গল্প:- নব_দম্পতি পর্ব:-(০২)
লেখা:-AL Mohammad Sourav
!!
বাসর ঘরে ঢুকে বউকে সালাম দিয়েছি আস্সালামু আলাইকুম! বউ আমার উত্তর না নিয়ে আমার দিকে এক টুকরা কাগজ এগিয়ে দিয়েছে। আমি বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছি তখন ইশারা করে আমাকে বলছে কাগজটা হাতে নিতে। আমি হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিয়েছি দেখি কাগজে লিখা আছে উলাইকুম আস্সালাম। আমি কাগজটা পড়ে ওকে জিজ্ঞেস করেছি এই তুমি কি বোবা নাকী? বউ আমার আবার একটা কাগজে লিখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়েছে। কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তেছি।
বউ:- আমি বোবা না আমি কথা বলতে পারিনা কিন্তু কানে সব শুনি। আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো আরো কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে তাড়াতাড়ি করেন। আমার পছন্ড ঘুম পাচ্ছে। কাগজটা পড়ে আমি একটা জুড়ে নিশ্বাস নিয়েছি এমন একটা বোবা মেয়ের সাথে আমার আব্বা আমাকে বিয়ে দিয়েছি।
আমি:- এই শুনো ঢং না করে মুখে বলো আমি জানি তুমি কথা বলতে পারো। (তখন আবার একটা কাগজে লিখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়েছে) হাতে নিয়ে দেখি আরো কিছু লিখা!
তসিবা:- ঢং করতে যাবো কেনো? আমি তো কথায় বলতে পারিনা এখানে ঢং করার কি দেখলেন? তবে মাথায় হাত দিয়ে কি চিন্তা করছেন আমি জানি যদি অনুমতি দেন তাহলে লিখে দিতে পারি।
আমি:- তোমার কিছুই লিখতে হবেনা এখন তুমি ঘুমাও তানা হলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। যাও তুমি নিচে গিয়ে ঘুমাও আমি একা খাটের উপর ঘুমাবো।( তখন আবার একটা কাগজ লিখে এগিয়ে দিয়েছে)
তসিবা:- একা ঘুমালে আমার ঘুম আসেনা! আর আমার নিচে ঘুমানোর অব্বাশ নেই! আমি খাটের উপর ঘুমাবো যদি আপনার ইচ্ছে হয় তাহলে নিচে ঘুমান।
আমি:- কি আমি নিচে ঘুমাবো বলে ওর হাত ধরে টান মেরে দাঁড় করিয়ে নিয়েছি। খাটের উপর থেকে টেনে নামিয়ে নিয়েছি। তুমি বের হও আমার রুম থেকে বাহিরে থাকবে। (তসিবা কিছু বলছেনা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বালিশ আর চাদর সব কিছু এলো মেলো করে দিয়েছি।) তখনি ওর হাতের মোবাইলটা এগিয়ে দিয়েছে আমার দিকে আমি হাতে নিয়ে দেখি কিছু লেখা।
তসিবা:- আমি বাহিরে যাবো মানে আমি রুমে থাকবো দরকার পড়লে আপনি বাহিরে গিয়ে ঘুমান।
আমি:- কি আমি যাবো যাওচ্ছি বলে ওর হাত ধরে টেনে দরজার সামনে নিয়ে এসেছি। যাও তুমি বাহিরে যাবে আর আব্বাকে কিছু বললে তোমার খবর আছে। তখনি তসিবা মগটা হাতে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর পানি ঢেলে দিয়েছে। তোমার সাহোস তো কম না তুমি খাটের উপর পানি ঢালছো কেনো? তসিবা চুপ চাপ গিয়ে সুফায় শুয়ে পড়ছে! আমি গিয়ে ওর দিকে এগিয়ে যেতে ছিলাম তখনি মোবাইলের রিংটন বেজে উঠেছে হাতে নিয়ে দেখি রিপা ফোন করেছে! বোবা মাইয়া আজকে বেচে গেলি কারন তোর কপাল ভালো আমার জানু ফোন করছে বলে মোবাইল হাতে নিয়ে বেড়িয়ে এসেছি। ছাদে এসে রিপাকে ফোন ব্যাক করেছি রিং হতেই রিসিব করেছে।
রিপা:- আমার ফোন রিসিব করোনি কেনো?
আমি:- কি করে করবো আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।
রিপা:- আমার ঘুম আসছেনা তুমি আমার সাথে কথা বলবে?
আমি:- হ্যা বলবো।
রিপা:- উম্মা আমাকে ফোনে কিস করছে। আমি রিপার সাথে ব্যাঞ্চের উপর শুয়ে শুয়ে কথা বলছি। রিপার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি ঠিক বলতেও পারবোনা। একদম ফজরের আজান শুনে ঘুম ভাঙছে চোখ মেলে দেখি মাথায় বালিশ গায়ের উপর চাদর আর মোবাইলটা নিচে রাখা। মনে মনে ভাবতেছি এই কাজ গুলি কার হবে? নিশ্চয় ভাবি এসেছে কারন ভাবি জানে আমি আজকে রাতে তসিবার সাথে ঝগড়া করে বাসর ঘরে বাহিরে থাকবো।
যাই গিয়ে নামায পড়ে আশি। তাড়াতাড়ি করে নামায পড়তে চলে গেছি সত্যি বলতে দিনটা যদি নামায দিয়ে শুরু হয় তাহলে আমার খুব ভালো কাটে। নামায পড়ে রাস্তায় সকালে কিছুটা হাটা হাটি করে বাড়ীতে এসে সোজা রুমে চলে এসেছি। দেখি তসিবা ঘুমিয়ে আছে আমি কিছু বলিনি জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়েছি সোনালী রৌদে রুমটা একদম সোনালী হয়ে গেছে। প্রতিদিনের মত আজকেও খুব ভালো লাগছে যেই তসিবার দিকে চোখটা গেলে তখন একটা যায়গা চোখটা আটকে গেলো। কিছুতেই চোখটা সরাতে পেরছিনা এত সুন্দর মানুষ হয় নাকী তসিবার দিকে তো তখন ঠিক করে তাকায়নি কিন্তু এখন দেখে তো ফিদা হয়ে যাবার অবস্থা। তখনি তসিবা নরে চরে শুয়েছে এবার শাড়ীটা পেট থেকে সরে গেছে ওর পেটে একটা তিল যা ওর পেটটাকে আরো সুন্দর করছে নাহা এভাবে তাকানোটা ঠিক নয় কারন আমি তো রিপাকে ভালোবাসি। যাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই কিছুক্ষনের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। উয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখি রুমটা একদম সুন্দর করে গুচানো আর তসিবা রুমে নেই আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে বের হতে যাবো তখনি তসিবা সামনে এসে একটা কাগজের টুকরা ধরিয়ে দিয়েছে।
তসিবা:- আমাকে খুঁজতেছেন?
আমি:- তোমাকে খুঁজবো কেনো? সরো সামনে থেকে আর বেশি চালাকি করার চেষ্টা করবেনা বলে দিলাম। তসিবাকে ধাক্বা দিয়ে সরিয়ে আমি নিচে চলে এসেছি। দেখি আম্মা আব্বা সহ সবাই বসে আছে নাস্তা করার জন্য। আমি কাছে গিয়ে আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছি! আব্বা আপনি যেনে শুনে কেনো বোবা একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন?
আব্বা:- তসিবা বোবা না ও কানে সব শুনে কিন্তু কথা বলতে পারেনা। তবে সব কিছু লিখে বলে দেয়। আর তোমার জন্য কি আমি রাজকন্যা খুঁজে আনবো নাকী?
আমি:- এই বোবা বউ নিয়ে আমি সংসার করতে পারবোনা!
আব্বা:- এখন বিয়ে হয়ে গেছে সংসার তোমার করা লাগবে।
আমি:- বললে হলো?
আব্বা:- হ্যা বলছি তাই হবে! সৌরভ তোর নাটক অনেক সহ্য করেছি এখন যদি মেয়েটার সাথে কোনো খারাপ আচরন করিস তাহলে কিন্তু ঐ চাকরি বাইকের চাবি এটি এম কার্ড সহ সব কিছু রেখে বাড়ী থেকে বের করে দিবো। বোবা বউ তো ভালো তোমার বড় ভাবির মত হলে তো সারাদিন ঝগড়া করবে।
ভাবি:- আমি কি করেছি সব সময় আপনারা শুধু আমাকে দোষেন। আপনার ছেলে তো আমার কোনো কথায় শুনেনা।
আম্মা:- শুরু করে দিয়েছো এই জন্য তোমার সাথে এমন ব্যবহার করি। সৌরভ যা হবার পরে হবে সবে তো শুরু কিছুদিন যাক এরপর যদি ভালো না লাগে তাহলে তাড়িয়ে দিবি বাড়ি থেকে এরপর আবার তকে আমার পছন্দ মত বিয়ে করাবো।
আব্বা:- সবাই মিলে নতুন বউয়ের সাথে এমন। ব্যবহার করলে তো নতুন বউ এক সাপ্তাহে পালাবে।
আম্মা:- এইটা তো আমিও চাই! তুমি ছেলেদের যা খুশি বলো আমি তোমাকে কিছু বলবোনা কিন্তু বউদের সাথে যা করার আমি করবো। তুমি শুধু দেখে যাবে আর যদি বেশি বেশি করো তাহলে বাপের বাড়ীতে চলে যাবো আর এগ্রিমেন্ট দেখিয়ে তোমার নামে মামলা করবো
আমি:- কিসের এগ্রিমেন্ট আম্মা?
আম্মা:- তোর আব্বার সাথে চুক্তি হয়ছে বিয়ে করাবে তোদের তোর বাপের পছন্দ আর বউদের সাথে আমি যা খুশি তাই করবো এতে তোর বাবা কিছুই বলতে পারবোনা। চুক্তির কাগজ এখনো যত্ন করে রাখছি।
আব্বা:- ঠিক আছে আমি তো মেনে নিয়েছি নাকী।
সৌরভ তুই বউ ছাড়ার কথা যদি আরেকদিন বলিস তাহলে তোর খবর করিয়ে দিবো। তোর বড় ভাইয়াকে দেখে কিছু শিখ।
ভাইয়া:- হ্যা সৌরভ।
আমি:- ভাই তুই চুপ থাক তোর মত বউ পাগল আমি হতে চাইনা। আম্মা তুমি এই মেয়েকে দিয়ে যা পারো তা করাও দরকার হলে কাজের মেয়েকে তাড়িয়ে দাও। ওকে দিয়ে বাড়ীর সব কাজ করাবে ফ্লোর মুছা হতে শুরু করে রান্না সহ সব কাজ করাবে।
আম্মা:- তুই একদম মনের কথা বলছিস আমিও ভাবছি বাড়ীতে দুইটা বউ থাকতে কাজের মেয়ে রেখে এত টাকা বেতন দিয়ে রাখবো কেনো? জরিনা কাল থেকে তকে দুই মাসের ছুটি তুই বাড়ী থেকে কিছু দিন ঘুরে আয়।
জরিনা:- সত্যি কয়তাছেন খালাম্মা?
আমি:- হ্যা একদম সত্যি আর এই নে পাঁচশত টাকা রাখ তোর মায়ের জন্য কিছু কিনে নিস। জরিনা অনেক খুশি হয়েছে। আম্মা আমি একটু বের হবো অফিসে যেতে হবে।
আব্বা:- তোর অফিসে যেতে হবেনা তুই আজকে তসিবাকে নিয়ে ওদের বাড়ীতে যাবি।
আমি:- সব মেনে নিয়েছি এখন ওদের বাড়ীতে যেতে পারবোনা। এমন বোবা মেয়ে নিয়ে রাস্তায় কোথাও গেলে নিজের মান সম্মান বলতে কিছুই থাকবেনা। তখনি দেখি তসিবা নিচে নামতেছে। সাদা চুড়িদার সাথে মেচিং করা চুড়ি আর চুল গুলি ছাড়া বাহা অনেক সুন্দর লাগছে। তসিবা নিচে এসেছে তখনি আম্মা বলে।
আম্মা:- কাল থেকে প্রতিদিন সকালে নামায পড়বে আর এসব চুড়িদার পড়া চলবেনা শাড়ী পড়বে কথাটা মনে থাকে যেনো? তখনি তসিবা আম্মার হাতে ওর মোবাইলটা এগিয়ে দিয়েছে। আম্মা তা দেখে আরো রেগে গেছে তোমার সাহোস কি করে হয় আমার সাথে মোবাইল দেওয়ার।
আমি:- আম্মা মোবাইলে কিছু লিখা আছে ঐ গুলি পড়ে দেখেন ও কি বলছে লিখা আছে। আম্মা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর মোবাইলটা আঁছার মেরে ভেঙে ফেলছে আর বলছে।
আম্মা:- এসব নাটক ফাটক আমার সাথে চলবেনা তুমি যা বলার হাতের ভঙ্গিমাতে বুঝাবে। আর শুনো আমি যা যা বলবো তুমি তা তা করবে আর আমার অনুমতি ছাড়া এক পা এদিক সেদিক করবেনা। তসিবা মাথাটা নাড়িয়ে উপরের দিকে চলে গেছে। সৌরভ দেখছিস এমন ভাবে কিছুদিন খুব টাইট ভাবে রাখবো তাহলে তাড়াতাড়ি বাড়ী ছেরে পালাবে।
আমি:- হ্যা মা একদম ঠিক বলছো ঠিক তখনি তসিবা হাত তালি দিতে দিতে নিছে নামতেছে।
To be continue,,,