গল্প:- নব দম্পতি পর্ব:-(০৩)
লেখা:- AL Mohammad Sourav
!!
তসিবা হাত তালি দিতে দিতে নিছে নেমে এসেছে আম্মা আব্বা ভাবি সহ আমি দাঁড়িয়ে আছি। তসিবা এসেই আমার হাতে একটা কাগজের টুকরা দিয়েছে। কাগজে লিখা আছে এত সহজে আমি আপনাকে মুক্ত করছি না আমাকে চিনতে আপনারা ভুল করেছেন! এখন কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেন আমি আর আপনি দুজনে আমাদের বাড়িতে যাবো।
আমি:- বলছি তো আমি যাবোনা তুমি একা যাও! বেশি বেশি করলে কিন্তু একে বারে বাপের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিবো।
আব্বা:- সৌরভ আবার বউমাকে বকা দিতেছিস। দে আমার সব কিছু এখুনি তকে বাড়ী থেকে বের করে দিবো।
আমি:- আরে আপনি তো দেখছি সিরিয়াছ নিয়েছেন আমি তো তসিবার সাথে মজা করছিলাম। তসিবা তুমি গিয়ে তৈরি হয়ে নাও আমি আসতেছি। (তসিবা একটু মুচকি হেসে চলে গেছে বাহা তসিবার মুচকি হাসিটা অনেক সুন্দর। সবাই সবার মত করে চলে গেছে এমনি ভাবি বলে)
ভাবি:- সৌরভ তুমি কি ভুলে গেছো তসিবার সাথে কি কি করবে? তুমি তো দেখছি তসিবার সাথে ভালো ব্যাবহার করতে আরম্ভ করেছো?
আমি:- তোমার মনে নেই আব্বার সামনে ভালো ব্যাবহার করার অভিনয় করতে হবে। তুমি কিন্তু তোমার কাজটা চালিয়ে যাবে আম্মা তো আমাদের সাথে আছে তাহলে আর চিন্তা কিসের?
ভাবি:- হ্যা একদম ঠিক বলছো! আর শুনো শ্বশুড় বাড়ীতে গিয়ে সবার সাথে খারাপ আচরন করবে। বিশেষ করে সবাইকে দেখিয়ে তসিবার সাথে তাহলে ওরা বুঝবে তুমি তসিবাকে মেনে নিতে পারোনি তখন ওরা নিজে থেকে তসিবাকে নিয়ে যাবে।
আমি:- হ্যা একদম সত্য কথা বলছো আমি তাই করবো যাই এখন রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নেই কেমন। ভাবির প্লান মতে কাজ করলে তসিবা এক মাসে পালাবে। কথা গুলি ভাবতে ভাবতে যেই দরজা সামনে এসেছি তখনি দেখি রুমের ভিতর থেকে কথার শব্দ শুনা যাচ্ছে। আরে আমার রুমে তো বোবা বউটা ছাড়া আর কেও নেই তাহলে কথার শব্দ গুরি বেশে আসঁছে কোথা থেকে। তাড়াহুরা করে রুমে ঢুকে দেখি তসিবা ডেসিন টেবিলের সামনে বসে সাজুগুজু করছে। রুমের চারদিকে ঘুরে ঘুরে তাকালাম কাওকে তো দেখছিনা তাহলে রুমে কথা কে বলছে। তখনি মহারানী হাত তালি দিয়েছে আমি তাকিয়েছি বাহা তসিবাকে খুব সুন্দর লাগছে আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে তখনি চুটকি বাজিঁয়েছে। কি হয়ছে এমন করছো কেনো? (তখনি কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে)
তসিবা:- কিছু বলবেন আর আমাকে কেমন লাগছে?
আমি:- রুমে কথা বলছে কে? আর তুমি তো বোবা তাহলে কথার শব্দ আসলো কোথা থেকে? (তখন কাগজে লিখে দিয়েছে)
তসিবা:- আমি তো কোনো কথার শব্দ শুনিনি আমার মনে হয় বাহিরে কেও কথা বলছে ঐটা শুনতে পেয়েছেন। এখন বলেন আমাকে কেমন লাগছে?
আমি:- পেত্নির মত লাগছে! তোমাকে দেখলে আমার ভুমি ভুমি ভাব শুরু হয়ে যায়। দেখি সরো তসিবা চেহেরাটা কালো করে নিয়েছে আমি উয়াশ রুমে যাবো তখনি আমার হাতে আরেকটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেছে। (কাগজটা হাতি নিয়ে দুই টুকরা করে ছিড়ে ফেলে দিয়ে উয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে বের হয়ে এসেছি তখনি এক টুকরা কাগজের লিখা চোখে পড়লো আমি দুই টুকরা কাগজ হাতে নিয়ে পড়তেছি)
তসিবা:- আপনি তো দেখছি ঠিক করে মিথ্যা বলতে পারেন না! আপনার চোখ বলে আপনি আমাকে খুব ভালোবাসেন কিন্তু বাহির থেকে আমার সাথে এমন ব্যাবহার করেন। আমি জানি আমি অনেক সুন্দর তাই তো আপনি বার বার আর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আজ নয়ত কাল আমাকে ভালোবাসবেন কিন্তু এমন না হয়ে যায় আপনি আমাকে ভালোবেসেছেন কিন্তু আমি আপনার জীবন থেকে অনেক দূরে হারিয়ে গেছি।
আমি:- ঘুরার ডিম বোবা মেয়েটা বলে কি? আজকে তোমার বাপের বাড়ীতে তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে তুমি তা চিন্তা করতে পারবেনা। তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিছে গেছি। তসিবা সহ সবাই দাঁড়িয়ে আছে আমি নিছে যেতেই।
আব্বা:- সৌরভ দুই দিন থেকেই বউমাকে নিয়ে চলে আসবি। আর শুন ঐ বাড়ীতে তসিবার সাথে ভালো ব্যাবহার করবি ওর মা বাবার সাথে সুন্দর করে কথা বলবি কথা গুলি মনে থাকে যেনো?
আমি:- ঠিক আছে! সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে এসেছি। আমি গিয়ে একটা সি এন জি নিয়ে এসেছি। তসিবা সি এন জি দেখে বেশি একটা খুশি হয়নি ওর ইচ্ছে ছিলো বাইকে করে আমার সাথে যাবে কিন্তু হলোনা। ওর মুখ ছোট করে রাখছে আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে যদি কথা বলতে পারতো তাহলে বুঝা যেত। কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো এসো তখনি রাগ করে এসেছে সি এন জির ভিতরে। ঘন্টা দুইয়েক পরে তসিবাদের বাড়ীর সামনে এসেছি তসিবা নেমে আগে আগে বাড়ীর দিকে চলে গেছে আমি ভাড়া দিয়ে পিছু পিছু গেছি। তসিবা কলিং বেল বাজিঁয়েছে প্রায় দশ মিনিট পরে দরজা খুলছে ওর মা।
শ্বাশুড়ি:- এত কলিং বেল বাজাতে হয় নাকী? একটু দাঁড়িয়ে থাকলে কি হয়? (শ্বাশুড়ির কথা শুনে তো পুরায় অভাক হয়ে গেছি। ওনি কোথায় মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরবে তানা ওনি উল্টা তসিবাকে বকা ঝকা করতেছে। আর আমি যে ওনার মেয়ের স্বামী তার কোনো গুরুত্ব নেই)
আমি:- আস্সালামু আলাইকুম শ্বাশুমা কেমন আছেন আপনি?
শ্বাশুড়ি:- গাইয়া নাকী এই শুনো আমাকে আন্টি বলবে শ্বাশুমা টাশ্বামা বলবে না। তসিবা গিয়ে তোদের জন্য রান্না করে নে আমি একটু পার্লার থেকে আসি সন্ধায় আমার একটা পার্টিতে যেতে হবে।
আমি:- মানে এখন রান্না করবে তাহলে খাবো কখন? আর রান্না তসিবা করবে কেনো?
শ্বাশুড়ি:- শুনো বেশি কথা বলবেনা তসিবা রান্না করবেনা তো রান্না কি আমি করবো? চাকরানী তো চাকরানীর কাজ করবে বেশি কথা না বলে দুই দিন থেকে চুপ চাপ চলে যাবে। তসিবা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা গিয়ে রান্না গুলি করে নে আর তোর স্বামীকে বলবি কথা কম বলতে। (তসিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিয়েছে)
আমি:- থাকবোনা আমি এই বাড়িতে চলে যাবো এখুনি বলে ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে আসতেছি তখনি তসিবা আমার হাতটা ধরেছে আর দুই চোখ দিয়ে পানি ফেলতেছে। আমি দাঁড়িয়ে গেছি তসিবা আমাকে টেনে উপরে নিতেছে তখনি একটা ছেলে সিঁড়ি দিয়ে নামতেছে।
ছেলে:- আরে তসিবা তুই এসেছিস জানিস এই দুই দিন তকে আমি অনেক মিস করেছি। সত্যি বলতে তকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগেনা যাক এখন তো সব কিছু শিখে গেছিস এখন আমি চাইলে আর না করিস না কেমন? (তসিবা আমার হাতটা একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে! তসিবার দিকে তাকিয়ে দেখি তসিবা ভয়ে একদম কাতর হয়ে গেছে)
আমি:- আমি তো জানি তসিবার কোনো ভাই বোন নেই তাহলে আপনি কে?
ছেলে:- আমি নাদিম আমাকে কি করে চিনবেন আমি তো বিয়ের দিন ছিলাম না। থাকলে আর বিয়েটা করা লাগতো না। আমি তসিবার মামাত ভাই তসিবা শুন তোর রুমটাতে এখন আমি থাকি তুই তো মাত্র কিছুদিন থাকবি এখানে। গেস্ট রুমটাতে যতদিন ইচ্ছে ততদিন তোরা থাকিস কেমন।
তসিবা মাথা নাড়িয়ে আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গেছে রুমে ঢুকে তো আমি পুরায় অভাক এত বড় লোক মেয়ের রুম একটা কুরের ঘরের চেয়েও খারাপ। তখনি আমি তসিবাকে বলি এই তুমি বাসর ঘরে কি বলেছিলে মনে আছে? (তখনি তসিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিয়েছে) তখন তো বলছিলে খাটের উপর ছাড়া তোমার ঘুম আসেনা কিন্তু তোমার রুমে তো কিছুই নেই? আচ্ছা তুমি এই বাড়ীর মেয়ে না চাকরানী? তসিবা একটা কাগজে লিখে আমার হাতে দিয়েছে।
তসিবা:- মাত্র তো দুই তিন থাকবো। প্লিজ দয়া করে আমার দিকে তাকিয়ে আপনি এখানে নিজেকে মানিয়ে নেন।
আমি:- তসিবার দিকে তাকিয়ে আছি তসিবা কান্না করে যাচ্ছে আমি ব্যাগটা রেখে ওর চোখের পানি গুলি মুছে দিলাম। তসিবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে তুমি কোনো চিন্তা করোনা আমি মানিয়ে নিবো মাত্র তো দুই দিন তখনি তসিবা আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। এর আগে রিপা আমাকে অনেক বার জড়িয়ে ধরেছে কিন্তু আজ যে ফিল হচ্ছে তা কোনো দিন হয়নি যখনি আমি তসিবাকে জড়িয়ে ধরতে যাবো তখনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুই হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে চলে গেছে। আমি চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছি কিছুক্ষণ পর নিচে গিয়ে দেখি তসিবা রান্না করছে আর নাদিম তসিবাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখছে তসিবা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারতেছেনা। আমি তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরের সামনে গেছে আমাকে দেখে নাদিম তসিবাকে ছেড়ে দিয়েছে আর তসিবা দৌরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আমি তসিবাকে ছাড়িয়ে গিয়ে নাদিমের কালার টেনে ধরে হিচরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে ওকে গুশি মারতেছি তখনি তসিবার মা বাবা দুজনে ভিতরে এসেছে।
শ্বশুড়:- সৌরভ কি হচ্ছে এসব তুমি নাদিমকে মারতেছো কেনো?
আমি:- জানেন ও তসিবার সাথে কি করতে চাচ্ছিলো? আমি তো ওকে মেরে ফেলবো বলে আরো গুশি দিতে লাগলাম তখনি আমার শ্বশুড় এসে টেনে আমাকে তুলে নিয়েছে।
শ্বাশুড়ি:- তোমার এত বড় সাহোস তুমি আমার ভাইফুর গায়ে হাত তুলেছো?
আমি:- আপনার ভাইফু আগে নাকী মেয়ে আগে?
শ্বাশুড়ি:- কি করেছে ও আগে ঐটা তুমি বলো?
নাদিম:- ফুপি আমার কোনো দোষ নেই তসিবা নিজে এসে আমাকে রান্না ঘরে ইশারা করে ডেকে আনছে।
আমি:- তসিবা তকে ডাকবে কেনো তোর থেকে কত সুন্দর আমি। আমার মত একটা বর থাকতে তকে ডাকতে যাবে? দেখুন আঙ্কেল আপনার মেয়েকে কি এমন মনে হয়?
শ্বাশুড়ি:- দুই দিনে এত ভালোবাসা তসিবার প্রতি।তোমার চেয়ে আমরা বেশি চিনি জানি তসিবার সম্পর্কে আর ভালোকরে চিনি। মেহমান হয়ে এসেছো মুখ বুঝে থাকতে পারলে থাকবে না হলে চলে যাবে। তসিবা মেয়ে হিসাবে বেশি একটা সুবিধার নয় যদি পারো ওর কাছ থেকে দূরে থাকলে ভালো।
আমি:- নিজের মেয়ের সম্পর্কে এসব বলতে আপনার লজ্জা করেনা?
শ্বাশুড়ি:- লজ্জা করবে কেনো যে যেমন তার সম্পর্কে সেইটা বলা উচিত। এখানে নিজের মেয়ে আর পরের মেয়ে হলে বা কি আসে যায়।
আমি:- আঙ্কেল আপনি কিছু বলছেন না কেনো?
শ্বশুড়:- ওর মা তো সব বলছে তাহলে আমি আর কি বলবো?
আমি:- যেই মেয়ের মা বাবা তার সম্পর্কে খারাপ বলে অনন্ত তার সাথে আমি জীবন কাটাতে পারবোনা। সরি আঙ্কেল আপনাদের মেয়ে যেহেতু এমন ওকে আমি আমার সাথে নিতে পারোনা। তসিবার সাথে সারা জীবন সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তসিবা তোমার বাবা মা যা বলছে তা তো মিথ্যা হতে পারেনা তাহলে তুমি আমাকে কি দিবে এইটা আমার বুঝা হয়ে গেছে তুমি থাকো কিছু দিনের মধ্যে ডির্ভোসের কাগজ পেয়ে যাবে।
শ্বাশুড়ি:- বলছিনা আগে ছেলেকে সব জানিয়ে তারপর বিয়ে দিতে এখন দেখলে তো শুধু শুধু আমাদের কত গুলি টাকা নষ্ট হয়েছে। এখন এই মেয়েকে আমার ভাইফুর সাথে তুমি বিয়েটা দিয়ে দিও। সৌরভ তুমি কালকে তসিবাকে ডির্ভোসের কাগজটা তৈরি করে পাঠিয়ে দিও।
আমি:- সময় লাগবে তবে খুব তারা তারি দিয়ে দিবো। আচ্ছা আমি যাই আর আন্টি আপনাকে ধন্যবাদ আমাকে সত্যিটা বলার জন্য।
আমি কথা গুলি বলে রুমের দিকে হাটা দিয়েছি তসিবা পিছু পিছু আসতেছে আমি রুমে এসে ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসবো তখনি তসিবা আমার হাতটা ধরেছে। হাত ধরেছে কেনো? তখনি তসিবা বলে,,,
তসিবা:- আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো সেই গুলি বলা শেষ হলে আপনি চলে যায়েন।
আমি:- তুমি কথা বলতে পারো?
তসিবা:- হ্যা বলতে পারি কিন্তু সবার সাথে কথা বলানা যাকে আপন মনে হয় তার সাথে বলতে ইচ্ছে হয়। আমার কথা গুলি আপনার শুনা শেষ হলে আপনি চলে যায়েন প্লিজ।
আমি:- বলো কি কথা বলতে চাও?
তসিবা:- বলছি শুনেন! তখন তসিবার কথা শুনে আমি বাকরুদ হয়ে গেলাম! নিজের মা এমন হতে পারে? To be continue,,,,
( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/shohrab.ampp