গর্ভধারিনী পর্ব-০৫

0
795

#গর্ভধারিনী
পর্ব—০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

আমি দৌড়ে ঘরের বাইরে গেলাম।গিয়ে দেখি আব্বা বাড়িতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা রহমান ভাইজান আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

—কই,রহমান ভাইজান।আব্বা আবার কারে বিয়া কইরা নিয়া আইলো?

—কেনো রে খুব ভয় পাইয়া গেছিলি বুঝি?

–কি যে বলো না তুমি,

—আহা,রহমান এসব কেমন মশকরা।ছেলেডার মা মারা গেছে কয়দিন আগে,তাই আসছোস ওর সাথে মজা করতে,
(আব্বা রহমান ভাইজানরে উদ্দেশ্য করে বলে।)

—আচ্ছা,আমার ঘাট হইছে।আর করুম না এমন মজা।তা আকাইদ তোর দিনকাল কেমন চলে রে?

—ভালো ভাইজান!

—বাড়িতে একলা একলা থাকো।ভয় করে না তো?

—একা কই থাকি, আব্বাও থাকে তো?

—তোর আব্বা আর কতক্ষণ বাড়িতে থাকে,

আমি রহমান ভাইজানকে কিছু বলতে যাবো এর মধ্যে মর্জিনা ফুপু হাতে একটা থালা নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো।

—আকাইদ,রসুইঘরে আয় তো?

—কি আনছো মর্জিনা ফুপু?

—আয় আগে তারপর দেখাইতেছি।

আমি মর্জিনা ফুপুর সাথে চলে যাওয়াতে রহমান ভাইয়াও বেরিয়ে গেলো।এদিকে আব্বা গেছে পুকুরে গোসল করতে।

মর্জিনা ফুপু রান্নাঘরে ঢুকে তারপর থালাটা মাটিতে রেখে ঢাকনাটা সরালো।দেখতে পেলাম আমার জন্য কতগুলো পিঠা ভেজে নিয়ে আনছে।

—সকাল সকাল ভাজছি,নে এগুলা খেয়ে নে!তোর আব্বারেও দিস।

—আচ্ছা ঠিক আছে,

—আমি উঠি তাইলে,

—মর্জিনা ফুপু শোনো না,

–হ বল,

—কাল রাতে আমি কিন্তু সব দেখছি।

আমার কথা শুনে মর্জিনা ফুপু যেনো ভরকে গেলো।

—দেখছো মানে, কি দেখছো তুই?

—আব্বা তোমারে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো, আমি সব দেখছি!

মর্জিনা ফুপুর চোখ মুখ বড়ো হয়ে গিয়েছে।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না সে এতো ভয় পেয়ে গেলো কেনো।মর্জিনা ফুপু আমার মুখটা চেপে ধরলো।তারপর ফিসফিস করে বলতে লাগলো।

—বাপ আমার,ভুলেও এই কথা আর মুখে নিস না।

—কেনো গো মুখে নিলে কি হইবে?আব্বা তোমারে এতো মারলো তুমি কাউরে কিছু কও না ক্যান।

—চুপ, একদম চুপ।শোন তুই এই কথা ভুলেও মুখে আনবি না আর।যদিও আনছোস আমার বিষ খেয়ে ম রা ছাড়া উপায় থাকবে না।

হঠাৎ করে বি’ষের কথা শুনে আমার টনক নড়ে উঠলো।তার মানে কি বিষ খেলে মানুষ মারা যায়।কই আমি তো জানতাম না আগে।

—কি কইলা তুমি মর্জিনা ফুপু।বি’ষ খাইলে মানুষ ম রে ?

—হ রে হ, খুব ভয়ঙ্কর জিনিস এই বিষ।ক্যান জানিস না তোর মা ও তো এই বি’ষ খাইয়াই মরলো!

মর্জিনা ফুপুর কথা শুনে যেনো বাজ পড়লো আমার মাথায়।এটা কি বলতেছে মর্জিনা ফুপু।কেনো জানি না আমি না চাইতেই দুটো চোখ পানিতে ভিজে গেলো আমার।

—আম্মা বি’ষ খায় নাই মর্জিনা ফুপু। আমার আম্মা বিষ খায় নাই!

—কি কও,আমরা তো সবাই তাই জানি।

—মর্জিনা ফুপু আম্মারে আমি বি’ষ খাওয়াইছি..!
কথাটা বলে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না আমি,মর্জিনা ফুপুর সামনে কান্না করে দিলাম।এদিকে মর্জিনা ফুপু আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো।যেনো নির্বাক হয়ে গিয়েছে সে।

—এই পোলা, তোর কি মাথাটা গেছে একেবারে, কি বলতেছিস জানো তুই,

—হ আমি ঠিক কইতেছি।

—তুই বি’ষের শিশি পাইলি কই?

—আব্বা দিছিলো!

আব্বার কথা শুনে মর্জিনা ফুপু আঁতকে উঠলো।চারপাশটা তাকাতে লাগলো সে।তারপর আমায় বলে।

—চল ঘরে যাই,এখানে বসে এসব কথা বলা ঠিক হবে না।যে কেউ চলে আসতে পারে!

—ঠিক আছে।

–হ,

ইতিমধ্যে আব্বা গোসল সেরে চলে আসলো।

—কি রে মর্জিনা তুই কখন আইলি?

—এইতো একটু আগে।

–আইছো যখন একটা কাজ কর,আমার খাবারটা বেড়ে দে,

—হ,দিতেছি।

মর্জিনা ফুপু আব্বাকে ভাত বেড়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে আমার ঘরে চলে গেলো।তারপর দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমাকে খাটের ওপর বসায়,তারপর নিজেও বসলো।

—এবার বল, কি হইছিলো?

—আব্বা আমার হাতে একটা বি’ষের শিশি দিয়ে বললো,এইডা যেনো আমি আম্মার খাওনের সাথে মিশাইয়া দেই।

—তারপর তুই কি করলি?

—আমি লুকাইয়া লুকাইয়া আম্মার ভাতের সাথে বি’ষ মিশাইয়া দিলাম,

—তুই এইডা কি করলি আকাইদ?কেনো শুনতে গেলি আব্বার কথা?

—আমি কি জানতাম আম্মা অইডা খাইয়া ম’ইরা যাইবো!

—তোর আব্বা আর কিছু বলছে তোরে?

—না,আর সবাইরে এই কথা কইতে নিষেধ করছে।তাই আমি কাউরে কিছু কই নাই।

একটু পরে আব্বা চলে আসে।মর্জিনা ফুপু দরজাটা খুললো।আব্বা মর্জিনা ফুপুকে বলে।

—কি রে,দরজা বন্ধ কইরা আমার পোলার লগে কি করোস?

মর্জিনা ফুপু কিছুক্ষণ আব্বার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আব্বা আমার দিকে এগিয়ে আসে।

—কিরে,ও কিছু কইছে নাকি তোরে, নাকি তুই কইছো?

—না,আমি কিছু কই নাই।

—তাইলে দরজা বন্ধ করছিলি ক্যান?

—আমি করি নাই,মর্জিনা ফুপু করছে।

—দেখ উল্টাপাল্টা কাউরে কিছু বলিস না।যদি বলছো তোর একদিন কি আমার একদিন।কি কথা ঢুকছে কানে?

—হ… (আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম)

এই বলে আব্বা চলে গেলো।আমি শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।তার মানে আব্বা ইচ্ছে করে আম্মাকে খু’ন করেছে।কিন্তু কেনো,আম্মার সাথে কি এমন শত্রুতা তার,আর আম্মাই বা নিজে থেকে জেনেও বি’ষ খেলো কেনো?এই দুজনের ভেতরে কোনো রহস্য তো অবশ্যই আছে।এই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলছে আমায়।সারাদিন এগুলো ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো।




এরপর সন্ধ্যা বেলা।আব্বা বাড়িতে নেই।আমি একা বৈঠকখানায় বসে আছি।ঠিক তখন ইসমাইল চাচা বাড়ির ভেতরে এসে ঢুকলো।ইসমাইল চাচাই সেদিন আমার আম্মারে তার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছিলো।আমি তাকে জিজ্ঞেস করি।

—ইসমাইল চাচা, তুমি?

—তোর আব্বা কই?

–আব্বা তো বাড়ি নাই!

—শোন একটা কথা আছে।

—কি কথা বলো,

—একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘইটা গেছে রে।তোর আম্মারে যে হাসপাতাল থেকে নিয়া আইছিলাম ঐ হাসপাতালের নাকি একটা এক্সি’ডেন্ট হওয়া লাশ খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না।

—মানে,

—মানে,যেদিন তোর আম্মারে আমরা এই বাড়িতে নিয়ে আসি সেইদিন থেকেই নাকি লাশটা খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না।আমি এইমাত্র খবর পাইলাম।জানি না,কি কইতেছে ওরা।

ইসমাইল চাচার কথা শুনে আমার আম্মার লাশের কথা মনে পড়লো।তার মানে কি আমি সেইদিন ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।ঐ লাশটা আম্মার ছিলো না।আল্লাহ,আমার মনের সন্দেহ তুমি সত্যি কইরা দাও!

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে