গল্প:- নব_দম্পতি পর্ব:-(০৭)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
তসিবার এমন কান্ড দেখে আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। রিপা যখন আমার দিকে এগিয়ে আসতে ছিলো তখনি তসিবা গিয়ে রিপাকে জড়িয়ে ধরেছে।(আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না তসিবা কেনো রিপাকে জড়িয়ে ধরছে তখনি রিপা বলে) আরে আমাকে কেনো জড়িয়ে ধরছেন ছাড়ুন বলছি। রিপা তো তসিবার উপর রেগে গেছে কিন্তু নাছুর বান্দা তসিবা রিপাকে জড়িয়ে ধরে রাখছে।
আম্মা:- তসিবা কি হচ্ছে এমন করছো কেনো? রিপাকে জড়িয়ে ধরেছো কেনো ওকে ছাড়ু বলছি। (তখনি তসিবা রিপাকে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু রিপার দিকে তাকিয়ে আমি নিজেই শক খেয়ে গেলাম। রিপার দামী সাদা ড্রেসটা একদম কালিতে বুকের সাইট কালো হয়ে গেছে। রিপা এখনো খেয়াল করেনি আমি তসিবার দিকে তাকিয়ে দেখি তসিবা মুচকি মুচকি হাসছে। বাহা তসিবার হাসিটা অনেক ধারুন তো! এই জন্য তসিবা গিয়ে রিপাকে জড়িয়ে ধরেছে)
আমি:- তসিবা তুমি উপরে যাও এখুনি। (তসিবা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে তখনি ভাবি বলে)
ভাবি:- রিপা তোমার বুকের অংশটা কি কালো নাকী কোনো ময়লা লাগছে? (তখনি রিপা দেখছে আর দেখা মাত্রই তসিবার উপর খেপে গেছে।)
রিপা:- এই তোমাকে কে বলছে আমাকে জড়িয়ে ধরতে? দেখছেন আন্টি আমার এত দামী ড্রেসটা নষ্ট করে দিয়েছে।
আম্মা:- তসিবা তুমি ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলে কেনো? কে বলছে রিপাকে কালি মাখা শরীর নিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে? (তসিবা ভয়ে একদম চুপসে গেছে তখনি আম্মে তসিবাকে ধমক দিয়ে বলছে) কি হলো বলো কে বলছে রিপাকে জড়িয়ে ধরতে? তখনি তসিবা আমার দিতে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
রিপা:- সৌরভ তুমি বলছো আমাকে কালী মেখে দিতে?
আমি:- তসিবা তোমাকে আমি কখন বলছি?
রিপা:- বোবা মেয়ে কি করে বলবে আর তুমি বলছো বলে তসিবা এমন কাজ করেছে। আন্টি আমি গেলাম আর সৌরভ তুমি বিকালে দেখা করো আজকে তেমার খবর আছে বলে দিলাম। (রিপা রাগ করে বেড়িয়ে গেছে আমি তসিবার দিকে তাকিয়ে দেখি তসিবা অনেক খুশি হয়েছে। আমি রিপার পিছু পিছু গেছি)
আমি:- রিপা প্লিজ তুমি আমার কথাটা তো শুনবে?
রিপা:- তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই আমার মনের অবস্থা এখন ভালোনা প্লিজ তুমি যাও। আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ। রিপা চলে গেছে আমি মন খারাপ করে বাইক বেড় করেছি।
আমি:- তসিবার প্রতি রাগটা একটু বেশি হচ্ছে এই মেয়েটাকে কিছু বলিনা বলে একদম মাথায় উঠে বসেছে। ইচ্ছে করছে বাড়ীতে গিয়ে মন মত বকা দিয়ে আসি কিন্তু কেনো জানি যাইতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। মন খারাপ করে অফিসে এসেছি কাজ করেছি নিজের মত করে। বিকালে অফিস থেকে বেড়িয়ে রিপার সাথে দেখা করতে গেলাম। রিপা ও তার সাথে দুইটা বান্ধবী ছিলো। কাছে গিয়ে সরি বলে দিয়েছি আর একটু প্রশংসা করেছি বাছ সব ভুলে গেছে।
রিপা:- সৌরভ তুমিও না আমি তো সেই কখন সব ভুলে গেছি। আসো আজকে আমি কিছু শপিং করবো।
আমি:- ঠিক আছে চলো! রিপাকে নিয়ে শপিংয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে জীবনে কোনো কেনা কাটা করেনি যা দেখছে তাই নিচ্ছে এদিকে আমার টাকার বারোটা বাজতেছে। কফি কালারের একটা চুড়িদার অনেক ভালো লাগছে। আমি রিপাকে না জানিয়ে তসিবার জন্য কিনে আলাদা করে প্যাক করে নিয়েছি।
রিপা:- আমার হয়ে গেছে এবার চলো?
আমি:- ভাবি কিছু জিনিস নিতে বলছে আমি ঐ গুলি প্যাক করে নিয়ে আসি তুমি বাইকের কাছে যাও।
রিপা:- কি জিনিস?
আমি:- মেয়েলি।
রিপা:- চলো আমি যাবো তাহলে তোমার জন্য ভালো হবে।
আমি:- না না ভাবি দোকানদারকে ফোন করে বলে দিয়েছে আমি গেলে দিয়ে দিবে।
রিপা:- তাহলে ঠিক আছে।
আমি:- হ্যা! রিপাকে রেখে আমি গিয়ে প্যাকেটা নিয়ে এসেছি। বাইকে করে দুজনে যেতেছি রিপা আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখছে কিন্তু মনে হচ্ছে তসিবা আমার পেছনে। আমি কি তসিবাকে একটু বেশি ভালোবেসে ফেলছি মনের মধ্যে বার বার প্রশ্নটা তৈরি হচ্ছে।
রিপা:- কি হলো চুপ করে আছো কেনো কিছু তো বলো?
আমি:- তোমার বাড়ীর সামনে এসেছি তুমি নামো।
রিপা:- আগে আদর করে দাও।
আমি:- বিয়ের পরে হবে এখন তুমি যাও এমনিতেই রাত হয়েছে অনেক।
রিপা:- দুই দিন পরে তো আমাদের। (রিপাকে পুরা কথা বলতে দেয়নি আমি চলে এসেছি। রিপা বির বির করছে কিন্তু আমার ভালো লাগছেনা। ঘন্টা খানেক বাদে বাড়ীতে এসেছি। কলিং বেল বাজাতেই ভাবি এসে দরজা খুলেছে।
আমি:- ভাবি তুমি তসিবা কোথায়?
ভাবি:- বলতে পারবোনা! আচ্ছা সৌরভ তুমি তো বিয়ের আগে যা বলছো এখন কাজ করছো সব ওল্টা পাল্টা। তুমি তসিবাকে ভালো টালো বাসোনি তো আবার?
আমি:- তোমার সাথে পরে কথা বলবো বলে আমি উপরে চলে এসেছি। রুমে এসে দেখি রুমটা ফাকা তসিবা নেই বাথরুমের দরজাটা খুলা। তসিবাটা গেলো কোথায় এদিক সেদিক খুঁজে কোথাও না পেয়ে আমার ভিতরে কেমন জানি একটা করছে।
ওর মোবাইলে বার বার ফোন করতেছি কিন্তু বন্ধ বলছে। খুব টেনশন হচ্ছে কি করবো চিন্তা করে পাচ্ছিনা তখনি আব্বা বলে,,
আব্বা:- সৌরভ এমন করছিস কেনো?
আমি:- তসিবা কোথায়?
আব্বা:- তসিবা তো ছাদে গেছে দেখছি।
আমি:- ঠিক আছে বলে দৌরে ছাদে গেছি। গিয়ে দেখি তসিবা ব্যাঞ্চের উপরে বসে আঁকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। তসিবা তোমার মোবাইল কি হয়ছে আর তুমি ছাদের উপর এসেছো কেনো? কি হলো কথা বলছোনা কেনো? বলে তসিবাকে আমার দিকে ঘুরিয়েছি দেখি তসিবা কান্না করছে। কান্না করছো কেনো বলো কি হয়ছে তোমার?
তসিবা:- আম্মার কথা খুব মনে পড়ছে! আজকের দিনে আম্মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আজকে আম্মাকে খুব মনে পড়ছে।
আমি:- তার জন্য তুমি একা ছাদের উপরে চলে আসবে? আর মোবাইলটা বন্ধ করে রাখছো কেনো?
তসিবা:- আমি বন্ধ করিনি আপনার মা আমার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে গেছে।
আমি:- কেনো?
তসিবা:- ওনার মোবাইলটা আছার মেরে ভেঙেছে প্রথমে এরপর আমাকে বলে আমার মোবাইলটা তো ভেঙে গেছে এখন মার্কেটে যেতে পারবোনা। তোমার তো মোবাইলে কেও ফোন করেনা তোমার মোবাইলটা আমাকে দিয়ে দাও।
আমি:- এমনি তুমি দিয়ে দিলে?
তসিবা:- আমি দিতে চাইনি কিন্তু তখনি ওনি জোর করে নিয়ে গেছে আর আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়েছে। দেখেন আমার বা গালটা একদম লাল হয়ে আছে।
আমি:- কি আম্মা এই কাজ করেছে। এসো তুমি আমার সাথে আম্মাকে জিজ্ঞেস করবো কেনো ওনি এমন কাজ করেছে।
তসিবা:- প্লিজ আর কোনো ঝগড়া তৈরি করতে যাবেন না এমনিতেই সবাই আমাকে তাড়ানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে। তখন আমাকে মেরে ফেলতে চাইবে।
আমি:- তসিবা তুমি এসব কি বলছো?
তসিবা:- আমি ঠিকই বলছি! আচ্ছা আমার প্রতি এত মিথ্যা মায়া দেখাতে হবেনা। আপনি যান আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ।
আমি:- নাহ তুমি এখুনি আমার সাথে যাবে! তোমার জন্য একটা গিফট আনছি চলো তুমি দেখবে।
তসিবা:- আমার লাগবেনা আপনি রিপাকে বেশি করে দেন। আচ্ছা শেষবারের মত একটা কথা বলবো রাখবেন?
আমি:- এমন ভাবে বলছো কেনো বলো তুমি বলতে চাও। (তখনি তসিবা আমাকে জড়িয়ে ধরেছে)
তসিবা:- আমাকে একটু জড়িয়ে ধরে রাখেন প্লিজ। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলি বলতে চাই।
আমি:- ঠিক আছে! তসিবাকে জড়িয়ে ধরেছি ওর কপালে চুমু দিয়েছি।
তসিবা:- আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা আমাকে আপনি বউ হিসাবে মেনে নেন। আমি আপনাকে অনেক সূখে রাখবো খুব খুব ভালোবাসবো। রিপার তো বাবা মা সবাই আছে আমার তো বাবা থাকতে বাবা নেই আপনি আমাকে মেনে নিন প্লিজ। রিপা দেখতে সুন্দর ওকে যে কোনো ছেলে বিয়ে করবে। আর তাছাড়া রিপার তো কোনো বিয়ে হয়নি রিপাকে বিয়ে করতে চাইবে। কিন্তু আমার তো মা নেই বাবা থেকেও নেই আবার একটা বিয়ে হয়ছে আর যদি আমার সৎ মায়ের কথা শুনে তাহলে তো কেও আমাকে বিয়ে করতে চাইবেনা। (তসিবা কথা গুলি আমার চোখে পানি চলে এসেছে)
আমি:- তাহলে এখন কি করতে হবে?
তসিবা:- কিছুনা শুধু আমাকে বউ হিসাবে মেনে নিলে হবে!
আমি:- কিন্তু তুমি তো আমাকে ডির্ভোস দিতে রাজি হয়ছো আর এপ্লিকেশনে সাইন করেছো? (তখনি দেখি তসিবা চুপ হয়ে গেছে) কি হলো কথা বলছোনা কেনো তখনি চেয়ে দেখি তসিবা কোনো সারা শব্দ করছেনা কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। আমি তসিবাকে কুলে তুলে নিয়েছি। তসিবাকে কুলে করে রুমে নিয়ে এসেছি ওকে খাটের উপর শুইয়ে দিয়েছি। তসিবার কপালে চুমু দিয়ে আমি ওর পাশে শুয়ে পড়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়তে গেছি যাবার আগে তসিবাকে উঠিয়ে দিয়েছি। আজকের দিনটা ভালোই যাবে।
আব্বা:- সৌরভ তসিবাকে মেনে নে তসিবা খুব ভালো মেয়ে। এতিম মেয়ে কষ্ট দেওয়াটা ঠিক হবেনা।
আমি:- কিন্তু আজকে তো রিপার সাথে আম্মা Engagement ফিক্স করেছে। আর রিপা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসে।
আব্বা:- আমি যা বলছি তুই একটু ভেবে দেখিস। আব্বা চলে গেছে আমি রুমে এসেছি তসিবাকে আজকে একটু বেশি খুশি খুশি লাগছে।
তসিবা:- আজ তো আপনাদের আংটি বদল হবে।
আমি:- হ্যা হবে।
তসিবা:- আজকে নিজ হাতে আমি আপনাকে সাজিয়ে দিবো কেমন।
আমি:- দরকার নেই আমি নিজেই সাজবো। তুমি তোমার কাজ করো আর শুনো এখানে তোমার জন্য একটা চুড়িদার রাখা আছে ঐটা পড়বে।
তসিবা:- কাজের মেয়েকে এত দামী পোষাকে সুন্দর মানাবে না। আমাকে নিয়ে চিন্তা না করে রিপাকে নিয়ে ভাবেন। আমার কাজ আছে আমি গেলাম। আমি তাকিয়ে আছি তসিবা চলে গেছে।
আজ সারাদিন বাড়ীতে কিন্তু তসিবাকে দুইটা মিনিটের জন্য কাছে পায়নি মেয়েটা গেছে কোথায়? বিকাল ঘরিয়ে সন্ধা হয়ে গেছে বাড়ীতে সব মানুষ আসতে আরম্ভ করেছে। রিপা তার বাবা, মা আর বড় বোন, বোন জামাই এসেছে।
রিপা:- সৌরভ এসো তোমাকে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেয়।
আমি:- হ্যা চলো! রিপা আমার হাত ধরে টেনে নিতেছে তখনি খেয়াল করেছি তসিবা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তা দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। রিপা নিয়ে এক এক করে ওর সব আত্বীয় স্বজনদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেছে।
রিপা:- সৌরভ তুমি ঠিক আছো?
আমি:- হ্যা ঠিক আছি! আমি বার বার তসিবার দিকে তাকাচ্ছি রিপা ব্যাপারটা খেয়াল করছে।
রিপা:- সৌরভ তুমি ঐ দিকে কি দেখছো?
আমি:- কিছুনা তুমি থাকো আমি আসতেছি। রিপা কে বলে আমি তসিবার দিকে এগিয়ে যেতেছি তখনি চেয়ে দেখি ছেলেটা তসিবার দিকে হ্যান্ডসীপ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তসিবা হাত বাড়াবে বাড়াবে এমন সময় আমি গিয়ে তসিবার হাত ধরেছি।
তসিবা:- কি হয়ছে হাত ধরেছেন কেনো ছাড়েন!
ছেলে:- আরে আপনি ওর হাত ধরেছেন কেনো ছাড়ুন ওর হাত।
আমি:- সেই কয়ফত আপনাকে দিবো কেনো? তসিবা তুমি আসো বলে তসিবার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছি আর সবাই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তসিবাকে নিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে সোজা উপরে চলে যাচ্ছি তখনি। To be continue,,,,