গল্পের নামঃ- সাইকো পাঠিকা | লেখকঃ- শাহেদুল ইসলাম মাহিম

0
2515

#গল্পপোকা_ছোট_গল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০
গল্পের নামঃ- সাইকো পাঠিকা
লেখকঃ- শাহেদুল ইসলাম মাহিম
.
হ্যালো আমি মাহিয়া ইয়াসমিন বলছি, আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি শাহেদুল
ইসলাম মাহিম এর আইডি থেকে কি করে পোস্ট করছি?
আমার হাতের রক্ত এখনো শুকিয়ে উঠেনি, তাও বলছি।
আমি মাহিমের একজন নিরব পাঠিকা। তার গল্পের খুন গুলো পড়ে আমার মনেও কেন জানি এক প্রকার হিংস্রতা কাজ করতো৷ কিন্তু কি করবো বলুন?
আমি তো একজন মেয়ে, গল্পের এমন কাল্পনিক ঘটনা গুলোকে তো আর বাস্তবে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়৷ আগেই বলে রাখা ভালো, অনেকেই তাকে খুব মিশুক প্রকৃতির বলে থাকে। যার কারণে আমিও সাহস করে তাকে কাল রাতে মেসেজ করি। বাস্তবে না হোক, কাল্পনিক হলেও আমাকে তার গল্পেই যেনো একটি হিংস্রতাপূর্ণ মানুষের চরিত্রে রাখা হয়।
কিন্তু আশেপাশের মানুষের কথা গুলো তিনি মিথ্যে প্রমাণ করে আমাকে নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলেন। তিনি ব্যস্ততার মাঝে হয়তো সময় কাটাতে পারেন, তা আমাকে সুন্দর করে বোঝালেই আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম কিছু একটা বলে।
কিন্তু উনার নিষেধ করার ধরণ আমার একেবারেই পছন্দ হয়নি।
রাতারাতি খবর নিয়ে ফেললাম তার বাসার ঠিকানার, তার কিছু পাঠক পাঠিকা আমার সাথে পরিচিত থাকায় খবর নিতে খুব একটা কষ্ট হলো না আমার।
একটি ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে বিকেলের দিকেই রওনা দিলাম তার বাসার উদ্দেশ্যে, ঘন্টা খানেকের মাঝে পৌঁছেও গেলাম।
তার বাসার নিচের তলা থেকে অনেক ডাকাডাকি করলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই।
উপরের তলায় দ্রুত উঠেই আমি দরজাতে টোকা দিলাম, কলিং বেল চাপতে আর ইচ্ছে হলো না।
মিনিট কয়েকের মাঝেই চশমা পরিহিত মাহিম নামের সেই ছেলেটি দরজা হাল্কা ফাঁক করে উঁকি দিয়ে আমার দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো।
ওহ হ্যাঁ, সালাম দিয়ে জিজ্ঞেসাও করলো, আমি কে?
সালামের উত্তর দিয়ে আমিও প্রশ্ন করলাম,
– আন্টি কি বাসায় আছেন?
– না, আম্মুরা আজ কেউই বাসায় নেই।
দেখুন না আজ ভাগ্যও আমার সাথী হয়ে আছে।
খুশিতে আমার লাফিয়ে উঠার অবস্থা, তবে নিজেকে সামলে নিলাম কোনোভাবে।
আমি একটু ঢোক গিলে ভেতরে বসতে চাইলাম। মাহিম তখনও আমার দিকে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে ছিলেন।
ছোট একটি নিশ্বাস ফেলে আমাকে ভেতরে বসতে দিলো সে।
আমার অবস্থা বুঝতে পেরে ভেতরের রুম থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে আসলেন তিনি।
এরপর অনেকটা দূরেই ধপাস করে বসে আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন।
আমার হাত পা কাঁপছে, আমি ব্যাগ থেকে তাড়াতাড়ি পিঁয়াজুর ছোট বাক্সটি বের করে তার দিকে এগিয়ে দিই।
মাহিম কোনো প্রশ্ন করার আগেই আমি জানিয়ে দেই, এতে তার পছন্দের খাবার আছে।
মাহিম বক্সটি খুলে বড় বড় সাইজের পিঁয়াজু দেখে বেশ খুশি হয়ে যায়।
কিন্তু তার ভ্রুঁ দু’টি আবারো কুঁচকানো, আমার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে আরো একটি প্রশ্ন, আমি কীভাবে জানি পিঁয়াজু তার পছন্দের একটি খাবার।
অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে আর দিতে হয় নি, কারণ সে প্রশ্নটি করেছিলো পিঁয়াজু খেতে খেতে আর পিঁয়াজুর অর্ধেক খেতেই তিনি অজ্ঞান হয়ে সোফায় শুয়ে পড়েন। অনেক কড়া ঔষুধ মিশিয়ে এনেছি, এমনই তো হওয়ার কথা
আমি চাইলে তাকে এক্ষুনি মেরে ফেলতে পারি, কিন্তু আমি যে তাকে খুব কষ্ট দিয়ে মারতে চাই।
যার কারণে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে তার জ্ঞান ফেরার।
ব্যাগ থেকে দঁড়ি বের করে তাকে বাঁধলাম খুব শক্ত করে, এরপর অনেক পানি ঢালতে শুরু করলাম তার উপর, মিনিমাম আধঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরলো।
আমি আর দেরী না করে ধারালো ছুরিটি বের করে তার চোখের পাপড়ি কাটতে শুরু করলাম, যেমনটি তিনি খুনের নেশা একটি গল্পে লিখেছিলেন। কেনো তা আমি জানি না, তবে মাহিমের কোনো আর্তনাদ আমি শুনতে পাই নি। না আমার শান্তি লাগছে না, আমি মাহিমের আর্তচিৎকার শুনতে চাই।
তার চোখের পাপড়ি কেটে ফেললাম যাতে সে শুরু থেকেই সবটা নিজ চোখে দেখে।
এরপর আমি একে একে তার সব নখ উপড়ে ফেলতে শুরু করলাম। মাহিম দাঁতে দাঁত চেপে ছিলো, কিঞ্চিত পরিমাণ টু শব্দও আমি শুনছি না। না, আমি নিজেই তেলে বেগুনে জ্বলছি। সে যখন কোনো চিৎকারই করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাহলে আমি তার জিহ্বা কেঁটে ফেলবো। তাও ঠিক সেই ভাবে, যেমনটা তার কয়েকটি গল্পে ছিলো জিহবার মাঝ বরাবর ছুরি ঢুকিয়ে সোজা বরাবর টান দিয়ে জিহ্বা দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা।
আমি তার আগে অন্য কিছু করার চেষ্টা করলাম, ঠোঁট দু’টোর মাঝ বরাবর ছুরি চালিয়ে দিলাম। তার চোখ থেকে টপ টপ করে আমার হাতে রক্ত পড়ছে।
তার চোখ গুলো যেনো নেশায় ডুবে আছে, মনে হচ্ছে তার চোখ দু’টি তৃপ্তি পাচ্ছে এসব দেখে। আমার তার এভাবে তাকিয়ে থাকা আর সহ্য হলো না। তাই সাথে সাথেই
ছুরি দিয়ে তার দু’টি চোখেই আঘাত করলাম।
এবার গল গল করে তা দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে সাথে সাদা কালো কি কতোগুলো বের হয়ে আসছে, যা আমি আগে কখনো দেখিনি।
হয়তো চোখের কোনো অংশ হবে।
এরপর ঠিক একই ভাবে তার জিহবাটিও কেঁটে ফেললাম।
আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম সে চাইলে আমাকে কামড়াতে পারতো। হাত পা ছোড়াছুঁড়ি করার চেষ্টা করতে পারতো। কিন্তু মাহিম আমার সব নির্যাতনই সহ্য করে যাচ্ছে, তার সহনশীলতার উপর বিরক্ত আমি।
আর পারছি না আমি। মাহিমের গলায় জোরে ছুরি চালিয়ে দিতেই রক্ত গুলো ফিনকি দিয়ে আমার মুখেও এসে পড়ে খানিকটা।
আমি একটু দূরে সরে এসে চিৎকার করতে থাকলাম, অনেকক্ষণ চিৎকার করে করে নিজেকে হাল্কা করার চেষ্টা করলাম।
মাহিমের চোখের গর্তের দিকে তাকাতেই মনে হলো সে যেনো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ অথচ তার দু’টো চোখই আমি নষ্ট করে ফেলেছি।
আমি তার লাশের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলেছিলাম,
আমাকে নিষেধ করার আগে একবার ভাবা উচিত ছিলো তোমার।
চলে আসার সময় মাহিমের মোবাইল টেবিলের উপরই পড়ে থাকতে দেখতে পাই যা আমি সাথে করে নিয়ে আসি।
মাহিমের নিথর দেহটি পড়ে আছে বেশ রক্তাক্ত অবস্থায়।
আমি বারবার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছি আর মনে মনে বলছি,
মাহিম কেনো আমাকে বাঁধা দেয় নি?
তার মুখও আমি খোলা রেখেছিলাম, তবুও কেনো সে আর্তনাদ করে নি?
মাহিমের কি সত্যিই আমার প্রতি কোনো অভিযোগ ছিলো না!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে