গল্প:-নব_দম্পতি পর্ব:-(০৪)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
আম্মু চাইনি আমার ভালো কোনো ছেলের সাথে বিয়ে হক। আম্মু চাইছে একটা বোকা আর হাবা টাইপের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে। যদিও নাদিম আমাকে বিয়ে করতে চাইছে কিন্তু আমি রাজি হয়নি তাই আম্মু আমার মুখে গরম তৈল ছুড়ে মারছে আমি ঘুরে গেছি আর পিটে পড়ছে এই দেখুন পিটের দাগ গুলি এখনো শুকাইনি। তসিবা তার চুল গুলি সরিয়ে আর চুড়িদার চেইনটা খুলে পিটটা দেখিয়েছে। আমি দেখে পুরাই থমকে গেছি আমার চোখের কোনে পানি চলে এসেছে।
আমি:- কিন্তু তোমার মা তোমার সাথে এমন কেনো করছে?
তসিবা:- আসলে ওনি আমার আপন মা নয়। আমার আপন মা আমাকে ছোট বেলা রেখে চলে গেছে।
আমি:- তোমার মা মারা গেছে?
তসিবা:- নাহ আব্বুর সাথে ঝগড়া করে ডির্ভোস দিয়ে চলে গেছে। আম্মু আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছে কিন্তু আমার দাদা দেয়নি। দাদা মারা যাবার আগে ব্যাংকে ৫০ লক্ষ টাকা আর এই বাড়ীটা আমার নামে লিখে দিয়েছে। যানেন নাদিম অনেক বার আমার সাথে এমন করছে আমি কিছু বললে বরং আম্মু আমাকে মারদর করতে থাকতো।
আমি:- তোমার বাবা কিছু বলেনা?
তসিবা:- আব্বু কিছু বললে বরং আব্বুকে ওনার ভাই বোন সবাইকে ডেকে এনে গালা গালি করে আর বলে যদি বেশি বেশি করি তাহলে আমাকে দিয়ে নগ্ন ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে।
এই জন্য আব্বু চুপ চাপ থাকে! আপনার আব্বুর সাথে আব্বু সব কিছু খুলে বলছে এরপর ওনি আমার সাথে আপনার বিয়েটা তাড়াহুরা করে দিয়ে দেয়।
আমি:- তুমি বিয়ের দিন কোনো কান্না করোনি কেনো?
তসিবা:- আম্মু মানা করেছে আবার আমি চিন্তা করে দেখলাম মেকাপ করে অনেক সুন্দর লাগছে যদি কান্না করি তাহলে তো মেকাপ গুলি নষ্ট হয়ে যাবে আর আমাকে দেখতে খারাপ দেখাবে। বাসর ঘরে যদি আপনি আমাকে দেখে পছন্দ না করেন তাই।
আমি:- তোমার মাথায় বুদ্দি আছে। আচ্ছা তুমি যখন বাড়ীতে একা থাকতে তখন নাদিম তোমাকে কিছু করতে চাইনি?
তসিবা:- হ্যা চাইতো কিন্তু আব্বু বাড়ীতে না থাকলে আমি সারাক্ষন রুমে দরজা লাগিয়ে ভিতরে একা বসে থাকতাম। সবার কাছে বলে আমি বোবা কাজকাম কিছুই পারিনা। আপনি বিশ্বাস করেন আমার মধ্যে কোনো খারাপি নেই আমি একদম ভালো একটা মেয়ে। আমার সাথে আপনি ছয় মাস সংসার করে দেখেন যদি আমাকে খারাপ মনে হয় তাহলে আপনি আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিয়েন প্লিজ।
আমি:- বুঝতে পারছি তুমি সব কিছু পরিস্থিতির সিকার। কিন্তু আমি রিপা নামে একটা মেয়েকে ভালোবাসি। (তখনি চেয়ে দেখি তসিবা একদম চুপসে গেছে কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা)
তসিবা:- আপনি বিয়ে করেছেন তা যেনেও রিপা আপনাকে এখন ভালোবাসে আর বিয়ে করতে রাজি আছে?
আমি:- রিপা এখনো জানেনা আমার বিয়ের কথা। এখন রিপাকে কিছু বলতে চাইনা আগে তোমার সাথে ডির্ভোস হয়ে যাক পরে রিপাকে বুঝিয়ে বলবো। তখন রিপা সব মেনে নিবে। আচ্ছা আমি যদি তোমার বাবা আর তোমার সব কিছুতে অধিকার ফিরিয়ে দেয়। আর তোমার সৎ মা তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার করে তাহলে কি তুমি আমাকে ডির্ভোস দিতে রাজি হবে? (তসিবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে)
তসিবা:- যদি আমার বাড়ীতে আমি সব অধিকার ফিরে পায় আর মা আমাকে নিজের মেয়ের মত আদর ভালোবাসে তাহলে আপনাকে ডির্ভোস দিবো কথা দিলাম।
আমি:- ঠিক আছে তাহলে তুমি এই কাগজ গুলিতে সাইন করে দাও।
তসিবা:- কিসের কাগজ?
আমি:- এই তো ডির্ভোসের এপ্লিকেশন করে রাখবো আগে থেকে। যদি তাড়াতাড়ি হয়ে যায় তাহলে তাড়াতাড়ি আমাদের ডির্ভোস হয়ে যাবে।
তসিবা:- দেন করে দিতেছি! (কাগজে সাইন করে দিয়েছে) শুনেন আমরা কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মত সংসার করবো আর দুজনে এক সাথে থাকবো।
আমি:- এক সাথে থাকবো তবে রাতের বেলা নয়। আচ্ছা তুমি শাড়ী পরে নাও তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
তসিবা:- ও ভালো কথা কাওকে বলিয়েন না কিন্তু আমি কথা বলতে পারি! যদি আম্মু জানে তাহলে আমাকে আস্ত রাখবেনা একদম মেরে ফেলবে।
আমি:- এখন থেকে তুমি তোমার মনের ভাব নিজের মত করে প্রকাশ করবে। যতদিন আমার কাছে থাকবে ততদিন তোমার সব দায়িত্ব আমার। কথা দিলাম আজ থেকে তোমার চোখে এক ফোটা পানি আনতে দিবোনা কাওকে। (তখনি তসিবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সোজা ঠোটে কিস করে বসেছে। এক মিনিটের জন্য পুরু পৃথিবীটা থমকে গেছে আমার। মনে হচ্ছে এর চেয়ে সূখ আর কিছুই নেই) তসিবা তুমি এইটা কি করলে?
তসিবা:- ছবিতে অনেক দেখছি তাই বাস্তবে করে দেখলাম কেমন লাগে। জীবনের প্রথম জড়িয়ে ধরেছি আপনাকে আর কিস করেছি আপনাকে।
আমি:- আজকের মত ক্ষমা করে দিলাম এরপর থেকে এমন বাজে কাজ আর কোনো সময় করবেনা। এখন শাড়ীটা পড়ে তৈরি হয়ে নাও রাতে বাহিরে ডিনার করবো আর ডাক্তারের সাথে দেখা করে আসবো।
তসিবা:- সত্যি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন?
আমি:- হ্যা যাবো! তসিবা চোখের পানি মুছে দিয়েছি যাও এখন তৈরি হয়ে নাও।
তসিবা:- চুড়িদার পরে যায় পিটের ধাগ গুলি খারাপ দেখায়। আর শাড়ী পড়লে তো সব কিছু দেখা যাবে তাইনা?
আমি:- বুঝতে পারছি ঠিক আছে তুমি তৈরি হয়ে এসো আমি নিছে গিয়ে কিছুটা গন্ডগোল পাকায়।
তসিবা:- মানে?
আমি:- তুমি বুঝবেনা! রুম থেকে বেড়িয়ে নিছে এসেছি। দেখি নাদিম শ্বাশুড়ি বসে হাসা হাসি করতেছে। আমাকে দেখে শ্বাশুড়ি বলে,,,
শ্বাশুড়ি:- সৌরভ তোমার জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে এমন একটা চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতে হয়েছে তোমাকে। যাক এখন তো সব যেনে গেছো তসিবাকে ডির্ভোস দিয়ে ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিও কেমন। আচ্ছা তাহলে তুমি এখন চলে যাচ্ছো?
আমি:- আপনাকে দেখে আমার রিনা খানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আপনি যদি চলচিত্রে অভিনয় করেন তাহলে পাক্কা ভিলেনের খেতাপ পেয়ে যাবেন। শুনেন আজকের পর যদি এই বাড়ীতে আপনাকে আর আপনার ভাইফুকে দেখিনা তাহলে কপালে অনেক খারাপি আছে।
শ্বাশুড়ি:- মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
আমি:- কিছুনা! এখন আপাদত একটু বেরহবো তসিবাকে সাথে নিয়ে।
নাদিম:- তুমি এই খারাপ মেয়েটাকে নিয়ে বের হবে? (তখনি নাদিমকে মুখ চেপে ধরেছি আর বলতেছি)
আমি:- ফের যদি তসিবাকে নিয়ে খারাপ কিছু বলিস তাহলে মুখ ভেঙে দিবো আর যদি ওকে ভুল করে ছুয়ার চেষ্টা করিস তাহলে হাত ভেঙে দিবো। বাহির থেকে এসে যেনো দেখি তসিবার রুমটা খালি করা রাতে আমরা তসিবার রুমে ঘুমাবো।
শ্বাশুড়ি:- এই ছেলে তোমার সাহোস তো দেখছি কমনা আমার সামনে আমার ভাইফুকে মুখ চেপে ধরে রাখছো?
আমি:- এখন তো ধরে রাখছি যদি কালকে থাকে তাহলে একদম জোরা লাগিয়ে দিবো দুই ঠোট। শ্বাশুমা এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান। তখনি চেয়ে দেখি তসিবা একদম সুন্দর করে সেজে গুজে নিছে নেমে আসছে।
তসিবা:- আমাকে কেমন লাগছে?
আমি:- হ্যা অনেক সুন্দর! এখন চলো শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে চুপ করে। তসিবা আমার হাতটা জড়িয়ে ধরেছে আমরা দুজনে বাহিরে এসেছি।
তসিবা:- আমার বাইকে উঠার অনেক ইচ্ছা আমি কখনো বাইকে উঠিনি আব্বুর একটা পুরুনো বাইক আছে আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন বাইকে করে?
আমি:- চাবি পাবো কোথায়? (তখনি তসিবা চাবিটা এগিয়ে দিয়েছে)
তসিবা:- ঐ বাইকটা আপনি নিয়ে আসেন একটু কষ্ট করে প্লিজ।
আমি:- ওকে! তসিবার ছোট ছোট আব্দার গুলি ভালো লাগছে। বাইকে ধূলো পড়ে আছে কোনো মতে কিছুটা পরিস্কার করে নিয়েছি। আমি বসেছি পেছনে তসিবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বসেছে। কিছুক্ষনের মধ্যে ডাক্তারের কাছে চলে এসেছি। একজন স্কিন বিশেষসজ্ঞ মহিলা ডাক্তারকে তসিবার পিটটা দেখিয়েছি। ওনি দেখে কিছু মলম জাতীয় মেডিসিন দিয়েছে।
ডাক্তার:- মিস্টার সৌরভ আপনি আপনার স্ত্রীর প্রতি একটু বেশি কেয়ার করবেন। রাতে ঘুমানোর সময় মলমটা লাগিয়ে ঘুমাবেন আর মেডিসিন গুলি নিয়ম করে খায়িয়ে দিবেন। আর খেয়াল রাখবেন ঘুমানোর সময় যেনো পিট উপরের দিকে থাকে।
আমি:- ঠিক আছে!
ডাক্তার:- আশা করি খুব তাড়াতাড়ি দাগ গুলি মুছে যাবে।
আমি:- ধন্যবাদ ডক্টর আচ্ছা তাহলে আমরা আসি কেমন? ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তসিবাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট এসেছি। তসিবাকে কিছুটা নার্ভাস লাগছে চেহারা ঘামতেচে। তসিবা তুমি ঠিক আছো?
তসিবা:- হ্যা ঠিক আছি প্রথম এমন যায়গাতে এসেছি তাই কিছুটা ভয় করছে।
আমি:- দূর বোকা মেয়ে আমি আছিনা! তসিবার হাতটা ধরেছি তখনি দেখি তসিবার নার্ভাসটা কেটে যাচ্ছে আমি আরো শক্ত করে ধরে রাখছি। তখনি পেছন থেকে কেও একজন এসেছে আমার সামনে এসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকিয়ে তসিবার হাতটা ছেড়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেছি আমার হাত পা ভয়ে কাপা কাপি করছে। To be continue