গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০২!
লেখক: তানভীর তুহিন!
রাতে টিভি দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে যায় মুবিন……!
শুক্রবার সকাল ৯ টা ৫৫ বাজতেই মুবিনের ফোনের এলার্ম বেজে ওঠে। প্রচুর ঘুমকাতুরে মুবিন, একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর উঠতেই ইচ্ছে করে না তার। যতক্ষন পর্যন্ত না ঘুমের গুষ্টি উদ্ধার করে দিচ্ছে সে। প্রায় দেড় মিনিট নাগাদ টানা এলার্ম বাজার পর এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে মুবিনের। কপালে ভাজ নিয়ে চোখ কুচকে হাতরে ফোন খুজে আন্দাজেই এলার্মটা বন্ধ করে দেয় মুবিন। তারপর আবার চোখ বন্ধ করে নেয় আরেকটু ঘুমিয়ে নেবে সেই প্রচেষ্টায়। চোখের পাতায় ঘুম আবার নাচানাচি করা শুরু করেছে ঠিক তখনই মুবিনের মনে পড়ে আজ তো শুক্রবার। আজ তো তার জাদুকন্যার লাইভ শো আছে। মুবিন ঝটপট উঠে ফোনটা মিউজিক সিস্টেমের সাথে কানেক্ট করে এফএম চালিয়ে দেয়। প্রতি শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা অবধি মুবিনের কেটে যায় তার জাদুকন্যার শো শুনতে শুনতে। মুবিন দীর্ঘ প্রায় ছয়মাস যাবৎ এই আরজে’র প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। একদম হাবু খেয়ে ডুবে যায় যায় অবস্থা। মুবিন একদমই আগে এই এফএম-টেফএম শুনতো না বা এসব শোনার অভ্যাসও ছিলো না তার। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে মুবিন তার গাড়ির রেডিওটা ছেড়েছিলো, তখন শুক্রবারের সাড়েদশটা মতো বাজে। ব্যাস সেদিন থেকেই শুরু হয় মুবিনের এই অদেখা,অজানা,অদৃশ্য প্রেম। শাওন-সীমান্ত বহুবার বলেছে মুবিনকে, ” তোর যখন মেয়েটাকে এতো পছন্দ। চল না, রেডিও স্টেষন। মেয়েটাকে দেখেও আসবি, আর মেয়েটার কন্টাক্ট নাম্বার বা ফেসবুক আইডিও নাহয় নিয়ে আসবি। এভাবে পছন্দ করে রেখে দিয়ে কী লাভটা পাবি? যদি মন খুলে সেটা সামনে গিয়ে বলতেই না পারিস? ”
কিন্তু মুবিনের প্রত্যেকবার একই কথা, ” প্রেমটা আরেকটু গভীর হোক। প্রেমটা এখনও কেমন যেনো পাতলা পাতলা আরেকটু ঘন হতে দে। এতোটা ঘন যাতে ও আমার প্রেম প্রকাশ দেখেই ফিদা হয়ে যায়। আর তাছাড়াও আমি যখন জানি মেয়েটা সিঙ্গেলই আছে। তাহলে এতো তাড়াহুড়ো’র কী প্রয়োজন? ”
এসব শুনে শাওন-সীমান্তও আর জোর করে না। মুবিনকে মুবিনের মতো করে প্রেমবিলাস করতে দেয়।
মুবিন মিউজিক সিস্টেম থেকে ফোন ডিসকানেক্ট করে হেডফোন লাগিয়ে এসে বেলকনিতে বসেছে। আজ নাহয় একটু আকাশ দেখতে দেখতে তার জাদুকন্যার কথা শুনবে, তার হাসির আওয়াজ শুনবে। মুবিনের মাঝে মাঝে বহুসদস্যের একটা তদন্তকমিটি গঠন করতে ইচ্ছা করে এটা জানার জন্য যে একটা মেয়ের হাসির শব্দ এতো সুন্দর হয় কীভাবে? যখনই মেয়েটা খিলখিল করে হাসে মুবিনের বুকটা একদম তোলপাড় করা শুরু করে দেয়। বুকে কেউ এলোপাথাড়ি হাতুড়িপেটা করে এমন মনে হউ মুবিনের। আর মুবিনের ঠোট দুটোও তার অজান্তেই চওড়া হয়ে ক্যাবলা হেসে ফেলে। মেয়েটার প্রত্যেকটা বুলিতে মুগ্ধ হয়ে যায় মুবিন। আর সবচেয়ে মুগ্ধ হয় মেয়েটার সেন্স অফ সং দেখে। মুবিন আগে একদমই বাংলা গান শুনতে পছন্দ করতো না কিন্তু এই মেয়ের শো শোনার পর থেকে কিছু বাংলা গানের প্রতি মুবিনের প্রেম একদম উতলে পড়ে পড়ে অবস্থা। ১১ টা বাজছে প্রায়, আর ৫ মিনিট বাকি আছে। চোখ বন্ধ করে তার জাদুকন্যার কথা শুনছে মুবিন, ” জীবনতো একটাই তাহলে এতো কীসের ভাবনাচিন্তা? এতো কীসের ফর্মালিটিস জীবন নিয়ে? শুধু মন থেকে ভাবুন আপনি কী চান আর মাথা খাটিয়ে সেটা করে ফেলুন। মনের কথা শুনুন, দেখবেন অনেক বেশি ভালো থাকবেন! ”
মেয়েটা কীভাবে পারে এভাবে মুগ্ধ করে দিতে? জাদুটাদু জানে নাকি আসলে? মুবিন এসব ভাবতে ভাবতেই গান শুরু হয়ে যায়। এটা আজকের শেষ গান, এরপর আবার সামনের শুক্রবারে তার জাদুকন্যার কন্ঠ শুনবে মুবিন। তাই চোখ বন্ধ করে ভেতরের সবটুকু দিয়ে গানটা অনুভব করছে মুবিন…!
তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তোমার কথার শব্দ দূষণ
তোমার গলার স্বর
আমার দরজায় খিল দিয়েছি
আমার দারুণ জ্বর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর…..!
১১ টা বাজে। শো শেষ হয়ে গেছে। মুবিন ফোনে খাবার অর্ডার দিয়ে ফ্রেশ হবার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেছে। ফ্রেশ হয়ে বের হবার ১০-১৫ মিনিট বাদেই ডেলিভারিবয় এসে খাবার দিয়ে যায়। মুবিন খেয়েদেয়ে গোসল সেরে নেয়, নামাজে যেতে হবে।
নামাজ পড়ে এসে দুপুরের খাবারদাবার খেয়ে মুবিন নিজের ড্রামসেটাপ দিয়ে নতুন বিটে রিদম তোলার চেষ্টা করছে। মুবিন শখের বসেই ড্রাম বাজায়, আর যখনই ড্রাম বাজায়। ড্রামের বিটে আশপাশের সবকিছু নাচতে থাকে। ড্রাম প্র্যাকটিস করছে আর ঠোট দিয়ে শিষ বাজাচ্ছে মুবিন। দারুন চাঙ্গা আর টগবগা মেজাজে রয়েছে মুবিন। দুপুর প্রায় আড়াইটা বাজে। শাওন আর সীমান্ত মুবিনের ফ্ল্যাটে এসেছে। দুজনেই সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামায়। মুবিন ওদের এভাবে দেখে ড্রামের বিট ছেড়ে বলে, ” কীরে লুচ্চা পাডারা এই দরবেশের ভং ধরছস ক্যান? ”
শাওন এসে মুবিনের হাত থেকে স্টিক নিয়ে প্রথমে মুবিনের পাছায় বারি মারে। তারপর বেসুরা রিদমে ড্রামে বারি দিতে দিতে বলে, ” আজ শুক্রবার তো, তাই এই স্পেশাল মোল্লা লুক! ”
মুবিন মুচকি হাসে। সীমান্ত এসেই পা চেগিয়ে দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়েছে। সীমান্ত চাচ্ছিলো দুপুরে একটু ঘুমাবে গতরাতে ঘুমাতে পারেনি তার বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু শাওন ঘুমাতে না দিয়ে টেনে মুবিনের কাছে নিয়ে এলো। মুবিন সীমান্তর হাল দেখে শাওনকে জিজ্ঞেস করে, ” কীরে ওই হালার এমন দম যায়যায় অবস্থা ক্যান? ”
শাওন ঠোট কামড়ে এক চোখ বন্ধ করে বেসুরা রিদমে ড্রাম বাজাচ্ছে। একদমই ড্রামে বিট তুলতে পারেনা শাওন। তবুও এই বেসুরা বিটেই যে কী স্বর্গসুখ পায় সে তা একমাত্র সেই জানে। শাওন ড্রাম বাজাতে বাজতেই বলে, ” গতরাতে ঘুম হয় নাই তো তাই ঘুম আসতেছে নাকি! ”
মুবিন হেসে বলে, ” আহারে নান্টুমিয়াটা আমার। ” কথা বলতে বলতেই মুবিন গিয়ে সীমান্তর পেটের উপর ধুপ করে বসে পড়ে। সীমান্ত চোখ বন্ধ করেই শুয়ে ছিলো। মুবিন পেটের উপর বসে পড়ায় ভ্রুকুটিয়ে মুখ থেকে ‘উহহ!’ আওয়াজ বের করে। এর মানে হলো সে ব্যাথা পেয়েছে, এখন শুরু হবে সীমান্তর জ্ঞান দেওয়া। শুরু হয়ে গেলো, ” ওই শালা মাত্র খেয়েই এদিকে আসলাম। পেটে ভাতগুলা ঢুকছে ১০ মিনিটও হবে না তার আগেই তুই পেটের ভাত বের করার জন্য এয়ার এট্যাক ক্যান করতেছস? ”
মুবিন হালকা হেসে বলে, ” তুই ঘুমাচ্ছিস কেনো? রাতে ঘুমাস নাই ক্যান? ”
সীমান্ত মুবিনকে পেটের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসতে বসতে বলে, ” আরে বাল সারারাত আব্বু-আম্মু তাদের বন্ধু-বান্ধুবিদের সাথে আড্ডা দিসে। আর ঘুমাই কীভাবে? ফর্মালিটি মেন্টেইন করার জন্য পুতুলের মতো ওনাদের সামনেই বসে ছিলাম! ”
মুবিন অট্রহেসে বলে, ” এই আকাইম্মা কাহিনির জন্যই আমি বয়সে সিনিয়রদের পার্টি বা অনুষ্ঠানে যাই না। ”
শাওন ড্রাম ছেড়ে এসে বলে, ” এইসব বাদ দে। এখন আইজকা কী করবি ওইটা বল! ”
মুবিন বলে, ” তোরাই ঠিক কর। ”
সীমান্ত ঝটপট বলে, ” চল সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখি। বহুদিন হয় মুভি দেখা হয় না! ”
মুবিন আর শাওন সীমান্তর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। কারন এর থেকে বেটার কোনো প্ল্যান আপাতত নেই তাদের কাছে।
শপিংমলে সিনেপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাওন আর মুবিন। সীমান্ত পপকর্ন আর কোলড্রিংক্স আনতে গেছে। আজ সিনেপ্লেক্সে একটু বেশিই ভীড় লেগে আছে। অবশ্য ভীড় লাগারই কথা কারন স্ক্রিনে এখন ‘জুমাঞ্জি দ্যা নেক্সট লেভেল’ চলছে। মুবিন আর শাওন লিফটের পাশের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে। হঠাৎ মুবিন খেয়াল করলো ভার্সিটির সেই মেয়েটা। মুবিনের খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে একটু ক্ষ্যাপানোর। কিন্তু মেয়েটা তো হেটে চলে যাচ্ছে!, থামাতে হবে। থামানোর জন্য ডাকতো দিতে হবে। মেয়েটার নাম কী? মেয়েটার নামটাই জানে না মুবিন। কী বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। মুবিন সাতপাঁচ না ভেবেই জোরে হাক মারে, ” এই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড! ”
মিছিল দাঁড়িয়ে যায়। কারন এই গলাটা তার চেনা। কিন্তু এটা কী ধরনের অশ্লিল আর কুরুচিপূর্ণ নাম ধরে ডাকা হচ্ছে তাকে? মিছিল ঘুরে মুবিনকে দেখতে পায়। দেখেই গায়ের রক্ত এসিডে পরিনত হয় মিছিলের। এই ম্যানারলেসটা এছাড়া আর কি বলেই বা ডাকবে। পাভার্ট কোথাকার!, কোনোপ্রকার উত্তর বা জবাব না দিয়েই মিছিল সামনের দিকে হাটা ধরে। মিছিলের সাথে এখন মিছিলের কাজিন সিস্টার না থাকলে মুবিনের দাতগুলো হাতে ধরিয়ে দিতো মিছিল। মিছিল দুই পা সমান দুরত্ব সামনে এগোতেই মুবিনের আবার সেই গলাছাড়া অপ্রীতিকর নামে ডাক, ” ওইই ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। এদিকে আসো! ”
মিছিল মুবিনের চেয়ে বেশি দূরে দাঁড়ানো না। সেজন্য আশেপাশের জনগন অনায়াসেই বুঝে যায় মুবিন এই নামটা ধরে ঠিক কাকে ডাকছে। আশপাশের মানুষ সবাই এলিয়েন দেখার মতো অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে। প্রত্যেকটা পুরুষ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিছিলের দিকে। একটা মাঝবয়সি ছেলেতো তার পাশে থাকা ছেলেটাকে বলেই উঠলো, ” মামা এই মালের রেট কতো রে? কী মাল রে মাম্মা! ”
মিছিলের আর সহ্য হয় না। কী ধরনের একটা মারাত্মক অসম্মানের ব্যাপার হয়ে গেলো না ব্যাপারটা? মিছিল সোজা রেগে আগুন হয়ে গিয়ে মুবিনের পাঞ্জাবির কলার ধরে চেচিয়ে বলে, ” এই জানোয়ারের বাচ্চা! কবে আমি তোর বাপের সাথে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডে ছিলাম রে? ” অন্য কোনো ছেলে নিজের বাবার স্বমন্ধে এই কথাটা শুনলে হয়তো মারাত্মক রেগে যেতো। কিন্তু মুবিন হেসে ফেলে। হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলে, ” আমার বাবা কী আবার বিয়ে করলো নাকি? এই লোকটার কী বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? ” মিছিলের রাগ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। একেতো পাব্লিকপ্লেসে এরকম একটা নামে ডেকেছে, তারউপরে আবার এই ড্যামকেয়ার এটিটিউড দেখাচ্ছে তাকে। আশপাশের সবাই ঝটলা বেধে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মুবিন আর মিছিলের দিকে। মুবিন ব্যাপারটা খেয়াল করে। মুবিন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আরে আশ্চর্য আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে এভাবে কী দেখছেন? ও গার্লফ্রেন্ড হয় আমার। রেগে আছে তাই একটু রাগ ঝাড়ছে। এভাবে তাকিয়ে থেকে প্লিয আমাদের এম্বারেসড করবেন না! ” মুহুর্তেই ঝটলাটা ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যায়। মিছিল অবাক হবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সে কিনা গার্লফ্রেন্ড তাও আবার এই অমানুষ পাভার্টের? মিছিল মুবিনের কলারটা আরো জোরে চেপে ধরে বলে, ” এই জানোয়ারের বাচ্চা আমি তোর গার্লফ্রেন্ড হলাম কবে রে? ” মিছিল পারছে না মুবিনের পাঞ্জাবিটা টেনে ছিড়েই ফেলতে। পাঞ্জাবিটা টেনে ছিড়ে ফেললেই বোধহয় তার রাগ খানিকটা নামতো। শাওন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে, আর ইঞ্জয় করছে সীনটা। সীমান্ত পপকর্ন আর কোল্ডড্রিংক্স নিয়ে এসেছে। মিছিল এখনও দাত খিটে মুবিনের কলার চেপে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে-মুখে তার জ্বলন্ত আগুনের শিখা। মুবিন একটা ঠান্ডা কোল্ডড্রিংক্স এর ক্যান হাতে নিয়ে মিছিলের গালে লাগায়। মিছিল মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মুবিন মিছিলের হাতটা কালারের থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে, ” দেখো আমি তোমার নামই জানি না। কিন্তু তোমায় দেখে তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো তাই এই নামটা ছাড়া আর কোনো ওয়ে পেলাম না ডাক দেবার! ”
– ” এটা নামের কাতারে পড়ে? তুই এই ওয়ার্ডটার মিনিং জানিস না? ওয়ার্ডটা কতটা চীপ জানিস না? আর দাড়া তোর আমার সাথে কথা বলতেই বা ইচ্ছে করবে কোন দুঃখে? ”
– ” দুঃখ কেনো হতে যাবে? সুখের জন্যই তো কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। ” বলেই মুবিন মিছিলকে চোখ টিপি মারে।
মিছিল একবার নিজের কাজিনের দিকে তাকায়। মেয়েটা অবাকদৃষ্টিতে ওদের হাঙ্গামা দেখছে। মিছিল মুবিনের সামনে আঙুল নাচিয়ে বলে, ” দেখ পাশে আমার কাজিন দাঁড়ানো। ওর সামনে যদি তুই গতকালের মতো তোর ওই নোংরা প্রস্তাবটা দিস না তোকে এখানেই খুন করে ফেলবো! ” মিছিলের কাজিনের বয়স এই ৭-৮ হবে। ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড ইংরেজি শব্দটার প্রকৃত অর্থ জানে না মেয়েটা। তাই হয়তো এভাবে অবাকদৃষ্টিতে ওদের দেখছে, নয়তো সেও হয়তো তার বোনের মতো এসে কলার চেপে ধরতো মুবিনের। মুবিন বুঝতে পারে ব্যাপারটা আসলেই মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। কারন মিছিলের রাগটা আসলেই মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে। তা মিছিলকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মিছিল পারছে না মুবিনকে এখন খুন করে ফেলে একদম এমন একটা অবস্থা মিছিলের। মুবিন মিছিলকে বলে, ” দেখো তুমি ভার্সিটিতে আসার পরে অমনভাবে শান্ত থাকতে, চুপচাপ থাকতে, এমনকি মেয়েদের সাথেও কম আড্ডা দিতে সেটা দেখেই শাওন-সীমান্ত আর আমাদের ক্যাম্পাসের কিছু বান্ধবি আমায় এটা ডেয়ার দেয় যে তোমায় ওভাবে ডাবলমিনিং ভাবে অফার করবো আমি। আচ্ছা তুমি মনে করে দেখো তো আমি কী তোমায় কখনও সেক্স করার জন্য বলেছি? শুধু নাইট স্পেন্ট করার জন্যই তো বলেছি নাকি? আর সেটাও ডেয়ার কম্পলিট করার জন্য। আর তাছাড়া তুমি যদি বাই এনি চান্স কনভেন্সড হয়ে যেতে বা আমার ফ্ল্যার্টিং এ সায় দিতে তাহলে আমি ওদের থেকে পনেরো হাজার টাকা পেতাম। আর ট্রাস্ট মী আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমায় এভাবে বিরক্ত করার। আমিতো শুধু ওদের দেওয়া ডেয়ারটা কম্পলিট করছিলাম ব্যাস শেষ! ”
মিছিল এবার একটু স্বাভাবিক হয়। মিছিল শাওন আর সীমান্তকে বলে, ” এমন উইয়ার্ড ডেয়ার দেয় নাকি কেউ? যেখানে অন্য কেউ পার্সোনালি ডিস্টার্ব’ড ফীল করে! ”
শাওন বলে, ” আমরা এমনিই মজা করে দিয়েছিলাম। তবে আর এরকম করবো না শিক্ষা হয়ে গেছে! ” বলেই একটু হাসে শাওন। সাথে সীমান্ত আর মুবিনও হাসে। মিছিল কিছু না বলেই হেটে চলে যাওয়া ধরে। মুবিন পিছন থেকে ডেকে বলে, ” ওই তোমার নাম’ই তো বললে না। এরপরেও কী ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড বলেই ডাকবো? ”
মিছিল পিছন ফিরে বিরক্তি নিয়ে বলে, ” ইউ ক্যান কল মী মিছিল। আমার নাম মিছিল! ”
মুবিন চওড়া হেসে বলে, ” আচ্ছা মিছিল, কাল ক্যাম্পাসে দেখা হচ্ছে তাহলে। ”
মিছিল কিছু না বলেই হাটা ধরে। হঠাৎ মুবিন পিছন থেকে গিয়ে খপ করে মিছিলের হাত টেনে ধরে। মিছিলের পরানপাখিটাই উড়ে যাওয়া ধরছিলো মুবিনের এই আকস্মিক হাত ধরায়। মিছিল চরম অবাক হয়েছে মুবিনের এই আচরনে। প্রচুর রেগেও গেছে। মিছিল রাগ ঝেড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুবিন বলে, ” বাই এনি চান্স তুমি আমায় ট্র্যাপে ফেলে পটাতে চাচ্ছো না তো? ”
মিছিলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মুবিনের কথা। মিছিল বিরক্তিভরা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে, ” মাথায় ছিট আছে নাকি তোমার? আমি পটাতে যাবো? তাও আবার তোমায়? ”
মুবিন এখনও মিছিলের হাত চেপে ধরে রেখেছে। মুবিন মিছিলের হাত চেপে ধরেই বলে, ” তাহলে তোমার নাম মিছিল বললে কেনো? ”
মিছিল এসেছিলো ফিল্ম দেখে একটু রিফ্রেশ হবে। আর এদিকে আসার পর রিফ্রেশমেন্ট তো দূরের কথা একের পর এক হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ছে সে। মিছিল চরম বিরক্ত হয়ে বলে, ” আরে আজিব তো। আমার নাম মিছিল তাই মিছিল বলেছি। ”
মুবিন মিছিলকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে ওর কাজিনকে জিজ্ঞেস করে, ” ভাইয়া তোমার আপুর নাম কী মিছিল? ”
মিছিলের কাজিন মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মুবিন সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকে জিজ্ঞেস করে, ” তুমি কী প্রতি শুক্রবার এফএমে একটা শো হোস্ট করো? তুমি আরজে মিছিল? ”
– ” হুম। তুমি জানো কীভাবে? আমার শো শোনো নাকি? ”
– ” আরে শো শুনি মানে। আমি তোমার আওয়াজের, তোমার, প্রেমে পড়ে আছি। তুমি আসলেই আরজে মিছিল তো? ”
মিছিল চোখ ছোট করে ভ্রু কুচকে তাকায় মুবিনের দিকে। তারপর হ্যান্ডব্যাগ থেকে রেডিও স্টেষনের আইডি কার্ডটা মুবিনের সামনে ধরে বলে, ” এবার বিশ্বাস হইসে তো যে আমি আরজে মিছিল? ”
মুবিন যেনো চোখের সামনে আসলেই কোনো জাদুকন্যাকে দেখছে। যত সুন্দর এই মেয়ের কন্ঠ তার চেয়েও কোটিগুন সুন্দর এই মেয়ে। মুবিন এখনও মিছিলের হাতটা চেপে ধরে আছে। মুবিন বারবার মিছিলকে পা থেকে মাথা অবধি খুটে খুটে দেখছে। চোখে তার অন্যরকম এক প্রাপ্তির ছাপ, মুখে স্পষ্ট তার মিছিলের প্রতি মুগ্ধতা। মিছিল মুবিনকে বলে, ” এবার তো চিনেছো যে আমি আরজে মিছিল। এখন আমার হাতটা ছাড়ো মুভি দেখতে ঢুকবো! ”
মুবিন ফ্যালফ্যালিয়ে মুখে একটা ক্যাবলা হাসি রেখে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো মিছিলকে। এক অজানা ঘোর ঘিরে ধরেছিলো তাকে। মিছিলের কথায় ঘিরে ধরা ঘোরগুলো দৌড়ে পালিয়েছে। মুবিন ক্যাবলা হেসে আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে বলে, ” আরে মুভি তো এখন আমরা বানাবো। আই লাভ ইউ! ”
মিছিল হা করে তাকিয়ে আছে। কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে এই ছেলে? সোজা আই লাভ ইউ মেরে দিলো? তার আগে ইম্প্রেস করার জন্য কোনো ক্যাচি ডায়লগ বা ক্রাশ হিস্ট্রিও বলবে না?
মিছিলের কাজিনটা আই লাভ ইউ’র অর্থ জানে। সে অনেক বাংলা ছবিতে দেখেছে নায়ক নায়িকাকে আই লাভ ইউ বলে আর নায়িকা লজ্বা পেয়ে হাসে। তারপরেই হয় নায়ক দৌড় মারে নাহয় নায়িকা দৌড় মারে তারপরই শুরু হয়ে যায় নায়ক নায়িকার নাচাগানা। তাই সে আই লাভ ইউ কথাটা শুনে মুখ চেপে ফিক করে হেসে দেয়। মুবিন পিচ্চিটাকে হাসতে দেখে বলে, ” এই পিচ্চি তুমি হাসতেছো কেনো? আচ্ছা তোমার আপুর সাথে তোমায়ও আই লাভ ইউ! ” কথাটা শুনতেই পিচ্চিটা হাসি থামিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মুবিনের দিকে। তারপর কি না কি ভেবে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। মুবিন, শাওন, সীমান্ত একসাথে হো হো শব্দ করে হেসে ওঠে। আর হাসির কী শব্দ!, একদম আকাশ বাতাস কাপানো শব্দ। মিছিলেরও ইচ্ছে করছে এই ঘটনার মজা লুটে নেওয়ার জন্য একটু শব্দ করে হাসতে। কিন্তু সে হাসতে পারবে না, তাহলেই এই বজ্জাত ছ্যামড়া আস্কারা পেয়ে যাবে। আর তার মোটেই পছন্দ না এই ছেলেকে। প্রেম তো দূরের কথা সে এই ছেলের সাথে আলগা ফ্রেন্ডশীপও করতে চায় না। তাই মিছিল এক ঝটকায় নিজের হাত মুবিনের থেকে ছাড়িয়ে বলে, ” ওয়েল ট্রাই। বাট আমি পটছি না। তোমার মতো হাজারটা ছেলে দৈনিক আমায় আই লাভ ইউ বলে। ঐ হাজারটার মধ্যে যেকোনো একটাকে চোখ বন্ধ করে হ্যা বলে দেওয়া যাবে কিন্তু তোমায় চোখ খুলেও হ্যা বলা যাবে না। সো কীপ ডিস্টেন্স ফ্রম মী! ”
– ” চোখ খুলেও হ্যা বলা যাচ্ছে না কেনো? তুমি জানো পুরো ভার্সিটির মেয়েরা মরে যায় আমার সাথে প্রেম করার জন্য! ”
– ” হু জানিতো। এজন্যইতো চোখ খুলেও হ্যা বলা যায় না। বিকজ এ প্লেবয় অলওয়েজ বী এ প্লেবয়, সো প্লিজ আমায় আর ডিস্টার্ব করবা না নেক্সট টাইম। আমার সাফ সাফ উত্তর না, না মানে একদম না! ” বলেই মিছিল হেটে চলে যায়।
মুবিন একটা চওড়া হাসি দিয়ে চেচিয়ে বলে, ” আরে না মানে হ্যা তো আমি করবো। এখন আগে পাশাপাশি বসে ফিল্ম দেখে নেই। সুন রাহা হ্যায় না তু আ রাহা হু ম্যায়! ”
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “