গল্প-আত্মা_নাকি_সে.?( পর্ব-০৯ ও শেষ)

2
5708

গল্প-আত্মা_নাকি_সে.?( পর্ব-০৯ ও শেষ)

লেখক– #Riaz_Hossain_imran ( জ্বীনরাজা)
—————-
এদিকে রাস্তায় সামিয়াকে অর্ধ নগ্ন করে ২ মিনিট ধর্ষন করে ছেলেটি। হুম ছেলেটিই,তবে ওর ভিতর থাকা রিয়াজের আত্মাই তুলে নিচ্ছে তার প্রতিশোধ। মানুষের ভিড়ের ভিতর আসতে না পেরে প্রিয়া আর মায়া বাহির থেকে সামিয়া সামিয়া বলে চিৎকার করে গলা ফাঠাচ্ছে।

মায়া আর প্রিয়ার চিৎকার মানুষের ভিড়ের মধ্যেই আটকা পড়ে যায়।পৌচায়নি আমজনতার কানে।সবাই উপভোগ করছে সামিয়ার ধর্ষণীয়। কিছুক্ষন পর রিয়াজের আত্মা ছেলেটির দেহ ছেড়ে দেয়।ছেলেটিও অজ্ঞ্যন হয়ে পড়ে সামিয়ার উপর।একজন এসে সামিয়ার নাকে হাত দিয়ে দেখে সামিয়ার মৃত্যু হয়ে গেছে।এবার সবাই অজ্ঞ্যান থাকা ছেলেটিকে পিটিয়ে সেখানেই মেরে ফেলে।ব্রেকিং নিউজে খবর বের হচ্ছে “সামিয়া হত্যার পিছনে যাদের হাত আছে, তাদের বিচার চাই।”বাহহ খুব সুন্দর করে বাঙালীরা গরম করতে পারে,সমাধানের বেলায় সবাই মজাটাই নিতে জানে। যদি কাশ্মীরের পর বাংলাদেশে মুসলিমদের অত্যাচার শুরু হয়,তবে ঠিক এমনি হবে।সবার সামনে মুসলিম হত্যা হবে,অথচ কেও এগিয়ে আসবেনা।আর অন্যদিকে সোস্যাল মিডিয়াতে একের পর এক প্রতিবাদী নিউজ বের হবে”মুসলিম হত্যার বিচার চাই। ” বুঝিনা,বাঙালী এমন কেন।বাশ খাওয়ার আগে বলবে, বাশটির সবুজ কালার খুবই সুন্দর। বাশ খাওয়ার পর বলবে, দারুন ভাবে লেগেছে রে,উফফ কি ব্যথা।

এদিকে সামিয়ার মৃত্যুর পর আতঙ্ক হয়ে আছে প্রিয়া আর মায়া।ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ এসে দুই চারজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।ব্যস,ঘটনা এখানেই শেষ। পাবলিকের উপভোক্তা কেও চোখেও তুলে দেখেনি। কিছুদিন হৈ চৈ হয়েই কবি নিরব।

মায়া আর সামিয়া এই ঘটনার পর আর সাভারে যায়নি মাটি নিয়ে আনতে। ভয়ে ভয়ে কাটিয়ে দেয় আরো ২ টি দিন। ২ দিন পর ওরা মাটি আনার সিদ্ধান্তে আসে।এরপর গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে আবার মাটির উদ্দেশ্য।রিয়াজকে যেখানে ফেলেছে, সেখানে গিয়ে ১থলি মাটি ওরা সংগ্রহ করে নেয়।থলি সহ মাটি নিয়ে আবার রওনা হয় নোয়াখালী। সাথে কোনো নতুন ফোন নেয়নি ওরা। হয়তো ৩০৬৩ নাম্বার ওয়ালা ফোন থেকে আবার যদি ফোন চলে আসে। ভয়ের উপরে যদি কোনো ভয় থাকে,তা হলো জীবনের ভয়। প্রেমিক প্রেমিকাকে ডায়লগ দেয়” তোমারে না পাইলে আমি মইরা যামু,চইলা যামু,হারাইয়া যামু অজানা দেশে”। হুদাই এসব ডায়লগ মেরে ছেলে/মেয়েদের মনটাই গলানো। একবার বলে দেখেন মরার জন্য,দেখবেন উত্তর আসবে”তুমি আমাকে ভালোবাসোনা,তাই তো মরার কথা বলছো,যাহহ তোর লগে ব্রেকাফ”। সাথে সাথে ছোটখাটো একটা ডিপোর্স ও দিয়ে দিবে,মানে ব্লক করে দিবে ফেসবুক একাউন্ট। এই হচ্ছে আধুনিক যুগের প্রেম।আরে ভাই,প্রেম করবেন তো তাকে পাওয়ার জন্য করেন।নিজেকেই যদি শেষ কইরা দেন,তাইলে বুঝা যায় কি?আপনি নিজেকেই ভালোবাসতে পারেন না,তো তাকে কিভাবে ভালোবাসবেন।

এদিকে মায়া ড্রাইভিং করতে করতে চোখে ঘুম লেগে এসেছে। প্রিয়া চালাবে বলছে,কিন্তু মায়া বারণ করেছে যে সেইই চালাবে।মায়ার মনে ভয়,যদি প্রিয়ার হাতে কিছু হয়ে যায়।নিজের উপর নিজেই নির্ভর করে গাড়ি চালাচ্ছে। অবশেষে কবিরাজের বাড়িতে এসে পৌচায় তারা ৫ ঘন্টা পর। এসেই তাড়াহুড়া করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে মায়া আর প্রিয়া। দৌড়ে আসে কবিরাজের বাড়ি। কিন্তু তাদের শেষ ভরসা টুকুও রইলোনা। ওরা যেদিন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো।সেদিন রাতেই কবিরাজকে কে যেনো মেরে ফেলেছে।তাও স্বাভাবিক ভাবে মারেনি। পুরো দেহ মাটিতে পুতে শুধুমাত্র মাথাটা উপরে রেখে দিয়েছিলো। লোকমুখে শুনা যায়,কবিরাজের দুটু চোখই ছিলোনা।

মায়া আর প্রিয়া কান্না জুড়ে দেয় সেখানেই।ওদের শেষ যে পথ ছিলো,এখন তো সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।কি করবে ওরা। কিভাবে বাচাবে নিজেদের।তারাও কি বলি হবে? রিয়াজের..?

নিরুপায় হয়ে আবার ঢাকা চলে আসে প্রিয়া আর মায়া।কি থেকে কি করবে,তা ওদের অজানা। রিয়াজের হাত থেকে কি তারা বাচতে পারবেনা..? কেটে যায় আরো কয়েকদিন।হাতের আঙটি খুলেনি বলেই হয়তো এতোদিন তারা স্বাভাবিক আছে। মায়া আর প্রিয়া হটাৎ মনে করে সেই কবিরাজের কথা।যে কবিরাজ সামিয়াকে সাহায্য করেছিলো। অনেক কস্টে খোজ খবর নিয়ে ওরা জানতে পারলো এই কবিরাজ এখনো বেচে আছে। কিন্তু মায়া আর প্রিয়া উনার কাছে কোন মুখ নিয়ে যাবে।কোন পরিচয় দিবে।ভাবতেই মায়া বলল)

— প্রিয়া,আমরা যদি উনার কাছে যাই।তবে উনি আমাদের এমনি চিনতে পারবে।কারণ সামিয়া হয়তো আমাদের কথা আগেও বলেছিলো।উনি সামিয়াকে হেল্পও করেছে।

— হুম তা ঠিক।কিন্তু একটা কথা,আত্মা ছেলেটি কে,আমরা কিন্তু এখনো জানতে পারিনি।

— সেটা এই কবিরাজের থেকে জেনে নিবো।

— তাহলে কি শিওর যাচ্ছিস?

— জীবন বাচাতে হলে, যেতে তো হবেই বল..?

— ওকে চল।

( মায়া আর প্রিয়ার যে বলা সেই কাজ। ওমনি রওনা দেয় রংপুর। অনেক কস্টে কবিরাজের ঠিকানা বের করে ওরা কবিরাজের বাসায় যায়। কবিরাজ তাদের দেখতেই বলল)

— আমি জানতাম, তোমরা আসবেই।

— জ্বী? ঠিক বুঝলাম না।

— তোমাদের সাহায্যকারী একমাত্র আমিই আছি। সামিয়াকে আমি বলেছিলাম,কোনো এক রাস্তার মাঝে তোর মৃত্যু হবে,তুই রস্তায় বের হইস না।কিন্তু কে শুনে কার কথা।অবশেষে সে এরই স্বীকার হয়েছে।তাই বুদ্ধি করে আমি সামিয়াকে বলেছি আমার কথা তোদেরকে বলার জন্য। আমি জানিতাম।সামিয়ার মৃত্যুর পর তোরা আমাকেই স্বরণ করবি।

— এখন আমরা কি করবো? কিভাবে মুক্তি পাবো আমরা?

— রিয়াজের আত্মাকে শান্ত করতে হলে ওর মরা দেহের জায়গা থেকে মাটি নিয়ে আসতে হবে।

— আমরা এনেছি। এই যে।( থলিটা এগিয়ে দিয়ে)

— বাচ্চা মেয়েটির আত্মাকে শান্ত করতে হলে ওর পরিবারের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।

— কিন্তু..?

— আমি জানি তোমরা ধরা খাওয়ার ভয়ে সেটা করতে চাইবেনা।তাহলে শুনো,তোমরা বাচ্চা মেয়েটির বাসায় গিয়ে বলবে যে,ময়লার জায়গায় ময়লার বস্তা ফেলার জন্য তোমরা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলে।তারপর ওই বাচ্চাটি সেখানে ময়লার বস্তার ভিতর পড়ে মারা যায়।তোমরা চিকিৎসা ও করেছিলে।তবে বাচাতে পারোনি। আর এর জন্য ক্ষমা চাইবে তোমরা।

— যদি ক্ষমা না করে..?

— মেয়েটি মারা গেছে। তাও প্রায় বছরের উপর হয়ে গেছে। এখন ওরা ক্ষমা করবেই।

— আর বাচ্চা ছেলেটি..?

— হুম।তার আত্মাকে শান্ত করতে হলে,সানজিদা বেগমের কাছে যেতে হবে।

— মানে..? উনি তো আমাদের কলেজের ঝাড়ুদার। গত ৫ মাস থেকে উনি কলেজে আসছেই না।উনার কাছে যাওয়ার কারণ কি..?

— বাচ্চা ছেলেটি সানজিদা বেগমের ছেলে।

— ঠিক বুঝলাম না

— তোমরা সানজিদাকে লোভ দেখিয়ে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছো তাইনা..?

— হুম।

— কিন্তু এর জন্য সানজিদা নিজের ছেলেকেই হারিয়েছে। যখন তোমরা উনাকে ভয় দেখিয়ে বা লোভ দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছো। উনি চুপই ছিলো। তবে রিয়াজের মৃত্য উনি সহ্য করতে পারেনি। উনি জানে তোমরাই ওর খুনি। কিন্তু পাশাপাশি নিজেকেও খুনি ভেবে নিয়েছিলেন সানজিদা বেগম।সামলাতে না পেরে উনি শেষে চাকরিটাই ছেড়ে চলে যায় নিজের বাড়ি।তোমাদের দেওয়া টাকা ওদের সংসারে বেশিদিন টিকেনি। মাত্র ১ মাস যাওয়ার পর পরেই উনার ছেলে খাবারের কস্টে মারা যায়।খাবার পায়নি তা নয়। ছেলের আগে থেকেই রোগ ছিলো। তার উপর পুষ্টিকর খাবার না পেয়ে,ঠিক মতো মেডিসিন নিতে না পেরেই পাড়ি জমায় ওপারে।সানজিদাও কাজ কর্ম হাতে পায়নি। ছেলের মৃত্যুতে অসুস্ত হয়ে পড়ে সানজিদা বেগম। উনার ছোট মেয়ে ভিক্ষা করে করে দিনে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পায়।মেয়ের মাত্র ৬ বছর। এতোটুকু একটা মেয়ে ভিক্ষা করে ৬০-৭০ টাকা এনে ডাল ভাত খায়। পেট তো ভরেই না।উল্টো খাবার নিয়ে মারামারি হয়ে যায় মা মেয়ের।কোনো রকম জীবনটা বাচিয়ে রেখেছে ওরা। আর এর পিছনে সব থেকে বড় হাত তোমাদের।শুধুমাত্র একটা কাজের জন্য তোমরা কয়টা প্রান বিপদবহুল করেছো, সেটা তোমাদের আইডিয়া নেই।

( মায়া আর প্রিয়া কান্নাকাটি শুরু করছে। কিন্তু এখন আর এসব করে লাভ কি। ওরা তো পাপ করতে করতে এতোই বেশি পাপ করে ফেলেছে,যে ওদের বেচে থাকার কোনো মানেই হয়না। কিছুক্ষন পর মায়া বলল)

— সানজিদার কাছে গিয়ে আমরা কি করবো,বলে দিন প্লিন।

— উনার কাছে গিয়ে,উনাদের দায় ভার নিতে হবে। নিজের মা আর বোনের সুবিধা দেখলে,বাচ্চা আত্মাটি মুক্তি পেয়ে যাবে।তবে সারাজীবন এর জন্য তাদের চালাতে হবে তোমাদের।আর নয়তো নিজেরাই সারাজীবনের জন্য পৃথিবী ত্যাগ করো।

— না,আমরা সানজিদার সব ভরন পূষন করবো।তারমানে কি এখন আমরা সম্পুর্ন অভিশাপ মুক্ত..?

— না, থলি ভর্তি এই মাটি আমি কবর দিয়ে ফেলবো।তবে রিয়াজের আত্মা এতে হার মানবেনা।সে তখনও তোমাদের ক্ষতি চাইবে। বাকি ২ পরিবারকে তোমরা শান্ত করতে পারলে,তবেই রিয়াজের আত্মা চলে যাবে।

— ঠিক আছে,আমরা তাহলে ঢাকা চলে যাচ্ছি।

— হুম সাবধানে।আর একটা কথা..

— জ্বী বলুন?

— ৩০৬৩ একটা নাম্বার আছে।ওটার রহস্য জানো..?

— আরে!ভুলেই গিয়েছিলাম। হুম বলুন,ওটা কার নাম্বার।

— কারো নাম্বার না।ওটা হচ্ছে,রিয়াজের সিট নাম্বার।

— যেমন..?

— অনেক আশা নিয়ে রিয়াজ কলেজে এসেছিলো।নিজের একটা পরিচয় গড়বে বলে। সারাদিন সে তার সিট নাম্বারের দিকে তাকিয়ে থাকতো।শুধুমাত্র একটা কথাই ভাবতো,””এই সিট থেকেই আমি অনেক দূরে যাবো,তখন আমার সিট হবে সবার উপর।শুরু হোক ৩০৬৩ সিট থেকেই””।
কিন্তু তোমরা তো ওর সিট না,তাকেও ধ্বংস করে দিয়েছো।তাই রিয়াজ তার স্বপ্নের সিড়ির সেই নাম্বার অনুযায়ী তোমাদের ফোন দিচ্ছে।

— হুম। বুঝেছি ( আরো ভয়ার্ত কন্ঠে)

— ঠিক আছে,এবার যেতে পারো।

— ওকে।

( প্রিয়া আর মায়া সোজা গিয়ে পৌচায় বস্তির মধ্যে।অনেক খুঁজাখুঁজি করে বাচ্চা মেয়েটির বাসা বের করে।কিন্তু এসেই তারা বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। গত পরশু ওর পরিবারের সবাই বস্তি ছেড়ে চলে যায়।এবার প্রিয়া আর মায়া করবেটা কি। যদি তাদের খুজে না পায়,তবে তারা ক্ষমা চাইবে কি করে,কিভাবে মুক্তি দিবে সেই আত্মা মেয়েটিকে।অনেক খুঁজাখুঁজি করেও মিলেনি মেয়েটির পরিবার।হয়তো পড়ে আছে কোনো রেল স্টেশনের পাশে,নয়তো পড়ে আছে কোনো ময়লা আবর্জনার অবস্তানে। কিন্তু এতো বড় এক শহরে ওদের খুজবে কোথায় তারা।সময় যত যাচ্ছে,মৃত্যুর চাহনি ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের মূল্যবান সময় গুলো।মায়া আর প্রিয়া নেমে পড়ে রাস্তায়। যদিও ওদের চিনেনা, তবে বস্তির লোকদের থেকে কয়েকটা ফটো সংগ্রহ করে নেয় তারা। খুজতে খুজতে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। দুপুরবেলার রোদ্রের তাপ চুষে নিচ্ছে ওদের শক্তি।পুরপুরি ভাবে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে একটা নদীর পাড়ে এসে বসে পড়ে।পাশেই একটা ফুচকার দোকান দেখতে পায়। মায়া হাক চেঁচিয়ে বলল)

— মামা, দুই প্লেট ফুচকা দিন তো..?

— জ্বী আপা দিতাছি।তা ঝাল কমাইয়া দিমু নাকি বাড়াইয়া দিমু

— ওই এক রকম হলেই হবে। আপনি দিন।

— আইচ্ছা আপা,একটু বহেন,দিতাছি।

( ২ মিনিট পর)

— এইজে আপা,আপনাগো ফুচকা, নেন।

( মায়া পিছন পিরে ফুচকাওয়ালার দিকে তাকাতেই চমকে উঠে।আরে!উনি তো সেই মেয়েটির বাপ।যে মেয়েটির পরিবারকে ওরা পাগলের মতো খুজে আসছে। শিওর হওয়ার জন্য ব্যগ থেকে ফটো বের করে দেখে নেয়। নাহহ,পুরোপুরি ভাবেই মিলে গেছে। মায়া ফুচকার প্লেট রেখে উনাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষন কান্না করতে থাকে। লোকটি হতভাগ হয়ে দাড়িয়েই রয়েছে। মায়ার কান্নার কারণে লোকটি শার্ট ভিজে প্রায় যায় যায়।)

— আপা,আপনি কানতাছেন কেন।আমি তো কিচ্ছু বুঝতাছিনা।

— প্লিজ আমাদের ক্ষমা করুন প্লিজ। আমরা অনেক বড় এক ভুল করে ফেলেছি। শুধুমাত্র আপনিই পারেন আমাদের রক্ষা করতে।( কান্না করতে করতে কথা গুলো বলছিলো)

— আপনাদের আমি দেখলামই এই প্রথম।কি হইছে আমারে খুইলা কইবেন?

— আগে বলুন আমাদের ক্ষমা করে দিবেন?

— ঠিক আছে মা,আমি ক্ষমা কইরা দিমু।এহন কও কি হইছে।

— আসলে আমরা ভুল করে ময়লার বস্তা ফেলতে গিয়ে আপনার মেয়ের উপর ফেলে দিয়েছিলাম।আপনার মেয়ে সে ময়লার বস্তার ওজন না নিতে ফেরে মারা যায়। আমরা হসপিটালেও নিয়ে গেছিলাম।কিন্তু বাচাতে পারিনি। এরপর থেকে আপনাদের অনেক খুজেছি আমরা। প্লিজ, আমাদের ক্ষমা করুন প্লিজ।

( মায়ার কথা গুলো শুনে লোকটির মুখ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়। পুরো মুখে নেমে আসে এক অন্ধকার। রাগ করার মতো ভাব নিয়ে লোকটি নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়।মায়া আর প্রিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছে, আর লোকটির দিকে হাত জোড় করে তাকিয়ে আছে। লোকটি নদীর পাড়ে গিয়ে গলা থেকে গামছাটা হাতে নেয়।এরপর মুখের ঘাম মুছে একটা স্বস্থীর নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো)

— আপা, আমরা গরিব মানুষ। ঠিক মতো খাইতে পারিনা। আমার মাইয়াডা খুব মায়াবী ছিলো। আমারে যহন আব্বা আব্বা কইয়া ডাক দিতো।আমার কলিজাডা পুরা ঠান্ডা হইয়া যাইতো। একদিন হটাৎ কইরাই আমার মাইয়াডারে আমরা হারাইয়া ফেলছি। জানেন আপা? মাইয়া আমার অনেক চটু ছিলো( চালাক যাকে বলে)। খালি অভিনয় কইরা কইতো “আব্বা,আইজকা আমার লাইগা চকলেট নিয়া আইসেন,তুমি হজ্ঞলের থেইকা ভালা,আমি জানি তুমি না করবা না”। আমার মাইয়ার এমন ঢং কথা হুনলে মনডা চাইতো ওরে কলিজায় ভইরা রাইখা দি।টাহা পয়সা ছিলোনা আমার কাছে। দিন আইনা দিন খাইতাম।চকলেট কিন্না দিতাম বাকি রাইখা। এহন এই দোকানডা অনেক কস্ট কইরা দিছি। কোনো রকম চলতাছে আমার সংসার। এহন আমার পকেটে চকলেটের টাকা থাকে আপা,শুধু যে খাওনের লাইগা অভিনয় করতো,আমার সেই মাইয়াডাই নাই।

( কথা গুলো বলেই লোকটি গামছা চোখে রেখে কান্না করতে থাকে। উনার সাথে মায়া আর প্রিয়াও কান্না জুড়ে দেয়। পরিস্তিতি হিসেবে মায়া আর প্রিয়া দৌড়ে গিয়ে লোকটির পায়ে পড়ে।লোকটি চমকে উঠেই নিছের দিকে তাকায়। এরপর মায়া বলে)

— প্লিজ,আমাদের মাফ করুন। আমাদের অজান্তে আমরা অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। প্লিজ,দয়া করুন আমাদের?

— আরে কি কইতাছো,আমার একটা মাইয়া গেছে তো কি হইছে,আর দুইটা মাইয়া তো পাইছি আমি।আইজকা হইতে তোমরাই আমার মাইয়া

( মায়া আর প্রিয়া লোকটিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তাদের ঠিক বাম পাশের একটি গাছের উপর থেকে বাচ্চা আত্মাটি মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
” হিহিহিহি,আব্বায় তো আমার জায়গা ওগোরে দিয়া দিছে।আমি তাগোরে কেমনে মারুম।”
বলেই বাচ্চাটি চলে যায় তার ঠিকানায়। মুক্তি পায় একটি অভিশাপ্ত আত্মা।এদিকে মায়া আর প্রিয়া লোকটির সাথে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে দেওয়ার পর চলে যায়। এবার ওদের লক্ষ্য সানজিদার দায় ভার নিতে। রাস্তার মাঝে আসতেই জ্যাম পড়ে যায় রাস্তায়। গাড়ি অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে জ্যাম ছুটার কোনো নাম নিশানা নেই। হটাৎ একটি ছেলে জানালা দিয়ে হাত পেতে বলল)

— দুইটা টাকা দিবেন?

— আরে যাহহ, কোথা থেকে যে আসে এসব ভিক্ষুক

— আপা, আমার খিদা লাগছে।এক বেলা ভাত খামু।দেননা কয়টা টাকা

( প্রিয়া এবার মেজাজ খারাপ করে ছেলেটির দিকে তাকায়।প্রিয়া সেদিকে তাকাতেই এক চিৎকার মেরে উঠে।প্রিয়া চিৎকার দেওয়ার পিছনে কারন হচ্ছে,কবিরাজের চোখ যে তুলে নিয়েছে,আর রিয়ার যৌনি দিয়ে যে ছেলেটি একটি রড দিয়ে আঘাত করেছে,এইটা সেইই ছেলেটা। প্রিয়ার সাথে সাথে মায়া নিজেও ভয় পেয়ে যায়। প্রিয়া ভয়ে জানালা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মায়া সেটা না করে গাড়ির দরজা খুলে দৌড় দেয় সামনের দিকে। এমন সময় রাস্তার সবুজ বাতি জ্বলে উঠে। অর্থাৎ জ্যাম খুলে গেছে। প্রিয়া জোরে এক চিৎকার দেয় মায়া বলে। এতক্ষনে সব শেষ।একটা গাড়ি মায়াকে ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে মায়া পিছনে গিয়ে ধাক্কা খায় আরেকটা কাচের গাড়ির সাথে। নিজেকে ঠেকাতে গিয়ে কাচের মধ্যে হাত দিয়ে ফেলে।

কিন্তু নিজেকে ঠেকাতে পেরেছে ঠিকই।এর পরিবর্তে উল্টো এক কাজ হয়ে গেছে।মায়ার হাত কাচের আঘাতে কেটে গেছে।প্রায় চারটা আঙুল কেটে পড়ে যায় রাস্তায়।এর মধ্যে আংটি থাকা সেই আঙুল ও কেটে পড়ে যায়।মায়ার রক্তাক্ত হাত নিয়ে পিরে আসলেই হয়তো বেচে যেতো।কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।৪৭ মিনিটের জ্যাম থেকে তেড়ে আসা গাড়ি তাকে পিষিয়ে ফেলে রাস্তায়।একেক জায়গায় পড়ে আছে মায়ার একেকটা শরীরের টুকরো। জামাকাপড় ছিড়ে রক্তাক্ত হয়ে গেছে ওর প্রতিটি অঙ।

শেষ মায়া।মুচে গেছে মায়ার অস্তিত্ব। পাপের সাজা ঠিকই পেয়েছে সে। এবার বাঙালীর কাজ শুরু।ব্রেকিং নিউজ, আজ বিকেল ৫ ঘটিকা, মাতাল এক মেয়ে গাড়ির নিছে পড়ে নিহত হয়। অনেক নেশা করার ফলে নিজের সেন্স ছিলোনা।
গুজব গুজব গুজব, একবার এক রকম গুজব ছড়ানো শুরু হয়ে যায়।

প্রিয়া বুঝতে পেরেছে,ও আর বাচতে পারবেনা।ওর সাথের ৭ জনকে কেড়ে নিয়েছে সে।এবার তাকেও নিয়ে যাবে।প্রিয়া আর সহ্য করতে না পেরে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর ফ্যানের সাথে নিজের ওড়না বেধে নিজের গলায় নিজেই ফাসি দেয়।ফাসি দেওয়ার আগে একটা চিঠি রেখে যায়।

“আমার মৃত্যুর কারন আমি নিজেই।ইচ্ছাকৃত ভাবে যদি ফাসি না দিতাম।তাহলে হয়তো পুরো দেশের সামনে আমার মৃত্যু হতো। সে আমাকে একটি খারাপ মেয়ে হিসেবে তুলে ধরতো। সবার সামনে আমাকে ধর্ষতা মেয়ে প্রমান করতো। তাই নিজের ইচ্ছায় আমি নিজেই ফাসি দিলাম। শুধু যাওয়ার আগে সবার কাছে একটা মেসেজ দিতে চাই। জীবনে যাই করোনা কেনো,কখনো কাওকে দুর্বহ ভেবে কিছু করোনা। হতে পারে তার এই দুর্বলতার সাথে,তোমার হাজারো শক্তি টিকে থাকতে পারবেনা।তার ক্ষতি করতে গিয়ে হয়ে যাবে হয়তো,কিছু নির্দোষ মানুষের।তারাও তোমার শক্তিকে নিয়ে নিবে হাতের মুঠোয়।””
??

??

??

?

আ…………… বাচাও বাচাও বাচাও বাচও……….

( কলেজের সবাই দৌড়ে আসে হোস্টেলের একটি রুমের সামনে। দরজা ভেঙে সবাই ভিতরে প্রবেশ করতে দেখতে পায় মায়া,সামিয়া,রিয়া,তানিয়া,সুমাইয়া,পিংকি,প্রিয়া আর জান্নাত ঘাবড়ে আছে।এই সকাল বেলা ওদের মুখ দেখে সবাই বুঝতে পেরেছে ওরা খুব ভয় পেয়ে আছে। সবাই প্রশ্ন করাতেও ওরা কিছু উত্তর দেয়নি। শুধু একজনের দিকে একজন তাকিয়ে হাসছে। আর নিজেদের মধ্যে নিজেরা প্রান খুলে হাসছে।

হুম,যেটা ভাবছে সেটাই। পুরো গল্পটি ওদের একটা স্বপ্ন ছিলো। সবাই একই স্বপ্ন, একই সময়ে দেখেছে। নিজেদের জীবন্ত অবিস্কার করে ওরা খুশিতে কি থেকে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলোনা। এমন একটা অদ্ভুত স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই ছিলোনা। এইটা ছিলো তাদের জীবনের এক শিক্ষা।হয়তো উপরওয়ালা তাদের এমন পাপকে আর সহ্য করতে পারেনি। তাই স্বপ্নের মাধ্যেমে তাদের শিক্ষাটা দিয়ে দিয়েছে।
এখন ওরা কোনো ছেলে মেয়েকে ছোট করে দেখেনা।সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে শুরু করে।কলেজের প্রতিটি মানুষ এখন তাদের খুব ভালোবাসে।যে ৮ জনকে আগে সবাই ঘৃনার চোখে দেখতো,এখন তাদের ভালোবাসতে কারোই ভাবতে হচ্ছেনা।সবাই অবাক হয়েছিলো তাদের হুট করে এমন ব্যবহার দেখে।ছোটবড় সবাই এখন তাদের বন্ধু।এদিকে হটাৎ জান্নাত বলে উঠলো)

— দেখ দেখ,এইটা ওই ছেলেটা না? যাকে আমরা স্বপ্নে অবিস্কার করেছিলাম?

— আরে তাই তো..? চল,তাকেও আমাদের সাথে নিয়ে নি।এখন ও হচ্ছে আমাদের ফ্রেন্ড।

রিয়া বলল
— এই যে রিয়াজ ভাইয়া,কেমন আছেন।

— জ্বী ভালো।সরুন, আমাকে জায়গা দিন।ক্লাসে যাবো।

— বাহ,স্বপ্নে দেখা সেই সাদা সিধে ছেলেটাই তো।

( কাটেনি বেশিদিন রিয়াজের সাদা সিধে ভাব।এখন কলেজের সবচেয়ে স্মার্ট ছেলে রিয়াজ। আর ওর গার্লফ্রেন্ড মায়া।)

———-সমাপ্ত——-

2 মন্তব্য

  1. Wonderful story..but ekta ques plz ans diben keu last e je bollo tader shopno chilo but ki karon e bcz shopno dekhr karon jodi riyaz hoi tobe last e bolche riyaz o beche chilo tahole eta bujhtasi na je shopno ki karone dekhlo ???

  2. বা! অনেখ দিন পর এমন একটা ভাল গল্প পেলাম ।আপনাকে বিচার করার মত খমতা আমার নেই তবুও বলি গল্পটি সত্যই খুব ভাল । আমি হিন্দু , তাই বলছি আমার প্রোনাম নেবেন ।এবং আপনি ভাল থাকবেন ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে