খেলাঘর পর্ব- ৪৭
লেখা- সুলতানা ইতি
অরনি আমায় কিছু না বললে ও আমি বুঝতে পেরেছি ওর ইচ্ছে ছিলো তোর আর মিথিলার আবার এক হওয়া, আমি ও ভেবেছি আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া ই ভালো তাই আমি তোর কাছে ডিভোর্স চাই
ইহান কিচ্ছু বল্লো না বেশ কিছুক্ষন নিরাবতা পালন করার পর ইহান বল্লো
– তোর কি দারনা আমার তোর ডিভোর্স হলেই সব কিছু আগের মতো হয়ে যাবে?
সাম্মি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বল্লো চেষ্টা করতে হবে সব আগের মতো করার
ইহান- আমি না হয় মিথিলা কে নিয়ে সুখে থাকবো বা মিথিলা ও ভালো থাকলো।কিন্তু
তোর কি হবে? নিজের কথা ভেবেছিস কিছু?
সাম্মি- আমার আবার কি হবে? আমি অস্ট্রীয়ায় ফিরে যাবো স্টাডি কমপ্লিট করবো
ইহান- তার পর?
সাম্মি- আর কিছু জানা নেই আমার
ইহান আর কোন কথা না বলে উঠে যায় সাম্মি যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে কথা গুলো বলতে তার খুব কষ্ট হয়েছে তবু ও মানতে হবে এই তিন বছরে ইহান একটি বার আমায় ভালোবাসার চেষ্টা করেনি, আমার কাছে আসতে চায়নি কাছে এসে ও কেনো যেনো দূরে থেকেছে তাকে ভালোবাসি এটা আর বুঝাতে চাই না তার ছেয়ে ভালো দূরে সরে যাই
সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকে না
সাম্মি টেবিলে মাথা দিয়ে কাদতে লাগলো।
ইহান ভেলকনিতে দাঁড়িয়ে সাম্মির বলা কথা গুলো ভাবছে
আসলেই কি সব ভুলে আমি আর মিথিলা এক হতে পারবো? এটা সত্যি মিথিলা এখন ও আমার হৃদয়ের অনেক খানি ঝুড়ে আছে।ওর সাথে আগের মতো সহজ কি হতে পারবো? মিথিলা কি আমায় গ্রহন করবে?
এই সব প্রশ্ন ইহানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে
সকাল বেলা সাম্মি জেগে দেখে রাতে কাঁদতে কাঁদতে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে তাড়া তাড়ি উঠে ইহানের রুমে যায়
ইহান এখন ও ঘুমাচ্ছে
সাম্মি ঘুমন্ত ইহানের দিকে ছেয়ে আছে কেমন যেন মাদকতা মিশে আছে ঘুমন্ত ইহানের মুখে আমি তো এই মাদকতায় আসক্ত হতে চাই। কিন্তু কোথায় থেকে যেন এক যোড়তা এসে আমায় আটকে দিচ্ছে
সাম্মি আর দাঁড়িয়ে না থেকে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো উদ্দেশ্য উকিলের বাসায় যাবে উকিল আংকেল বাবার বন্ধু আমি অনুরোধ করলে ফেরাতে পারবে না আমায়
ইহানের ঘুমন্ত মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ইচ্ছে করেই ইহান কে ডাকিনি দু দিন পর তো আর আমি থাকবো না তখন নিশ্চয়ই ওকে আর ডেকে তুলতে হবে না ও নিজেই মিথিলার ঘুমন্ত মুখ দেখার জন্য উঠে যাবে
জীবন টা সত্যি অদ্ভুত কার জন্য কাকে সৃষ্টি করেছে এটা বুঝা বড় কষ্ট
মিথিলার আর ও দু দিন ছুটি আছে তাই বাসায় বসে অলস সময় পার করছে অন্য জায়গাতে ইন্টার্ভিউ দিতে হবে সে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এই চাকরী টা যত সহজে পেয়েছি এবার আর তত সহজ হবে না
এমন সময় আয়ান এসে মিথিলার পাশে বসলো
মিথিলা- কিরে আজ তোর টিউশনী নেই?
আয়ান- রোজ ই তো থাকে ভাবলাম আজ টিউশনি বাদ দিয়ে তোর সাথে সময় কাটাই
মিথিলা বইয়ের থেকে মুখ না তুলেই বল্লো
– কিছু বললে বল নইলে এখন যা পরে আসিস
আয়ান- আমি চুপ করে বসে আছি তোর ডিস্টার্ব করছি না। তুই পড়
মিথিলা আর কিছু না বলে আবার মনোযোগ দিলো
আয়ান বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে এতোক্ষনে নির্ঝরিণীর এসে যাওয়ার কথা এখন ও আসছে না কেনো?
বেশ কিছু সময় পর ইহানের মোবাইলে একটা মেসেজ এলো ” অল ওকে ”
আয়ান- আপি চল তো?
মিথিলা- কোথায়? আরেহ আয়না
আয়ান ঝোর করে মিথিলা কে নিয়ে ড্রইং রুমে গেলো
একই সাথে উতলা আর নির্ঝরিণী বলে উঠলো
হ্যাপী বার্থডে আপি, হ্যাপী বার্থডে
মিথিলা অবাক হয়ে বল্লো
– আজ আমার জন্ম দিন নাকি?
উতলা- হুম আপু নির্ঝরী আর আয়ান তো তুমি বকবে এই ভয়ে কিছু করতেই চায়নি আমি মানতে পারলাম না আমার আপুর জন্মদিন টা এভাবে পানসে হয়ে যাবে তা হয় নাকি
মিথিলা- বড্ড ফাজিল হয়েছিস উতলা
নির্ঝরী – আপু চলো কেক কাটবে
মিথিলা- এতো ঝামেলা করার কি দরকার ছিলো
মিথিলা এগিয়ে যাচ্ছে কেক কাটার জন্য এমন সময়
আয়ান- এক মিনিট আর পাচ মিনিট পর কেক কাটবো এখন ও বারো টা বাজতে পাচ মিনিট বাকি আছে
মিথিলা হেসে বল্লো তোরা পারিস ও বটে
বারো টা বাজতেই মিথিলার মোবাইলে দুই টা মেসেজ আসলো
মিথিলা মোবাইল টা হাতে নিলো
উতলা বাধা দিয়ে বল্লো
– আপু আগে কেক কাটা পরে অন্য সব
মিথিলা হেসে মোবাইল রেখে কেক কাটলো
কেক কাটা শেষে আয়ান একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বল্লো
– আপু এটা তোর জন্য
মিথিলা- কি আছে এটা তে? খুলে দেখি?
নির্ঝরিণী – দেখ
মিথিলা ব্যাগ টা থেকে আরেকটা বাক্স বের করলো বাক্সের ভিতরে একটা স্মার্ট ফোন
মিথিলা অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকায়
আয়ান- এটা আমার আর নির্ঝরিণীর পক্ষ থেকে তোর জন্য
মিথিলা- এতো টাকা নষ্ট করে আমার জন্য স্মার্ট ফোন কেনার কোন দরকার ছিলো না এই ফোন দিয়ে আমি কি করবো বল,তা ছাড়া কেকের আয়োজন টা ই ঠিক ছিলো
নির্ঝরিণী – আপি কেকের আয়োজন তো আমরা করিনি ওটা করেছে তোমার ভাইয়ের বউ, আর আমার আর ভাইয়ের অনেক দিন থেকেই প্লান ছিলো তোমাকে একটা স্মার্ট ফোন গিফট করবো আর জন্ম দিন ই তো গিফট দেয়ার উপযুক্ত সময় তাই না
মিথিলা- এই ফোন দিয়ে কি করবো
আয়ান- এখানে তুই তোর প্রিয়ো লেখকদের বই গুলো অনলাইনে পড়তে পারবি আর ও অনেক সুবিধা আছে সেগুলা তো তুই জানিস ই
মিথিলা উতলা কে কাছে টেনে নিয়ে বল্লো
– বর গিফট করলে কি বউ কে ও আলাদা গিফট দিতে হয়
উতলা লজ্জা মাখানো কন্ঠে বল্লো
– আপু বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমরা আলাদা মানুষ তাই গিফট ও আলাদা দিলাম অবশ্যই ওদের থেকে আমার গিফট টা খুব হালকা হয়েছে
উতলা আহ্লাদী কন্ঠে কথা টা বল্লো
মিথিলা- মটে ও হালকা নয় পাগলি তোর গিফটে যে ভালোবাসার ছোঁয়া বেশি ছিলো
আয়ান আর নির্ঝরিণী এক ই সুরে বল্লো
– ওহ তার মানে আমাদের গিফটে ভালোবাসার ছোঁয়া নেই তাই তো? কতো দিন থেকে টাকা জমানো শুরু করেছি তুমি জানো? হুহ
মিথিলা হেসে ভাই বোন কে ও কাছে টেনে নিলো
– পাগল আর পাগলিদের নিয়ে আমি সত্যি পারি না
তার পর খাওয়া দাওয়া শেষে উতলা তাদের বাসায় চলে গেলো আয়ান আর নির্ঝরিণী ও শুয়ে পড়েছে রাত তো আর কম হয়নি
মিথিলা শুতে যেয়ে তার অরনি আর ইহানের কথা মনে পড়লো আজকের দিনের কথা কি ইহান ভুলে গেছে? তার পর মিথিলার মনে হলো মোবাইলে আশা মেসেজ গুলোর কথা
মোবাইল ঘেটে দেখলো দুটো মেসেজ একটা ইহানের আরেকটা ইভানের
ইভানের মেসেজ টা অনেক বড় তাই মিথিলা আগে ইহানে মেসেজ টা ই পড়লো
” হ্যাপী বার্থডে মিথি মেনি মেনি হ্যাপী রিটার্নস অফ দ্যা ডে ” খুব ইচ্ছে থাকলে ও তোর বার্থ ডে তে কেক নিয়ে আসতে পারিনি জানি তুই কিছুই মনে করবি না, যাই হোক তোর জীবনের সকল কষ্ট মুছে গিয়ে যেন সুখের বার্তা বয়ে আনে, শুভ জন্মদিন
(ইহান)
মিথিলার মনে পড়ে গেলো সেই দিনের কথা যেদিন ইহান মিথিলা কে প্রপোজ করে ছিলো দিন টা কখনো ভুলবার নয়
দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ইভানের দেয়া মেসেজ টা পড়তে শুরু করলো
“শুনেছো মিথি ভালোবাসা কোন পদ্ম পাতার জ্বল নয়,,যে হালকা হাওয়ায় জ্বরে যাবে
ভালোবাসা তো অবহেলিত জারুলতা ফুল নয়
যে অবহেলায় থাকবে
ভালোবাসা সে এক অসাধারণ অনুভুতি
ভালোবাসার মানুষটি একটু কাছে এলেই,
হিয়ার মাঝে যে উপস্থিতি তুমি টের পাও,
সেটা আর ও গভীর থেকে গভীরে গিয়ে পৌছয়,তার অনুপস্থিতি তে
মনের মাঝে শূন্যতায় চিন চিন ব্যাথা করে, যা বুঝার ক্ষমতা সবার থাকে না”
তুমি ই আমার জন্য ঠিক যা বুঝতে আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি জানি না আমায় আদৌ ক্ষমা করে আমার উইশ টা গ্রহন করবে কি না তবু ও বলবো (হ্যাপী বার্থডে পুচকি হ্যাপী বার্থডে) পুচকি বলেছি বলে রেগে যেয়ে ও না তুমি এখন ও সেই প্রথম দিনের মতো পুচকি ই আছো
মিথিলা ফোন বিছানার উপর রেখে বারান্দায় গিয়ে বসলো ভাবছে ইভানের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলোর কথা কি পাগলামি টা ইভান করতো
আমার চোখের চশমাতে ছিলো ওর এলার্জি একটু ও পছন্দ করতো না চশমা পরা
তার পর ই নায়ার কথা মনে পড়ে যায় হয়তো আমার চোখের চশমা টা ই ওকে নায়ার কাছে ফিরে যেতে বাধ্য করে ছিলো নাকি আমি পারিনি ওকে আমার করে রাখতে
শ্বাশুড়ি মা ঠিক ই বলতো পুরুষ মানুষ কে আঁচলে বেধে রাখতে হয় নইলে এরা অন্যের বাধনে বেধে যায়
আমি নিজেই পারিনি হয় তো ওকে আঁচলে বাধতে,নানান ভাবনার মধ্যে মিথিলার রাত কেটে যায়, আজ রাতে ও ঘুম হয়নি
দরজায় কেউ বার বার নক করছে আয়ান নির্ঝরিণী এখন ও ঘুমে সকাল সাত টা বাজে কে এসেছে এতো সকালে উতলা নয়তো? হতে পারে মেয়েটা যেই হারে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে উফফ
দরজা খুলে মিথিলার দারনা পালটে গেলো দরজার ও পাশে উতলা নয় মিসেস আয়মন দাঁড়িয়ে আছে
মিথিলা অবাক হয়ে মিসেস আয়মনের দিকে তাকিয়ে আছে
মিসেস আয়মন- কিরে বাসায় ডুকতে দিবি না?
মিসেস আয়মনের কথায় মিথিলার ঘোর কাটে
– ওহ হ্যা আসুন
মিসেস আয়মন- তোর জন্ম দিন আজ তাই তোর জন্য পায়েশ রেঁধে আনলাম
মিথিলা ভাবছে অন্য কথা, আজ এতো গুলো বছরের মধ্যে একবার ও আসেনি আজ কেনো এলো তা ও একেবারে পায়েশ রান্না করে নিয়ে এলো
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন