#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
গল্পের নামঃলটারী
লেখায়ঃফাইজা হাবীব
বিনোদবাবু মাসের শেষে প্রায়শই এর ওর কাছে টাকা ধার করে সংসার চালায়।পেশায় সরকারি চাকুরী করলেও চতুর্থ শ্রেণির এই চাকুরের মাসের শেষে এই সমস্যা সৃষ্টির কারণ যতো না দারিদ্র্যতা, তার চেয়ে বেশি তার স্বভাব।তার এই স্বভাবের সাথে আশেপাশের লোকজন ভালোই পরিচিত।তাই তো তার নাম লটারীবাবু।এত লটারীর টিকেট কিনলেও একটির রেজাল্ট ও তার ভাগ্যে আসেনি।এই দিকে তার ভাগ্য মন্দ্য হলেও সাংসারিক দিক থেকে সে ভাগ্যবান।চুপচাপ গুণবতী স্ত্রী আর ফুটফুটে একটি ষোড়শী কন্যা নিয়ে নির্ভেজাল জীবন ভালোই কাটছিলো তার।কিন্তু আকষ্মিক এক উল্কাপিন্ডের মতো এক সংবাদ তার নিস্তরঙ্গ জীবনে উত্তাল ঢেউয়ের সঞ্চার করলো।এক ডেভলপার কোম্পানির লটারীর প্রথম পুরষ্কার বিনোদবাবু পেয়ে গেলেন।বিনোদবাবুর এ সৌভাগ্যে আশেপাশের মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হলেন,কিন্তু নিজের আনন্দে বিভোর বিনোদবাবু লক্ষ্য করলেন না এ পরিবর্তন।তার আশেপাশের লোকজনগুলো যে আপাদমস্তক বদলে গেছে তা টের পেলেন যেদিন স্ত্রী নির্মলা দেবী অজ্ঞান হয়ে রান্নাঘরে পড়ে থাকলেন,কিন্তু তার সাহায্যে কেউ এলো না,না অর্থনৈতিক সাহায্য না মানসিক সাহায্য।প্রিয় বন্ধুর বাড়ির দরজা থেকেই ফিরতে হলো এই উত্তরের সাথে লটারী পেয়ে গেছেন সেই টাকায় বড়লোক তিনি,এখনো ভিক্ষে করার স্বভাব গেলো না তার।স্ত্রীর মস্তিষ্কের ছোট্ট টিউমারটি যে কবে কুড়ি থেকে মহীরূহে পরিণত হয়েছে জানতে পারেন নি তিনি,মেয়েকে হাস্পাতালে রেখে ছুটলেন তিনি সেই ডেভলপার কোম্পানিতে,দীর্ঘ অপেক্ষার পর নানাবিধ সইসাবুদ করে ছুটলেন ব্যাংকের উদ্দশ্যে।এদিকে ডাক্তার বললো বিনোদ বাবুর মেয়ে তিতলিকে টাকা না দিতে পারলে রোগী রাখতে দিবে না কতৃপক্ষ।বাবাকে ফোনে না পেয়ে ছুটলো সেই ডেভলপার অফিসের দিকে।অফিসে ঢুকে শুনলো, সমাজসেবী আদিনাথ বাবুর গলা।সেক্রেটারি রমেশ বাবুকে বলছে তাদের বাড়ির জমিটা লটারীর আড়ালে কিনে নিয়েছে,তিতলির বাবাকে ঠকিয়েছে।তিতলি এ কথা শুনে থমকে যায়,দ্রুত পিছাতে গিয়ে টবে ধাক্কা খেয়ে ফেলে,এদিকে আদিনাথ বাবু আর রমেশ তিতলিকে দেখে ফেলে,ষোড়শী মেয়েটির উপর চলে পাশবিক তান্ডব।
এদিকে বিনোদবাবু টাকা নিয়ে এসে দেখে মেয়ে তিতলি হাস্পাতালে নেই, টাকা জমা দিয়ে মেয়েকে খুঁজতে বের হন,সারারাত খোঁজার পর এক জঙ্গলের পাশে মেয়ের লাশ খুঁজে পান।মেয়ের উলঙ্গ শরীর ঢেকে চুপ করে বসে থাকেন মেয়েকে কোলে নিয়ে,এদিকে হাস্পাতাল থেকে ফোন আসে তার স্ত্রী অপারেশন টেবিলেই মারা গিয়েছেন।দুটি লাশ নিয়ে এম্বুলেন্সে করে বাড়ি ফিরে দেখেন তার বাড়ি জবর দখল করে নিয়েছে আদিনাথবাবুর গুন্ডারা।আশেপাশের লোকেরা, সেই পুরাতন প্রতিবেশীরা সবাই দাহকার্যে এগিয়ে আসতে চাইলে বিনোদবাবু সাহায্য নিতে অস্বীকৃতি জানান।স্ত্রী আর একমাত্র সন্তানকে দাহ করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়,এই সমাজ চাই না তার যারা নিজেদের হিংসা,কলুষতা,লোভ, নোংরামিতে ভরা। যেখানে মনুষ্যত্ব ভূলন্ঠিত সেখানে মানুষ যে পশুতূল্য নরাধম।