গল্পের নামঃ “heart touch love”
পর্ব : ৭
খুব সকালেই আমি পৌঁছে গেলাম, বৃষ্টিকে আমার চাচার বাড়ীতে রেখে আমি একা বাড়ী গেলাম,
আজ সামিয়াকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে, জানি না সত্যি কি সে আগে থেকে বেশি সুন্দর হয়েছে নাকি আমি এতো দিন তাকে ভালো করে দেখিনি।
ইস, আজ যদি বৃষ্টি না থাকতো…
সামিয়াঃ বাহ, এতো সকালেই হাজির,
আমিঃ বাস খুব জোরে এসেছে।
সামিয়াঃ একটু ঘুমিয়ে নেন, আমি নাস্তা করি। কালাই-এর রুটি খাবেন? আমি এবার বানাতে শিখে গেছি।
আমিঃ একটু বসো না, নাস্তা পরে খাবো।
সামিয়াঃ আপনি রাতে জার্নি করেছেন, একটু ঘুমান, না হলে আবার শরীর খারাপ করবে।
আমি মনে মনে ভাবছি… কিভাবে বলবো? আমি তো মেয়েটাকে আর কষ্ট দিতে চাই না, তবে ওর থেকে লুকিয়ে রেখেও আমি তাকে ধোঁকা দিতে চাই না… কিন্তু কিভাবে বলি?
আমিঃ একটা কথা বলি,?
সামিয়াঃ কি বলেন?
আমিঃ আমি খুব খারাপ স্বামী তাই না?
সামিয়াঃ আমি কি কখনো সেটা বলেছি আপনাকে?
আমিঃ আমি তো বুঝি, স্বামী হিসাবে কোন দায়িত্ব পালন করতে পারি না।
সামিয়াঃ কে বলেছেন পারেন না, বিয়ের পর থেকে আমাকে খেতে দিচ্ছেন, আমাকে জামা কাপড় কিনে দিচ্ছেন, যখন যা ইচ্ছা সেটা পেয়ে যায়।
আমিঃ এতেই কি সব দায়িত্ব শেষ?
সামিয়াঃ সেটা আপনি ভালোই জানেন।
আমিঃ আমি একটা ভুল করে ফেলেছি, তবে আমার আর কোন পথ ছিল না। আমি পরিস্থিতির স্বীকার।
সামিয়াঃ কি হয়েছে?
আমিঃ কিভাবে বলবো ওটাই ভাবছি।
সামিয়াঃ আমাকে কষ্ট দেবার জন্য আমার সতীন নিয়ে এসেছেন নাকি?
আমিঃ সেটাই মনে করো…
সামিয়াঃ কি??????
আমিঃ সত্যি আমি একটা মেয়েটাকে বিয়ে করেছি। কিন্তু তোমাকে কষ্ট দেবার জন্য না,
।।
সামিয়া এতক্ষণে সিরিয়াস ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে…
সামিয়াঃ আপনি মজা করছেন তাই না?
আমিঃ যদি এটা মজা হতো…। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে আমি আরেকটা বিয়ে করেছি। তবে বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
।।
সামিয়া কাঁদো কাঁদো ভাবে…।
সামিয়াঃ কোনটা বিশ্বাস করবো বলেন, আপনি আরেকটা বিয়ে করেছেন ওটা নাকি এটা যে বিয়ের ৪ মাস পর ও যে স্বামী বউ কে ছুয়েও দেখে নি,
সে স্বামী বলছে যে তাকে ভালোবাসে। ২ টা তো এক সাথে সম্ভব না, আপনি বলেন কোনটা সত্যি।
আমি বাক রুদ্ধ হয়ে গেলাম, কি উত্তর দিবো, মেয়েটাকে। সত্যি তো ২ টা তো এক সাথে সম্ভব না, আর সামিয়া তো পিচ্চি মেয়ে না, মনো-বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করা মেয়ে সে।
যথেষ্ট বুঝার জ্ঞান আছে তার এজন্য সে আজ পর্যন্ত আমার এতো অবহেলার পর ও আমার সংসার করে গেলো।
।।
সামিয়া একটা ল্যাগেজ বের করলো, আলমারি থেকে কিছু কাপড় বের করতে শুরু করলো,
আমিঃ তুমি এসব কি করছো?
সামিয়াঃ আপনি না বলেছিলেন, আপনার বউ যদি আপনাকে না বলে বাবার বাড়ী যায় তবে তাকে বাবার বাড়িতেই রেখে দিবেন, তাই আজ আমি চলে যাচ্ছি।
আমিঃ কেন?
সামিয়াঃ কেন মানে? কিসের কেন? আমি চাই না আমার জন্য আপনার নতুন বউয়ের সাথে নতুন জীবন শুরু করতে সমস্যা হয়, এজন্য আমি চলে যাচ্ছি,
অনেক বিশ্বাস করতাম আপনাকে, ভাবতাম কতো দিন কষ্ট দিবেন, ৬ মাস, ১ বছর, ৫ বছর?
এরপর তো আমাকে ভালো না বাসলেও আমার প্রতি একটু দয়া মায়া হবে? এই ভেবে আমি সব সহ্য করতাম।
কিন্তু আপনি কি করলেন?
আমি কি এতোটাই খারাপ মেয়ে? একটা ছোট না হয় ভুল করেছিলাম, তাই বলে তার প্রতিশোধ আপনি এভাবে নিবেন?
আমিঃ বিশ্বাস করো, আমি প্রতিশোধ নেয় নি, আমি তো তোমাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কার সব দূরত্ব মিটিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি ভাগ্যের কাছে পরাজিত।
সামিয়াঃ কিভাবে বিশ্বাস করবো, আপনি বলেন? এটা কি বিশ্বাস করার মতো কাজ? ৪ মাস থেকে সুধু সুখে থাকার নাটক করে গেছি, কাউকে কিছু বলি নি… যেন আপনাকে কারো কাছে মাথা না নতো করতে হয়। আমি চলে গেলাম, আপনি ভালো থাকবেন। দুয়া করি আপনি যেন অনেক সুখী হন।
আমিঃ তুমি আমার একবার কথা শুনো।।
সামিয়াঃ না শুনবো না।
এরপর সামিয়া চলে যেতে চাইলো, আমি মানা করার পর ও শুনলো না, আমি পিছন থেকে তার হাতটা ধরেই এক চড়,
জানি চড় মারা টা ঠিক হয় না, কিন্তু আমি জানি সামিয়া যদি একবার তার বাবার বাড়ী চলে যায় তবে এটাই আমাদের শেষ দেখা। আর আমি এক বার আমার ভালোবাসা হারিয়েছি, আরেকবার হারানোর মতো কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নাই।
আমিঃ ৪ মাস থাকতে পারলা, আর ৪ মিনিট পারবা না? আগে আমার কথা শুনো তারপর তুমি যা বলবা তাই করবো, দরকার হলে আমি নিজে তোমাকে রেখে আসবো। কিন্তু আমাকে বলতে দাও।
সামিয়াঃ বলেন।
আমিঃ আমি সব বলে দিলাম, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত……।।
এখন বলো, আমি ভুল করেছি এটা ঠিক, তোমাকে কষ্ট দিয়েছি এটাও ঠিক, তবে আমি তোমাকে ধোঁকা দেয় নি।
সামিয়াঃ মেয়েটা কই?
আমিঃ বড় চাচার বাড়ীতে।
সামিয়াঃ মা বাবা জানে?
আমিঃ বাবাকে রাতে বলেছিলাম, মা জানে না।
সামিয়াঃ কিন্তু আপনি বলেন, আমি কিভাবে আরেকটা মেয়ের সাথে ঘর করবো? কিভাবে সহ্য করবো যে আজ থেকে এই বাড়ী এই ঘর, মা, বাবা সব কিছুর অংশীদার আরেকজন আছে। কীভাবে মেনে নিবো বলেন ?
আমিঃ আমি জানি না…।। কারণ আমি মেয়ে না, আমি তোমার কষ্ট বুঝবো না। তবে তোমার চোখের পানি যে আজ আমাকেও স্পর্শ করেছে সেটা ঠিক বুঝতে পেরেছি। সিদ্ধান্ত তোমার, তুমি যা বলবা সেটাই করবো।
চলবে