গল্প:-নব_দম্পতি পর্ব:-(১৪)

0
1275

গল্প:-নব_দম্পতি পর্ব:-(১৪)OO
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
তসিবা কোনো দিন মা হতে পারবেনা এই কথাটা শুধু তুই ছাড়া আমরা সবাই জানি। আর এই কথাটা বলছে তোর বাবা। তসিবা নিজেও জানে কিন্তু তোকে বলেনি কারন তুই তসিবাকে ছেড়ে দেস যদি তাই। আর আমরা বলিনি এতদিন কারন তোর বাবা আমাদের বলতে মানা করছে। তুই তো তসিবাকে এমনিতেই অবহেলা করতি আর ঘৃণা করতি কিন্তু এখন তুই তসিবাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিস তাই বলেছি। কি তসিবা তুমি বলো সত্যি টা কি তখনি আমি তসিবার দিকে তাকিয়ে আছি। (আম্মা)

তসিবা:- আসলে কথাটা আমি অনেকবার বলতে চায়ছি কিন্তু বলার মত অবস্থা তৈরি হয়নি। আব্বাজান জানে কথাটা আর ওনি বলছে আপনাকে সব বুঝিয়ে বলছে আর সব যেনে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন আপনি।

আমি:- তুমি যে মা হতে পারবেনা আর তোমার ব্যাপারে আব্বা আমাকে কিছুই বলেনি। তুমি আমাকে একবার বলতে পারতে?

তসিবা:- কি করে বলবো আপনার সাথে তো ঠিক করে কথা বলার সময় পায়নি। আপনি সবসময় আমাকে দূরে দূরে রাখছেন। কিছুটা ভালো ব্যাবহার করলে বেশির ভাগ ঝগড়া আর রাগা রাগি করতেন।

আম্মা:- সৌরভ এই নে আমি তোদের জন্য ডির্ভোসের কাগজ রেডি করে আনছি। এখানে তুই সাইন কর আর তসিবার সাইন কি করে নিতে হবে সেইটা আমার ভালো করে জানা আছে।

আমি:- কি করে আনছেন?

আম্মা:- ডির্ভোসের কাগজ। রিপা তোকে অনেক ভালোবাসে রিপা সব যেনে শুনে তোকে বিয়ে করতে রাজি আছে। কি রিপা তুমি সৌরভকে বিয়ে করবে তো?

রিপা:- হ্যা আন্টি করবো। সৌরভ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি যা হবার হয়ে গেছে। তুমি এই মেয়েটাকে ডির্ভোস দিয়ে দাও আমি তোমাকে বিয়ে করবো। (আমি তসিবার দিকে তাকিয়ে আছি তসিবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে আর কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু তসিবা কিছু বলছেনা।)

আম্মা:- কি হলো সৌরভ সাইন কর এখানে। (আমি কাগজ আর কলমটা হাতে নিয়েছি তসিবা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মা ভাবি রিপার বাবা মা, রিপা অনেক খুশি হয়েছে। তখনি আমি বলি।)

আমি:- তসিবা তুমি আগে সাইন করো কারণ আমি চাই তুমি আমাকে ডির্ভোস দাও। তোমাকে তো আমি অবহেলা করেছি আর খগড়া করেছি তাইনা তাই তুমি আগে সাইন করবে। নাও কাগজ আর কলম।

আম্মা:- ঠিক বলছিস এই মেয়ে নে ধর কাগজ আর কলম। তসিবার হাতে জোর করে কাগজর আর কলম ধরিয়ে দিয়েছে আম্মা আর ভাবি। তসিবা চুপ চাপ কান্না করছে যখনি ওরা সাইন করাতে যাবে ঠিক তখনি আমি কাগজটা টান দিয়ে নিয়ে এসেছি আর ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে দিয়েছি। আর ঘুরে রিপাকে একটা জুড়ে থাপ্পড় দিয়েছি।

রিপার বাবা:- তোমার এত বড় সাহোস আমার মেয়েকে থাপ্পড় দিয়েছিস।

আমি:- আপনাকে থাপ্পড়টা দেওয়া উচিত ছিলো কিন্তু আপনি আমার বাবার সমতুল্য তাই আপনার মেয়েকে থাপ্পড়টা দিয়েছি। আমার মায়ের মাথায় সব কুচিন্তা দেওয়ার জন্য। আর রিপা তুই আমাকে কি ক্ষমা করবি ক্ষমা তো আমি করেছি। এক মিনিট এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে সবার গাল লাল হয়ে যাবে।

রিপার মা:- তুমি কাজটা ঠিক করলেনা কিন্তু তখনি রিপার গালে আরেকটা থাপ্পড় তখনি ভাবি আম্মা সহ রিপার বাবা মা আর রিপা সোজা দৌরে চলে গেছে। শুধু তসিবা এখানে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি:- তসিবা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

তসিবা:- কিছু কথা বলার জন্য কথা গুলি বলা শেষ হলেই চলে যাবো।

আমি:- কি কথা তাড়াতাড়ি বলো দেরি হলে কিন্তু।

তসিবা:- বলছি। আসলে প্রথম দেখাতে আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনাকে সব বলতে চায়ছি কিন্তু হারানোর ভয়ে কিছু বলিনি। যদি সব শুনে আপনি আমাকে বিয়ে না করতেন তাই লুকিয়ে রাখছি। আমি ছোট থেকে অনেক যন্ত্রনা আর লাঞ্চনা পেয়ে বড় হয়েছি এক মাত্র আপনার বাবার কথায় আপনার কাছে এসেছি কিন্তু এখনো সূখের সন্দান পেলাম না। আমি যায় করেছি সব কিছু মাত্র একটু সূখের জন্য কিন্তু মিথ্যা বলে সত্য লুকিয়ে সেই সূখ পাওয়া যায়না এই আগে মনে হয়নি যতি হতো তাহলে এত কিছু করতে হতনা। আমি চলে যাচ্ছি যদি পারেন তাহলে ক্ষমা করে দিবেন। আসলে আমার ভাগ্যে কোনো সূখ লিখা নেই বলে তসিবা বাহিরে চলে যেতে ছিলো তখনি আমি ওর হাত ধরে টান মেরে আমার বুকে নিয়ে এসেছি।

আমি:- যেহেতু একটু সূখের জন্য এত অভিনয় মিথ্যা বলেছো। সেহেতু একটু সূখ না তোমাকে অনেক সূখ দিবো। বলে তসিবার চোখের পানি গুলো মুছে দিয়েছি। ওর কপালে গালে অনেক গুলি কিস করেছি তসিবা আমাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে।

তসিবা:- আপনার ভালোবাসাতে তো সব সূখ পাবেনা।

আমি:- তাহলে আর কয়জনকে ভাড়া করে নিয়ে আসতে হবে নাকী?

তসিবা:- ঐ আমি তো আমার সৎমা, বাবা, শ্বাশুমা, ভাবি, ভাই, আর আপনার বাবার সহ পরিবারের সবার ভালোবাসা পেতে চাই তাহলে আমি সূখী হবো।

আমি:- কথা দিলাম তোমাকে সবাই ভালোবাসবে আর তুমি আট দশটা মেয়ের মত আর বাড়ির বউদের মত সূখী হবে।

তসিবা:- পাক্কা!

আমি:- পাক্কা। আমরা অল্প কিছু দিনের মধ্যে একটা শিশু বাচ্চা নিয়ে আসবো আমাদের সন্তান হিসাবে। যাদের ছেলে মেয়ে হয়না তাড়া কি সংসার করেনা। যদি তোমার যায়গা আমি হতাম তাহলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে?

তসিবা:- আমি আমার সোনা স্বামীটাকে কখনো ছেড়ে যেতাম না। তবে বাচ্চা এখন নয় আগে আমরা একজন গাইনী ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবো। ছোট বেলা এক ডক্টর বলছে এরপর তো আর চেকাপ করায়নি।

আমি:- ছোট বেলা কি হয়ছিলো তোমার?

তসিবা:- ঠিক মনে নেই তবে আমার ছোট থাকতে একটা অপারেশন হয়ছে। এরপর অনেকদিন পর আব্বুকে ডাক্তার বলছে আমি নাকী মা হতে পারবোনা তখন আমি শুনেছি। তাই তো আমার সৎ মায়ের বোনের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেবার কথা ছিলো কিন্তু আমি মা হতে পারবোনা তাই বিয়ে করেনি।

আমি:- তোমার সাথে আমার জোড়া মিলানো তাই করেনি। ঠিক আছে চলো রুমে যায় আমি ফ্রেশ হবো।

তসিবা:- আজ আমার মনে কিছুটা শান্তি লাগছে। আমার সিঁড়ি বাইতে ইচ্ছে করছেনা আমাকে কোলে করে উপরে নিয়ে যাবেন?

আমি:- কি আর করবো বউয়ের আবদার মানা করা ঠিক হবেনা বলে তসিবাকে কোলে তুলে নিলাম। তসিবাকে কোলে নিতে আমার ভালোই লাগে। তসিবাকে কোলে নিয়ে রুমে এসেছি নাও নামো।

তসিবা:- এই ছয় মাসে কত কি মিস করেছেন জানেন?

আমি:- সমস্যা নেই এখন সব পুষিয়ে নিবো বলে তসিবাকে জড়িয়ে ধরেছি। আজ বিয়ের পর এই প্রথম তসিবাকে আপন করে নিলাম। দুজনের দুষ্টমি গুলি খুব মনে রাখার মত হয়ছে।

তসিবা:- এবার ছাড়েন আমার ফ্রেশ হতে হবে।

আমি:- আরো কিছুক্ষণ থাকো তারপর দুজনে এক সাথে ফ্রেশ হবো।

তসিবা:- ছিঃ আমার লজ্জা করে।

আমি:- লজ্জা কোন দিক দিয়ে করে? বলে তসিবাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি। কিছুক্ষণ পর তসিবা দৌরে ফ্রেশ হতে চলে গেছে আমি শুয়ে আছি কিছুক্ষনের মধ্যে তসিবা বেড় হয়েছে।

তসিবা:- যান ফ্রেশ হয়ে নেন।

আমি:- হ্যা যাচ্ছি! আমি গিয়ে শাওয়ার করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর বেরুলাম তসিবা সাজ গুজ করেছে বাহা তসিবাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমি গিয়ে পেছন থেকে তসিবাকে জড়িয়ে ধরেছি। তসিবার গায়ের গন্ধটা আমার নেশা ধরিয়ে দেয়।

তসিবা:- আচ্ছা শ্বাশুমা আমাকে বউ হিসাবে মেনে নিবে তো?

আমি:- নিবে দেখো কিছুদিনের মধ্যে মা তোমাকে অনেক আদর আর ভালোবাসবে। এখন চলো নিচে যাই খিদা লাগছে।

তসিবা:- হ্যা চলেন! তসিবা আমার বাম হাতটা জড়িয়ে ধরে নিচে নামতেছে। ভাবি ভাইয়া আর আম্মা তাকিয়ে আছে।

আম্মা:- বাহা দারুন আমার ছেলেটাকে তাবিজ করেছে কুফুরি কালাম করেছে। যে ছেলেটা এই মেয়েটাকে একটু সহ্য করতে পারতোনা আর সেই ছেলেটা এখন বউটাকে ছাড়া কিছু বুঝেনা।

আমি:- কুফুরি কালাম করতে যাবে কেনো আমি তসিবাকে ভালোবাসি। আচ্ছা আম্মা তুমি তসিবাকে সহ্য করতে পারোনা কেনো?

আম্মা:- মিথ্যাবাদী কোনো মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারিনা। আর তাছাড়া তসিবার বাবা বলছে বিয়ের আগে যে নগদ চার লক্ষ টাকা আর আসবাপত্র সব দিবে তোকে কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই দেয়নি। রিপার বাবা আমাকে অগ্রিম দুই লক্ষটাকা দিয়ে দিয়েছিলো।

আমি:- তোমার লোভ তোমাকে একদিন শেষ করবে। তসিবা আসো আমরা খাবার খেয়ে নেই। আমি তসিবা দুজনে বসেছি খাবার খেতে তখনি আম্মা তসিবার সামনে থেকে প্লেট নিয়ে নিয়েছে।

আম্মা:- এই বন্ধা মেয়ের কোনো যায়গা নেই আমার বাড়িতে। আর আমার বাড়িতে থাকতে হলে বাসন মাঝা থেকে ঘর ঝাড়ু শুরু করে রান্নাবান্না সব করতে হবে। আমি কাজের মেয়েকে যেই বেতন দেয় তা হিসাব করবো যতদিন চার লক্ষ টাকা শুধ করবো।

আমি:- তসিবা এত কাজ করতে পারবেনা আমি আপনাকে চার লক্ষ টাকা দিবো।

আম্মা:- নাহ তসিবার বাবা মা যেইদিন এসে দিয়ে যাবে সেইদিন আমি মানবো।

আমি:- ঠিক আছে আমি খাবোনা। তসিবা চলো আমরা বাহিরে খাবো বলে তসিবার হাত ধরে নিয়ে এসেছি বাহিরে।

তসিবা:- কবে আমার বিশ বছর হবে আর কবে আমি টাকা উঠাবো আর শ্বাশুমাকে দিবো।

আমি:- তোমার কোনো চিন্তা করতে হবেনা আমি সব ঠিক করে নেবো। এখন চলো তোমাকে নিয়ে ঘুরা হবে আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেয়ে নিবো। তসিবা আমার হাতটা জড়িয়ে রাখছে আমি তসিবাকে দেখে হাটতেছি। দুজনে মিলে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম তসিবা বলো কি খাবে?

তসিবা:- আমি রেস্টুরেন্টের খাবার সম্পর্কে তেমন ভালো করে জানিনা আপনি যা খাবেন আমি তাই খাবো।

আমি:- ঠিক আছে! মেনু কার্ড দেখে খাবার অর্ডার করেছি। তসিবা আর আমি দুজনে খাবার শেষ করেছি বিলটা দিয়ে দুজনে বেরুলাম। তসিবা চলো ঢাকা হাসপাতালে যাই আমার ফ্রেন্ডের বউয়ের এমন সমস্যা হয়ছে তখন ঐখানের একজন গাইনী ডাক্তার কামরুনাহার জলি খুব ভালো ডাক্তার। ওনার সাথে তোমার বিষয়টা আলাপ করে আসি।

তসিবা:- আমার খুব ভয় করছে যদি আমি কোনো দিন মা না হয়?

আমি:- তখন একটা বাচ্চা পালক নিয়ে আসবো। চলো আমরা যাই আমার মন বলছে তুমি মা হতে পারবে।

তসিবা:- আপনার কথা যেনো সত্যি হয়। তসিবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছি কিছুক্ষনের মধ্যে ওনার চেম্বারে চলে গেলাম।

ডক্টর:- বলেন কি সমস্যা? (তখন ওনাকে সব কিছু খুলে বলছি সব শুনে ওনি কিছু টেষ্ট দিয়েছে আমি তসিবাকে নিয়ে গেলাম। টেষ্ট গুলি আজকে সব করায় নিয়েছি)

তসিবা:- আমার সব কিছু ঠিক আছে তো?

ডক্টর:- দেখুন আপদত রিপুট বের হলে বলতে পারবো এরপর মেডিসিন দিবো।

আমি:- ঠিক আছে তাহলে আমরা আজ যাই আগামীকাল আসবো। তসিবাকে নিয়ে বেরুলাম দুজনে হেটে আসতেছি তসিবার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখছি আর ওকে হাসাচ্ছি। দুজনে মিলে বাড়ির কাছে এসেছি।

তসিবা:- শ্বাশুমা আমাকে অনেক বকা জকা করবে।

আমি:- তুমি আমার সাথে সাথে রুমে চলে যাবে আর কোনো কথা বলবেনা কেমন।

তসিবা:- ঠিক আছে। কলিং বেল চাপ দিয়েছি কিছুক্ষণ পর এসে আম্মা দরজা খুলেছে। আমি তসিবার হাত ধরে সোজা উপরে চলে যাচ্ছিলাম তখনি আম্মা তসিবার হাত ধরেছে।

আম্মা:- আরে সৌরভ তসিবাকে নিয়ে যাচ্ছিস কেনো? বউমা তুমি এসো তোমার সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি এসো বউমা। আম্মা তসিবাকে অনেক আদর যত্ন করতেছে তসিবার সামনে এসে টেবিল ফ্যান লাগিয়ে দিচ্ছে কির করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।

আমি:- আম্মা এমন করছেন কেনো কি হয়ছে সেইটা বলেন?

আম্মা:- এই তুই চুপ থাক আর আমার বউমাকে কোনো কষ্ট দিবি না সবসময় ওর কথা মত চলবি। মা তসিবা তোমার কি লাগবে শুধু আমাকে বলবে। তসিবা আমি সহ সবাই আম্মার কান্ড দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে।

আমি:- আম্মা কি হয়ছে সেইটা তো বলবেন? তখনি আব্বা বলে! To be continue,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে