গল্প : গরুর হাটে একদিন

0
1705

গল্প : গরুর হাটে একদিন

গার্লফ্রেন্ডের আবদারে গেলাম গরুর হাটে ঘুরতে। হাটে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ফাজলামি করে একটা গরু দাম করে ফেলছি। দাম শুনে বিক্রেতা আমার করা দামেই গরুটি দিতে রাজি হয়ে গেলো। কিন্তু আমি তো গরু নিবোনা। গরু কেনার মতো টাকাও নাই। কিন্তু সঙ্গে গার্লফ্রেন্ড থাকায় বিক্রেতাকে সরাসরি মানা করা যাবেনা। কেননা এটার সাথে ইজ্জতের একটা ব্যাপার স্যাপার ব্যাপকভাবে জড়িত। তবে কোনো না কোনো এক অজুহাতে মানা করতেই হবে।
.
তাই গরুটি না কেনার উদ্দেশ্যে বিক্রেতা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই এটার মধ্যে পিংক কালারের গরু হবে?’ – এটা জিজ্ঞেস করে আমি শিওর ছিলাম তারা এমন গরু আমাকে দিতেই পারবেনা।
কিন্তু বিক্রেতা হাসিমুখে বললো, জ্বে স্যার আমাগো স্টকেই এই একটাই পিংক কালারে গরু আছে। আপনি অনেক ভাগ্যবান স্যার।
বিক্রেতার জবাবে আমি থ’ হয়ে গেলাম। পিংক কালারের গরুও পাওয়া যায়? কোন দুনিয়া বাস করছি আমরা। ভাবা যায়? যাইহোক মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বললাম, না থাক পিংক কালার লাগবে না। তারচেয়ে আপনি বরং তেতুল বিচি কালারে গরু দেখান। – এই বলে আমি মনেমনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলাম। শালায় তেতুল বিচি কালার গরু কই থেকে আনবি আন দেখি। কিন্তু হায়! বিক্রেতা তেতুল বিচি কালারের গরু দিতে অনায়াসে রাজি হয়ে গেলো।
যাক এটাতেও ধরা। কিন্তু কিভাবে মানা করবো তা নিয়ে অনেক্ষণ ভেবে বুদ্ধি করে বললাম, ভাই এটা কেমন যেনো লাগছে। আমার মনে হয় এটার চাইতে আর্মি চেকের গরু হলে ভালো হবে। আছে এমন? – আমার কথা শুনে বিক্রেতা মানা করে বলে দিলো, এমন গরু তাদের কাছে নাই। কিন্তু বিক্রেতার পাশের একজন এগিয়ে এসে বললো, নাই কে বললো? আসেন আমার দিকে। এই বলে সে আর্মি চেকের একটি গরু দেখিয়ে বললো। চলবে এটায়? নাকি আরো আনবো?
শিট! বেঁচেই গেছিলাম। কিন্তু আরেক শালায় সেধে আসছে গরু বিক্রী করতে। এবার সত্যি সত্যিই মস্ত বিপাকে পড়ে গেলাম। কোনোভাবেই বাঁচার মতো অবস্থা নাই। যেই টাইপের গরু চাই, সেই টাইপের গরুই এনে হাজির করে দেয়। এমতাবস্থায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। বিক্রেতাকে বললাম, ভাই আপনার গরুতে চর্বি বেশি, নিবোনা।

বিক্রেতা ফিক করে হেসে দিয়ে হাতে একটা ভিম সাবান ধরিয়ে বললো, এই নেন স্যার ভিম। গরুকে এই সাবান দিয়ে ধুইবেন। দেখবেন, এক ধোয়াতেই তেল চর্বি সব পরিষ্কার।
কি এক মুসিবত। কোনো অজুহাতেই কাজে দিচ্ছে না। শেষমেশ গার্লফ্রেন্ডের কাছে আমার যেই ইজ্জতটা অবশিষ্ট ছিলো সেটাও এবার যায় যায় অবস্থা। এই নিয়ে মহা-টেনশনে আমার অজ্ঞান হওয়ার পালা।
গার্লফ্রেন্ড এতোক্ষণ আমার কাণ্ডকারখানা দেখছিলো। আমার গরুর দামাদামি, কালার চুজ দেখে ব্যাপারটা কি হচ্ছে তা আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সে বিক্রেতাকে ডাক দিয়ে বললো, ভাইয়া সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস একটা গরু হবে?
.
বিক্রেতা অনেক্ষণ মাথা চুলকাইয়া জবাব দিলো, জ্বে না আফা এমন কোনো গরু আমাদের স্টকে নাই। কখনও স্টকে ছিলো বলে মনেও হয়না। আর সারাবাজার খোঁজে এমন গরু একটা পাইবেন কিনা সন্দেহ আছে।
তখন আমার গার্লফ্রেন্ড বিক্রেতাকে বললো, তাহলে দেখি অন্যকোথায় পাই কিনা। না পাইলে আপনারটাই নিবো…
.
গল্প : গরুর হাটে একদিন
.
লেখা : শাহীন মহিউদ্দীন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে