খেলাঘর /পর্ব-৫১+শেষ
লেখা – সুলতানা ইতি
মিথিলা অপলক চাহনিতে ছেয়ে আছে
-এই ইভানে সাথে ছয় বছর আগের ইভানের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না
ইভান হয়তো মিথিলার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছিলো
– ওভাবে তাকানোর কিছু নেই মানুষ ঠেঁকে অনেক কিছু শিখে
আমি রিয়েলাইজ করেছি ভালোবাসার দৃষ্টিতে অপর মানুষটির দিকে তাকালে ভালোবাসা আর ও গভীর হয়
-আর তাই তো এতো দিন তোমার পেছনে ঘুর ঘুর করে মিসেস চশমিস এর প্রেমে পড়ে মন ভেঙে ফেলেছি। ঝোড়া লাগাতে এখন এই চশমিস কেই লাগবে কথা বলতে বলতে ইভান মিথিলা কে জড়িয়ে ধরলো
পাশে থেকে নির্ঝরিণী
– এহেম এহেম পাগল আর পাগলি প্রেমে ভিবর হয়ে বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, পাশে যে একজন ইমম্যাচিউর শালি ও আছে সেটা ভুলে গেছে
মিথিলা ইভান কে শরিয়ে দিয়ে লজ্জায় আর দাঁড়াতে পারলো না সেখান থেকে চলে এলো
ইভান- এদি ওদিক তাকাচ্ছে এমন ভাবে তাকাচ্ছে মনে হয় কাউকে খুঁজছে
নির্ঝরিণী – কাউকে খুঁজছেন দুলাভাই
ইভান- এখানে ইমম্যাচিউর শালি আছে। তাকে খুজছি, কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
নির্ঝরিণী – আমি কি আপনার চোখে পড়ি না
ইভান নির্ঝরিণীরর চার পাশ ঘুরে দেখতে দেখতে বল্লো
–তুমি ইমম্যাচিউর? তুমি?
নির্ঝরিণী – তো
ইভান- আচ্ছা তা হলে আয়াপের সাথে প্রেম করাটা তোমার মটেও ঠিক হচ্ছেনা আমি তা হলে তোমার আপু কে কথা টা জানাই
নির্ঝরিণী – দুলাভাই প্লিজ আমি দুষ্টুমি করেছি
ইভান- এইবার ঠিক আছে, আচ্ছা শুনো আমি এখন যাই সব কিছু অ্যারেঞ্জ করতে হবে
ইভান চলে গেলো
ইভানের জড়িয়ে ধরার মুহুর্ত টা মিথিলা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে
কেনো যেনো লজ্জা ও লাগছে,তা হল কি ইভান আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা কে জাগিয়ে তুলেছে
“ভালোবাসা তো হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলো
হঠ্যাৎ কি হলো যে উকি দিলো
ইভান তুমি সত্যি অজানা,কেনো আমার প্রানো ঝুড়ে অবশ করে দিলে আমার অনুভূতি গুলো কে,
আমি আজ ও তোমায় জানতে পারিনি, ভালোবাসি? না কাছে আসি?,না দূরে যেতে পারি
পরিশেষে একটা ই চাওয়া তুমি আমার হিয়ার মাঝেই লুকিয়ে থাকো,ভালোবাসার বিশ্বাস নেই,বড্ড ভয় হয় প্রকাশে”
ইভানের কথা মতো ছোট্ট করে অনুষ্ঠান করে মিথিলা কে নতুন করে বউ সাজিয়ে ইভান বর সেজে মিথিলাকে নিয়ে গেলো
আজ তাদের বাসর রাত প্রথম বাসর রাতের থেকে এই রাত টা ভিন্ন তখন কোন ফিলিংস ছিলো না আজ অন্য রকম ফিলিংস কাজ করছে
মিথিলা বধু ভেসে বসে আছে ফুল দিয়ে সাঝানো খাটে
কিছুক্ষন পর ইভান রুমে এলো মিথিলা লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে
ইভান মিথিলার কাছে যেতে যেতে বল্লো
— কি কপাল করে এলাম কে জানে? মানুষে বাসর ঘরে আসলে বউ এসে স্বামির পায়ে ধরে সালাম করে
– আর আমার বউ? হায় হায়রে
মিথিলা ঘোমটার নিছে থেকে বল্লো
– এই যে মিঃ এটা আপনার দ্বিতীয় বাসর বুঝলেন প্রথম বাসরে কিন্তু সালাম করেছি
ইভান- হ্যা তো? এখন সালাম করলে কি তোমার হাত টা খশে পড়ে যাবে
মিথিলা- এতো ক্যাচাল না কিরে ঘোমটা টা সরান
ইভান- এহ আমি কেনো ঘোমটা সরাতে যাবো তোমার ঘোমটা তুমি সরাও
মিথিকা চট করে ঘোমটা সরিয়ে বল্লো
– ঐ যা বলছি তা কর চুপচাপ আমার ঘোমটা সরা নইলে তোর খবর আছে
ইভান- ওরে বাপরে ভয় পেয়েছি এতো দেখছি পুরো গুন্ডি মেয়ে আগেই তো ভালো ই ছিলো
—ইয়ে মানে আমি ঘোমটা সরাবো কি? তুমি তো ঘোমটা ফেলে দিয়েছো
মিথিলা- এই যে আবার ঘোমটা দিয়ে বসছি হুম
ইভান আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ মিথিলা ঘোমটা সরিয়ে বল্লো
– সুবহানআল্লাহ বউয়ের রুপে আমি মুগ্ধ, বউ তো নয় যেন আগুনের ঘোলা
মিথিলা- এই কি বললে
ইভান- কিছু বলিনি তো ইতিহাস সাক্ষি করেছি আর কি
মিথিলা- মানে
ইভান- মানে আর কি নাতি নাতনির কাছে বুড়ো বয়সে গল্প করতে পারবো
–বলবো তোদের দাদির সাথে আমার দুইবার বাসর হইছে
মিথিলা- ধুর কি যে বলো
ইভান- লজ্জা পেয়ে লাভ নেই শুনো না আমাদের একটি ছেলে একটি মেয়ে হবে কি বলো
মিথিলা- তোমার মাথা’ আল্লাহ যা দিবে তা ই
ইভান- হুম কিন্তু টুইন হওয়া চাই,আচ্ছা যাও এই সব কথা থাক
চলো তো তোমার সাথে আজ বাসর রাত সেয়ার করি
মিথিলা – এমা ছিঃ ছিঃ কি সব বলছো
ইভান- আমি কি বললাম আমি তো বলেছি বারান্দায় চলো চাঁদ দেখবো,তোমরা মেয়েরা না এক লাইন বেশি বুঝো
এই ভাবে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে পঁচিশটি বছর পার করলো
এই পঁচিশ বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে
——-আয়ান আর উতলার বিয়ে হয়েছে, মিথিলা শ্বশুর বাড়ি আসার পরে রফিক আর মেয়ের বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করেনি উতলা বিয়ের পরে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে তাদের চার বছরের একটা ছেলে আছে
——-নির্ঝরিণী এখন বড় আইনজীবী হয়েছে
-আয়াপের সাথে বিয়ে ও হয়েছে
কিন্তু নির্ঝরিণী মা হতে পারবে না, জন্ম থেকে সে এই ক্ষমতা নিয়ে আসেনি ,
-এই নিয়ে আয়াপ কখনো কোন প্রশ্ন তুলেনি, এমন ভাবে লাইফ লিড করছে মনে হয় বাচ্ছা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই হলে হবে না হলে নাই
নির্ঝরিণী আদালত আর আয়াপ কে নিয়ে সময় কাটে
গান মাঝে মাঝে করা হয় এতো কিছুর মাঝে ভালোবাসার কোন কমতি নেই দুজনের মাঝে
সময় পাল্টেছে মিথিলা কপালের উপর এক গুচ্ছ চুল পাক ধরেছে চশমার পাওয়ার চেঞ্জ হয়েছে এখন অবশ্যই ইভানের চশমা পরতে হয় বয়স তো কম হয়নি আটান্ন প্লাস
ইভান- কই গো মিথি শুনছো? একটু এদিকে এসো না
মিথিলা- আসছি দাড়াও?
ইভান- না আমি দাঁড়াতে পারবো না বসে আছি তুমি তাড়া তাড়ি এসো
মিথিলা- এই বয়সে ও আর তুমি ঠিক হলে না,বলো কি বলবে
ইভান- মিহি আর ইনয় আসছে সামনের সপ্তাহে
মিথিলা- ওমা তাই? আমার মানিকদের কতো দিন হলো দেখি না।
ইভান- হুম তুমি তো তোমার মানিকদের পেলে আমাকে ভুলে যাও।রোজ ভিডিও কলে দেখে ও তোমার মন ভরে না। আর যার জন্য মানিকদের পেয়েছো তাকে তোমার চোখেই পড়ে না।
মিথিলা- এই শুনো মানিকদের তুমি একা আনোনি বুঝেছো।
ইভান- হুম সে তো জানি কিন্তু তোমাকে দেখলে মনে হয়না তোমার ওতো বড় বড় দুটো ছেলে মেয়ে আছে
আমার তো টেনশন হয় না জানি কখন আবার তোমার দিকে অন্য কারো নজর পড়ে যায়
মিথিলা- ছিঃ ছিঃ কি কথা ছিরি
সেদিন ইভান কে ক্ষমা করে দুজন এক হয়েছে সেদিন থেকে মিথিলার আর পিছু পিরে ছাইতে হয়নি
ইভান এতো ভালোবাসা দিয়েছে তাকে যা মিথিলার ছাওয়ার ছেয়ে বেশি ছিলো
—যার ফল স্বরুপ পৃথিবীতে এসেছে মিহি আর ইনয়
ইভানের ইচ্ছে টা ই পূরন হয়েছে টুইন বেবী হলে ও দুজন দু রকমের
-মেয়েটা তো পুরো মিথিলা জন্মের পর থেকে কেঁদেছি কি না সন্দেহ আছে মিথিলার মতো শান্ত স্বভাবের তাই তো ইভান মেয়ের নাম রেখেছে মিহি,
—অপর দিকে ছেলেটা মেয়েটার থেকে বিপরীত টুইন হলে ও কারো সাথে কারো মিল নেই সারা দিন জ্বালাতো আর তাই মিসেস আয়মন নাতীর নাম রেখে ছিলেন ইনয়
ইনয় এতো বেশি দুষ্টুমি করতো যে মিহির টা ইনয় ই পরিশোধ করতো মনে হয়
ইনয় মিহির যখন চার পাচ বছর বয়স তখন দু বছর আগে পিছে করে মিসেস আয়মন আর আতাহার চৌধুরী পরো পাড়ে পাড়ি জমিয়েছে
মিথিলার সময় তো সেখানেই থমকে যেতো যদি না ইভান মিথিলার পাশে না থাকতো মায়ের মতো শ্বাশুড়ি হারিয়ে মিথিলা খুব ভেঙে পড়েছিলো, কিন্তু ইভানের ভালোবাসা আর ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে মিথিলা
যাই হোক আজ ইনয় মিহি আসবে মিথিলার আনন্দেই ধরছে না সকাল থেকে মিহি কি খাবে ইনয় কি পছন্দ করে সেগুলো নেই ব্যাস্ত হয়ে পড়লো মিথিলা
অবশেষে কলিজারা এলো
ইনয় বাবার মতো হলে ও মায়ের ভক্ত বেশি
আর মিহি মায়ের মতো ছাপা স্বভাবের হলে ও বাবা তার খুব প্রিয়ো
রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে ইনয় মিথিলা কে নিয়ে চাদে চলে গেলো
মিথিলা -এখানে নিয়ে এলি যে, কিছু বলবি?
ইনয়- আম্মু আমি না
মিথিলা- তুই না কি?
ইনয়- আম্মি আই আম ইন লভ
মিথিলা- মানে
ইনয়- আমি একজন কে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই প্লিজ আম্মু তুমি আব্বুকে বলো না
মিথিলা কষ্ট পেলেও ছেলে কে বুঝতে দেয়নি জানি না সব বাবা মা ই কেনো ছেলে মেয়ের পছন্দের কথা শুনলে মানতে চায়না তবু মিথিলা জানতে চাইলো
– মেয়ে কি করে,কোথায় থাকে
ইনয়- আমাদের বাংলাদেশের মেয়ে আম্মু থাকতো অস্ট্রিয়া তে এখন বাংলাদেশে এসেছে
মিথিলা- অস্ট্রিয়ার মেয়েকে তুই আমেরিকা থেকে দেখলি কি করে
ইনয়- কয়েকবার বেড়াতে গেছে তখন দেখা হয়েছে তার পর এভাবেই……
মিথিলা – ওহ ঠিক আছে,ঘুমোতে যা আমি দেখছি
মিথিলা মুখ ভার করে ঘুমোতে এলো
ইভান- কি গো গিন্নি মন খারাপ কেনো,
মিথিলা- কিছু না
ইভান- আরেহ বলো না
তার পর ইভানের জোরাজুরি তে সব কথা বল্লো মিথিলা ইভান কে
ইভান- ওহ এই ব্যাপার শুনো এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে ওদের তো পছন্দ থাকতেই পারে আমাদের উচিত সেটা যাচাই করে দেখা
তুমি ইনয়ের থেকে এড্রেস টা জেনে নিও আমরা কালকেই যাবো
মিথিলা- আমার কতো শখ ছিলো দুজনের বিয়ে একদিনে দিবো
ইভান- মা বাবার কি সব শখ পুরোন হয় বলো,তার ছেয়ে বরং চলো দুজনে মিলে ছেলের পছন্দ করা মেয়েটা কে দেখে আসি
মিথিলা- আমি যাবো না তুমি যাও
ইভান অনেক বুঝিও মিথিলাকে রাজি করাতে পারেনি
অবশেষে ইভান একা ই রওনা হলো
—এই মিথিকা প্রণয় কোথায় তোরা বাংলাদেশে এসে ছেলে মেয়ে দুইটার একটা কে ও খুঁজে পাওয়া যায় না
-সারাদিন কেউ ল্যাপটপে গেম নিয়ে পড়ে থাকে, কেউ সারা দিন মোবাইলে চ্যাটিং
উফফ এদের নিয়ে আমি আর পারি না
ইহান- কি হলো সাম্মি তুমি আবার রেগে গেছো কেনো
সাম্মি- রাগবো না একটু শপিং এ যাবো তোমার ছেলে মেয়ে একটা কে ও সাথে পাই না
ইহান- চলো আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি ছেলে মেয়েদের ছাড়ো
সেদিন বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রিয়ায় যাওয়ার পরে ইহানের কথা মতো একটু সময় দিয়েছে সাম্মি তার বিনিময় ইহান সাম্মি কে প্রচুর ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয়
“জানি না মিথিলা কে ভুলতে পেরেছে কি না” “কিন্তু আর কোন দিন মিথিলার কথা বলেনি ইহান ”
অনেক ভালোবাসা দিয়েছে সাম্মি ইহান কে আর উপহার দিয়েছে প্রনয় আর মিথিকা কে, মেয়েটা বড়, ছেলে টা ছোট তাতে কি সারা দিন ওদের ঝগড়া লেগেই থাকে,ছেলে মেয়ের নাম ইহান ই রেখেছে মিথিকা, প্রণয় অস্ট্রিয়া থেকে দেশে আসার কোন ইচ্ছেই ছিলো না কিন্তু মিথিকার কারনে আসতে হলো
বাংলাদেশ থাকবে ঘুরবে দেখবে এটা তার অনেক দিনের শখ
সাম্মি বাইরে বেরোনোর জন্য মেইন দরজা খুলতে যেয়ে অবাক হলো একজন ভদ্র লোক দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে,ডোরবেল বাজাবে কি বাজাবে না ইতস্তত করছে
এমন সময় দরজা আপনা আপনি খুলে গেছে
ইভান দরজায় তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা দাঁড়ানো
— তার পিছনে একজন ভদ্র লোক কেনো জানি এদের খুব চেনা মনে হচ্ছে
সাম্মি- ইনি কে উনাকে যেন কোথায় দেখেছি
ইহান সেদিকে খেয়াল করেনি সাম্মির পিছনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কি যেন দেখছিলো
ইভান ই প্রথমে ছিনতে পারলো সাম্মি কে
– তুমি সাম্মি না?
সাম্মি- হুম আপনি কে?
—-আমি ইভান মনে নেই তোমার
ইভান নাম টা ইহানের কানে ভাজলো খুব, মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকাতেই অবাক হলো
ইহান
– আরেহ ইভান আপনি
– ইভান- তা হলে এই বাসায় তোমরা থাকো?
ইহান- হুম,ভেতরে আসুন
তার পর নানান কথার ছলে জানতে পারলো তাদের মেয়ে মিথিকার রিলেশনের কথা আরেকটু ক্লিয়ার হওয়ার জন্য মিথিকা কে ডাকলে মিথিকা এসে সব ক্লিয়ার করে দেয়
ইহান সত্যি অবাক হয়েছিলো ভেবেছিলো মৃত্যুর আগে আর মিথিলার সাথে দেখা হবে না, কিন্তু ভাগ্যের খেলায় আত্মিয়তার বাধনে বাধতে যাচ্ছে তারা
মিথিলা আর ইভানের ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে সাম্মির কোন আপত্তি নেই,
ইহান যদি ও মিথিলা সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করেনি , কিন্তু সাম্মি চুপ করে থাকেনি
মিথিলার কথা উঠতেই
ইভান বল্লো
– মিথিলার ইচ্ছে দুই ছেলে মেয়েকে একদিনেই বিয়ে দিবে, যেহেতু পৃথিবীতে তাদের এক সাথেই আসা,কিন্তু এই অল্প সময়ে মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন
ইভানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ইহান বল্লো
– মিথিলার ইচ্ছে টা ই পুরোন হোক ছেলে রেডি
ইভান আর সাম্মি রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে
– ইহান ওভাবে তাকিও না সাম্মি ছেলে কে তো একদিন বিয়ে করতেই হবে, এখন করলে কি প্রব্লেম
কিন্তু সাম্মি রাজি হয়নি ছেলে মাত্র স্টাডি শেষ করেছে এখন ই বিয়ে দিতে চায় না,ছেলে মেয়ে কাউকেই এতো সকাল বিয়ে দিতে সাম্মির ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু মেয়ের যেহেতু পছন্দ তাই আর অমত করেনি,তবে ছেলের ব্যাপারে তো কিছুতেই মত দিবে না
ইহান- এমন করছো কেনো মিথিলার মেয়ে মিথিলার মতো ই হবে তোমার ছেলের কোন চিন্তা নেই
ইভান- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আমাকে বুঝাও তো
ইহান- আমার ছেলে প্রনয় আর তোমার মেয়ে দুজনের কথা বলছি
ইভান- আলহামদুলিল্লাহ মিথিলার ইচ্ছে টা ই পুরোন হবে মনে হচ্ছে
সাম্মি আমি গিয়ে ছেলেকে জিজ্ঞাস করে আসছি
প্রনয় কিছুতেই রাজি নয় বিয়ে করতে
সাম্মি ছেলে কে সাপোর্ট দিচ্ছে
কিন্তু ইহানের ধমক শুনে অবশেষে রাজি হলো মা ছেলে দুজনেই
ইভান দুটো বিয়ের কথা পাকা করে খুশি মনে বাড়ি ফিরলো
মিথিলার কাছে সব কথা বল্লো ইভান শুধু সাম্মি ইহানের কথা ছাপিয়ে গেলো ইভান চায় মিথিলা কে একটা সারপ্রাইজ দিতে
মিথিলা তো শুনে রেগে আগুন কোথাকার কোন ছেলে জানা নেই শুনা নেই হুট করে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে আসলো? হ্যা আমি এটা ছেয়েছি ভাই বোনের বিয়ে এক সাথেই হোক, তাই বলে অচেনা একটা ছেলের সাথে মেয়ে সংসার করবে কি করে,
ইভান- বউ আমার এতো রেগে আছে যে কি বলবো
শুনো বউ রাগ করে না কাল যখন ছেলে পক্ষ আসবে তুমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাবে দেখো
মিথিলা সত্যি সাপ্রাইজ হয়েছে সাম্মি আর ইহান কে দেখে
আজ কতো গুলো দিন পর ইহানের সাথে দেখা, মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না মিথিলার অদ্ভুত দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে ইহানের দিকে এখনো আগের মতো ই হ্যান্ডসাম
সাম্মি এসেই মিথিলা কে জড়িয়ে ধরলো
কিন্তু মিথিলা রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে
মিথিলার অবস্থা দেখে সাম্মি ইভান কে বল্লো
– দুলাভাই আমরা যে আসবো এটা আপনি মিথিলা কে বলেন নি
ইভান মুখ টিপে টিপে হাসছে
সাম্মি উফফ আপনি ও না হঠ্যাৎ করে শকড খেলো না মিথিলা
সাম্মি আর কোন কথা বল্লো না মিথিলা কে সময় দিলো নিজেকে সামলে নিতে
মিথিকা, প্রনয়,ইনয় সবাই অবাক তাদের দুই পরিবার পূর্ব পরিচিত তা ও মনে হচ্ছে শুধু পরিচিত বললে ভুল হবে তার থেকে অনেক বেশি কিছু ছিলো
– বুদ্ধি মতি মিথিকা বুঝে ফেলেছে বাবা কেনো তার নাম মিথিকা রেখেছে
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে নিজের রুমে চলে এলো
কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো
মনে হচ্ছে এই সব স্বপ্ন
মিথিলা উঠে গিয়ে আলমারি থেকে সেই পুরোনো বক্স টা বের করলো যেখানে ইভানের দেয়া একটা চিরকুট আর ইহানের সেই চশমা টা যেটা ইভান ভেঙে ফেলে আবার নিযে ঝোড়া লাগিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু ভাংগা দাগ গুলো রয়েই গেছে তাতে
– সেই চশমা টা আজ ও যত্ন করে রেখে দিয়েছিস
ফেলে দে স্মৃতি যত্ন করে রাখতে নেই, এতে যন্ত্রনা বাড়ে
পিছন থেকে কারো কথায় মিথিলা চমকে উঠে তাকিয়ে দেখে রুমের দরজার সামনে ইহান দাঁড়িয়ে আছে
মিথিলা নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো তু……
ইহান- হুম আমি কেমন আছিস
মিথিলা- ভেতরে এসে বস,ভালো আছি আমি
ইহান বসতে বসতে বল্লো
– তোকে দেখেই বুঝা যায় অনেক ভালো আছিস,আমি ও ভালো আছি শুধু মাঝে তোকে দেখার লোভ জাগে এই মনে, আজ ও মনের কোনে তোর জায়গা টা ই আছে শুধু তার পাশে ছোট্ট একটুকরা জায়গা করে নিয়েছে সাম্মি তার গুন দিয়ে, অসাধারণ একটা মেয়ে সাম্মি,
মিথিলা- জানি
ইহান- নিয়তির খেলায় আমি যে আবার তোকে দেখতে পাবো কখনো ভাবিনি, তোর কথা মতো ই সেদিন দেশ ছেড়ে চলে গেছি, খুব বুঝতে পেরেছি তুই আমায় তোর আশে পাশে চাস না
তাই তোর থেকে দূরে গিয়ে ও যেন তোর নাম হারিয়ে না যায় সে জন্য মেয়ের নাম রেখেছি মিথিকা যতো বার মিথিকা বলে ডাকতে যাই ততবার তোর নাম টা ই আগে মনে আসে
বাই দ্যা য়ে আজ আমি খুব খুশি তোর ঘরে মেয়েকে পাঠাতে পারবো বলে,সেই সাথে অনুরোধ করছি তোর মেয়েটা কে আমায় দে,ঘরের বউ করে রাখবো না নিজের মেয়ের মতো পালবো
মিথিলা কিছু বলতে পারলো না চোখ দিয়ে অভিরাম পানি ঝরছে আজ জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে মনে হচ্ছে সত্যি ইহানের জীবন নিয়ে আমি খেলেছি
ইহান- তুই কাদিস না সব সময়ের মতো আমি এখন ও তোর কান্না সহ্য করতে পারি না তা ছাড়া সময় বদলেছে ছেলে মেয়েদের মনে প্রশ্ন জাগবে তোর কান্না মাখা চোখ দেখে
আচ্ছা আমি সবার কাছে যাচ্ছি তুই আয়
ইহান বেরিয়ে গেছে
ইহান বেরিয়ে যেতেই ইভান রুমে এলো
মিথিলার চোখে তখনো কান্নার দাগ রয়ে গেছে
ইভান- পুরোনো স্মৃতি গুলো মাটিতে ছাপা দাও মিথি নতুন আত্মীয় হতে যাচ্ছে সে দিকে মন দাও
মিথিলা- তু তু মি তুমি কি সব……
ইভান- হুম সেই আমার অসুস্থের সময় হসপিটাল থেকে তোমাদের দুজন কে দেখেই সব জানা,একবার ভেবেছি তোমাদের মিলিয়ে দিবো কিন্তু আমি বড্ড হিংসুটে মিথিলা তোমাকে ছাড়া যে আমি অচল তাই নিজের স্বার্থ বুঝে নিয়েছি
ইভান মিথিলা কে জড়িয়ে ধরে বল্লো অনেক ভালোবাসি আমার রাজ্যের রানী কে তার পর মিথিলার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে
ইভান বল্লো- চলো যাওয়া যাক সবাই তোমার জন্য ওয়েট করছে
মিথিকা আর ইনয়ের বিয়ের পাকা কথা তো শেষ
কিন্তু প্রনয় রাজি হচ্ছে না, প্রনয় কার থেকে যেন মিহির জন্ম তারিখ জেনে হিসেবে বসে গেলো গুনে গুনে বিশ দিনের বড় মিহি
প্রনয় তো সুত্র একটা পেয়েছে ওর থেকে বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করবেই না
ইহান আর সাম্মি অনেক বুঝালো তাতে ও রাজি নয় এবার ইহান ঠিক করলো প্রনয় তো মিহি কে দেখেনি তাই হয়তো এমন করছে
মিহি কে সবার সামনে আনা হলো
প্রণয় একবার দেখে চোখ ই ফেরাতে পারছে না
প্রনয় মিহি কে আলাদা কথা বলতে দেয়া হলো
সাম্মি ভেবেছিলো মিহি কে বুঝি প্রনয়ের পছন্দ হবে না
কিন্তু প্রনয়ের অবস্থা দেখে সাম্মি শকড(একেই বলে বাপ কা বেটা)
যথা সময়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো দুটি বিয়ে একদিনেই হবে
একই কমিউনিটি সেন্টারে দুই যোড়া কাপলের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো
আজ কন্যা সম্পাদান করতে গিয়ে ইভানের চোখে পানি চলে আসে কাঁদছে ইভান
কাঁদতেই বল্লো
– বাবা আমার প্রিন্সেস কে তোমার হাতে তুলে দিলাম ওকে আগলে রেখো ভালোবাসার পরশে
মুহুর্তেই মিথিলার বাবার কথা মনে পড়ে গেলো ইভানের এমন ই একদিন মিথিলার বাবা মিথিলা কে তার হাতে তুলে দিতে কেঁদেছে
সেদিন আমি বিরক্তি হয়েছি আজ কি আমার মেয়ের জামাই বিরক্ত হচ্ছে, কান্না চোখে ইভান প্রনয়ের দিকে তাকালো, তাকিয়ে কি বুঝলো কে জানে ইভান তাড়া তাড়ি কন্যা বিদায় দিলো
প্রনয় মিহিকে নিয়ে সাম্মিরা চলে গেছে
মিথিকা ইনয় কে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো মিথিলা
গভীর রাতে মিথিলা দেখলো ইভান বিছানায় নেই মিথিলা আবিস্কার করলো ইভান বারান্দায় আছে
নিঃশব্দ পায়ে হেটে মিথিলা ইভানের পাশে দাঁড়ায় ইভান কাঁদছে এই কান্না একজন পিতার তার মেয়ের জন্য
এই কান্না একজন জামাই তার শ্বশুর কে অবজ্ঞা করার অনুশোচনার
মিথিলা আস্তে করে ইভানের কাধে হাত রাখলো
ইভান হাতের স্পর্শ পেয়ে বুঝে নিয়েছে এই হাত কার হতে পারে
– ঘুম ভেঙেছে কি করে আমি তো কোন শব্দ করিনি
মিথিলা- তুমি কাঁদবে আর আমি ঘুমাবো?
ইভান- কাঁদছি না তো
মিথিলা-আমি বুঝি ইভান
কাদছো কেনো সব বাবা ই মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে পাঠায় আর এই কষ্ট বাবাদের সহ্য করে নিতে হয়, ঘরে তো আমাদের আরেকজন নতুন মেয়ে এসেছে তাই না
ইভান চোখের পানি মুছে বল্লো
– মিথি প্রত্যেক বাবা ই তার মেয়ে কে পরের সংসারে পাঠায় বিশ্বাস করে অপরিচিত একটা ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেয় এই আশায় ছেলেটা মেয়ে কে ভালো রাখবে
— মিথি তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও কতো কষ্ট পেয়েছো তুমি আমার জন্য,তোমার বাবা নিশ্চয় আমার উপর রেগে আছে তাই না
মিথিলা স্বামিকে কাছে টেনে বল্লো
– আমার কোন অভিযোগ নেই তোমার উপর ইভান,আর আমার যদি কোন অভিযোগ না থাকে তা হলে বাবার ও থাকবে না
মিথিলা- হুম তুমি এখনো বাচ্ছা রয়ে গেছো
ইভান- মুচকি হেসে বল্লো বয়স কিন্তু আমার ষাটে পৌছে গেছে
মিথিলা- তাতে কি আমার কাছে তুমি এখনো পঁচিশ বছরের যুবক, ভালোবাসি সেই আগের মতো
ইভান আজকের দিনটা আমার জন্য স্পেশাল জীবনের প্রথম তুমি নিজ মুখে ভালোবাসি বলেছো মিথি
অবশ্য ভালোবাসি মুখে বলতে হয়না তোমার নিরাবতা ও আমার কাছে ভালোবাসা
মিথিলা চলো শুয়ে পড়ি
ইভান-না আজ তুমি দেখো ঐআকাশের চাঁদ আর আমি দেখবো আমার চাঁদ কে
দুজন দুজনের পানে ছেয়ে আছে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে
বিধাতার অন্তর মহলে তাদের প্রার্থনা সময় টা যেন এখানেই থেমে যায়
সমাপ্ত
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
উপন্যাস টা উৎস্বর্গ করলাম
আমার সবছেয়ে প্রিয়ো কাজিন
#আফরিনা_মিথিলা কে