গল্প:- ফুলশয্যা(সিজন- ০২)
পর্ব- ০১
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
Listen Nilima…
আমি আপনাকে বিয়ে করেছি, তার মানে এই নয় আমি এখন’ই আপনার উপর ঝাপিয়ে পরব আমার পুরুষত্ব প্রমাণের জন্য। শরীরের প্রয়োজন তো পতিতালয়ে গিয়েও মেটানো যায়, তার জন্য বিয়ের কোনো দরকার নেই। আমি বিয়ে করেছি। তবে সেটা আমার ইচ্ছেতে নয়, আমার বাবার ইচ্ছেতে। এ বিয়েটা যেহেতু আমার সম্পূর্ণ ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে সেহেতু আমার কাছ থেকে কখনো কোনো Husband type attitude আশা করবেন না।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে আবির বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। কি মনে করে যেন আবার ফিরে আসে। নীলিমা তখনও খাটের উপর চুপটি করে বসে আছে। একবার সেদিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে, আর খাটে এসব কেন? এসব তাড়াতাড়ি সরান। আমি এসেই ঘুমাবো। ফুলের গন্ধে আমার ঘুম আসে না, তাই এসব ফুলটুল যাতে এসে না দেখি।
আবির চলে গেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে খাট থেকে নিচে নামে নীলিমা। খাটে চেয়ার রেখে তার উপর দাঁড়িয়ে সবগুলো ফুল টেনে নিচে নামালো। চেয়ারটা আগের জায়গায় রেখে ফ্লোরে সরিয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুলগুলো ঝাড়ু দিয়ে একজায়গায় জড়ো করে সবফুল একত্রে একটা বড় কাগজে মোড়ে বারান্দায় রেখে আসে। মিনিট ত্রিশেক পর রুমে আসে আবির। ততক্ষণে নীলিমা রুমটাকে গুছিয়ে ফেলেছে। আবির রুমে আসলে খাট থেকে কিছুটা দুরে মাথা নিচু করে দাঁড়ায় নীলিমা।
” এভাবে মূর্তির মত এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? নিন। শুয়ে পরুন।”
কথাটা বলেই আবির নববধূ নীলিমার দিকে একটা চাদর আর একটা বালিশ ছুঁড়ে দেয়। নীলিমা পায়ের নিচ থেকে চাদর-বালিশটা হাতে তুলে ফ্লোরের একপাশে বিছানা করে আবিরের দিকে তাকায়। আবির তখন ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
” কি হলো? আবারো দাঁড়িয়ে আছেন যে? লাইটটা অফ করে শুয়ে পরুন না এবার। উফফ্, মাথাটা যন্ত্রণা করছে।”
ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে লাইট’টা অফ করে শুয়ে পরে নীলিমা।
বালিশটা মাথার থেকে বেশ ক্ষাণিকটা দুরে।
নিশ্চুপ নীলিমা হাতে ভর দিয়ে শুয়ে আছে। গরীব ঘরে জন্ম নেয়ার সুবাধে অসংখ্য মানুষের অসংখ্য কথা হজম করতে হয়েছে ওকে। নীলিমা জানতো, জীবন খুব বেশী প্রেমময় হবে না। তাই বলে এতটা অবহেলা? মেনে নিতে পারছিল না। চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে পরতে শুরু করে।
শেষ রাত্রিতে ঘুম ভেঙে যায় নীলিমার। ঘড়িতে তখন সময় তিনটা বেজে ০৯মিনিট। চাদর আর বালিশটা সোফায় রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অজু করে ড্রয়িংরুমের এককোণে জায়নামাজ পেতে নামাজে দাঁড়ায় নীলিমা। তাহাজ্জদ নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছে নীলিমা। না চাইতেও কেন জানি নীলিমার চোখে জল এসে যায়, নীলিমা শব্দ করে করুণ আর্তনাদে কেঁদে উঠে। নীলিমার করুণ আর্তনাদে এ বাড়ির চার দেয়ালও যেন কেঁপে উঠে। মোনাজাত শেষে জায়নামাজটা ভাঁজ করে কোণায় রাখতে গিয়ে চোখ যায় দোতলায় দাঁড়ানো শ্বশুরের দিকে। যিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে পুত্রবধূর দিকে তাকিয়ে আছেন। নীলিমা উপরে গিয়ে শ্বশুরকে সালাম দেয়। অজুর পানি দেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পরে। শ্বশুরটা সে স্থানে দাঁড়িয়েই চোখের জল ছেড়ে দেয়।
যদিও রাত্রে তেমন কিছুই হয়নি তবুও গোসলটা সকাল সকাল সেরে নেয় নীলিমা। আবির তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন। ড্রেসিংটেবিলে সামনের চেয়ারটাই বসে চুপচাপ তোয়ালে দিয়ে ভেঁজা চুল মুছছিল নীলিমা। ঠিক তখনই আবির জেগে উঠে। নীলিমাকে এভাবে আয়নার সামনে বসে থাকতে দেখে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা হয়ে যায় আবিরের। বিছানা থেকে উঠে বসে আবির। নীলিমা তখন চুল আচড়াতে ব্যস্ত। ধীরে কিন্তু রাগান্বিত ভাব নিয়ে আবির একটু একটু করে এগুতে থাকে ড্রেসিংটেবিলের দিকে।
চলবে….