খেলাঘর /পর্ব-৪৯

0
3049

খেলাঘর /পর্ব-৪৯
লেখা- সুলতানা ইতি

মিথিলা ভেজা গলায় বল্লো
– তুই সাম্মি কে নিয়ে দেশের বাইরে কোথাও চলে যা যেখানে মিথি নামের কেউ থাকে না যেখানে অরনি নামের কোন বন্ধু কে হারানোর কষ্ট নেই
দোয়া করি তোদের তোরা শুখি হও
মিথিলা ইহান কে আর একটা কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায় চোখ যে বড্ড অবুঝ ভুল মানুষের জন্য শ্রাবনের মতো ঝরতে চায়

ইহান যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে মুখে তার কোন কথা নেই
ডোরবেল বাজার শব্দ শুনে উঠে গেলো উকিলের বাসা থেকে পেপারস গুলো চলে এসেছে ইহান পেপারসে চোখ ভুলিয়ে দেখলো সাম্মি সাইন করে দিয়েছে ইহান পেপারস গুলো রেখে বেরিয়ে পড়লো সাম্মিদের বাসার উদ্দেশ্য

সাম্মিদের বাসার ঘেটের কাছে এসে গাড়ির গতি স্লো করে দিলো ইহান
ঘেটের সামনে সাম্মি দাঁড়ানো ছিলো দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাচ্ছে ইহান গাড়ি থেকে নেমে গেলো

ইহান কে দেখে সাম্মি অবাক হলো
ইহান এখানে কি করছে?

ইহান- কিরে কোথাও যাচ্ছিস নাকি একদম লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস

সাম্মি- তুই এখানে কেনো?

ইহান- কেনো আমি আসতে পারি না বুঝি

সাম্মির কান্না আসছিলো তবু ও কান্না কে কন্ট্রোল করে বল্লো
– আসার তো কোন কথা ছিলো না

ইহান- আগে বল তুই কোথায় যাচ্ছিস

সাম্মি- ফিরে যাচ্ছি অস্ট্রিয়াতে বড় আপু এয়ারপোর্ট এ পিক করবে আমায় সে জন্য অপেক্ষা করছি

ইহান- ওকে তা হলে আর দু দিন অপেক্ষা কর আমি ও আমার পাসপোর্ট ভিসা ওকে করে নিই দুজনে এক সাথেই যাবো

সাম্মি অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে ইহানের দিকে

ইহান- কাঁদলে এখন থাপ্পড় খাবি এতো ই যখন ভালোবাসিস আমায়.তা হলে ছেড়ে যাচ্ছিস কেনো? তোরা সবাই কি আমায় পুতুল পেয়েছিস?
“কখনো কেউ আমায় ফিরিয়ে দিবে”
” কখনো কেউ লুকিয়ে ভালোবাসবে”
“আবার কেউ কাছে এসে ও ছেড়ে যাবে”
সবাই মিলে আমাকে নিয়ে পুতুল খেলছিস?

সাম্মি- তোকে নিয়ে পুতুল খেলার কোন ইচ্ছে আমার নেই।আমি তো তোর ভালোর জন্য ই….

ইহান মিথিলা কে থামিয়ে বল্লো
– চুপ একদম চুপ।
” তোর এমন ভালো আমার দরকার নেই ”
“যেই ভালো করতে গেলে মা বাবার মনে কষ্ট পাবে”
-সাম্মি আমি তোকে ভালোবাসি না হয়তো। তোকে ভালোবাসতে চেষ্টা করিনি!
“মিথিলা এখন ও আমার মনের অনেক খানি জায়গা ঝুড়ে আছে”
‘কিন্তু আমি তোকে ছাড়তে পারবো না আমায়’ -একটু সময় দে প্লিজ তবু ও ছেড়ে যাস না।

-সাম্মি কাঁদছে এই কান্না শুখের কান্না
ভালো না বাসুক পাশে থাকার অনুমতি পেয়েছে এটাই কম কিসের।

ইহান সাম্মি কে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো
– সাম্মি এই বাসায় আমরা থাকছি না।
” কয়টা দিন অপেক্ষা কর এই দেশ ছেড়েই চলে যাবো”

_সাম্মি কিছু বল্লো না এটা ই যে তার ছাওয়া ছিলো

মিথিলা ইহানের বাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হলো ইচ্ছে করেই কান্না থামায় নি।
” কিছু ভালোবাসা অশ্রু হয়ে বেরিয়ে যায়”ঝরে -যাক ভালোবাসা দরকার নেই মনে যত্ন করে রাখার।
—ইচ্ছে করেই রিক্সা নেয়নি হেটে বাসায় ফিরলো

বাসায় এসে তো মিথিলা অবাক! ইভান বাসায় এসে কি কান্ড টা ই করছে। সারা বাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে হুইচই কান্ড বাধিয়ে তুলেছে।

উতলা আর নির্ঝরিণী রান্না করছে
ইভান. আয়ান
ঘর সাজাচ্ছে সাথে আরেকটা ছেলে যাকে মিথিলা ছিনতে পারলো না

মিথিলা কোন কথা না বলে কিচেন রুমে গিয়ে নির্ঝরিণী কে বল্লো
– কিরে বাসায় কি হচ্ছে এই সব।

—মিথিলার কথা শুনে নির্ঝরিণীর হাত থেকে পানির বাটি পড়ে যায় ভয়ে নির্ঝরিণীর বুক ধুরুধুরু করছে।

উতলা মিথিলা আগুন ভরা চাহনির দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বলার সাহস পেলো না

মিথিলা- কি হলো? কথা বলছিস না কেনো তোরা?আমি কিছু জানতে ছাইছি

পিছন থেকে ইভান বল্লো
– ওহ মিথি তুমি এসে গেছো? কখন এলে? দেখলাম না যে?

মিথিলা কাটখোট্টা ভাবে বল্লো
– কি হচ্ছে এই সব আমার বাড়ি তে? আপনি এখানে কেনো?

ইভান হেসে বল্লো
– ওমা তুমি ভুলে গেছো আজ আমাদে ম্যারেজ এনিভার্সারী।আচ্ছা শুনো তোমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই

ইভান তার সাথের ছেলে টা কে দেখিয়ে বল্লো
– এ হচ্ছে আমার ভায়ে….অপ্সস আমার বন্ধু আয়াপ. জানো অনেক বড় নাম করা গায়ক কতো মেয়ের ক্রাশ ও হা হা হা

মিথিলা- স্টপ, কি পাগলের মতো হাসছেন,
-কিসের ম্যারেজ এনিভার্সারী?
-কোন এনিভার্সারী টেনিভার্সারী পালন হবে না। ___আপনি বের হোন এই বাসা থেকে

এই বলে মিথিলা নিজের রুমে গিয়ে ধাম করে দরজা বন্ধ করে দিলো।

নির্ঝরিণী – দুলা ভাই মনে হয় না আজকে আর আপু বের হবে। তার ছেয়ে ভালো আপনারা চলে যান। আপু রেগে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যায়।

আয়ান- হুম দুলাভাই নির ঠিক বলেছে মিছেমিছি ঝামেলা করার কোন দরকার নেই আপুকে আপুর মতো থাকতে দিন।

আয়াপ- আমি তোমাদের কথা মানতে পারছি না। বড় আপুর মনে অভিমানের বরফ জমেছে! আর সেই বরফ কে গলাতে আগুনের দরকার তো হবেই. তাই আমি বলবো ইভান ভাই এতো সহজে হাল ছাড়বেন না।

ইভান- হুম ঠিক বলেছো আমি দেখি মিথিলা কি করে
ইভান গিয়ে মিথিলার রুমের দরজায় টোকা দিতে থাকে

মিথিলা দরজা আটকে অনেক্ষন থেকে কাদছে
-কেনো আমার সাথে এমন হচ্ছে?
” নিজের মতো করে বাছতে চাই”
–কেনো সবাই আমার সুখ টা সহ্য করতে পারছে না?
– স্বামি সংসার ই কি সব শুখ?
– একা জীবনে কি কোন শুখ নেই?
— আজ আমি মেয়ে বলে ওকে ক্ষমা করে দিবো।
-কেনো ক্ষমা করবো?
ও ছেলে এই বলে?
– কেনো মেয়েরা কি এতো ই সস্তা?
– ওদের কি কোন সম্মান নেই?
“ওরা ছেলে বলে যখন ইচ্ছে তখন লাইফ পার্টনার বদল করবে”
– আর আমরা মেয়ে বলে সব সহ্য করবো?
” নাহ আমি তো এটা কখনো ই সহ্য করবো না” -ও যতই পিছে ঘুর ঘুর করুক ক্ষমা আমি এতো সহজে করবো না।
আমার জীবন থেকে সুখ ছয় বছর আগে হারিয়ে গেছে, নতুন করে আমার কোন শুখের দরকার নেই।

ইভান নিরলস ভাবে দরজায় নক করেই যাচ্ছে
মিথিলা এবার অসহ্য হয়ে দরজা খুলে বল্লো
– কি প্রব্লেম কি আপনার? বলুন কি প্রব্লেম?

ইভান মিথিলার পায়ের কাছে বসে পড়ে
– মিথি তোমার পায়ে ধরি তুমি আমায় এ ভাবে ফিরিয়ে দিও না। ভুল করেছি আমি তার জন্য যা ইচ্ছে তা শাস্তি দাও।
কিন্তু আমার থেকে দূরে থেকো না প্লিজ।
__ ইভান মিথিলার পায়ের কাছে বসে হাত দরে কথা গুলো বলছিলো

মিথিলা বিরক্ত হচ্ছে
– হাত ছাড়ুন আপনি

কিন্তু ইভান সে দিকে কান না দিয়ে তার কথা গুলো বলেই যাচ্ছে

মিথিলার রাগ সপ্তম আকাশে উঠে যায়
মিথিলা চিৎকার বল্লো
– হাত ছাড়ুন মিথিলা ঝাড়া মেরে ইভানের হাত পেলে দেয়

ইভান আবার মিথিলার হাত ঝড়িয়ে ধরতে চাইলে
মিথিলা শরিরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ইভানের গালে চড় মারে

উপস্থিত সবার সামনে থাপ্পড় খেয়ে ইভান চুপসে যায়

আয়ান, নির্ঝরিণী, উতলা, আয়াপ,, সবাই অবাক হয়ে গেছে এমন কিছু ঘটবে তারা আন্দাজ ও করেনি

ইভান কে এভাবে বসে থাকতে দেখে আয়ানরা বেরিয়ে যায় রুম থেকে

মিথিলা- কি হলো আপনি এখন ও দাঁড়িয়ে থাকবেন?

ইভান বেহায়ার মতো আবার বলতে শুরু করলো
– শুধু একটা থাপ্পড় কেনো এই রকম দশটা থাপ্পড় দিলে ও আমি তোমার কাছে থেকে যাবো না।কারন থাপ্পড় গুলো আমার প্রাপ্য।

মিথিলা- প্লিজ আপনি যান আমি আপনাকে সহ্য করতে পারছি না

ইভান- মিথিলা তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো না আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে ঐ খালি ঘরে

মিথিলা- আসলে আপনার চরিত্রে প্রব্লেম আছে। কয় দিন নায়াকে ছাড়া আপনার ধম বন্ধ হয়ে আসতো।এখন আবার বলছেন আমাকে ছাড়া আপনার ধম বন্ধ হয়ে যায়।
হাসালেন এর পর অন্য কাউকে দেখবেন আর বলবেন তাকে ছাড়া ও আপনি থাকতে পারছেন না।

ইভান- আমার ভুল হয়ে গেছে মিথি প্লিজ

মিথিলা- না আপনার কোন ভুল হয়নি, আমার মতো থার্ডক্লাস ফ্যামেলীর মেয়ের সাথে আপনার মতো হাই সোসাইটির ছেলে কি করে সংসার করে বলুন।মিডল ক্লাস ফ্যামেলীর মেয়ে আমি আপনি নিজে বলেছেন আমার সাথে আপনার যায় না।তা হলে এখন কি এমন হলো যে আমাকে ছাড়া আপনার চলবে ই না।

ইভান চুপ করে আছে কি বলবে সত্যি তার জানা নেই সে সময় না বুঝে মিথিলা কে এই দাম্ভিক কথা গুলো শুনিয়েছিলো, আজ সে অসহায় শুধু তার দাম্ভিকতার কারনে

মিথিলা- প্লিজ আপনি যান আপনাকে আমার চোখের সামনে ও দেখতে চাই না আমি,আপনাকে নিজ হাতে টুকরো টুকরো করলে ও আমার শান্তি হবে না

ইভান- টুকরো টুকরো করেই ফেল, এই জীবন রাখতে চাই না,মরেই তো যাচ্ছিলাম বাছালে কেনো নিজের রক্ত দিয়ে।কেনো যত্ন করে সুস্থ করে তুলেছো বলো

এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর মিথিলার কাছে নেই তবু ও রাগ দেখাতে ভুল করলো না
– দেখুন আপনার মতো মানুষ কে খুন করে আমি আমার হাত কে নোংরা করতে চাই না প্লিজ আপনি যান

ইভান মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়

মিথিলা ড্রইং রুমে এসে আয়ান আর নির্ঝরিণী কে শাসিয়ে যায়
– এই লোক টা কে যদি তোরা এই বাড়ির ভিতরে ডুকতে দিস তা হলে ভাই বোনের মধ্যে কোন সম্পর্ক আমি রাখবো না বুঝেছিস তোরা

আয়ান আর নির্ঝরিণী ভয় পেয়ে যায় কোন কিছুর বিনিময়ে ও তারা তাদের বোন কে হারাতে চায় না আজকের এখানে এসে দাঁড়াতে ফেরেছে কেবল বোনের জন্য ই

পরদিন উতলার মাকে বাসায় আসতে দেখে মিথিলা অবাক হলো উতলার সাথে আয়ানের বিয়ের কথা হওয়ার পর থেকে তিনি এই বাসায় আসেন নি
মিথিলা বার বার আসতে বললে ও উনি আসেনি বলেছে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তার পর আসবে সেই তিনি এখন কি মনে করে এলো?

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে