#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২
ইলহামের ঘুমভাঙ্গলো কার্বাড খোলার শব্দে সে চোখ খুলে দেখলো হেমন্তি তার শার্ট-প্যান্ট সব গুছিয়ে রাখছে।ইলহাম উঠে বসে পরলো হেমন্তির উদ্দেশ্যে বললো,
~কয়টা বাজে?
হেমন্তি হাতে থাকা জিনিস বিছানার একসাইডে রেখে ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~৮.২০ বাজে।
ইলহাম বললো,
~আজকে অফিস তাড়াতাড়ি যেতে হবে।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি নাস্তা টেবিলে দেও।
হেমন্তি মাথা দুলিয়ে নিজ কাজে মনোযোগ দিলো ইলহাম ওয়াশরুমে চলে গেলো।হেমন্তি ইলহামের সব জিনিস গুছিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে।সে সোজা চলে গেলো হিয়ার ঘরের দিকে সেখানে গিয়ে দরজায় টোকা দিলো।হিয়া ভিতর থেকে বলে উঠলো,
~আসো।
হেমন্তি দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে পরলো হিয়া বিছানায় বসে বই পড়ছে।হেমন্তি বললো,
~নাস্তা তৈরি হয়ে গেছে টেবিলে দিয়েছি।
হিয়া বললো,
~তোমার ভাইয়া একটু রাস্তাশ গিয়েছে চলে আসবে।একসাথে নাস্তা করবো তুমি আর ইলহাম নাস্তা করে নেও।
হেমন্তি বিছানায় বসে বললো,
~সমস্যা নেই আপু।উনিও এখন পর্যন্ত রেডি হননি
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~জানো হেমন্তি,ইলহাম আর আমার বয়স যখন ৬ তখন আমরা গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। ইলহাম গ্রামের পুকুরে গোসল করার জন্য জেদ ধরলো বাবা বাধ্য হয়ে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলো ইলহাম বাবার কাঁধে চড়ে পুকুরে গোসল করতে লাগলো তখনই পানির ভেতর একটা রশি ভেসে উঠলো ইলহাম সেটাকে সাপ ভেবে যে চিৎকার দিয়েছিল সে চিৎকার শুনে পাড়া-প্রতিবেশি এক হয়ে যায় পরে বাবা ইলহামকে পুকুর পাড়ে রেখে সেই রশি এনে ইলহামকে দেখায়। তখন সে আরো জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো,
~বাবা,তুমি সেই সাপকে রশি বানিয়ে নিয়ে এসেছো আমাকে বোকা বানানোর জন্য।
সেদিন ইলহামের কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
হিয়ার কথা শেষ হতেই হেমন্তি হো হো করে হেসে উঠলো।হিয়া আরো বললো,
~ইলহাম কিন্তু অনেক দুষ্ট ছিল কিন্তু বাবা-মায়ের এক্সিডেন্টের পর থেকে সে এমন গম্ভীর হয়ে উঠলো।
হিয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেলো হেমন্তির হাসি হাসি মুখটা বিষাদে ভরে উঠলো।হেমন্তি হিয়ার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে হিয়ার হাতটা আকড়ে ধরে বললো,
~কেন বিষাক্ত স্মৃতি গুলো মনে করো আপু।কতো সুন্দর স্মৃতি তারা তোমাদের দিয়ে গেছে সে গুলোকে আকড়ে ধরে রাখুন দেখবেন মনটা এভাবেই ভালো হয়ে যাবে।
হিয়া হেমন্তির এমন কথা শুনে হালকা হেসে চোখের কোণের জল মুছে হেমন্তি মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~তোমার কথাগুলো শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে।জানো তোমার কথায় একধরনের সৌন্দর্য আছে তাই তোমাকে আমার অনেক ভালো লাগে।সুখে থাকো তুমি সেটাই আমার দোয়া।
হেমন্তি মুচকি হেসে হিয়ার দিকে তাকাতেই ঘরে ফারুক প্রবেশ করলে।ফারুক তাদের দেখে বললো,
~কোন বিষয় কথা চলছে?
হিয়া বললো,
~তোমাকে বলবো কেন?তুমি তোমার কাজ করো।
ফারুক মেকি হেসে বললো,
~হ্যা হ্যাঁ বাবার বাড়ি আসলে আর জামাইর খবর কী রাখা যায়?
ফারুকের কথা শুনে হিয়া আর হেমন্তি দুজনই হেসে উঠলো হেমন্তি হেসে হেসে বললো,
~আপনাদের কথা শেষ হলে নাস্তা করতে আসুন।
হেমন্তি বাহিরে বের হতেই ইলহামের গলার আওয়াজ আসলো ইলহাম এক নাগাড়ে হেমন্তিকে ডেকেই চলছে।
হেমন্তি অপেক্ষা না করে রুমের দিকে পা বাড়ালো
______♥______
হেমন্তি রুমে ডুকতেই দেখতে পেলো ইলহাম শার্ট পরে দাড়িয়ে আছে।হেমন্তি বললো,
~কী হয়েছে?
ইলহাম বিরক্তি নিয়ে বললো,
~শার্টের বোতাম ছিড়ে গেছে এখন কী করবো?
হেমন্তি বললো,
~আমি অন্য শার্ট দিচ্ছি আপনি এটা খুলে ফেলুন।
ইলহাম বললো,
~আরেকটা শার্ট ইস্ত্রি করা আছে?
হেমন্তি বললো,
~আমি করে দিচ্ছি।
ইলহাম বললো,
~সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই শার্টের বোতামটা লাগিয়ে দেও তাহলেই হবে।
হেমন্তি একটু অবাক হলো ইলহামের জেদ দেখে হেমন্তি আর কোনো কথা না বলে বললো,
~শার্ট খুলে দিন আমি সেলাই করে দিচ্ছি।
হেমন্তি কথা শেষ করে সুই সুতার বক্স নিয়ে আসলো ইলহাম বললো,
~এভাবেই লাগিয়ে দেও খুলতে পারবোনা।
হেমন্তি নাক ফুলিয়ে বললো,
~এবার আপনি বেশি বেশি করছেন সুই যদি আপনার শরীরে লেগে যায় তখন কী হবে?
ইলহাম দেড়গুন জেদ ধরে বললো,
~এভাবেই করতে হবে।
হেমন্তি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সুই হাতে নিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে গেলো হাতের বোতামটা ইলহামের শার্টে সেলাই করতে লাগলো হেমন্তির হার্টবিটটা বেড়ে গেলো ইলহামের এতো কাছে এসে
ইলহাম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হেমন্তির দিকে হেমন্তির মায়াবি মুখের দিকে তাকিয়ে সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।হেমন্তির ছোট ছোট চুলগুলো কপালে এসে পরলো ইলহাম নিজের অজান্তেই সে হেমন্তির চুলগুলো সরিয়ে দিলো।হেমন্তি ইলহামের স্পর্শ পেয়ে হালকা কেঁপে উঠলো তখনই ইলহাম আহহ বলে উঠলো কারণ হেমন্তির হাতের সুই দিয়ে ইলহামের বুকে খোঁচা লেগে গেছে।
হেমন্তি ঘাবড়ে গিয়ে দুকদম পিছিয়ে গিয়ে বললো,
~আপনার কী অনেক ব্যাথা লেগেছে?আমি তো আগেই বলেছিলাম
ইলহাম হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~নাহ বেশি একটা লাগেনি।
হেমন্তি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
~আমার জন্য আপনার এতখানি লেগে গেলো।
ইলহাম হেমন্তির এমন চেহারা দেখে মুচকি হেসে বললো,
~তুমি এতো চিন্তা করোনা কিছুই হয়নি।
হেমন্তি এবার শান্ত হয়ে বললো,
~নাস্তা টেবিলে দিয়েছি এসে পরেন।
ইলহাম শার্টের দিকে তাকিয়ে বললো,
~এই সুতা কী এভাবেই থাকবে?
হেমন্তি তা দেখে নিজ কপালে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
~ভুলে গেছি।
হেমন্তি কেঁচি নিয়ে বাকি সুতো কেটে নিলো তারপর হেমন্তি সব গুছিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।
ইলহাম হাতে ফাইল নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো টেবিলের সামনে এসে দেখলো সবাই উপস্থিত নাস্তার টেবিলে।হিয়া ইলহামকে দেখে বললো,
~নাস্তার টেবিলেও তোর কাজ?
ইলহাম চেয়ারে বসে বললো,
~কাজটা জরুরি আপু।
হিয়া বললো,
~ যান্ত্রিক শহরে তুই নিজেও একটা যান্ত্রিক হয়ে উঠেছিস।
ইলহাম কিছু না বলে পরোটা প্লেটে নিলো হিয়া বললো,
~তোর পাশাপাশি হেমন্তিও তেমন হয়ে গেছে।
ফারুক বললো,
~সঙ্গ যেমন পেয়েছে তেমনই তো হবে।
হেমন্তি হিয়ার পাশের চেয়ারে বসে পরলো ইলহাম কিছুনা বলে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।নাস্তা শেষে ফারুক, হিয়া,আর ইলহাম বের হয়ে আসলো বাসা থেকে।হিয়া নিজ বাসায় চলে আসবে তাই এখনই ফারুক তাকে বাসায় দিয়ে নিজ অফিসে চলে যাবে।
সবাইকে বিদায় দিয়ে হেমন্তি সোফায় বসে বললো,
~এখন আবার একা পথ চলতে হবে।
_____♥______
ইলহাম অফিসে বসে কাজ করছে তখনই তার কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো।ইলহাম বললো,
~Come in.
ইলহামের কলিগ ইমরুল সিকদার কেবিনের দরজা ভেদ করে প্রবেশ করলো।ইলহাম ইমরুলকে দেখে বললো,
~কী ব্যাপার ইমরুল সাহেব আজ আমার কাছে আসলেন যে?
ইমরুল আমতা আমতা করে বললো,
~আসলে স্যার আপনি তো জানেন আমার নতুন বিয়ে
ইমরুলের কথা শুনে ইলহাম কাজ রেখে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কথাটা শেষ করুন।
ইমরুল বললো,
~স্যার,আমার বউয়ের আজ জম্মদিন তাই সে একটু ঘুরতে যেতে চায়।আজ যদি ছুটি দিতেন আমায় আগামীকাল আমি overtime করবো।
ইলহাম বললো,
~তা তো সম্ভব না ইমরুল সাহেব।
ইমরুল বললো,
~অনেক জরুরি ছুটিটা বউ সারাদিন বাসায় একা থাকে আজকের একটা দিন ওকে একা রাখতে চাইনা।
ইলহাম না করতে যাবে তখন কী যেন ভেবে বললো,
~ঠিক আছে কিন্তু কাল অবশ্যই আপনাকে overtime করতে হবে।
ইমরুল হেসে বললো,
~অবশ্যই স্যার।
ইমরুল খুশি হয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো ইলহান হাতে থাকা কলমটা টেবিলে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে হেমন্তির সেই মায়াবী মুখটা ভেসে উঠলো।
ইলহামের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো ইলহাম চোখ খুলে ভাবতে লাগলো,
~হেমন্তিও তো সারাদিন একা বাসায় থাকে আমিও তো তাকে কোনো সময় দিতে পারিনা তাহলে সেও কী অভিমান করে আমার সাথে?করলেও আমি বুঝতে পারিনা হয়তো কারণ কথাও তো তার সাথে আমি বেশি করিনা।তাহলে এখানে সম্পূর্ণ ভুলটা কী আমার?আমাদের সম্পর্কটা কী আমার জন্যই এগিয়ে যাচ্ছেনা?
আর ভাবতে পারলোনা ইলহাম চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে জানালার সামনে দাড়িয়ে এই ব্যস্ত শহর দেখতে লাগলো।ইলহাম মনে মনে বললো,
~আসলে হিয়াই ঠিক বলেছে আমি হয়তো যান্ত্রিক হয়ে গেছি।
ইলহাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে ইলহাম একজন পিয়নকে ডেকে একটা প্লেট আর চামচ নিয়ে আসতে বললো।আগে তো ক্যান্টিনের খাবার জুটতো এখন বাড়ির খাবারই ইলহাম খায় হেমন্তি আসার পর থেকে।ইলহাম খাবার মুখে দিচ্ছে আর ভাবছে কীভাবে নিজেকে বদলাবে হেমন্তির জন্য।
____♥_____
হেমন্তি মাগরিবের নামাজ শেষ করে চুলোয় চায়ের পানি বসাতেই তার মোবাইল বেজে উঠলো।হেমন্তি রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো হেমন্তির মা ইরিনা বেগম ফোন করেছেন।হেমন্তি ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~মা,কেমন আছো?
ইরিনা বেগম বললেন,
~ভালো মা।তুই আর তোর শশুর বাড়ির সবাই কেমন আছে?
হেমন্তি হালকা হেসে বললো,
~ভালে আছে মা সবাই ভালো আছে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~শোন কেয়াকে ২দিন পর ছেলেসহ দেখতে আসবে আমি চাই তুই সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে আসবি।আমি সবাইকে দেখতে চাই।
হেমন্তি মায়ের কথায় অনেকটাই দ্বিধায় পরে গেলো কী বলবে তাই বুঝতে পারলোনা।হেমন্তি বললো,
~আমি ওনার সাথে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি মা।
ইরিনা বেগম বললেন,
~শোন ছেলে অনেক ভালো চাকরি করে তাই আমরা আগে বাড়ছি।
হেমন্তি বললো,
~কেয়াকে জিজ্ঞেস করছো?
ইরিনা বেগম বললেন,
~হ্যা ছেলে দেখে সিদ্ধান্ত জানাবে।
হেমন্তি বললো,
~কেয়ার সিদ্ধান্তটা জেনেই সবকিছুতে আগে বাড়বে।
ইরিনা বেগম বললেন,
~হ্যা তাই হবে তুই চিন্তা করিস না।
ইরিনা বেগমের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে হেমন্তি ফোন রেখে দিলো চা তৈরি করে টেবিলে রেখে সে রুমে চলে গেলো।বই নিয়ে পড়তে বসলো সামনেই পরীক্ষা তাই আর দেরি করা চলবেনা।
ইলহাম অফিস থেকে বের হয়ে রিকশার খোজে হাঁটা ধরলো তখনই একটা ১২/১৩বছরের মেয়ে হাতে বেলিফুল নিয়ে এসে বললো,
~ভাইজান একটা কিননা লননা।
ইলহাম সেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি এসব নিবোনা।
সেই মেয়েটি বললো,
~আফনার বউরে যায়া দিয়েন হ্যায় খুশি হইয়া যাইবো।
মেয়েটির কথা শুনে ইলহামের হেমন্তির কথা মনে পরলো সে মানিব্যাগ বের করে ১০০ টাকা সেই মেয়েটিকে দিয়ে অনেক গুলো বেলীফুল কিনে নিলো।
সেই মেয়েটি খুশি হয়ে চলে গেলো ইলহাম হাতে থাকা বেলিফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রিলশার খোজে বের হলো।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)