The End<<