গল্প-আত্মা_নাকি_সে (পর্ব-০৭)
লেখক– ( জ্বীনরাজা)
——————–
রাত প্রায় ৩ টা নাগাত,এই গভীর রাতে, নিঝুম রেল স্টেশনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ৫ টা প্রান। ৪ জন মেয়ে,আর ১ টি বাচ্চা ছেলে।দোকানটাও যেনো অদ্ভুত ভাবেই উধাও হয়ে যায়। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বাচ্চা ছেলেটি লোহার দন্ডটা এখনো ধরে আছে রিয়ার যৌনিতে। বাকি ৩ জন হা করে দাঁড়িয়ে আছে।পরিবেশ নিস্তেজ হয়ে গেছে।শনশন করে ঠান্ডা বাতাস ধীর গতিতে বেয়ে চলছে। এবার কি হবে….?
হয়েছে বা কি।রিয়ার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।মায়া,প্রিয়া আর সামিয়া হা করে তাকিয়ে আছে।ওরা নিজের স্তান থেকে নড়তে পারছে,সে শক্তিটাও ওরা হারিয়ে ফেলে কোনো এক অজানা মায়ায়।চোখের পলকেই আচ্চা ছেলেটি এক দৌড়ে পালিয়ে যায়।বাতাসের গতিতে বাচ্চাটি হারিয়ে যায় ঝাপসা অন্ধকারের মধ্যে। এবার মায়া, প্রিয়া আর সামিয়া নিজেদের মধ্যে পিরে আসে।হতভাগ আর দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে গিয়ে রিয়াকে ধরে। রিয়ার যৌনি থেকে অনেক বেশিই রক্ত ঝরছে।মায়া জোরে চিৎকার মারতে মারতে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সাথে প্রিয়া আর সামিয়াও কান্না করতে থাকে। এখন প্রশ্ন, রিয়ার কাছে তাবিজ ছিলো, তবে রিয়াকে স্পর্শ করেছে কিভাবে একটা অশরীরী। তাছাড়া ওদের জানামতে বাচ্চাটি একটি মেয়ে,এখানে ছেলে আসলো কোথা থেকে।রহস্যাবৃত হয়ে আছে সবকিছু।
ওরা রিয়াকে কোলে নিয়ে অনেক্ষন কান্না করলেও বেশিক্ষন সেখানে থাকা সুবিধের ঠেকেনি। ওরা রিয়ার লাশ সেখানেই ফেলে চলে আসে গাড়িতে। ডান বাম না তাকিয়ে নোয়াখালী সেই কবিরাজের কাছে যেতে লাগলো। মায়া ড্রাইভিং করলেও কান্না করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর সামিয়া আবার গাড়ি চালায় এবং তারপর প্রিয়া। অবশেষ তারা পৌছে যায় সেই কবিরাজের বাড়িতে। বাড়ির সামনে এসে প্রিয়ার ডাক।)
— বাড়িতে কি সুমন ভাই আছেন..?
— ( কোনো সাড়াশব্দ নেই)
–বাড়িতে কেও আছেন..? প্লিজ একটু বের হয়ে আসুন,আপনার সাথে একটু কথা আছে।
( একটু পর খটখট করে দরজা খোলার শব্দ শুনতে পায় তারা। দরজা খুলে এক বৃদ্ধস্য লোক বের হয়ে আসে ভিতর থেকে। মায়া, প্রিয়া আর সামিয়া উনার দিকে তাকি আছে।লোকটি অনেকটাই বৃদ্ধ। উনি আবার তাদের হেল্প করবে? ভাবতেই মনে মনে হাসতে থাকে প্রিয়া)
— এই মেয়ে, আমি দেখতে বৃদ্ধ হতে পারি।তবে আমার ভিতর এখনো সেই শক্তি আছে,যে শক্তি বর্তমান যুগের একটা ২০ বছরের ছেলের মধ্যেও নেই।
( বুড়োর কথা শুনে ওরা তিন জনই চমকে যায়। প্রিয়া অবাক হয়ে গেছে,ওর মনের কথা উনি বুঝতে পেরেছে কিভাবে। চিন্তার বাধ ভেঙে বুড়ো বলে উঠলো)
— এই ভোর সকালে যে তোমরা আমার কাছে এসেছো,এইটা তোমরা তিন জন ছাড়া আর কে কি জানে..?
— না হুজুর।আমাদের সাথে আরেকজন ছিলো,সে এখানে আসার আ….( কথা শেষ না হতেই বৃদ্ধ বলে উঠলো)
— মারা গেছে তাই তো..?
— আরে..! আপনি কি করে জানেন।
— আত্মা নিয়ে খেলা করা আমার কাজ।সবই জানি আমি।তোমাদের কি বিপদ সেটাও জানি আমি।তবে হ্যাঁ, এই বিপদ থেকে তোমাদের বাচতে হলে অনেক কস্ট করতে হবে। তোমরা একটা নয়, তিন তিনটা খুন করেছো।আর ওরা তিন জনই শক্তিশালী আত্মা হয়ে গেছে।
— তিনজন মানে..? প্লিজ হুজুর,আমাদের বলুন,কি হয়েছে,কিভাবে আমরা তিনটা খুন করেছ।আমাদের জানামতে তো শুধু রিয়াজ নামের একজনকে আমরা খুন করেছি। আর কে কে আছে..
— লজ্জা করেনা তোমাদের…? একটা নিষ্পাপ ছেলেকে এভাবে পৃথিবী থেকে হারিয়ে ফেলোছো তোমরা..?
( মাথা নিছু করে মায়া উত্তর দিলো)
— আমরা ভূল করেছি হুজুর।আপনি আমাদের রক্ষা করুন প্লিজ।আমরা আমাদের জীবন ভিক্ষা চাচ্ছি আপনার কাছে।
( এই বলেই হাত জোড় করে মায়া হাটু মাটিতে ফেলে বসে কান্না করতে থাকে।হুজুরের মন কিছুটা গলে যায়।এমনিই কারো কস্ট চোখের সামনে উনি সহ্য করতে পারেনা।)
— ঠিক আছে, আমি তোমাদের সাহায্য করতে পারি।তবে জীবন আমার কাছে নয়,উপরওয়ালার কাছে ভিক্ষা চাও।সে যদি চায়,তবে আত্মা কেন,কোনো শক্তিই তোমাদের কিছু করতে পারবেনা।আমরা মানুষ্যরা তো শুধু উছিলা
— এখন আমাদের কি করতে হবে বলুন হুজুর।
— তোমাদের হাতের তাবিজ ফেলে দাও।
— কিন্তু হুজুর…?
— হুম আমই জানি। কিন্তু এইটার কোনো কাজ নেই এখন।রিয়ার হাতে তাবিজ থাকা শর্তেও সে মারা গেছে।এর কারণ হচ্ছে তাবিজটা শুধু সেই রিয়াজের আত্মা আর বাচ্চা মেয়েটির আত্মার থেকে বাচাতে রক্ষাকারী ছিলো।সেই বাচ্চা ছেলেটির জন্য না।
— বাচ্চা ছেলেটি কে হুজুর?
— বলছি,এখন আমরা সকল আত্মাকে ডাকবো।তোমরা ঘরে আসো, সব রহস্য এক্ষুনি বের হবে।
— ওকে হুজুর
( সবাই মিলে হুজুরের রুমে চলে যায়।হুজুর আগে থেকেই বাসায় সব রেডি করে রেখেছিলো। হুজুরের ঘরের বর্ণনা হচ্ছে, পুরো ঘরে হুজুর একাই থাকে।উনার বউ,ছেলে,মেয়ে কেও নেই।ছিলোনা বললে ভূল,উনি আত্মা নিয়ে গবেষণা করেন বলে উনার বউ ছেলে মেয়ে সবাই চলে যায় উনার শশুর বাড়িতে। উনিও আত্মাদের ছাড়বেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে।সে থেকে উনার সাথে উনার স্ত্রী এবং সন্তানদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।হুজুরের পুরো ঘরে একটাই রুম।রুম বলতে উনার ঘরে এক্সট্রা কোনো রুম নেই। ( গল্পের মাঝে একটা কথা — এই গল্পের লেখক আমি মোঃনাহিদ হাসান হয়তো আমার এই গল্প অন্যেরা কপি করে তাদের আইডিতে পোস্ট করেছে।তবে গল্পের মাঝে আমার এই কথাটা তো ডিলিট করবেনা।তাই গল্পের মাঝেই বলছি,আপনারা যারা এই গল্পটি পড়তেছেন,তারা আইডি দেখুন কার আইডি থেকে পোস্ট করা।যদি মোঃনাহিদ হাসান নামের আইডি হয়,তবে ঠিক আছে।আর যদি অন্য আইডি দেখেন,তবে বুঝে নিবেন,উনি চোর কপিবাজ।আর চোরের আইডিতে কয়দিন গল্প পড়বেন।এক্ষুনি উপরে লেখা আমার নাম লিখে সার্চ দিন ফেসবুকে। প্রথমেই আমার আইডি আসবে।চলে যান আসল লেখকের আইডিতে।যাইহোক এইবার গল্পে আসা যাক।) হুজুরের পুরো ঘরে একটিই রুম থাকার কারণে পুরো ঘরের ভিতরটা একটা স্টোডিয়াম এর মতো দেখা যাচ্ছিলো।হুজুর ঘরের মাঝখান বরাবর একটি কুণ্ডলী একে নেয়।কুণ্ডলী বলতে নিজেদের মন্ত্র পড়া কোনো অক্ষর বা চিহ্ন একে একে একটি নির্দিষ্ট অবস্তান। হুজুর সেই আকিঝুকির চারপাশে লাল রঙের কিছু পাউডার দিয়ে রেখা একে নেয়।একটা গোলকার রেখার মতো। সেই গোলকারবৃত্তের এক পাশে হুজুর নিজে বসে,আর ওপর পাশে প্রিয়া মায়া আর সামিয়া বসে পড়ে।
হুজুর চোখ বন্ধ করে কি যেনো পড়তে থাকে মনে মনে। ওরা তিন জন হুজুরের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবতে পারছেনা,কিছুক্ষন পর আসলে তাদের সাথে কি হবে।একটা ভয় তাদের ভিতর কাজ করতেই থাকে।রিয়াজ কি এসে তাদের এখানে মেরে ফেলবে নাতো…? ওদের কল্পনাপ্রবণ বাধ ভেঙে পুরো রুমে অন্ধকার নেমে আসে।অবস্তাব হলেও সব কিছু বাস্তবে পরিণত হতে থাকে। হুজুর চোখ মেলে জোরে জোরে পড়তে থাকে,
{ভূত প্রেত আত্মা,করবিনা চালাকি,
ডাকছি আমি তোদের সবাইকে,
দিবিনা ফাকি।
আমি ধরছি তোদের লেজ,
বাড়াবিনা তোদের তেজ,
জলদি এসে ধরা দে নিজ শক্তিতে,
ভয়ংকর রুপ বাদ দিয়ে,বসে যা কুণ্ডলীতে।}
হুজুরের এই মন্ত্র পড়ার সাথে সাথে পুরো রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। কুন্ডলীর মাঝখানে শুধু লাল রঙের একটা আলো দেখা যাচ্ছে,সেই আলো ছাড়া রুমের ভিতর নিজের দেহ নিজেই দেখতে পারছেনা কেও। আলোটা হুট করেই মায়ার দেহে প্রবেশ করে।মায়া হটাৎ করেই জোরে জোরে হাসতে থাকে। প্রিয়া আর সামিয়া ভয় পেলেও,হুজুরের কথামতো জায়গা থেকে নড়াচড়া করছেনা। হুজুর জোর গলায় মায়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে,)
— কে তুই….
— রিয়াজ…. রিয়াজ হোসেন ইমরান আমি… হাহাহাহাহাহা
( একটা ভয়ংকর কন্ঠে হাসতে থাকে মায়া,তবে মায়ার ভিতর এখন আর মায়া নেই,ও তো অন্য কেও হয়ে গেছে।মায়ার কণ্ঠস্বর এখন অন্যরকম হয়ে গেছে। অর্ধেক পুরুষ কন্ঠ,আর অর্ধেক মেয়ে কন্ঠ।হুজুর আবার প্রশ্ন করলো)
— ওদের ক্ষমা করছিসনা কেন।ওরা তো অনেক ক্ষমা চেয়েছে,ওদের ভূল ওরা বুঝতে পেরেছে। এবার তো তাদের ক্ষমা করে দে।
— হা হা হা হা হা, আমিও তো অনেক অনুরোধসূচক কথা বলেছি তাদের,আমাকে কি ছেড়েছে..? ছাড়বোনা,ওদের কাওকে ছাড়বোনা,এক এক করে সবাইকেই মারবো।আমার সাথে বাকি ২ জনও তাদের মারবে।কয়জনকে আটকাবি বেটা ২ পয়সার কবিরাজ…? হা হা হা হা
— শুন, তোর সাথে বাকি ২ জন কে…?
— ওরা যখন আমার লাশ ফেলে দেওয়ার জন্য ময়লা ফেলার জায়গায় যায়।তখন সেখানে বস্তির একটি মেয়ে পচা খাবার খুজছিলো।এক মায়ের এক মেয়ে ছিলো সে, মাত্র ৮ বছর সে বাচ্চার বয়স। ওরা আমার লাশ ছুড়ে ফেলার সাথে সাথে আমার লাশ বস্তা সহ উড়ে পড়ে সেই বাচ্চার উপর।বাচ্চাটি নিজেকে বাচানোর জন্য অনেক কস্টে আমার লাশ ওর উপর থেকে সরিয়ে নেয়। একটা ৮ বছরের বাচ্চার পক্ষে আমার লাশ সরানো অনেক কস্টের হয়েছিলো। মারা যাবার পর আমার লাশ হয়ে যায় আরো ভার।তবুও বাচ্চাটি অনেক কস্টে আমার লাশ সরায়।কিন্তু লাশটি সরাতে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছিলো।
— দেরি হয়েছিলো মানে?
— লাশ সরিয়ে মেয়েটি যেই বের হয়েছে,ততক্ষণে একটি ময়লার ট্রাক এসে মেয়েটির উপর সকল ময়লার বস্তা ফেলে দেয়। মেয়েটি ধড়পড় করতে করতে অবশেষে সেখানেই জীবন হারায়।বস্তির ময়লাযুক্ত একটি ময়লা হলেও,ওর চেহারা ছিলো ফুলের মতো আকর্ষণীয়। সেও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমায় ওপারে।ছাড়বেনা সে, সবাই এর শাস্তি পাবেই।
( বলে কান্না করতে থাকে মায়া, ওহহ সরি,ওটা রিয়াজের আত্মা, যে এখন মায়ার শরীরে অবস্তান করছে।)
— আর বাচ্চা ছেলেটি কে..?
— তোর পিছনে যে দাঁড়িয়ে আছে , সে
— মানে..?
— তাকিয়ে দেখ তো আগে,হা হা হা
( হুজুর পিছনে তাকাতেই, সেই বাচ্চা ছেলেটিকে দেখতে পায়,চোখ ২ টি গাড়ো লাল,মুখের চামড়া পচে প্রায় অর্ধেক ঝরে গেছে। পেটের ভিতর সকল মাংস,হাড্ডি আর পাকস্থলী দেখা যাচ্ছে। হুজুর কিছু বুঝে ওঠার আগেই,বাচ্ছাটি দৌড়ে এসে হুজুরের একটি চোখ তুলে ফেলে,
অন্ধকার একটি হৈ চৈ করা রুমের ভিতর ঘটে যাচ্ছে অনেক অবস্তাব ঘটনা। যা মানুষ্যরা করেনা বিশ্বাস,তবে এই অবিশ্বাস্য ঘটনার পিছনে লুকিয়ে আছে হাজারো বাস্তব রহস্য,দৌড়াদৌড়ি করছে অদ্রশ্য কিছু প্রান।যা দেখিনা আমরা খালি চোখে,তবে তাদের নিয়েই আমাদের সমাজবিধি চলছে। কি হবে,এইবার ওদের..?
চলবে……………!