গল্পের নামঃ “heart touch love”পর্ব-৩
শহরে যাবার আগে আমার এক বন্ধুকে ফোন করলাম, এই এক বন্ধু আছে যাকে যার সাথে আমি কিছুটা ফ্রি সময় পার করি, যদিও এখন দু জনেই ব্যাস্ত।
আমি পৌঁছে সিমেল কে ফোন করলাম, সে বলল আসছি দাঁড়া।
সিমেলঃ পিছন থেকে, কিরে শালা! ভাবী কই?
আমিঃ কিসের ভাবী?
সিমেলঃ শালা, বিয়ে করলি দাওয়াত তো দুরের কথা একবার জানালিও না? বাড়ী চল, মা, মজা দেখাচ্ছে, তার ওপর বলেছি যে তুই ভাবীকে নিয়ে আসবি।
আমিঃ আমি তোকে বলেছি যে আমি সামিয়া কে নিয়ে আসবো?
সিমেলঃ তো কি করতে এসেছেন আপনি?
আমিঃ একটু কাজ আছে, ডিআইজি অফিস যেতে হবে।
সিমেলঃ তো আমি কি করবো?
আমিঃ তুই চল, ১ ঘণ্টার কাজ তারপর ঘুরবো।
সিমেলঃ বাহ, ভালো তো, বিয়ের আগেও আমারা অবলার মতো একা ঘুরতাম, আর এখন বিয়ের পর ও একা ঘুরবো।
আমিঃ এতো বউকে ভালবাসিস তো তোর বউকে ডাক।
সিমেলঃতোর নতুন বউ নিয়ে আসলি না, আর আমি পুরাতন বউ নিয়ে ঘুরবো?
আমিঃ তাই নাকি? দাঁড়াও আজ বলছি, নতুন আর পুরাতনের কথা।
সিমেলঃ ভাই, মাফ চাইলাম, তোর ভাবী কে বলিস না, না হলে আমি শেষ। একবার একজন মজা করে বলেছিল যে আমি নাকি ফোনে একটা মেয়ের সাথে প্রেম করি,
তারপর থেকে প্রতিদিন আমাকে চেক করে। বিয়ে তো করেছিস, এখন ঝামেলা বুঝবি। এখন বুঝবি বউ কি জিনিস?
আমিঃ তুই বুঝ, সামিয়ার সাহস নাই যে আমাকে কোন প্রশ্ন করবে, চেক করা তো অনেক দুরের কথা।
সিমেলঃ আচ্ছা সামিয়া নাকি লামিয়ার চাচাতো বোন? লামিয়াকে দেখলি? কেমন রে মেয়েটা? তোকে কিছু বলে নি? অবশেষে তুই ওদের বাড়ী জামাই হয়েই গেলি?
আমিঃ বাদ দে ওসব কথা,
সিমেলঃ না বল না ভাই, কে বেশি সুন্দর, সামিয়া ভাবী নাকি তোর সেই লামিয়া?
আমিঃ বিয়ের দিন আমি লামিয়াকে দেখিনি। আর আজ শ্বশুর বাড়ী যাবার কথা আমি যায় নি। আর সামিয়াকে আমি এপর্যন্ত ভালো করে দেখিনি।
সিমেলঃ এটা আবার কেমন কথা,? আজ ৩ দিন হচ্ছে তোদের বিয়ে, আর বলছিস বউ দেখিস নি? তুই কি বিয়েতে রাজী ছিলি না?
আমিঃ বাবা- মা ছিল না, কারণ লামিয়ার জন্য তারা ঐ বাড়ীর আর কোন মেয়ে নিতে রাজী না।
সিমেলঃ নিজের জীবনটা নিয়ে এভাবে খেলছিস ? বিয়ে যখন করেছিস, মন থেকে মেনে নিয়ে সংসার কর।
আমিঃ চেষ্টা করবো, তার আগে কিছু কাজ আছে ওগুলো শেষ করি, এখন অফিসে চল।
।।
আমি সিমেল কে নিয়ে অফিস গেলাম, ওখানে একটা মিটিং ছিল ওটা শেষ করে কিছু ফাইল নিয়ে আমি আমার অফিসার এসপি স্যার কে ফোন করলাম,
আমিঃস্যার, আসসাল্মু, কাজ শেষ। ফাইল আমার হাতে।
স্যারঃ তাহলে কি কালকে রাতেই রওনা দিবেন?
আমিঃ স্যার, একটা কথা বলতাম, মানে অনুরোধ করতাম।
স্যারঃ বলেন,
আমিঃ স্যার, আমার আরও ৫ দিন ছুটির প্রয়োজন ছিল।
স্যারঃ কেন, কোন সমস্যা?
আমিঃ না, আসলে স্যার ২ দিন হলো, হটাৎ করেই আমার বিয়ে হয়ে যায়।
স্যারঃ তাই, নাকি? খুব ভালো, তা মিষ্টি কবে খাওয়াবেন?
আমিঃ আসি স্যার তারপর, স্যার আমার ছুটি।
স্যারঃ দেখেন, আরিয়ান সাহেব, আপনি নতুন জয়েন্ট করছেন এর মধ্যে আমি আপনাকে ৫ দিন ছুটি দিয়েছি সুধু এই মিটিং টার জন্য,
আবার ছুটি দিলে আপনার সমস্যা হতে পারে, আচ্ছা একটা কাজ করেন, আপনি চলে আসেন,
এই ফাইল দেখে এটা আবার জমা দিতে হবে তখন না হয় আবার আপনাকে পাঠিয়ে দিবো।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার। আসালামু…।
স্যারঃ অলাইকুম…।
।।
সিমেলঃ ছুটি পালি না?
আমিঃ শ্বশুর বাড়ীর আবদার তো? এসপি স্যারের সাথে ভালো সম্পর্ক তাই ৫ দিন ছুটি দিয়েছে।
সিমেলঃ এখন কি করবি?
আমিঃ কি করবো? চাকুরী, স্যার যখন ছাড়বে তখন আসবো।
সিমেলঃ ঠিক আছে এখন আগে বাড়ী চল, দুপুরে খেয়ে তারপর বের হবো।
আমিঃ ঠিক আছে চল।
।।
দুপুরে আমি সিমেল দের বাড়ী গেলাম, ওখানেও সবার এক কথা, বিশেষ করে ভাবী, সামিয়া কোথায়?
আমি বললাম আমি তো কাজে এসেছি এজন্য আনতে পারিনি।
ভাবী বলল, আরিয়ান ভাই, সিমেল জানেন আমাকে বিয়ের পর ৭ দিন কতো ঘুরিয়েছে?
আমিঃ হ্যাঁ, একটু আগে সিমেল বলছিল, নতুন আর পুরাতনের কথা…
ভাবীঃ মানে?
আমিঃ সেটা সিমেল ভালো জানে?
ভাবীঃ এই কথার মানে কি?
সিমেলঃ আহ, শয়তানটার কথা বাধ, দাও তো।
ভাবীঃ না, বলো।
আমিঃ ভাবী, নতুন মানে যখন আপনি নতুন ছিলেন, আর এখন পুরাতন তাই আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে না।
ভাবীঃ কি এতো বড় কথা? আজ আরিয়ান ভাই যাক, রাতে তোমাকে মজা বুঝাচ্ছি।
আমিঃ আমি হাসতে লাগলাম… ভাবী বাদ দেন না…
ভাবীঃ না ভাই, আজ সিমেলর এক দিন কি আমার এক দিন, আজ এর বিচার না হলে আমি আমার বাপের বাড়ী চলে যাবো।
সিমেলঃ এবার খুশী তো আপনি?
আমিঃ আরে এতো ভয় পাস কেন, চল বের হয়।
ভাবীঃ হ্যাঁ, সন্ধার আগেই বাসাই আসবা, আমি বাপের বাড়ী যাবো।
আমিঃ ঠিক আছে ভাবী, পিচ্চি ছেলে টাকে আমি সন্ধার আগে ছেড়ে দিবো।
।।
আমি রাস্তার সামনে এসে হাসতে লাগলাম, বললাম, শালা, আজ থেকে যখন ১০ বছর আগে আসতাম তখন তোর বাপ এই কথা বলতো আজ তোর বউ, ভাই তুই বড় কবে হবি?
সিমেলঃ খুব সুখে আছো তো তার ওপর ভালো বউ পেয়েছো, আমার কষ্ট বুঝবা না।
।।
আমি মনে মনে ভাবলাম, সিমেল হয়তো সত্যি কথা বলছে, তবে সামিয়া তো শান্ত মেয়ে না, যদিও এখন সে শান্ত আছে।
সামিয়া ভালো মেয়ে এটার কোন সন্দেহ নাই, তবে এই কষ্ট তার প্রাপ্য।
আজ যদিতাকে কষ্ট না দেয়, তবে সে ভালোবাসা মূল্য বুঝবে না। না বুঝবে স্বামীর মূল্য।
তাকে বুঝাতে হবে টাকা সুখে রাখে না, না রাখে শান্তিতে।
সুখের থাকার আসল মূলমন্ত্র হলো ভালোবাসা, হলো বিশ্বাস।
একটা সম্পর্ক তখন ই ১০০% সুখের হয় যখন তাদের মাঝে সম্মান থাকে, থাকে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ব।
আর এটা বুঝার এক মাত্র পথ হলো তাকে কষ্ট দেওয়া, তাকে অবহেলা করা।
চলবে