গর্ভধারিণী পর্ব-০৬

0
787

#গর্ভধারিণী
পর্ব—০৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

রহমান চাচার কথা শুনে আমার আম্মার লাশের কথা মনে পড়লো।তার মানে কি আমি সেইদিন ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।ঐ লাশটা আম্মার ছিলো না।আল্লাহ,আমার মনের সন্দেহ তুমি সত্যি কইরা দাও!

একটু পরে বাড়িতে মর্জিনা ফুপু চলে আসে।সে আগে থেকেই রহমান চাচার সমস্ত কথা শুনে ফেলেছে।

—রহমান ভাইজান,কি কইতেছো তুমি এসব?
(মর্জিনা ফুপু রহমান চাচাকে বলে)

—হ রে ঠিকই কইতেছি,আমি একটু আগে শুনে আসলাম।এই কারণেই তো দূরুত ভাইয়ের কাছে আসলাম,ওরে সবটা জানাবো বলে,

—না,তুমি দূরুত ভাইজানরে কিছু বইলো না এক্ষুণি!

—কিন্তু ক্যান।কি সমস্যা ওরে কইলে?

—আমি কইছি বলবা না তাই বলবা না,আর আমি যখন বলছি অবশ্যই কোনো কারণ আছে।

—আচ্ছা ঠিক আছে।আর পরে ও আমারে কিছু কইলে তোর কথা বইলা দিমু কিন্তু,যে তুই আমারে নিষেধ করছো।

—আচ্ছা যা খুশি কইরো,এখন চুপ থাকো।

—হুমমম,আমি আসি তবে।

এই বলে রহমান চাচা চলে গেলো।মর্জিনা ফুপু আমায় বললো।

—চল আকাইদ আমরা হাসপাতালে যাই।

—হাসপাতালে,হাসপাতালে কেনো?

—চল আমার সাথে,আমার মনে হয় তুই ঐদিন ঠিকই কইছিলি।ঐইটা তোর আম্মা ছিলো না।

—দেখছো,তখন কেউ আমার কোনো কথা বিশ্বাস করলো না।

—হুমম,জানি আমি।এবার চল যাই।

—আব্বা আইসা তো আবার খোঁজাখুঁজি শুরু কইরা দেবে,তখন কি হইবো

—আমি তোর আব্বারে কিছু একটা বুঝাইয়া বলমুনে,চল এবার।

আমি মর্জিনা ফুপুর সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।সদর হাসপাতাল আমাদের গ্রাম থেকে খুব একটা দূরে না।হেঁটে যেতে ঘন্টা খানেক সময় লাগে।যাতে আব্বার সামনে না পড়ি এই কারণে মর্জিনা ফুপু আমায় জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায়।যদিও এখান থেকে যেতে একটু বেশী সময় লাগে।




বেশ কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে পৌঁছলাম আমরা দুজন।এই জায়গার শেষবার আম্মাকে নিয়ে আসছিলাম।আর আজকে আসলাম।মর্জিনা ফুপুর হাত ধরে আমি ভেতরে যাই।তারপর একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করি।মর্জিনা ফুপু তার সাথে কথা বলছে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা শুনতে লাগলাম।

—-আচ্ছা ডাক্তার সাহেব,যে লাশটা হাসপাতাল থেকে চুরি হয়েছে আমি তার ব্যপারে কিছু কথা বলতে এসেছি আপনার সাথে!

—হ্যাঁ,সে তো বহুদিন আগের ঘটনা।

—বলছিলাম,ঐ লাশটার কিভাবে মৃত্যু হয়েছিলো,আর কোনো ছবি বা কোনো কিছু আছে আপনাদের কাছে আমাদের দেখানোর জন্য?

—দেখুন ওনার তো এক্সিডেন্টে মৃত্যু হয়েছিলো।আর চেহারা এতোটাই বাজেভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ওনার পরিবারের লোকজন পর্যন্ত চিনতে পারছিলো না।আর আপনার কাছে কোনোপ্রকার ডকুমেন্ট কেনো শেয়ার করবো আমি,এটা আইনবিরুদ্ধ কাজ।

—ওহহহ,আচ্ছা।তা লাশ কিভাবে চুরি হলো,কে করলো এই বিষয়ে কিছু কি জানতে পেরেছেন?

—না,এখন পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি।আর আপনাদের এর থেকে বেশী কিছু জানানো সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে।ধন্যবাদ।

ডাক্তার সাহেব এরপর চলে গেলেন।মর্জিনা ফুপু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

—আমার এবার সত্যিই মনে হচ্ছে ঐ লাশটা তোর আম্মার ছিলো না।এই মহিলার ছিলো।দেখিস নি ওনার মুখটা কিভাবে থে’তলে ছিলো।কি বোকা আমরা,তখন কিছুই বুঝতে পারি নি।

—কিন্তু আম্মার লাশের জায়গায় ঐ লাশটা আসলো কেমনে,লাশ তো আর নিজে থেকে হেঁটে আসেনি তাই না?

—বুদ্ধিমানের মতো কথা বলেছিস,আমিও একই কথা ভাবছি।তোর আম্মার লাশটা তাহলে কোথায় গেলো,আর ঐ মহিলার লাশটাই বা তোর আম্মার জায়গায় আসলো কেমনে?আমার কি মনে হয় জানিস,

—কি?

—তোর আব্বাই কিছু করেছে,তোর আম্মার লাশ সেই বাড়িতে নিয়ে আসছে।তার কি একবারেও সন্দেহ হয়নি।দেখ আদিবা ভাবীরে(আমার আম্মার নাম আদিবা)আমাদের চিনতে ভুল হতেই পারে,তোর বা তোর আব্বার ভুল হবার তো কথা না।তুই এইটুক বাচ্চা ছেলে,তোর সন্দেহ হলো আর তোর আব্বার হলো না।এইটা সম্ভব?

—আমরা এখন কি করমু মর্জিনা ফুপু?

—সেইটা তো আমিও জানি না।তোর আম্মা যদি সত্যিই বেঁচে থাকে কোথায় আছে,কিভাবে আছে আমরা কিচ্ছু জানি না।আমরা কেমনে খুঁজে বার করমু তারে,আর সে যে বেচেঁ আছে তার কি নিশ্চয়তা আছে।

–আমার মনে হয় আম্মা ম রে নাই,সে বেঁচে আছে।

—হ,তো আছেটা কোথায়,একমাত্র আল্লাই জানে কি সব হইছে আমাদের চোখের আড়ালে।
শোন,এখন চল।এখানে আর কাজ নেই আমাদের।আব্বা তোরে বাড়িতে না পেয়ে সন্দেহ করতে পারে।

—কিন্তু এখানে এসে তো তেমন কিছু জানতেই পারলাম না আমরা।

—ওনারা যতোটুকু বলেছে তাই অনেক।আমাদেরকে কেনো হাসপাতালের ভেতরের খবর জানাতে যাবে।

এই বলে মর্জিনা ফুপু আমার হাতটা ধরে বেরিয়ে যাবে ঠিক তখন পেছন থেকে কেউ একটা ডাক দিলো আমাদের।আমরা ঘুরে তাকাই।হাসটাতালের কোনো নার্স মনে হচ্ছে।

—আমি আপনাদের সব কথা শুনেছি এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে,
(নার্স আমাদের উদ্দেশ্য করে বললো)

—হ্যাঁ,আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন আমাদের।

—বলার তো অবশ্যই আছে।তবে এখানে না।বাইরে চলুন।

—বাইরে কেনো যেতে হবে?

—আরে,আগে আসুনই না।

আমি আর মর্জিনা ফুপু সেই নার্সের সাথে বাইরে গেলাম।তারপর সে আমাদের একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়।

—আমি একটা কথা জানাতে চাই আপনাদের,যা আজ পর্যন্ত কাউকে বলি নি,বলি নি মানে বলার সাহস হয় নি।

–কি কথা বলুন,

—আমার মনে হয় আমি এই বাচ্চাটার মাকে দেখেছি।আর সে মারা যায়নি।

নার্সের কথা শুনে আমরা দুজনেই চমকে উঠলাম।মর্জিনা ফুপু বেশ আগ্রহ সহকারে নার্সকে বললো।

—কি, কি বললেন আপনি?

—হ্যাঁ, আমি এতোদিন কাউকে বলি নি।বললে আমার চাকরিটাই হয়তো থাকতো না।আর কেউ বিশ্বাস করতো না আমার কথা।

—কি দেখেছেন আপনি ?

—এই হাসটাতালের সেদিন রাতে মোট দুজন মারা গিয়েছিলো।একজন এই বাচ্চাটার মা, আরেকজন এক্সি’ডেন্টের পেসেন্ট ছিলো।তো যখন আমি নাইট ডিউটি করছিলাম হাসপাতাল থেকে একটা লাশকে হেঁটে যেতে দেখতে পাই।এটা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই আমি।আমি জানি কোনো লাশের পক্ষে হাঁটাচলা করা সম্ভব নয়,ঐ মহিলা আদতে মারাই যান নি।কোনোভাবে সার্ভাইভ করে গিয়েছিলেন।

—আপনি তখন কাউকে কিছু বললেন না কেনো?আর তাকে আটকালেন না কেনো?

—আমার কথা কে বিশ্বাস করতো তখন,যদি বলতাম মৃত ঘোষণা করা কোনো মানুষকে জীবিত অবস্থায় আবিষ্কার করেছি,উল্টো হাসপাতালের বদনাম হতো।ডাক্তারদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতো তখন।আর যদি এটা দাবি করতাম আমি ভুত দেখেছি।আমার চাকরিটাই চলে যেতো।আমাদের জন্য এসব ভুত প্রেত বা আত্মা বিশ্বাস করা নিষিদ্ধ।তার থেকেও বড়ো কথা আমি নিজে চাইনি কোনো ঝামেলায় জড়াতে।তাই চুপ ছিলাম এতোদিন।

—আচ্ছা সেই মহিলা কোথায় গিয়েছে আপনি বলতে পারবেন?আমরা তাকেই খুঁজে মর’ছি।ছেলেটার দিকে চেয়ে দেখুন।বেচারা মাকে ছাড়া বাঁচবে কিকরে?
(মর্জিনা ফুপু আমাকে ইঙ্গিত করে নার্সকে বললো)

—হ্যাঁ, আমি জানি উনি কোথায় গিয়েছেন।

নার্সের কথা শুনে আমরা আবারো চমকে উঠলাম!

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে