খেলাঘর /পর্ব-৫০

0
2558

.খেলাঘর /পর্ব-৫০
লেখা- সুলতানা ইতি

পরদিন উতলার মাকে বাসায় আসতে দেখে মিথিলা অবাক হলো উতলার সাথে আয়ানের বিয়ের কথা হওয়ার পর থেকে তিনি এই বাসায় আসেননি
মিথিলা বার বার আসতে বললে ও উনি আসেনি বলেছে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তার পর আসবে সেই তিনি এখন কি মনে করে এলো?

মিথিলা – আন্টি কেমন আছেন? বসুন
এই নির্ঝরিণী আয়ান তোরা কই?

উতলার মা বল্লো
– তুই এতো ব্যাস্ত হচ্ছিস কেনো? আমি বসতে আসিনি কয়টা কথা বলেই চলে যাবো।

মিথিলা- তা বললে কি হয়? এই প্রথম এলেন আমাদের বাসায়।কয়দিন পর আমাদের আত্মিয় হতে চলছেন।

উতলার মা বল্লো
– তুই বস আমার সাথে. কথা গুলো আগে শুন তার পর তোর কথা বলিস

মিথিলা বসতে বসতে বল্লো
” বলুন আন্টি”

উতলার মা আমতা আমতা করলো কিছুক্ষন কথা গুলো বলবে কি বলবে না ভাবতে লাগলো

মিথিলা উতলার আম্মুর একটা হাত ধরে বল্লো
– আন্টি আপনি কি বলবেন.তা নিঃসংকোচে বলুন

উতলার আম্মু
– আসলে মা উতলার বাবা তখন আয়ান আর উতলার বিয়েতে মত দিলে ও এখন উনি চায় না তাদের বিয়ে টা হোক

মিথিলা কথা টা শুনে আৎকে উঠে
– আন্টি এটা কি বলছেন?তখন কথা হয়েছিলো আয়ানের পড়া শুনা শেষ হলে উতলা বউ কে করে আনা হবে।
তা হলে এখন এসব কথার মানে কি? আন্টি আপনি নিজে ও জানেন উতলা আয়ান দুজন দুজনকে কতো টা ভালোবাসে।

উতলার আম্মু
– আমার কিছু করার নেই মা উতলার বাবার কথার বাইরে যেতে পারবো না

মিথিলা- আন্টি প্লিজ আপনি আংকেল কে বুঝান দুটি জীবন এ ভাবে নষ্ট হতে দিবেন না আমার ভাই মরে যাবে

উতলার আম্মু -আমার কিছু করার নেই মা

মিথিলা- আচ্ছা একটা সুযোগ দেন আমাদের আমাকে এটা বলুন আংকেল কেনো রাজি নয়।আর কি করলে আংকেল রাজি হবে।

উতলার আম্মু মিথিলার দিকে তাকিয়ে আছে তার পর বল্লো
– না থাক মা আমি কথা টা বললে তুই কষ্ট পাবি, কথা টা না বলি।

মিথিলা – আন্টি আপনি সত্যি টা বলুন কষ্ট হলে ও আমি মানিয়ে নিবো

উতলার আম্মু- তা হলে শুন.ইদানীং তোদের কথা হাটে বাজারে গবেষনা করা হয়, তোর আংকেল গতো মাসে দেশে ফিরেছে তোর আংকেল কে ও অনেক কথা শুনায়, মা আমাদের সমাজে বাস করতে হবে সমাজের থেকে আলাদা হয়ে কেউ ই বেছে থাকতে পারবো না তাই

—–আন্টি আপনি মূল কথা বলুন মানুষ কেনো আমাদের নিয়ে কানাঘুষা করে, আমার ভাই বোন বা আমি তো কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করিনি

উতলার আম্মু- প্রব্লেম টা তোকে নিয়ে তুই বাবার বাড়িতে আছিস শ্বশুর বাড়িতে কেনো যাচ্ছিস না এখন তো আয়ান নির্ঝরিণী ও বড় হয়েছে তা ছাড়া সবাই জেনে গেছে তোর আর ইভানের ব্যাপার টা এই নিয়ে লোকে নানান কথা ছড়াচ্ছে
এখন তুই বল কোন বাবা কি তার মেয়েকে এমন ফ্যামেলীতে বিয়ে দিতে রাজি হবে? তুই হলে কি করতি?আর একবার তোর আংকেলের জায়গায় নিজেকে ভেবে দেখ!আয়ান কে আমি খারাপ বলবো না নির্ঝরিণী কে ও বলবো না!তবে তোর জন্য ওদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক সাফার করতে হবে দেখিস।
আমার মেয়ে কে তো আমি বুঝাবো এবং খুব শিগ্রই অন্য জায়গাতে বিয়ে দিবো,তুই তোর ভাই কে বুঝাস যেন কোন সিন ক্রিয়েট না করে
উতলার আম্মু কথা গুলো বলে আর একমিনিট ও বসেন নি, বেরিয়ে গেছেন উনি

মিথিলা বসে আছে নির্বাক হয়ে ভাই বোনের শুখের জন্য এতো কিছু করা
__আর আজ নিজের জন্য ভাই বোনের শুখ নষ্ট হয়ে যাবে?
—আয়ান যখন জানতে পারবে তখন সে কি করবে?

মিথিলা কতোক্ষন এভাবে বসে ছিলো তার খেয়াল নেই নির্ঝরিণীর কথায় তার খেয়াল ফিরলো

-আপু কি হয়েছে তোর এভাবে বসে আছিস কেনো?

মিথিলা কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো
—আমার কি করা উচিত এখন, আয়ান তো মরেই যাবে উতলার অন্য জায়গায় বিয়ে হচ্ছে শুনলে

নাহ আমি রফিক আংকেলের সাথে একবার কথা বলে দেখি কি হয় (রফিক হলো উতলার বাবা)
মিথিলা তাড়া তাড়ি করে বেরিয়ে গেলো দরজায় আয়ানের সাথে দেখা হয়েছে বার বার জানতে ছেয়েছে
এমন তাড়া হুড়ো করে কোথায় যাচ্ছিস

মিথিলা কিছু বল্লো না, ভাগ্যে ভালো উতলাদের বাসায় এসে অপেক্ষা করতে হলো না রফিক বাসায় ছিলো

– মিথিলা কোন ভনিতা না করে ই বলতে শুরু করলো যেন কথা গুলো তার মুখস্ত

– আংকেল আপনি কেনো উতলা আর আয়ানের বিয়েটা ভেঙে দিতে ছাইছেন? আপনি জানেন ওরা দুজন দুজনকে হারিয়ে কি করতে পারে?প্লিজ আংকেল আমার বাবা মা হারা ভাই টা কে এতো কষ্ট দিবেন না

রফিক- দেখ এই পাড়ায় এখন সমালোচনার টপ সাবজেক্ট হচ্ছিস তুই,আর সবাই এ জন্য ও আমাকে কথা শুনায় কারন তোর ভাইয়ের সাথে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছি তাই, শুন মা তোর বাবা মা নেই তাই তোদের খুব হুশিয়ার হয়ে থাকতে হবে, কারন তোদের দুইটা খারাপ কথা বলতে কেউ দুবার ভাব্বে না,

মিথিলা- আচ্ছা ঠিক আছে আংকেল আমি আয়ানের থেকে আলাদা হয়ে যাবো থাকবো না ভাইয়ের সাথে তবু ও প্লিজ বিয়েটা ভাঙবেন না

রফিক- নাহ আমরা চাই না কোন ভাইয়ের থেকে বোন কে আলাদা করতে, কিন্তু তোদের পরিবারের সাথে আত্মীয়তা করতে ও পারবো
না
উতলার আম্মু এসে বল্লো
—দেখো মা আমি আমার মেয়ে কে বুঝাতে পারবো তুমি তোমার ভাইকে বুঝাও মিছেমিছি এখানে সময় নষ্ট করো না

মিথিলা ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসে কি করবে কিছু ই বুঝতে পারছে না,
—–পাগলের মতো লাগছে আজ নিজে কে উফফ যা করার আমায় জলদি করতে হবে আয়ান জানলে বড্ড খারাপ হয়ে যাবে

কিছুক্ষন পাগলের মতো ভেবে কোন কিনারা না করতে পেরে সব চিন্তা বাদ দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে লাগলো,

—-এখানে প্রব্লেম টা হচ্ছে আমাকে নিয়ে? আমি যদি আয়ানের থেকে আলাদা হয়ে যাই তবুও তারা উতলাকে বিয়ে দিবে না
—আচ্ছা তা হলে আমায় কি করতে হবে?

আমি কি ইভানের কাছে ফিরে যাবো?
-নাহ নাহ কি ভাবছি আমি ঐ লোকের কাছে যাবো না আমি

-_তা হলে কোথায় যাবো? ইভান তো ক্ষমা ছেয়েছে আন্টি ও আমায় ফিরিয়ে নিতে এসেছে
আমি কি খুব বাড়া বাড়ি করছি?

__নির্ঝরিণী সেদিন যেন কি বল্লো, উনি তার ভুলের শাস্তি পেয়েছে, তোমার কাছে ক্ষমা ছেয়েছে
–তার মানে নির্ঝরিণী ছাইছে আমি ইভান কে ক্ষমা করে দিই?

মিথিলা চোখ বন্ধ করে ভাবলো ইভানের খারাপ দিক গুলোর কথা উফফফ নাহ এই লোকের সাথে সংসার করা যাবে না

তা হলে কি করবো
আবার ভাবলো ইভানের ভালো দিক গুলোর কথা একে একে ইভানের সব পাগলামি মনের পর্দায় ভেসে উঠে , নাহহ একটা মানুষের খারাপ দিক থাকতেই পারে তাই বলে মানুষ টা সারা জীবনের জন্য খারাপ হয়ে যেতে পারে না

একটা সুযোগ আমি তাকে দিবো এটাই লাস্ট
মিথিলা ইভান কে একটা মেসেজ দিলো
ফোন করে বলতে পারছে না বলতে গেলে হয়তো ঠিক করে বলতে পারবে না তাই

আজ অনেক দিন পর মিথিলা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো চোখ থেকে চশমা টা খুলে ফেললো এই চশমা টা ইভান পছন্দ করে না একটু পরে ইভান আসবে চশমা টা এখন আর চোখে দিবো না

নির্ঝরিণী – আপি দুলাভাই এসেছে?

মিথিলা- কোথায়?

নির্ঝরিণী – দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে

মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– বাইরে কেনো?

নির্ঝরিণী – না মানে তুই তো বলে ছিলি উনাকে যেন এই বাসায় না আনি তাই আর কি

মিথিলা- ওহ দরজা খুলে দে ভেতরে এসে বসুক, আমি আসছি

নির্ঝরিণী অভাক হয়ে মুখ হা করেই দরজা খুলতে গেলো

ইভান নির্ঝরিণীর মুখ হা করা দেখে বল্লো
– ডিয়ার ডার্লিং তোমার মুখে পোকা ডুকে যাবে এভাবে মুখ হা করে রেখেছো কেনো

নির্ঝরিণী – দুলা ভাই কেস টা কি বলুন তো?

ইভান- কোন কেস ফেস নাই তুমি যাও তো

নির্ঝরিণী কারো পায়ের শব্দ শুনে পিছনে ফিরলো মিথিলা কে দেখে বুঝতে পারলো দুলাভাই কেনো আমায় তাড়াতে চাচ্ছে নির্ঝরিণী চুপচাপ বেরিয়ে গেলো

মিথিলা ইভানের থেক একটু দূরে গিয়ে বসলো
দুজনেই চুপ
ইভান – কেমন আছো?

মিথিলা- ভা.লো
আবার দুজন চুপ

এবার ও ইভান ই আগে বল্লো
কেনো আসতে বলে ছিলে

মিথিলা একটু নড়েচড়ে বসলো
– আপনাকে একটা চাঞ্চ দিবো আমি আর এটা ই লাস্ট চাঞ্চ, এর পর যদি আবার ভুল করেন তা হলে আর নয়, আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই বলছি

ইভান খুশি হয়ে মিথিলার কাছে এসে ফ্লোরে বসে মিথিলার হাত ধরে বল্লো
– সত্যি তুমি আমায় ক্ষমা করেছো? আমার সাথে ফিরে যাবে? আমাকে ভালোবাসবে? প্রমিস করছি আমি মরনের আগে পর্যন্ত তোমার বিশ্বাস ধরে রাখতে ছাইবো, আজ আমি খুব খুশি

মিথিলা কিছু বল্লো না
খুশিতে ইভান কেঁদেই দিলো

আড়াল থেকে নির্ঝরিণী সব কথা শুনেছে
– হুট করে নির্ঝরিণী এসে বল্লো
__তাই তো বলি আজ দুলাভাই আমায় কেনো পাত্তা দিলো না, বউকে পেয়ে শ্যালিকা কে ভুলে গেলো হায়রে কপাল

ইভান- আরেহ নাহ ছোট ডার্লিং তোমার বোন কে ভুল লে ও তোমাকে ভুলবো না হি হি হি

ইভানের কথা শুনে নির্ঝরিণী হাসতে শুরু করলো
শুধু মিথিলা ছাড়া ও কেনো ব্যাপার না মিথিলা এমনিতেই কম হাসে

ইভান- আমার একটা কথা আই মিন চাওয়া বলতে পারো

মিথিলা -কি

ইভান- আমরা আবার বিয়ে করবো ঢাক ঢোল পিটিয়ে সানাই বাজিয়ে তোমায় ঘরে তুলবো

মিথিলা- অসম্ভব, এই রকম কিছু হলে আমি আপনারর কাছে যাবো না আমার কথা ফিরিয়ে নিবো

ইভান- ওকে ওকে কোন অনুষ্ঠান হবে না তবে ছোট খাটো একটা আয়োজন তো করতেই হবে আমাদের আয়ানের হবু শ্বশুর বাড়ির লোকদের কে আমার একমাত্র শ্যালিকার……..

নির্ঝরিণী – দুলাভাইইইইই

ইভান- না মানে বলতে ছাইছি আমার শ্যালিকা শ্যালকের বউ অনুষ্ঠানে ইনজয় করবে এই তো

মিথিলা- ওহ আপনি যে ভাবে বল ছিলেন আমি তো ভাবলাম কি না কি

ইভান- আচ্ছা সব কথা পরে আসল কথা হলো তোমার চোখের চশমা কোথায়?

মিথিলা অস্বস্তিতে পড়ে যায় ইভান কে কি বলবে এখন

নির্ঝরিণী – তাই তো আপ্পি তুই তো চশমা ছাড়া এক সেকেন্ড থাকিস না তা হলে

মিথিলা- তা হলে কি দে.খ গোসলখানায় রেখে এসেছি

ইভান- ওকে আমি বুঝতে পেরেছি আমি গিয়ে চশমা টা নিয়ে আসছি
ইভান ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চশমা এনে মিথিলার চোখে পরিয়ে দিলো নিজ হাতে
– জানোনা চশমা ছাড়া তোমায় অসম্পূর্ণ লাগে চশমা তোমার সুন্দর্যের একটা অংশ

মিথিলা অপলক চাহনিতে ছেয়ে আছে ইভানের দিকে এই ইভানে সাথে ছয় বছর আগের ইভানের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে