গল্পঃ বিনিয়োগ-বিনিময় | গল্পকারঃ মুহাম্মাদ সা’দ সাকী

0
1612

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০

গল্পঃ বিনিয়োগ-বিনিময়
গল্পকারঃ মুহাম্মাদ সা’দ সাকী

(১)
মসজিদটা এখন পুরোপুরি খালি। কেউ নেই। সবগুলো লাইট অফ করে দক্ষিণ কোণে জুনাইদ দাঁড়িয়ে গেল। দু-রাকাত সালাতুল হাজাত পড়ে নিল।
যে কোনো প্রয়োজনে দু-রাকাত নামাজ পড়ে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাটা সুন্নত। এ নামাজকে সালাতুল হাজাত বলা হয়। জুনাইদ সালাতুল হাজাত আদায় করে খুব কাকুতি-মিনতি করে কাঁদল আল্লাহর কাছে। চোখের জলে দু-গাল ভাসিয়ে দিল। তারপর ধীর কদমে বেরিয়ে এল মসজিদ ছেড়ে। এখন যাবে হাসপাতালে; মায়ের কাছে।

যে কোনো সমস্যায় দোআ করে কান্নাকাটি করতে পারলে মনটা হালকা লাগে জুনাইদের। সমস্যার সমাধান না হলেও নিজেকে চিন্তা মুক্ত মনে হয়। যেন বিশাল বোঝাটা মাথার উপর থেকে সরে গেছে। মন প্রশান্ত হয়ে যায়। ভালোলাগার এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যায় তনুমনে!

জুনাইদের মা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। আগামী পরশু অপারেশন হওয়ার কথা। ডাক্তার ডেট দিয়েছেন। টাকা লাগবে সত্তর হাজার। জমি বন্ধক রেখে চল্লিশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেছে বড় ভাই জুবাইর। নিজের আয়-রোজগার থেকে দিয়েছে বিশ হাজার। আরো বাকী দশটা হাজার টাকা। আজ বিকালে জুবাইর বড় মায়াভরা করুণ কণ্ঠে জুনাইদকে বলল, ‘মারে তো আমিই পালি। আমার লগে খায়, থাহে। তর কামাই-রোজগার কম, হেউডা আমি বুঝি। আমিও যে টেহা-পয়সা কামাইতে পারি না, হেইডাও তুই বুঝোছ। এর লাগি তুই তিন হাজার টেহা মাসে মাসে দেছ। আমি কিছু কই না। বড় ভাই হইয়া যদি ছোড ভাইয়ের দুঃখডা না বুঝি, তাইলে কেমনে অইব?
মার কিন্তুক তিন হাজার টেহা দিয়া কিছুই অয় না। ওষুধ-পানি লাগে। টাইন্যা-টুইন্যা আমি চালাই। তরে কুনুদিন কই নাই। ছোড ভাইয়ের কাছে টেহা চাইতে আমার শরম করে।’
কথাগুলো শুনতে খুব খারাপ লাগছিল জুনাইদের। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। তবু মাথা নিচু করে শুনছিল। দুটো ভাই কত যে কষ্ট করে মাকে একটু সুখ দেওয়ার জন্য! তবু বুঝি মা সুখ পেলেন না। তার চিকিৎসার টাকা নিয়েও আজ টানাপোড়ন!

মাঝখানে একটু থেমে জুবাইর আবারও বলল, ‘মার এহন অপারেশন করতে অইব। নাইলে মা বাঁচব না। মারে বাঁচানো আমাগো কর্তইব্য। আমি যে কয় টেহা ব্যবস্থা করছি, হেইডা তুই ভালা কইরাই জানোছ। দশ হাজার টেহা শট আছে। তুই ইট্টু কষ্ট কইরা ব্যবস্থা করতারোছ নাকি দেহোছ না! বাকী চিকিৎসা না অয় আমিই করুম নে! আফাযত (আপাতত) অপারেশনটা করাইতে যেন পারি, হেই ব্যবস্থাডা কইরা দে! দেখ, কোনোহানতে (কোথাও থেকে) দশ হাজার ব্যবস্থা কইরা দিতারোছ নাকি। এট্টুক কষ্ট কর মার লাইগ্যা!’

জুবাইরের কথাগুলো জুনাইদকে বড় চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মায়ের অপারেশনটার জন্য কতগুলো টাকার প্রয়োজন। অথচ ওদের সামর্থ্যে কুলোচ্ছে না। ওর জমানো টাকা আছে ছয় হাজার। দশ হাজার হতে হলে আরো চারটা হাজার টাকা দরকার। এ ছয় হাজার টাকাও জমিয়েছিল বিপদের সঙ্গী হিসেবে। ঘরের বউটা এখন গর্ভবতী। যে কোনো সময় প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই জমানো।

জুনাইদ একটা মসজিদের মুয়াজ্জিন। পড়াশোনা খুব একটা করা হয়নি। হাফেজ হয়ে মাদরাসায় শরহে জামী (নবম শ্রেণী) পর্যন্ত পড়েছিল। এরপর বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে দু-ভাইকেই। বড় ভাই এমনিতেও পড়াশোনা করত না। বাবার সাথে ছোট্ট মুদির দোকনটা দেখাশোনা করত। তিনি মারা যাবার পর দোকানের এক মাত্র পরিচালক হয়ে যায় জুবাইর। আর জুনাইদ পড়াশোনার খরচ না পেয়ে জোগাড় করে মুয়াজ্জিনের চাকরি। কর্মজীবন শুরু হয়েছিল দেড় হাজার টাকা বেতনে। এখন ওর মাসিক ইনকাম সাড়ে আট হাজার।

এক হাজার টাকা বাসা ভাড়া আর তিন হাজার টাকা বাড়িতে দেয় সে। বাকীটা নিজের সংসারের খরচ। দুটো টিউশনি আছে। সেগুলো থেকে পায় এক হাজার। এটা অতিরিক্ত সঞ্চয়। ছয় মাসে সঞ্চয় হয়েছে ছয় হাজার টাকা।

বিয়ে করেছে সবে দু-বছর হতে চলল। স্ত্রী নিয়ে একটা সিঙ্গেল বাসায় থাকে। টিনের ঘর। একা-ফাঁকা বাড়ি। সন্ধ্যা কিংবা রাতে মসজিদে আসলে বউটা বাসায় একা ভয় পায়। উপার্জনের চিন্তায় তবু সেটা মানিয়ে নিচ্ছে ওরা। মোটামুটি সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। ভালো একটা বাসায় উঠতে হলে কমপক্ষে চার-পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। কেমন যেন বাজনার চেয়ে খাজনাটাই বেশি!

পায়ে হেঁটে পথ চলছে জুনাইদ। রাস্তাটা একদম ফাঁকা। এ শহুরে পরিবেশে এখন সন্ধ্যা হওয়ারই কথা। ইশা শেষ হয়ে রাত নয়টা হতে চললেও শহুরে মানুষের রাত হওয়া শুরু হয় এগারোটার পর থেকে।
কিন্তু আজ সাপ্তাহিক ছুটি। শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। তাই এ সন্ধ্যার সময়েও গভীর রাত। খুব একটা গাড়ি-ঘোড়া নেই। কিছু কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে ফুটপাতে হাঁটছে। ব্যস্ত কদম সবারই। জুনাইদ দ্রুতও হাঁটছে না, আবার মন্থর গতিতেও না। দায়সারাভাবে, তবে সামান্য গতিবেগ রেখে। মাথায় চিন্তার উইপোকারা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

‘বাবা! কয়ডা টেহা দিবেন? বাচ্চাডা কানতাছে। সারা দিন ধইরা খায় নাই।’
দু-হাত দূর থেকে একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা করুণ কণ্ঠে মিনতি করে হাত পেতে তাকিয়ে আছে জুনাইদের দিকে। মহিলার পাশেই একটা দেড়-দু-বছরের বাচ্চা। ছেঁড়াফাড়া ফ্রক পরা। চুলগুলো ময়লা। উসকোখুসকো। মহিলার মাথায় শাড়ির আঁচল। এক হাতে মুখটুকু ঢেকে রেখেছেন। চোখ দুটো পিটপিট করছে যেন। দেখে মনে হচ্ছে ‘হাত-পাতা’র রাস্তায় নতুন। পেশাদার ভিক্ষাবৃত্তি তিনি করেন না।

জুনাইদ টাকার বিষয় নিয়ে চিন্তিত হলেও মহিলার করুণ আবদার তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল খুব কঠিনভাবে। যেন চম্বুক তার ভালোবাসার লোহাকে চুম্বন করছে। জুনাইদ থমকে দাঁড়িয়ে ভালোভাবে দেখছে মহিলা ও তার সন্তানকে। উভয়েরই চেহারাময় ক্লিষ্টতার ছাপ। বাচ্চাটা এক নাগারে কেঁদেই যাচ্ছে। বিরতিহীন কান্না।
‘বাবা!…’ মহিলা তার লাজনম্র কণ্ঠে আবারও ডেকে উঠল। ওড়নাটা আরেকটু মাথার উপর টেনে নিয়ে চোখে-মুখে ফুটিয়ে তুলল আকুতির ছাপ। এতে সম্বিৎ ফিরে পেল জুনাইদ। পকেটে এখন এগারোশো ষাট টাকা আছে। হাসপাতালে গেলে যে কোনো প্রয়োজন হতে পারে। টাকাটা তাই সঙ্গী ছিল। পকেটে হাত পুরতে পুরতে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল জুনাইদ। মহিলা কিছুটা ইতস্তত হচ্ছেন মনে হচ্ছে। খানিকটা মিইয়ে তিনি পিছনে সরে গেলেন। দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে।

জুনাইদ বসে প্রশ্ন করল, ‘আপনার ঘর নাই? এখানে বসে আছেন কেন? রাতে থাকবেন কই?’
মহিলা কেঁদে ফেললেন।
‘বাবা! ঘরবাড়ি নদী ভাইঙ্গা লইয়া গেছে গা। কোনুরহম নিজেরা বাইচ্যা আইছি। ফুলির বাপটাও আমারে ছাইড়া চইল্যা গেছে। আল্লায় হেরে জান্নাত দিক!’
শাড়ির আঁচলে নাক টানতে টানতে বললেন, ‘দুইডা দিন অইছে খাওন-দাওন নাই। বাচ্চাডারেও আইজকা কিছু খাওয়াইতে পারি নাই। হেই সক্কালে একটা রুডি খাওয়াইছিলাম। এরপরে আর কিছু না। দোহান-টোহান বন্ধ। ভিক্ষাও করতারি না। মাইনসে ভিক্ষা দেয় না।’

জুনাইদের বড় মায়া হল। আল্লাহ যাদের দুঃখ দেন, তাদেরই কেন শুধু দুঃখ দেন? যাদের সুখ থাকে তাদের শুধু সুখই! গরীবের ঘাড়ে সব কষ্টের বোঝা।

কোনো কিছু না ভেবে জুনাইদ পকেট থেকে ভাজ করা টাকাগুলো বের করল। তারপর উপর থেকে বড় নোটটা মহিলার হাতে গুঁজে দিয়ে সামনে পথ ধরল। পিছন ফিরে তাকানোর সাহসটুকু তার হয়নি।

একটা হাজার টাকা পেয়ে মহিলাটি কি অবাক হয়েছেন? কিংবা হতভম্ব? তার চোখে জল এসেছে? নাকি মুখে তৃপ্তির মুচকি হাসি? জুনাইদ সেসব দেখতে চায়নি। তাই দেরিও করেনি। টাকাটা হাতে গুঁজে দিয়ে একটা মুহূর্তও মহিলার অভিব্যক্তি বোঝার বা জানার অপেক্ষাটি করেনি।

(২)
রাত তখন সাড়ে তিনটা। বড় ভাই জুবাইর ঘুমে বিভোর। সারাটা দিন হয়ত একটুও বিশ্রাম পায়নি তার শরীরটা। তাই জুনাইদ আসার পর ফ্লোরের বালিশটায় মাথা রেখেছিল। সেই ঘুম! গভীর ঘুমে মগ্ন। জুনাইদ বসে আছে মায়ের পাশে। মা ঘুমাচ্ছেন না। এপাশ ওপাশ করছেন। তাও ভালোভাবে করতে পারছেন না। বাঁ হাতে স্যালাইনের রগ লাগানো। একটু ব্যতিক্রম হলেই রক্ত উঠে আসতে চায়।

জুনাইদের চোখে ঘুম আসছে না। ইশার পর কান্নার কারণে চোখ দুটো একটু একটু জ্বলছে। তখন থেকেই জ্বালা করছে। চোখ জ্বালা করলে জুনাইদ সাধারণত ঘুমিয়ে থাকে। এতে চোখের জ্বালা সেরে যায়। কিন্তু আজ ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। বরং বলা চলে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম হবে না। এক দিকে স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। ওকে বাসায় একা রেখে এসেছে। রাতে জুনাইদ থাকবে না বলে এক মুসল্লির দশ বছরের একটা মেয়েকে সঙ্গে দিয়ে এসেছে। এতেই কি ও নির্ভয়ে থাকতে পারবে? হয়ত মেয়েটা সারাটা রাত ঘুমাতে পারবে না।
অন্যদিকে টাকার চিন্তা। মায়ের অপারেশনের জন্য এখনো দশ হাজার টাকার জোগাড় হয়নি। আর মাত্র এক দিন এক রাত বাকী। কী যেন চিন্তা-ভাবনা করে জুনাইদ জায়নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বে সে।

নামাজে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা শেষ করার সাথে সাথেই ফোনটা তার স্বরে বেজে উঠল। ক্রমাগত দু-দুটো কল বেজে থেমে গেল। জুনাইদ সালাম ফিরিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল এক অপরিচিত নাম্বার। কলব্যাক করল। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে এক ব্যক্তি সালাম দিল। প্রত্যুত্তর দেওয়ার পর জুনাইদ জিজ্ঞেস করল, ‘কে বলছিলেন?’
‘হুজুর! আমি জাহানারা প্রাইভেট কলেজের জহির স্যার বলছি। আপনার নাম্বার দিয়েছেন ইমাম সাহেব হুজুর। ওনাকে ফোন করেছিলাম। ওনি নাকি গ্রামের বাড়িতে আছেন। তাই আপনাকে কল করলাম। আমার মেয়ে এই মাত্র একটা ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছে। ওর কানে আজান দিতে হবে। আপনাকে একটু দরকার।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি আসছি। তবে একটু সময় লাগবে। কারণ, আমি হাসপাতালে আছি। পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে।’
‘আচ্ছা আচ্ছা, সমস্যা নাই হুজুর। আমি আমার ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও আপনাকে নিয়ে আসবে। আপনার কষ্ট করতে হবে না হুজুর। আপনি ওখানেই থাকুন। পাঁচ মিনিটে ও চলে আসবে।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

কথা শেষ করে জুনাইদ আরো দু-রাকাআত নামাজ পড়ে নিল। তারপর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত। হাসপাতালের সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে দেখে গাড়ি এসে গেইটের সামনে পার্ক করছে। জুনাইদ ড্রাইভারেরর সাথে কথা বলে গাড়িতে উঠে বসল। অল্প সময়েই পোঁছে গেল জহির স্যারের বাসায়। নবজাতকের কানে আজান দিল। ডান কানে আজান, বাম কানে ইকামত।

ফেরার সময় জহির স্যার বললেন, ‘হুজুর! একটু বসেন। এত রাতে এসেছেন, নিশ্চয় ঘুমে মাথা ধরতে পারে। একটু চা-নাস্তা করে যান।’
জুনাইদের মনটা ভীষণ বিষণ্ণ। তেমন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে পড়ল। জহির স্যার হাতে একটা ট্রে নিয়ে চা-নাস্তা পরিবেশন করলেন। নিজের হাতেও এক কাপ চা। জিজ্ঞেস করলেন, ‘হাসপাতালে কী করছিলেন? কেউ এডমিট নাকি?’
জুনাইদ অল্প কথায় জবাব দিল, ‘হুম, আম্মা অসুস্থ।’
‘কী হয়েছে ওনার?’
জুনাইদের কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু প্রশ্নের জবাব না দিলে তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারেন। তাই বাধ্য হয়েই জবাব দিল।
‘পেটে অনেকগুলো পাথর পাওয়া গেছে। অপারেশন করাতে হবে।’
‘খরচ-টরচ কেমন পড়ছে?’
জুনাইদের এ মুহূর্তে লোকটাকে কষে কয়েকটা গালি দিতে ইচ্ছে করছে। এত কথা কেন বলেন? যত্তসব বেহুদা প্রশ্ন!
‘অপারেশনে সত্তর নিবে।’
‘একটা কথা বলি হুজুর! কিছু মনে করবেন না।’
জুনাইদের ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হয়ে এল। কী বলতে চান তিনি? মাথা নেড়ে সায় জানাল। তিনি বললেন,
‘হলিডে হাসপাতালটা আমার বন্ধুর। আপনি আপনার মাকে ওখানে নিয়ে আসেন। আমি কমপক্ষে বিশ হাজার টাকা কমে অপারেশনটা করিয়ে দিতে পারব। আপনি নিয়ে আসেন।’
এতক্ষণে মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করছে জুনাইদের। এক দমকায় মনটা ভালো হয়ে গেছে। চেহারার ক্লিষ্টতার ছাপ হারিয়ে গেছে।
‘কিন্তু আমাদের তো ওখানে আগামীকালের ডেট দেওয়া আছে। সেটার কী হবে?’
‘কী হবে? আপনারা বাতিল করে দিবেন। বলবেন যে, এত টাকা দিয়ে অপারেশন করানোর মতো সামর্থ্য আমার নাই। ব্যস, হয়ে গেল।’

আরো কিছু কথাবার্তা বলে জুনাইদ কথা ফাইনাল করে নিল। অপারেশনটা হলিডে থেকেই হবে।
বেরিয়ে যাবার সময় জুনাইদের সাথে মুসাফাহা করার বাহানায় টাকা ঢুকিয়ে দিলেন জহির স্যার। স্যারের এমন রহস্যময় মুসাফাহার জন্য বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই মুচকি হেসে বললেন, ‘রেখে দিন হুজুর। মায়ের চিকিৎসায় কাজে লাগবে।’
মসজিদে এসে টাকা গুনে দেখল এক হাজার টাকার দশটা নোট।

হাদীস পড়ার সৌভাগ্য জুনাইদের হয়নি। তবে খতীব সাহেবের বয়ানে শুনেছিল, এক টাকা দান করলে আল্লাহ তা দশগুণ করে দেন। অর্থাৎ একে দশ। রাতের শুরুভাগে জুনাইদ দান করেছিল এক হাজার। তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছেন দশ হাজার করে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে