#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০
#গল্পঃজীবন_সুন্দর
#লেখাঃজান্নাতুল_ইভা
চুলায় রান্না বসাতেই শাশুড়ি মা বললেন,আজকে কিন্তু চিংড়ির মালাইকারি করবা।এতোদিন পরে আমার মেয়েটা বাড়ি আসবো চিংড়ি ওর অনেক পছন্দ।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।
কয়েকদিন যাবত জ্বরে ভুগছি শরীর ভালো কিংবা খারাপ থাকুক সবার জন্য রান্নাবান্না সব আমাকে একা হাতেই করতে হয়।শাশুড়ি মায়ের হাটুর ব্যাথার জন্য কখনও কিছু করতেও দেই না।শাশুড়ি মা আমাকে সাহায্য করতে চায় না এমনটা নয়।তিনি চাইলেও আমি তাকে কিছু করতে দেই না।
কিছুক্ষন পর হঠাৎ মা রান্নাঘরে এসে বললেন,রাখো তোমাকে রান্না করতে হবে না।আমার মেয়ে তোমার হাতের রান্না খাবে না।ও বরাবরই আমার হাতের রান্না খেতে পছন্দ করে।সরে আসো এখনি নয়তো রাঁধতে রাঁধতে দেরি হয়ে যাবে।
চুপচাপ সরে এলাম রান্নাঘর থেকে।কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছি না মা আমার সাথে এরকম আচরন কোনো করলেন! আমার একমাত্র ননদই বা আমার হাতের রান্না কেনো খাবে না! কি দোষ করেছি আমি?
সারাদিন ভীষন মন খারাপ ছিলো।দুপুরে খেতেও যাই নি।হয়তো আমার কোনো কাজে তারা কষ্ট পেয়েছে তাই আমাকে কিছু করতে দিলো না।আমার হাতের রান্নাটাও খাবে না বলল।
চুপচাপ রুমের মধ্যে শুয়ে আছি।এমন সময় ননদ এসে বলল,ভাবি খাবার টেবিলে আসো।সবাই তোমার জন্য বসে আছে।
অনেক জোর করাতে বাধ্য হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম।তবে সেখানে যেতেই যা দেখলাম তাতে আমার চোখে অনায়াসে পানি চলে এলো।পুরো টেবিল খাবার দিয়ে সাজানো।আর সামনেই বড় একটা কেক রাখা।কেকে সুন্দর করে আমার নাম লেখা আছে।আজকে যে আমার জন্মদিন সেটা নিজেই ভুলে গিয়েছিলাম।যখন বাবার বাড়িতে ছিলাম তখন এই দিনে মা আমার জন্য অনেক রান্নাবান্না করতো।এখানে আসার পরে ভেবেছিলাম হয়তো এসব কিছুই আর হবে না।কিন্তু আমি খুব অবাক তাদের কান্ড দেখে।
শাশুড়ি মা বললেন,আসো বউ মা অনেক বেলা হইছে আগে খেয়ে নাও তো।
ননদ একটা হাসি দিয়ে বলল,আরে মা আগে ভাবিকে কেক তো কাটতে দাও তারপর না অন্য খাবার খাবে।
আমি কান্নার জন্য কিছুই বলতে পারছি না।শাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত রেখে বলল,এ বাড়িতে আসার পর থেকে তো দেখছি সব কাজ একা হাতে সামলাচ্ছো।কখনও আমাদের কিছু করতে দাও না।শরীর খারাপ নিয়েও সব একা করো।আজকে এমন শুভ একটা দিনে তোমাকে একটু চমকে দেবো ভাবলাম।তোমার ননদ তো রাতেই আমাকে আর তার ভাইকে ফোন করে সব বলে রেখেছে।আমি যদি তখন তোমাকে ওইভাবে না বলতাম তাহলে কি তুমি রান্নাঘর থেকে যেতে বলো?
আমি শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,এতো ভালোবাসেন আপনারা আমাকে! আমি কখনও ভাবতেই পারিনি এতোটা ভাববেন আমার জন্য।সব সময় সবার মুখে শশুর বাড়ির বদনামই শুনেছি কিন্তু আজ বুঝলাম এই বাড়িটা সবার জন্য এক হয় না।আমি অনেক ভাগ্য করে আপনাদের পেয়েছি।
কেক কাটার পরে শাশুড়ি মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে বললেন,যে সব সময় আমাদের সবার খেয়াল রাখে,যত্ন রাখে তাকে যত্নে রাখাও আমাদের দায়িত্ব।
“আমরা শুধু শুধুই আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলি।
জীবনকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করলে জীবন কত সুন্দর তাই না!”