#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৯
ফোন রিসিভ করতেই কেউ পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলো,
~ইলহাম,তোমার সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিলে আমরা সবকিছুর প্রস্তুতি নিতে পারবো।
অমিত হাওলাদারের কথা শুনে ইলহাম একটু ভেবে জবাব দিলো যে,
~স্যার,আমি কালকে অফিসে জানিয়ে দিবো।
অমিত হাওলাদার বললেন,
~শোনো ইলহাম আমি জানি তুমি এই সিদ্ধান্তটা নিতে কেনো এতো দ্বিধাবোধ করছো।তোমার স্ত্রীর জন্য আর শুনেছি তোমার বোনও প্রেগন্যান্ট তাই হয়তো তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো।
ইলহাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~জ্বী স্যার।
অমিত হাওলাদার বললেন,
~কিন্তু ক্যারিয়ারের জন্য এখন একটু দুরত্বে যেতে হবে সবসময় বুদ্ধি দিয়ে কাজ নিতে হবে ইলহাম।
ইলহাম বললো,
~স্যার আমি কালকেই আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবো।
অমিত হাওলাদার বললেন,
~ঠিক আছে।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো ইলহাম কান থেকে ফোন নামিয়ে বারান্দা থেকে বাহিরে যেতে নিবে তখনই তার নজর পরলো হেমন্তির উপর।হেমন্তি তার পিছনে দাড়িয়ে ছিল তা সে খেয়াল করেনি হেমন্তি হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~তানভীররা চলে যাবে আপনার সাথে দেখা করবে।
ইলহাম আলতো হেসে বললো,
~ঠিক আছে চলো।
ইলহাম আর হেমন্তি বাহিরে হলরুমে এসে পরলো তানভীরদের বিদায় দিয়ে তারাও বাসায় উদ্দেশ্যে বের হলো।রিক্সায় হেমন্তি আর ইলহাম চুপ করে বসে আছে হেমন্তির ইলহামের এমন চুপ থাকা টাকে ভালো নজরে দেখছেনা।
কেনজানি মনে হচ্ছে ইলহামের মনটা অনেক খারাপ হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আপনার মনটা কী খারাপ?
ইলহাম বললো,
~নাহ।
হেমন্তি ইলহামের জবাব শুনে সন্তুষ্ট হলো না কিন্তু আর কিছুই বললো না।ইলহাম আর হেমন্তি বাসায় পৌছে ফ্রেশ হয়ে দুজনই চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পরলো।হেমন্তি চোখ বন্ধ করে আছে তার ঘুম আসছেনা হঠাৎ তার পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো সে।ইলহাম হেমন্তির ঘাড়ে মুখ গুজতেই হেমন্তি চোখ বড় বড় করে ইলহামকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো।ইলহাম হেমন্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তোমাকে একটা কথা বলার আছে।
ইলহামের গম্ভীর কন্ঠ শুনে হেমন্তি আর কিছুই করলোনা।ইলহাম নিজ হাতটাকে একটু নরম করলো এতে হেমন্তি তার দিকে ফিরে তাকালো।
ইলহাম হেমন্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
~অফিস থেকে আমাকে ২মাসের জন্য থাইল্যান্ড পাঠাতে চায়।
ইলহামের কথা শুনে হেমন্তির বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো তার চোখে পানি এসে পরলো।ইলহাম তা দেখে বললো,
~প্লিজ কাঁদবে না তোমার এই অবস্থা হলে আমি যেতে পারবোনা।আর আমি মাত্র ২মাসের জন্য যাচ্ছি এই কয়েকদিন তোমাকে সব সামলাতে হবে।
হেমন্তি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
~আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন আপনি?
হেমন্তির প্রশ্নের কোনো জবাব ইলহামের কাছে নেই হেমন্তি আবার বললো,
~আমি আপনার কাজের পথে কোনো বাঁধা হতে চাই না আপনার সাফল্য যদি এটাতেই হয় তাহলে ঠিক আছে আপনি থাইল্যান্ড চলে যান।
এতটুকু বলে হেমন্তি অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে পরলো হেমন্তির এমন ব্যবহারে ইলহাম অনেক কষ্ট পেলো সে হেমন্তিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~আমার সাথে রাগ করবেনা একদম আমি কিন্তু তোমার রাগ সহ্য করবোনা।
হেমন্তি বললো,
~আমি আপনার সাথে রাগ করিনি আমি চাই আপনি দূর্বল হয়ে না বরং শক্ত মনে নিজ কাজের প্রস্তুতি নিয়ে এখান থেকে চলে যান।
ইলহাম হেমন্তির কাঁধের চুলগুলো সরিয়ে সেখানে মুখ গুজে বললো,
~আজ যদি তোমার কাছে কিছু চাই তাহলে আমাকল দিবে?
হেমন্তির চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সে বললো,
~আমার কাছে কিছুই নেই আপনাকে দেওয়ার মতো।
ইলহাম কাঁধ থেকে মুখ উঠিয়ে বললো,
~তোমার কাছেই সবচেয়ে বড় জিনিসটা রয়েছে।
হেমন্তি ইলহামের দিকে তাকিয়ে তার কথা বোঝার চেষ্টা করলো ইলহাম হেমন্তির কপালে ওষ্ঠজোড়া ছুঁইয়ে বললো,
~আমাকে একটু ভালোবাসা দেবে হেমন্তি রাণী।
হেমন্তি কী বলবে বুঝতে পারছেনা যেমন কষ্ট লাগছে তেমনি লজ্জাও লাগছে। হেমন্তি ফুপাতে ফুপাতে ইলহামকে জড়িয়ে ধরলো ইলহাম হেমন্তির সম্মতি পেয়ে মুচকি হেসে হেমন্তির কানে কানে বললো,
~আমাকে ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ প্রিয়তমা।
____♥_____
রাত যতো গভীর হচ্ছে তাদের মধ্যকার দুরত্ব ততো কমে যাচ্ছে এই শীতের রাত তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো।দূরে কোথাও পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ আসছে তারাও আজ খুশী হেমন্তি আর ইলহামের মিলন দেখে। এভাবেই যাতে তারা সুখে থাকুক ভালোবাসায় ঘিরে থাকুক তাদের জীবন কিন্তু এখন এই ভালোবাসার থেকে দূরেও যেতে হবে পারবে কী তারা আলাদা থাকতে।পারবে কী ইলহাম সেই দূর দেশে থেকে হেমন্তিকে আগলে রাখতে?এসব সময় জবাব দিবে সময়ই সব কথা পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দিবে তাদের।
ভোর হয়েছে কিন্তু কুয়াশা দিয়ে পুরো আকাশ ডাকা যার কারণে পুরোপুরি আলো ছড়িয়ে পরেনি।শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এই সময়টা ঠান্ডা একটু বেশীই অনুভব হয়।কাঁথা মুড়ি দিয়ে অনেকেই এখন বিভোর ঘুমে রয়েছে মিষ্টি স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত এর ব্যতিক্রম ঘটেনি ইলহাম আর হেমন্তির ক্ষেত্রেও।তারা ঘুমের দেশে তলিয়ে আছে হেমন্তি ইলহামের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।কাল রাতের পর হয়তো হেমন্তি আর ইলহামের মধ্যে আর কোনে দুরত্ব থাকার কথা না।
হেমন্তি পিটপিট করে চোখ খুলে নিজেকে ইলহামের বাহুডরে আবিষ্কার করলো হেমন্তি চোখ ছোট ছোট করে ইলহামের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকালো। প্রথমে সে কিছুই বুঝতে পারলোনো সে ইলহামের বুক থেকে সরে আসলো তারপর শোয়া থেকে উঠে বসতেই তার কাল রাতের সব কথা মনে পরে গেলো পরক্ষণেই হেমন্তির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে গেলো একবার ইলহামের দিকে তাকিয়ে সে শাড়ি ঠিক করে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো।কার্বাড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে আসতেই তার মনে পরলো ইলহামের বলা সেই কথাটি ইলহামকে চলে যেতে হবে।এ কথাটি মনে পরতেই হেমন্তির মনটা বিষাদে ভরে উঠলো এতো নিষ্ঠুর কেনো হলো এই প্রকৃতি তাদের সাথে।হেমন্তি শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো ইলহামের সব প্রয়োজনীয় জিনিস সাজিয়ে রেখে সে রান্নাঘরে চলে গেলো।নাস্তা তৈরি করতে করতে কলিংবেল বেজে উঠলো হেমন্তি হাতের কাজ রেখে দরজার কাছে গিয়ল দরজাটা খুলে দিলো ফিরোজাকে দেখে হেমন্তি বললো,
~আপা,আজ এতো তাড়াতাড়ি?
ফিরোজা পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো,
~আইজ একটু বাইত কাম আছে তাই তাড়াতাড়ি আয়া পরসি।
হেমন্তি বললো,
~তাহলে আপনি আজ চলে যান আমি বাকি কাজ করতে পারবো।
ফিরোজা বললো,
~না না ভাবিজান আমি করতে পারুম ওইযে আমার ননদের বাচ্চা হইছে পোলা হইছে তাই ওইহানে যাইতে হইবো।
হেমন্তি বললো,
~আজ আপনি চলে যান আপনার বাসায় থাকাটা জরুরি বেশি আর এখানে দাড়ান আমি আসছি।
বলেই হেমন্তি রুমের দিকে চলে গেলো রুমে গিয়ে তার ব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা বের করে ফিরোজার কাছে গিয়ে তার হাতে দিয়ে বললো,
~আপনার ননদের জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাবেন।
ফিরোজা কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো হেমন্তি দরজা বন্ধ করে কাজে লেগে পরলো।
ইলহামের ঘুম ভাঙ্গতেই সে তার পাশে হেমন্তিকে খুজতে লাগলো চোখ খুলে দেখলো হেমন্তি তার জায়গায় নেই।ইলহাম বুঝতে পারলো হেমন্তি উঠে পরেছে আর কাজেও লেগে পরেছে।ইলহাম বিছানা থেকে উঠে দেখলো তার প্রয়োজনীয় সব জিনিস রেডি করে রাখা আছে।ইলহাম ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে তৈরি হয়ে পরলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৮.২০বাজে।ইলহাম রুম থেকে বের হয়ে হেমন্তিকে খুজতে লাগলো কোথাও না পেয়ে সে অন্য রুমে চলে আসলো বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখতে পেলো হেমন্তি ধোয়া কাপড় শুকাতে দিচ্ছে।ইলহাম ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে বললো,
~তুমি এসব করছো কেন?
ইলহামের কন্ঠশুনে হেমন্তি পিছন ফিরে দেখলো সে দাড়িয়ে আছে হেমন্তি বললো,
~ফিরোজার ননদের বাবু হয়েছে তাই তাকে সেখানে যেতে হবে কাজ করতে এসেছিল আমি ছুটি দিয়েছি।
ইলহাম হেমন্তির কাছে গিয়ে তার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~তোমার কী মন খারাপ?
হেমন্তি মাথা নেড়ে না বোঝালো ইলহাম হেমন্তির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
~আজ আমি অফিসে গিয়ে বসকে বলে দিবো আমি যাচ্ছি থাইল্যান্ড।
হেমন্তি চোখ তুলে ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমার মতে এটাই ভালো হয় আর দুরত্ব অনেক সময় একে অপরকে আরো কাছে নিয়ে আসে।
ইলহাম আলতো হেসে বললো,
~আমি চাচ্ছি সবাইকে দাওয়াত করে এই খবরটা দিতে তোমার কী মতামত?
হেমন্তি বললো,
~আপনি যেটা ভালো বুঝেন।
ইলহাম বললো,
~কেয়ার বিয়ের পর আমি চলে যাবো কেয়ার বিয়েটা আমি মিস করতে চাইনা।
হেমন্তি বললো,
~কেয়া শুনে খুশী হবে।
ইলহাম হেমন্তির চুলগুলো খুলে দিয়ে বললো,
~ভেজা চুল কেন বেঁধে রেখেছো?
হেমন্তি কিছুই বললো না ইলহাম বললো,
~টেবিলে নাস্তা দেও ক্ষুধা লেগেছে।
হেমন্তি মাথা নেড়ে বারান্দা থেকে চলে গেলো রান্নাঘরে সব নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে সে ইলহামকে ডাকতে চলে গেলো।
____♥_____
তানভীর কেয়ার বাসার সোফায় বসে আছে সে এসেছে কেয়াকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে বলে।ইমরান খান বললো,
~তোমার মা ফোন করে আমাকে জানিয়েছে কিন্তু তুমি পছন্দ করে যেটা আনবে সেটাই কেয়ার পছন্দ হবে।
তানভীর বললো,
~মা যে বললো কেয়ার পছন্দেই সব কিনতে হবে তাই কেয়াকে নিতে হবে সথে করে।
তানভীরের কথা শুনে হালকা হেসক ইমরান খান কেয়াকে ডেকে উঠলেন।কিছুক্ষণ পর কেয়া মাথায় কাপড় দিয়ে সোফার ঘরে চলে আসলো ইমরান খান কেয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,
~তানভীর এসেছে তোকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে তুই তৈরি হয়ে ওর সাথে চলে যা।
কেয়ার সাথে কথা শেষ করেই ইমরান খান উঠে চলে গেলেন কেয়া বললো,
~আমি বোরখা পরে আসছি।
তানভীর মাথাদুলালো কেয়া বোরখা পরে বের হয়ে আসলো কেয়া আর তানভীর বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা নিয়ে মার্কেটের উদ্দেশ্যে চলে রওনা হলো।রিক্সায় বসে কেয়া বললো,
~মা না বললে আমাকে না নিয়েই শপিং করতে চলে যেতেন?
তানভীর বললো,
~হ্যা।
কেয়া বললো,
~আমাকে আপনি ভুলে যান অনেকসময়।
তানভীর বললো,
~এখন তো মনে রেখেছি তাই না।
কেয়া বললো,
~মা বলেছে তাই মনে রেখেছেন।
হিয়ার শরীরটা আজ একটু বেশি খারাপ সে বিছানায় শুয়ে আছে রেহানা বেগম তার মাথার কাছে বসে আছে।হিয়া রেহেনা বেগমের হাত ধরে বললো,
~মা আপনি টেনশন করবেন না আমি একদম ঠিক হয়ে যাবো।
রেহেনা বেগম বললেন,
~তুমি তো সকাল থেকে কিছুই খাওনি একটু কিছু খেয়ে নেও ভালো লাগবে।
হিয়া বললো,
~বমি এসে পরবে মা।
রেহেনা বেগম বললেন,
~তাও খেতে হবে মা এটা তোমার জন্য প্রয়োজনীয়।
হিয়া উঠে বসলো খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করলো এবার সবটি খাবার শেষ করতে পারলো তারপর আবার শুয়ে পরলো।রেহেনা বেগমের অনেক ভয় করছে হিয়ার অবস্থা করতে যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তখন কী হবে?
ইলহাম অফিসে গিয়ে অমিত হাওলাদারকে জানিয়ে দিলো সিদ্ধান্ত অমিত হাওলাদার খুশী হলেন আর বললেন,
~তোমার পাসপোর্ট আর যাবতীয় কাগজ পত্র জমা দিয়ে দিবে আজ থেকেই সব কাজ শুরু করা হবে।
ইলহাম সম্মতি জানিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো নিজ কেবিনে এসে চেয়ারে বসে পরলো আর কয়েকদিন পর সে হয়তো অনেক দূরে থাকবে এ পরিবেশ থেকে।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)