গল্পের নাম : কাঁটা | লেখক : তামান্না স্মৃতি | ক্যাটাগরি : রোমান্টিক গল্প

0
2407

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০

গল্পের নাম : কাঁটা
লেখক : তামান্না স্মৃতি

ক্যাটাগরি : রোমান্টিক গল্প
শব্দ সংখ্যা : ২০০০ শব্দের মধ্যে

আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না তবে সিনেমা নাটকের মতো এমন অনেক ঘটনায় কিন্তু আমাদের জীবনে ঘটে। বলতে গেলে আমার জীবনে আজ এমন একটা ঘটনা ঘটেছে । এতদিন কোনো রোমান্টিক উপন্যাস অথবা সিনেমা, নাটকে দেখে এসেছি নায়ক অথবা নায়িকার সাথে হুট করে কোনো রেস্তোরাঁ অথবা ট্রেনের কোনো কেবিনে তার প্রাক্তনের দেখা হয়ে যায়। হতে পারে আমি কোনো সিনেমার নায়িকা নয় তবে আজ আমি এই গল্পের নায়িকা তো বটেই। আমার নাম শুভ্রা। আজ আমি আমার স্বামীর সাথে পাহাড় ভ্রমণে যাবো বলে সকাল সকাল এই ট্রেনের কেবিনে উঠে বসেছি। আমার স্বামীর আবার ভীষণ বেড়ানোর শখ। সুযোগ পেলেই আমাকে নিয়ে সে এখানে সেখানে বেড়িয়ে বেড়ায়। আর আমার কথা কী আর বলবো! ঘুরতে ভালো লাগে না এমন মানুষ আবার আছে নাকি?
আমার ঠিক মুখোমুখি আমার প্রাক্তন স্বামী তার সহধর্মিনীকে নিয়ে বসে আছে। কেবিনে উঠেই দেখি তারা দুজন একগাদা লাগেজ সমেত আমাদের কেবিনে বসা। প্রথমে ভেবেছিলাম কোথাও হয়তো কোনো ভুল হয়েছে। কিন্তু পরে দেখলাম কোনো ভুল হয়নি। আমরা দুজনই নিজের অজান্তে একই কেবিনের টিকিট কেটেছি।
কিছুক্ষণ বেশ চুপচাপ কেটে গেল। একটু পর আমি আমার স্বামীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম, চলো আমরা বরং অন্য কোনো কেবিনে ফাঁকা জায়গা আছে কিনা দেখি।
আমার স্বামী বললো, তোমার কী খুব বেশি অস্বস্তি হচ্ছে শুভ্রা?
আমি আর কথা বাড়ালাম না। যদিও আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো । কারন আমি খুব ভালোভাবেই জানি ফেসবুকের কল্যানে আমার স্বামীও আমার প্রাক্তন স্বামীটিকে চেনেন। তাছাড়া আমার প্রাক্তন স্বামী লিটনের সহধর্মিনী মায়া মূলত লিটনের অফিসের কলিগ ছিল। সেই সূত্রে আমিও মায়াকে চিনতাম। মেয়েটাকে বরাবরই পছন্দ করতাম আমি। মনে হত কত দিনের যেন চেনা! তবে আরো বেশী চিনলাম সেদিন যেদিন দেখলাম আমার অনুপস্থিতির সুযোগে আমার-ই বেডরুমে আমার স্বামীকে সে জড়িয়ে ধরিয়ে আছে। আমার মাথার উপর সেদিন আকাশ ভেঙে পড়েছিলো যেন। যদিও লিটন সেদিন আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো।
বারবার বলেছিলো, তুমি ভুল করছো শুভ্রা। ব্যাপারটা একেবারেই একতরফা। মায়া অনেকদিন ধরে আমার পেছনে লেগে আছে।
লিটনের কথা শুনে আমি মায়ার দিকে তাকিয়েছিলাম। দেখেছিলাম মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একবার ভেবেছিলাম লিটন হয়তো ঠিকই বলছে। সব দোষ মায়ার। পরমুহূর্তে মনে হয়েছিলো, তাই যদি হয় তবে কথাগুলো লিটন আমার কাছে এতদিন গোপন রেখেছিল কেন? সেই সময় মাথাটা কেমন যেন গুলিয়ে গিয়েছিলো। এতদিনের সম্পর্ক, ভালোবাসা, বিশ্বাস সব যেন এক নিমিষেই চোখের সামনে চূর্ণবিচির্ন হয়ে যেতে দেখেছিলাম। বরাবরই স্বাধীন চেতা মানুষ ছিলাম আমি। নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে মাথা নীচু করে কোনো অন্যায় মেনে নেয়ার মত শিক্ষা এবং মানসিকতা কোনটায় আমার ছিল না। সেদিন-ই আমি লিটনের ঘর ছেড়ে চলে এসেছিলাম। এরপর আমি আর ও মুখো হইনি। থাকুক সে তার পরকিয়া সম্পর্ক নিয়ে। আমাদের ডিভোর্স কার্যকর হতেও খুব বেশী সময় লাগেনি। ডিভোর্সের পর কখনোই আমার সাথে আর লিটনের দেখা হয়নি। তবে ডিভোর্সের মাসছয়েক পর ভাসা ভাসা কানে এসেছিলো লিটন নাকি মায়াকে বিয়ে করেছে। এরপর আমিও আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। আমি নিজেও বিয়ে করেছি। নিজের সংসারে থিতু হয়েছি।
– শুভ্রা তোমার চা।
আমি চমকে সামনের দিকে তাকালাম। লিটন আমার দিকে একটা চায়ের গ্লাস বাড়িয়ে আছে। আমি আড়চোখে আমার স্বামীর দিকে তাকালাম। তার হাতেও চায়ের গ্লাস। সে নিবিষ্টমনে চা পান করছে। আমি নিজের চিন্তার ভেতর এতটাই বিভোর ছিলাম যে, কখন যে ট্রেনের ডেলিভারি বয় কেবিনের ভেতর এসেছে, সবাই তার কাছ থেকে চা কিনেছে আমি তা টের-ও পাইনি। কথা না বাড়িয়ে আমি লিটনের কাছ থেকে চায়ের গ্লাসটা নিলাম। সত্যি ওই সময় আমার চায়ের ভীষণ তেষ্টা পেয়েছিল। লিটন বরাবরই আমার প্রয়োজন,অপ্রয়োজন,আমার ইচ্ছে, অনিচ্ছাগুলোর প্রতি খুব যত্নবান ছিল। এমনটা নয় যে আমার বর্তমান স্বামী সেগুলো করেন না। তবে আমার নিজের অজান্তেই কোথায় যেন একটা তুলনা চলে আসে। কোনো একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির সামনাসামনি হলেই আমার মনে প্রশ্ন আসে এসময় লিটন হলে কী করতো? কী ভাবে সে এই পরিস্থিতিটার সামাল দিতো? আজও আমি সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে লিটনের পছন্দের রান্নাগুলো করি যেগুলো আমার স্বামী খুব মনোযোগ দিয়ে খান।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে। আমি আমার স্বামীর সাথে ঠিক কাজ করছি না। কারন এসবের ভেতর আমার স্বামীর তো কোনো দোষ নেই। উল্টো সে-ই না আমার মত ডিভোর্সি একটা মেয়েকে বিয়ে করে অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছে।
আপনাদের ভাবনাগুলো হয়তো ঠিক। কিন্তু কী করবো বলুন, মনের উপর তো কারো কোনো জোর নেই। আমি আমার স্বামীকে মন থেকে মানিয়ে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছি। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে তাকে ভালোবাসতে চাইছি কিন্তু কোথায় যেন একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে। মনের ভেতর লিটন যেন ঘাপটি মেরে বসে আছে। এমনকি রাতের একান্ত মুহুর্তগুলোতেও চোখের সামনে লিটনের চেহারা ভেসে ওঠে। সারাক্ষণ একটা সন্দেহের কাঁটা আমার মনের ভেতর খচখচ করতেই থাকে। সেদিন যদি লিটন সত্য কথা বলে থাকে? সত্যি কি সেদিন মায়ায় তাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছিল? যদিও আমি খুব ভালোমতোই জানি এগুলো ভেবে আর কোনো লাভ নেই। আমরা দুজন যে যার জীবন নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। চাইলেও আর পেছনে ফেরা সম্ভব নয়। তাছাড়া পেছনে ফিরতে চাই-ও না আমি। শুধু জানতে চাই পেছনের নির্ভেজাল সত্যটুকু। আমার ভেতরের সন্দেহের কাঁটাটাকে চিরতরে উপড়ে ফেলতে চাই। আমি আমার স্বামীকে পুরো অন্তর দিয়ে ভালোবাসতে চাই। নিজের কাছেই নিজেকে প্রমান করতে চাই সেদিন হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি ভুল করিনি। লিটনকে ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত আমার সঠিক ছিল।
– শুভ্রা।
আমি আমার স্বামীর দিকে তাকালাম।
– কী হয়েছে তোমার? সেই কখন থেকে একেবারে চুপ করে আছো? তোমার কি খুব মন খারাপ শুভ্রা?
আমি তার কথাগুলো শুনে একটু বিব্রত হয়ে সামনে বসে থাকা লিটন আর মায়ার দিকে তাকালাম। তারা দুজনেই নিজেদের মতো করে ব্যস্ত। দুজনের কানে হেডফোন, হাতে মোবাইল। আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম। যাক্ আমার স্বামীর কথাগুলো অন্তত লিটনের কান পর্যন্ত পৌছায়নি। আমি আমার স্বামীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললাম, নাহ্। শুধু শুধু মন খারাপ হবে কেন? আমি ঠিক আছি। একটু মাথা ধরেছে এই যা।
সে একটু ব্যস্ত হয়ে বললো, তোমার মাথা ধরেছে নাকি? সে কথা তুমি আমায় আগে বলবে তো? তুমি বরং চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।
আমি মাথা নাড়িয়ে আমার স্বামীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। একটু পরেই দেখি নাক ডাকার মৃদু শব্দ। তাকিয়ে দেখলাম আমাকে ঘুম পাড়াতে যেয়ে আমার স্বামী বেচারায় বসে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি নিজেও ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম এলো না। মাথাটার ভেতর কেমন যেন দপদপ করছে। ভাবলাম ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসলে হয়তো ভালো লাগবে।
চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হতেই বেশ থতমত খেয়ে গেলাম। আমার ঠিক সামনাসামনি মায়া দাঁড়িয়ে আছে। মায়ার দিকে একটু হাসি বিনিময় করে সামনের দিকে এগোতেই দেখি পেছন থেকে মায়ার গলা। সে আমাকে ডাকছে।
অগ্যতা কী আর করা! আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। মায়ার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললাম, কিছু বলবে?
– জি। আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
– বলো।
– আপু আমি জানি আপনার ভেতরে অনেক প্রশ্ন আছে। কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনি আজও খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা। এই মেয়ে বলে কী? সে কী অন্তর্যামি নাকি? তবে আমি আমার অবাক হওয়া ভাবটা কিন্তু মায়াকে বুঝতে দিলাম না। চোখে মুখে একটা সহজ সরল ভঙ্গি ফুটিয়ে বললাম, তুমি কী বলতে চাইছো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
– বলছিলাম যে আপনি বোধহয় আমাকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারেননি। হতে পারে আপনি লিটনকে ডিভোর্স দিয়েছেন তবুও কোথায় যেন লিটনের প্রতি আপনার একটা আস্থার জায়গা থেকে গেছে।
আমি এবার একটু রাগ করেই বললাম, তুমি এসব কী বলছো মায়া? তুমি বোধহয় ভুলে গেছো যে আমি এখন অন্য একজনের স্ত্রী। তাছাড়া তোমার সাথেও লিটনের বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে আজ এসব পুরোনো কথা আবার নতুন করে উঠছে কেন?
– কারন আপনি পুরোনো সম্পর্ককে এখনো আকড়ে ধরে বসে আছেন। তা না হলে আমাদের বাসার ল্যান্ড ফোনে ব্ল্যাঙ্ক কল দিয়ে লিটনের গলা শুনতেন না। তার ফেসবুক প্রোফাইল সারাদিন স্টক করতেন না।
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মায়ার কথার উত্তরে কী বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না।
মায়ায় আবার বললো, এসব করে আপনার কী লাভ হচ্ছে বলুন তো? শুধু শুধু নিজে কষ্ট পাচ্ছেন আর আপনার স্বামীটিকে কষ্ট দিচ্ছেন।
এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। মায়ার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম, অন্তত এসব কথা তোমার মুখে মানায় না মায়া। তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো। এসব কিছুর জন্য তুমি দায়ী। তুমি আমার আর লিটনের মাঝে এসে দাঁড়িয়েছো।
– আপনি ভুল করছেন। আমি আপনার আর লিটনের মাঝে এসে দাঁড়াইনি। বরং লিটন অফিসের শুরুর দিন থেকেই আমার পেছনে পেছনে ঘুরেছে। অফিসের এমন কোনো ট্যুর নেই যেখানে সে আমাকে নিয়ে যায়নি, ঘন্টার পর ঘন্টা সে আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। তার পুরোনো আমলের কত চিঠি যে আমার কাছে আছে আপনি চাইলে আমি আপনাকে তা দেখাতে পারি।
– আজ হঠাৎ করে এসব কথা তুমি কেন বলছো আমাকে?
– কারন আমার ধারনা আপনি এখনো লিটনের কথায় বিশ্বাস করে বসে আছেন। আপনি ভাবছেন আমি লিটনকে আপনার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি। আপনি অন্য একজনকে বিয়ে করেছেন ঠিকই কিন্তু দুজনের মাঝে এখনো লিটনের একটা দেয়াল তৈরি করে রেখেছেন। যত দ্রুত এই দেয়ালটা আপনি ভাঙবেন ততো দ্রুতই আপনার এবং আমার আমাদের দুজনের জন্যেই মঙ্গল হবে।
…………………………….

কিছুক্ষন হলো ট্রেনটা স্টেশনে এসে থেমেছে। মায়া আর লিটন একটু আগেই ট্রেন থেকে নেমে গেছে। আমার স্বামী তাড়াহুড়ো করে লাগেজ নামাচ্ছে। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার যে কী হলো আমি হুট করে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। শুরুতে সে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে বুঝি?
আমি বললাম, একদম না। বরং আজ আমার বুকের উপর থেকে খুব ভারী একটা কিছু যেন নেমে গেছে। নিজেকে আজ অনেক হালকা লাগছে।
সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, পাগলী মেয়ে একটা। এসো এখন ট্রেন থেকে নেমে পড়ি। দেখছো না সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। চলো আমরা বরং এখনই লাগেজ টাগেজ হোটেলে রেখে ঘুরতে বের হয়ে যাই। চাইলে তোমাকে নিয়ে শপিং করতেও যেতে পারি।
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, উহু।
– কেন? শপিং এ যাবে না তুমি?
আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, না। আজ তুমি আর আমি সারা বিকেল, সন্ধ্যা হোটেলে কাটাবো। এক মুহুর্তের জন্য হোটেলের রুম থেকে বের হবো না। কেমন?
এবার আমার স্বামী আমার মুখের দিকে চেয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো, কোনো সুন্দরী স্ত্রীর এমন প্রস্তাবে কোনো স্বামী কি রাজি না হয়ে পারে, বলো?
আমি পরম মমতা নিয়ে আমার স্বামীর হাত ধরলাম। দুজনে হোটেলের পথে পা বাড়ালাম।
আপনারা দোআ করবেন আমাদের এই বন্ধন যেন সারাজীবন অটুট থাকে।

*সমাপ্ত*

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে