খেলাঘর পর্ব-৬
লেখা-সুলতানা ইতি
সবাই বসার ঘরে ফিরে এলো
মিথিলা নাস্তা নিয়ে এলো সবার জন্য
ইহান খেতে খেতে বল্লো
– কে বানিয়েছে পিঠা গুলো, অনেক মজার আজ কাল তো এমন ঘরোয়া নাস্তা পাওয়া ই যায় না
মিথিলা- মা বানিয়েছে
ইহান- জানতাম আন্টি ছাড়া আর কে বানাবে,তুই কি জীবনে এসব পারবি
রাহি- এমন বলিস না ইহান,আমাদের মিথিলার ও অনেক গুন আছে,সে সব শ্বশুড় বাড়ির লোকেদের জন্য তুলে রেখেছে,ঠিক বলেছি না মিথিলা
– জানি না তুই ভালো বলতে পারবি,বল্লো মিথিলা অনেকটা কঠিন স্বরে
অরনি- মিথিলা তুই যে ঠোটে বইয়ের মতো এতো সুন্দর সাহিত্য পড়িস,সে ঠোঁটে কঠিন কথা গুলো উচ্চারন করিস কি করে?
মিথিলা – চলে আসে,মন না চাইলে ও আসে,আচ্ছা বাদ দে এই সব
ইহান-আমি একটা কথা বলতে চাই
সাম্মি- আবার অনুমতি নিচ্ছিস কেনো, বল
ইহান- ঐ চুপ কর তুই,, আমি বাড়ি ওয়ালির অনুমতি চাইছি
সাম্মি হেসে বল্লো
– অহহহহহ
মিথিলা- এতো ঢং তোরা কই থেকে আমদানি করিস বলতো,যাই হোক কি বলবি বল ইহান
ইহান- কাল আমার বাসায় কেউ থাকবে না, আম্মু, আব্বু, আপু, সবাই চট্রগ্রাম যাচ্ছে, আমি বাসায় আমাদের পাচ ছয় জন বন্ধু নিয়ে একটা পার্টি দিবো ভাবছি। কেউ থাকবে না আমরা আমরা ই,,,তোকে আসতে হবে কিন্তু মিথি কোন এক্সকিউজ শুনবো না
অরনি খুশি হয়ে বল্লো পার্টি,আমাকে আগে বলিসনি কেনো
রাহি- অরু আগে তো বলেই নি এখন ও আমাদের দাওয়াত করেনি,মিথিলাকে একা করেছে আমাদের কারো নাম বলেনি
ইহান- এই তোরা চুপ করবি, বলেছি না পাঁচ ছয়জন,তাদের মধ্যে তো তোরা ও পড়িস. তাই না,তোদের কে না বললে ও তোরা আসবি
আর যে আসবে না তাকে বলতে এসছি বুঝলি
রাহি কিছু বলতে যাবে তার আগে মিথিলা বল্লো
– কিন্তু আমি যেতে পারবো না,, বাসা খালি দেখছিস না
ইহান – জানতাম তুই এই কথা বলবি তাই তো তোর জন্য দারাওয়ান এনেছি
মিথিলা – মানে
ইহান- মানে সি সি ক্যামেরা, যাওয়ার সময় দরজার আড়ালে রেখে যাবি, এর মাঝে যদি চোর আসে এই ক্যামেরা তে তার ছবি উঠবে, ছবি দেখে চোর ধরতে সুবিধা হবে
মিথিলা- পাগল নাকি তুই,
অরনি- আরেহ মিথি বুঝিস না কেনো,, দুষ্টুটা অলওয়েজ দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে ই থাকে,
মিথিলা- দোস্ত প্লিজ ঝোর করিস না আমি সত্যি যেতে পারবো না
সাম্মি- বুঝেছি তুই সাইমুম সিরিজের বইগুলোর জন্য যাচ্ছিস না তাই তো,দেখ একদিন না পড়লে কিচ্ছু হবে না,,, প্লিজ প্লিজ
ইহান- দোস্ত আজকের পরে আরর কোখনো তোর কাছে কিচ্ছু চাইবো না প্লিজ রাজি হয়ে যা
মিথিলা হেসে বল্লো
– ঠিক আছে যাবো তোরা সবাই পাগল
তার পর আর ও কিছুক্ষন সবাই আড্ডা দিয়ে
সবাই চলে গেলো
মিথিলা আবার বই নিয়ে বসলো
পরদিন সকালে অরনির ফোন আসে
মিথিলা অরনি কেনো ফোন করেছে এতো সকালে
তার পর রিসিভ করে বল্লো
– অরু কিছু বলবি
অরনি- বলবো তো অনেক কিছু,সেই কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি গাড়ি নিয়ে তাড়া তাড়ি আয়
মিথিলা- ও তাই,আমি তো এখনে রেডি হইনি, তুই বাসায় আয়,,আমার তো রেডি হতে দেরি হবে
অরনি- আমি জানি মটে ই তোর দেরি হবে না,সো আমি গাড়িতেই আছি
মিথিলা কল অফ করে দেয়
তাড়া তাড়ি চুল গুলো ঠিক করে ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো দরজার সামনে গিয়ে মনে হলো ওহ নো এই জন্য ই তো সব ক্লিয়ার দেখছি না চশমা টা রেখে এসছি রুমে, মিথিলা চশমা চোখে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো গাড়ির কাছে এসে বল্লো, তোকে নিশ্চই অনেক্ষন অপেক্ষা করতে হয়েছে
অরনি- একদম না,তুই তো আর আমাদের মতো ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে সাজিস না, আমাদের তুলনায় অনেক কম সময় লেগেছে
মিথিলা গাড়িতে উঠে বসলো,,,ইহানদের বাসায় এসে মিথিলা অবাক পুরো বাসা ডেকোরেশন করা,, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না মিথিলা
মিথিলা – এই অরু ইহানদের বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান আছে বল, বাড়ির পরিবেশ অন্যরকম মনে হচ্ছে
অরনি- চল, বিতরে যাই,, তার পর বুঝবো কি হচ্ছে
ইহানদের ডুপ্লেক্স বাড়ি সারা বাড়ি সাজানো কিন্তু কোন মেহমান নেই যে কয়জন আছে বাড়ির পরিচারিকা,
মিথিলা বাসার গেটে এসে দাড়াতেই রাহি এসে বল্লো
মহারানী আপনি এক মিনিট দাড়ান, এখানে
সাম্মি এসে বাড়ির ঘেট পর্যন্ত ফুলের পাপড়ি চড়িয়ে দিলো
রাহি- মহারানী এবার আপনি আসুন ফুলের পাপড়ির উপর দিয়ে হেটে আসুন।কথা বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে
মিথিলা অবাক হচ্ছে খুব
– কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবি তোরা
সাম্মি – কিছু না আয়
অরনি- কি হলো মিথি চল যাই
মিথিলা আর কিছু না বলে হাটতে শুরু করলো
ইহানদের ড্রইং রুমে এসে মিথিলা আবার শকড খেলে
উপরে উঠার শিড়ির শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে আছে ইহান হাতে ফুলের বকি নিয়ে
মিথিলা বিতরে আসতে ইহান এগিয়ে গিয়ে মিথিলার হাতে ফুলের বকি টা দিলো
মিথিলা ফুলের বকি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ইহানের দিকে
মিথিলা- ইহান কি হচ্ছে আমাকে একটু বলবি,
ইহান- তেমন কিছুই না মাই ডিয়ার চশমিস তুমি তো আজ এই অধমের বাসায় নতুন তাই তোমাকে বরন করে নিলাম
মিথিলার কেনো জানি কথা গুলো বিশ্বাস হলো না
অরনি- চল সবাই বসি
ইহান- তোরা গিয়ে আড্ডা দে আমি একটু কাজ সেরে আসি
মিথিলারা সবাই গিয়ে নিচতলাতে ড্রইং রুমে বসলো
অরনি- মিথিলা তুই এমন উসখুস করছিস কেনো,তুই কি আমাদের মাঝে কম্ফোট ফিল করছিস না
মিথিলা- আসলে তা নয়, কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না
অরনি- ইহু তো বল্লো তোকে সব
মিথিলা- হুম
ইহান এসে বল্লো
– এই পেটুক রাহি, সাম্মি, অরনি, তোরা কি খাবি আজ লাঞ্চে কি রান্না করতে বলবো
অরনি কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বল্লো
– কি আমরা পেটুক,আর মিথিলা কি বল,
মিথিলা- আমি তোদের মাঝে আছি তো অতয়েব আমাকে ও বলেছে
রাহি- না মিথি আমাদের বলেছে,কারন ও আমাদের নাম মেনশন করে বলেছে তোর নামের ধারে কাছে ও আনেনি
মিথিলা আর কিছু বল্লো না আজ কেনো ইহান কে নতুন মনে হচ্ছে,কেন ইহান আমার সাথে এমন উদ্ভট আচরন করছে
মিথিলার ভাবনা ভেঙে গেলো ইহানের কথায়
ইহান- ডার্লিং তুমি কি খাবে বলো
মিথিলা ইহানের মুখে ডার্লিং আর তুমি শব্দ শুনে একটু বিব্রতবোধ করলো
ইতস্তত হয়েই বল্লো
– তোদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তা হলে আমি আজকের রান্না টা করবো
অরনিরা সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠলো
ওয়াও আজ তা হলে আমাদের মিথিলার রান্না খাবো আমরা
ইহান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– মিথি আজ কিছুতেই কিচেনে যাবে না, ও যেতে চাইলে ও আমি যেতে দিবো না
মিথিলা কৌতূহল নিয়ে তাকালো ইহানের দিকে
মিথিলা- আজকের দিনে মানে, আজ কি আছে?
অরনি- এই তোরা কথা বল আমি একটু আসছি
অরনি আড়ালে গিয়ে ইহান কে মেসেজ দিলো
ইহান তখন কথায় ব্যাস্ত মেসেজ সিন করে ইহান বল্লো মিথিলা আমি একটু আসছি,
ইহান পাশের রুমে অরনির কাছে গিয়ে বল্লো
– কিরে আসতে বললি কেনো
অরনি ফিস ফিস করে বল্ল
– তুই কি রে, তুই কি আমাদের সব প্লান ব্যাস্তে দিবি নাকি
ইহান- আমি আবার কি করলাম
অরনি- কি করিসনি বল,কি কথা ছিলো মিথিলা কে কোন কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না
আর তুই যা করছিস তাতে মিথিলা খুব শিগ্রই তোর সব কাজ ধরে ফেলবে,এমনিতে মিথিলা ওকে ঘিরে এতো আয়োজন করাতে সন্দেহ করছে
ইহান- তাই বলে….
অরনি ইহান কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
-আসতে কথা বল
ইহান এবার ফিস ফিস করে বল্লো
– তাই বলে আমি মিথিলাকে রান্না করতে দিতে পারবো না
অরনি- মিথি সন্দেহ করেছে আমাদের, এখন তুই যদি ওর কথা মেনে না নিস তা হলে মিথির সন্দেহ মজবুত হবে আর দেখবি একটা সময় মিথিলা হুট করে চলে যাবে
তখন এতো কষ্ট করে ওকে ম্যানেজ করে এনে লাভের ছেয়ে ক্ষতি বেশি হবে
ইহান- তাই তো আমি অতো কিছু ভাবিনি, থ্যাংক ইউ মাই ডিয়ার
অরনি- পাম্প দিতে হবে না,চল ওদের কাছে যাই, তুই আগে যা আমি পরে আসছি
ইহান- এক সাথে গেলে কি হবে
অরনি- বুদ্ধু, প্রেমে পড়ে তোর সব গেছে,আমরা এলাম আলাদা, আর এক সাথে বের হলে সন্দেহ হবে না,মিথিলা অনেক খুত খুতে টাইপের
ইহান – ঠিক আছে আমি যাচ্ছি আগে, তুই পরে আসিস
to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন