#গল্পের_নাম_প্রেমের_শুরু
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২১
সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রাহেলা খাতুন কেয়া তাকে অবাকের চড়ম শিখরে পৌছে গেছে রাহেলা খাতুন বললেন,
~আমাকে ভিতরে আসতে দিবে না?
রাহেলা খাতুনের কথা শুনে কেয়ার ধ্যান ভাঙ্গলো দরজা থেকে সরে দাড়িয়ে বললো,
~আসুন।
রাহেলা খাতুন বাসায় প্রবেশ করে কেয়া বললো,
~আপনি বসুন।
রাহেলা খাতুন মুখে মলিন হাসি টেনে বললেন,
~তানভীরকে না জানিয়ে এসে পরেছি আসলে ও ঘুমিয়ে আছে তাই।
কেয়া বললো,
~উনি তো টেনশন করবেন আচ্ছা আমি ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।
তখনই ইরিনা বেগম সেখানে উপস্থিত হয়ে রাহেলা খাতুনকে দেখে একবার কেয়ার দিকে তাকালেন। কেয়া তার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বোঝালো সে এসব কিছুই জানেনা।ইরিনা বেগম নিজ দৃষ্টি ইরিনা বেগমের দিকে করে সালাম দিয়ে বললেন,
~আপা এতো সকালে আমাদের বাসায়?
রাহেলা খাতুন একটু অস্বস্তি প্রকাশ করে আমতা আমতা করে বললেন,
~আসলে অনেক কথা আছে কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো তা বুঝতে পারছিনা।
ইরিনা বেগম এগিয়ে গিয়ে রাহেলা খাতুনের পাশে বসে বললেন,
~আপা সহজ ভাবে আমাকে বুঝিয়ে বলুন আমি বুঝবো।
রাহেলা খাতুন ইরিনা বেগমের হাত ধরে বললেন,
~আমি জানি গতকাল যেটা করেছি সেটার ক্ষমা চাওয়ার মুখ হয়তো আমার নেই।আমি শুধু আপনাদের না তানভীর আর কেয়া মনেও অনেক কষ্ট দিয়েছি।
কিন্তু বিশ্বাস করুন এতোটা করুন কখনো আমি ছিলাম না কিছুদিন যাবত মাথার ভিতর এসব উল্টাপাল্টা জিনিস ঘুরছিলো বিশেষ করে তানভীর যখন আপনাদের গুনগান করতো তখন বেশি খারাপ লাগতো।এসব বিষয় নিয়ে আমার আলাপ শুরু পাশের বাসার ভাবির সাথে সে আমাকে ঠান্ডা করার বদলে আরো আগুন ভরে দিতো তাই গতকাল এসব বলে দিয়েছি।
ইরিনা বেগম রাহেলা খাতুনের হাতে হাত রেখে বললেন,
~আপা,আপনি যদি বাহিরের মানুষের সাথে এসব কথা না বলে কেয়ার সাথে আলোচনা করতেন বা তানভীরকেই জানাতেন তাহলে আর এসব হতো না।আমাদের জীবনে অনেক কষ্টের সময় পার হয় সেগুলো একজন বাহিরের মানুষদের সাথে না বলে আপন মানুষদের সাথে বলতে হয় কারণ পর কোনোদিন আপন হয়না।তানভীর আপনাকে অনেক ভালোবাসে যদি একবাট ওকে বলতেন তাহলে হয়তো এসব হতো না।
রাহেলা খাতুন মাথানিচু করে কথাগুলো শুনছেন আসলেই সে যদি একটু সচেতন হতো তাহলে এসব হতো না নিজ পরিবারেরে সাথে তিনি এতো খারাপ করেছেন তাও পরের জন্য এটা ভাবতেই তার লজ্জা লাগছে।ইরিনা বেগম কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
~কেয়া,টেবিলে নাস্তা দেও আর তানভীরকে ফোন করে বলো আপা কয়েকটাদিন এখানেই থাকবে।
কেয়া বললো,
~আচ্ছা মা।
বলেই সে রুমে চলে আসলো ফোন নিয়ে তানভীরকে ফোন করতেই তানভীর ফোন রিসিভ করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
~মা কে পাওয়া যাচ্ছেনা কেয়া?
কেয়া ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
~মা আমাদের বাসায় আর কয়েকটাদিন এখানেই থাকবেন।
তানভীর ভ্রুকুচকে বললো,
~আমার কান হয়তো খারাপ হয়ে গেছে ঠিক শুনতে পাচ্ছিনা।
কেয়া বললো,
~আপনার কান একদম ঠিক আছে আপনি এই বাসায় চলে আসেন।
বলেই খট করে ফোন রেখে দিলো কেয়া আর তানভীর ফোন হাতে নিয়ে এখনো অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
___♥____
হেমন্তি নাস্তা তৈরি করে হিয়া,ফারুক আর ইলহামকে টেবিলে আসতে বললো।সবাই টেবিলে বসে নাস্তা করছে হিয়া পরোটা ছিড়তে ছিড়তে বললো,
~ইলহাম,গ্রামের বাড়ি একবার যাওয়া উচিত কতোদিন সেখানে যাইনা।
ইলহাম বললো,
~ওখানে গিয়ে করবি কী আছে সেখানে?কেউ নেই আমাদের তুই ভুলে যাস কথাটা বার বার।
হিয়া বললো,
~কেউ নেই মানে ইবরাহীম চাচা জীবিত আছে ইলহাম।সে আমাদের পরিবারের অংশ তুই কেন ভুলে যাস।
ইলহাম বললো,
~আমি কিছুই ভুলিনি এই চাচা যে আমাদের ঠকিয়ে আছে তা কী ভুলে যাস?
হিয়া বললো,
~বাবা তাকে মাফ করে দিয়েছিল ইলহাম চাচা প্রতিদিন ফোন করে তোকে দেখতে চায়।
ইলহাম টেবিলে বারি দিয়ে বললো,
~আমি মাফ করিনি আমার এখনো মনে আছে গ্রামের লোকদের ব্যবহার যখন বাবা তার সেই কুঠি ঘরটার দাবি নিয়ে গিয়েছিল।সেই ঘরটায় বাবার ছোটবেলার স্মৃতি রয়েছে তাই সে ঘরটা চেয়েছিল তখন ওই চাচাই আমাদের বাবাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।
হেমন্তি আর ফারুক নিরব দর্শক ফারুক আগে থেকে সব জানলেও হেমন্তি এসব শুনে অবাক হচ্ছে।হিয়া বললো,
~একবার তুই চল গ্রামে চাচার অবস্থা বেশ ভালো না চাচী কালকে রাতেও ফোন করেছে।
ইলহাম চুপ করে রইলো কিছুই বললো না হিয়া ইলহামের হাত ধরে বললো,
~আমার জন্য চল শুধু একদিন থেকে চলে আসবো।
ইলহাম কিছু না বলে রুমের দিকে পা বাড়ালো হিয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
হেমন্তি হিয়ার পাশে বসে বললো,
~আপু,আমি দেখছি এই ব্যাপারটা।
হিয়া কিছু না বলে হেমন্তির গালে হাত রেখে চেয়ার ছেড়ে রুমে চলে গেলো।হেমন্তি সব গুছিয়ে নিজ রুমের দিকে পা বাড়ালো রুমে গিয়ে দেখলো ইলহাম বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।
হেমন্তি ধীর পায়ে ইলহামের পাশে বসে পরে তার চুলে হাত ডুবিয়ে বললো,
~আপুর জন্য এতটুকু তো করতেই পারেন।
ইলহাম চোখ ফট করে খুলে বললো,
~এসব কথা বলবেনা রাগ উঠে যাবে।
হেমন্তি বললো,
~এতো রাগ কেন আপনার?আপু যদি কষ্ট পায় তাহলে তার শরীরটাও খারাপ হয়ে যাবে।
ইলহাম এখন চিন্তায় পরে গেলো সে ভাবছে হিয়ার শরীরটা এখন ঠিক রাখা প্রয়োজন তাই সে শোয়া থেকে উঠে বললো,
~ঠিক আছে শুধু একদিনের জন্য হিয়াকে বলে দেও আগামীকাল রওনা দিবো পরশু চলে আসবো।
হেমন্তি খুশি হয়ে ইলহামের গাল টেনে বললো,
~এখনই আপুকে বলে আসছি।
বলেই সে রুম থেকে চলে আসলো ইলহাম মুচকি হেসে আবার শুয়ে পরলো।হেমন্তি হিয়ার রুমে গিয়ে এই সুখবরটা দিয়ে আসলো অনেকদিন কোথাও বাহিরে যাওয়া হয় না তাই হেমন্তির মনটাও ভালো হয়ে গেলো।
বিকেলের দিকে কেয়া,তানভীর আর রাহেলা খাতুন রওনা হয়েছে ইলহামদের বাসার উদ্দেশ্যে। ইমরান খানও যেতে চাইছিলেন কিন্তু ইরিনা বেগম তাকে যেতে বারণ করছেন কারণ রাহেলা খাতুন হয়তো তার উপস্থিতিতে কথা বলতে পারবেনা।
বিকেলের সময় তাই হেমন্তি ফুলগাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে ইলহাম একটু বাহিরে গেছে হিয়া ঘুমিয়ে আছে।কলিংবেল বাজতেই হেমন্তি বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমের বাহিরে চলে আসলো দরজার সামনে গিয়ে খট করে দরজা খুলতেই কেয়া,তানভীর আর রাহেলা খাতুনকে দেখে অবাক হলো।কেয়া হেমন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছো আপু?
হেমন্তি বললো,
~ভালো।
কেয়া হেমন্তিকে ছেড়ে দিতেই হেমন্তি বললো,
~আসেন আপনারা ভিতরে আসেন।
তিনজনই বাসায় প্রবেশ করলো রাহেলা খাতুন অনেক লজ্জা পাচ্ছেন।হিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেছে কলিংবেলের আওয়াজে কে এসেছে দেখার জন্য বাহিরে চলে আসলো আর এসে দেখলো কেয়াদের।
___♥___
তাদের দেখে হিয়া হাসি হাসি মুখ করে বললো,
~আপনারা কখন আসলেন?হেমন্তি তো বলেনি যে আপনারা আসছেন।
কেয়া বললো,
~আপুও জানতোনা।
হিয়া সোফায় বসে বললো,
~তা কেমন আছো তোমরা?
তানভীর বললো,
~ভালো আপনার শরীরটা কেমন আপু?
হিয়া বললো,
~ভালো আছি।
রাহেলা খাতুন চুপ করে বসে আছেন কী বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না কেন যে এতো জড়তা কাজ করছে কে জানে?
হিয়া রাহেলা খাতুনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আন্টি কেমন আছেন?
হিয়ার কথায় সে চমকে উঠলো আর বললেন,
~ভালো আছি মা।
হিয়া মুচকি হেসে বললো,
~হেমন্তি ইলহামকে ফোন দেও বলো যে কেয়ারা এসেছে।
বলেই হিয়া সোফা ছেড়ে উঠে রুমের দিকে যেতে নিবে তখনই রাহেলা খাতুন বলে উঠলেন,
~হিয়া মা তোমার সাথে কথা আছে আমার।
হিয়া রাহেলা খাতুনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~আন্টি আমি জানি আপনি কী বলবেন?আপনার মাফ চাইতে হবে না বড়রা ছোটদের কাছে মাফ চাইবে এমন ধারনা নিয়ে বড় হয়নি না বাবা-মা সে শিক্ষা দিয়ে বড় করেছল আপনার প্রতি কোনো রাগ আমার নেই।
এতটুকু বলে হিয়া হেমন্তির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি একটু তোমার ভাইয়াকে ফোন করে আসছি।
বলেই হিয়া রুমে চলে গেলো রাহেলা খাতুন বুঝতে পেরেছেন কোন মানুষগুলোকে সে কষ্ট দিয়েছেন।তাই সে মাথানিচু করে বসে রইলেন তানভীর মায়ের হাত ধরে তাকে বললো,
~এই মানুষগুলোর মন অনেক ভালো মা তোমায় অবশ্যই মাফ করে দিবে।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)