খেলাঘর / পর্ব-৪৪
লেখা- সুলতানা ইতি
মিথিলা বসে আছে মিসেস আয়মন আর আতাহার চৌধুরীর সামনে মিথিলার কাছে সব কথা শুনে মিসেস আয়মন বল্লো
– ওমন ছেলে বেছে থাক এটা আমরা চাই না! তা ছাড়া সে অনেক আগেই আমাদের কাছে মরে গেছে।
মিথিলা- এ ভাবে বলবেন না,ওর এই বিপদে আপনারা না থাকলে কে থাকবে তার পাশে।
আতাহার চৌধুরী- কেনো যে মেয়ের জন্য আমাদের ত্যাগ করেছে সে কোথায়?
মিথিলা এই কথার উত্তরে কিছু বলতে পারলো না. কি বা বলবে? ইভান তো অপরাধ করেছে? খুব বড় ধরনের অপরাধ। এর ক্ষমা হয় না,নিরাশ হয়ে মিথিলা চৌধুরী বাড়ি থেকে ফিরে আসে হসপিটালে
আই সি ইউ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিথিলা নিশাড় হয়ে পড়ে থাকা ইভান কে দেখছে সত্যি ইভানের জন্য খুব মায়া হচ্ছে এখন মিথিলার,
এই মায়া টা জাগলো কেনো সেটা ই বুঝতে পারছে না এটা কি ইভানের অসহায়ত্ব দেখে হচ্ছে নাকি ইভানের জন্য মনের কোনে যে জায়গা টা আগে হয়েছিলো সেটা আবার নাড়া দিয়ে উঠেছে?
ডক্টর বলেছে ৭২ ঘন্টা না গেলে কিছু বলতে পারছে না যদি ৭২ ঘন্টা পর ইভানের সেন্স ফিরে তা হলে সে সুস্থ হওয়ার একটা সান্স আছে, যদি সেন্স না ফিরে তা হলে হয়তো কোমায় চলে যেতে পারে, কথাটা ভাবতেই মিথিলার ভেতর টা কেঁপে উঠেছে
ঘড়িতে রাত আট টা বাজে সেদিকে কোন খেয়াল নেই মিথিলার
এদিকে মিথিলার কোন খোজ না পেয়ে আয়ান এসেছে হসপিটালে
আয়ান- আপু বাসায় ফিরবি না?
মিথিলা- এখানে তো একজন কে থাকতে হবে আয়ান,
আয়ান- উনার তো এখন সেন্স নেই আমি থাকছি এখানে তুই বাসায় যা ফ্রেশ হয়ে নে
মিথিলা- তুই থাকবি? তোর পড়াশুনা নষ্ট হবে তুই যা.আমি আছি এখানে
আয়ান- আপু সকালে তোমার অফিস আছে না যাও তো প্লিজ
মিথিলা – প্রব্লেম নেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নেবো
আয়ান আর মিথিলার সাথে না ফেরে বাসায় চলে আসে,আয়ান নিজে ই ভেবে পাচ্ছে না যে লোক টা আপুর কথা এক বার ভাবেনি আপু কেনো বার বার তার কথা ভাবছে রাত জেগে হাসপাতালের রিসেপশন রুমে বসে থাকবে?
নির্ঝরিণী – ভাই আপু কে না সত্যি বুঝাতে পারি না ঐ লোক টার জন্য এতো কষ্ট করার কি দরকার বলতো?
আয়ান- নির যেটা তুই বুঝিস না আমি বুঝিনা সেটা হয়তো আপু ভালো করে বুঝে আর বুঝে বলেই সে এখন ঐ লোকটার পাশে আছে
নির্ঝরিণী একটা নিশ্বাস নিয়ে বল্লো
হবে হয়তো
রিসেপশন রুমে বসেই রাত টা পার করেছে সকাল হতেই আবার আই সি ইউ রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে ইভান কোন রেসপন্স করছে কি না দেখছে
কখন যে অফিস টাইম হয়ে গেছে খেয়াল করেনি মিথিলার মোবাইল কেপে উঠাতে খেয়াল হলো, মোবাইল টা ভাইব্রেশন করা ইহান কল দিয়েছে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট
– হ্যালো ইহান বল
ইহান- কিরে তুই কি রাগ করে জব টা করবি না? নাকি।
মিথিলা- রাগ করবো কেনো? আমি তো কাল ই বলেছি তোকে যদি পেতে চাইতাম তা হলে তোকে ফিরিয়ে দিতাম না, তুই সত্যি ই আমার ভাগ্যে ছিলি না
ইহান- তা হলে জব টা করবি না কেনো?
মিথিলা- আমি কই বললাম জব করবো না।
ইহান- তা হলে অফিসে আসলিনা কেনো?
মিথিলা- সে অনেক কথা তুই কি মেডিকেল হসপিটালে আসতে পারবি?
ইহান – হসপিটালে কেনো তুই ঠিক আছিস তো? তোর ভাই বোন ঠিক আছে তো?
মিথিলা – সব ঠিক আছে তুই আয় তার পর বলছি!
ইহান- ওকে আমি আসছি
প্রায় দেড় ঘন্টা লাগলো ইহানের আসতে
ইহান মিথিলা কে দেখেই অবাক চেহারার কি হাল করেছে এক রাতে, কেমন বিধ্বস্ত লাগছে তাকে, কি হয়েছে মিথিলার
মিথিলা ইহান কে দেখেই উঠে দাড়ালো
ইহান- কিরে কি করেছিস চেহারার? কি হয়েছে তোর?
মিথিলা- চল দেখবি
মিথিলা ইহান কে আই সি ইউ রুমের সামনে নিয়ে গেলো
– দেখ
ইহান ইভান কে দেখে একটু অবাক হলো
– কি হয়েছে উনার
মিথিলা কাল সকাল থেকে যা যা হয়েছে সব কথা বল্লো ইহান কে
সব কথা শুনে ইহান কিছুক্ষন চুপ করে ছিলো তার পর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তা না হয় বুঝলাম,কিন্তু তুই এখানে কেনো? তোর তো এখানে থাকার কথা নয়,এই লোক টা তো তোকে ত্যাগ করেছে তাই না
মিথিলা চুপ করে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না
ইহান- বাই দ্যা য়ে উনার বউ কোথায়? দাড়া উনার বউ কে একটা কল দিই
মিথিলা কিছু বল্লো না
ইহান নায়ার মোবাইলে ডায়াল করলো কল বেজে অফ হয়ে গেলো রিসিভ হলো না
তার পর আবার কল দিলো ইহান
এদি কে সারা রাত পার্টিতে ফুর্তি করে ভোর রাতের দিকে এসে নায়া ঘুমালো কল ভাজছে দেখে বিরক্ত হয়ে ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলের দিকে তাকালো মোবাইল স্কিনে ইহানের নাম্বার দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে গেলো ভাই এতো দিন পর আমায় কল দিয়েছে আজ অনেক কথা বলবো ভাইয়ের সাথে,
– হ্যালো ভাই
ইহান- কোথায় আপনি মিসেস নায়া
নায়া- ভাই তুই এমন করে কথা বলিস না আমার সাথে প্লিজ
ইহান- স্যরি আমি আমার বোনের কাছে ফোন দিইনি,আমি দিয়েছি ইভান চৌধুরীর স্ত্রীর কাছে, তো মিসেস চৌধুরী আপনি কি জানেন আপনার স্বামি মাতাল হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে আজ দু দিন আই সি ইউ তে আছে
নায়ার মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ দেখা দিলো
কিন্তু কিছু বল্লো না, ইভান মরলে ও তার কিছু যায় আসে না
তবু ও বল্লো – দেখ ভাই ইভান মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে আমায় টর্চার করে তাই ওর কোন খবর আমায় বলিস না
ইহান- থাক আমি আপনার কাছে এগুলা শুনতে ফোন দিইনি, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিলো আপনাকে জানানোর তাই জানালাম এখন রাখি
ইহান কল কেটে দিলো,ভাবছে নিজের বোনের কথা একটা মানুষ এতো টা খারাপ হয় কি করে, বাবা মা তো এই শিক্ষা দেয়নি আমাদের
মিথিলা ইহানের কাছে গিয়ে বল্লো
– কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস যে
ইহান- কিছু না, তুই তো মনে হয় কাল থেকে কিছুই খাস নি,খাবার আনবো?
মিথিলা- না খেতে ইচ্ছে করছে না
ইহান- আচ্ছা ঠিক আছে তুই না হয় বাড়িতে যা ফ্রেশ হয়ে একটু রেষ্ট নে, ততক্ষন আমি আছি এখানে
মিথিলা- না থাক, আমার কোন প্রব্লেম হচ্ছে না
ইহান- ট্রাস্ট মি, আমিখেয়াল রাখবো উনার দিকে, কোন অবহেলা করবো না, তবু ও তুই যা তোর দিকে আমি তাকাতে পারছি না কি হাল করেছিস নিজের এবার তো নিজের একটু যত্ন নে
মিথিলা – ঠিক আছে যাচ্ছি,এভাবে বলতে হবে না
মিথিলা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শরির টা এলিয়ে দিলো খুব ক্লান্ত থাকায় ঘুম এসে চোখের পাতায় ভীড় করে
সাম্মি মোবাইল টা হাতে নিয়ে অনেকক্ষন বসে আছে ইহান কে কল দিবে কি না ভাবছে আজ
সাম্মির জন্ম দিন ইহানের নিশ্চয়ই মনে নেই আজকের দিনে আর কিছু না হোক দুজনের এক সাথে লাঞ্চ করতে তো কোন দোষ নেই
কিন্তু স্ত্রীর অধিকার থেকে ইহান কে কল দিয়ে লাঞ্চের কথা বলতে বিব্রত বোধ লাগছে
এই বাসায় ইহান আর সাম্মি একা ই থাকে দেশে এসে ইহান মা বাবার সাথে থাকতে রাজি হয়নি নায়া আপুর কারনে!
কিন্তু আন্টি মানে ইহানের মা সপ্তাহে একবার করে ছেলে কে দেখতে আসে
মেয়ের অধঃপতনে তারা সত্যি খুব ভেংগে পড়েছে একমাত্র ইহান ই এখন তাদের বেছে থাকার অবলম্বন।
এক বাসায় থেকে ও সাম্মি আর ইহান আলাদা রুমে থাকে শুধু যেদিন রাইমা আন্টি আসে ঐ দিন দুজনে এক রুমে থাকলে ও ইহান সোফায় ঘুমায় সাম্মি বিছানায়, স্বামি স্ত্রীর কোন সম্পর্ক ই তাদের মধ্যে নেই,
সে জন্য সাম্মি কল দিয়ে বাইরে খেতে বলতে সাহস পাচ্ছে না
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা বুদ্ধি এলো সাম্মির মাথায়,
তাই দেরি না করেই ইহান কে কল দিলো
– কই তুই কি করছিস
ইহান- এই তো, তুই কেনো কল করেছিস বল,অ্যানি প্রব্লেম
সাম্মি মনে মনে হাজার টা কথা বল্লো ইহান কে
শুধু কি প্রব্লেম হলেই তোকে কল দিতে পারবো, এমনি পারবো না।
আমি. তুই. যতো ই অস্বিকার করি সত্যি পালটে যাবে না,তোর উপর আমার অধিকার আছে ইহান।ভালোবাসি কি না জানি না কিন্তু তোর উপর অধিকার খাটাতে মন চায়!
সাম্মি মনের কথা গুলো মনে ছেপে রেখে বল্লো
– নাহ এমনি তুই সকালে নাস্তা করে যাস নি তো তাই
ইহান- ও চিন্তা করিস না, আমি অফিস ক্যান্টিনে খেয়েছি,আর শুন
সাম্মি- তোর কথা পরে শুনবো আগে আমার একটা কথা তুই শুন
ইহান- ঠিক আছে বল
সাম্মির কেনো জানি বাইরে খেতে যাওয়ার কথা বলতে দ্বিধা লাগছে
– ঠিক আছে আগে তোর টা বল পরে আমি বলবো
ইহান- ইভান এক্সিডেন্ট করেছে খুব খারাপ অবস্থা, মিথিলা আজ দু দিন হসপিটালে পড়ে ছিলো, এখন আমি এসে ওকে বাসায় রেষ্ট নেয়ার জন্য পাঠালাম
সাম্মি- বলিস কি? কি করে হলো? আর মিথিলা কেনো সেখানে? নায়া আপু কই?
ইহান- তুই আয় সব জানবি,তুই আসলে মিথিলা কে সংগ দিতে পারবি
সাম্মি- ওকে আমি আসছি
সাম্মি আসার পরে ইহান বাসায় চলে যায় সন্ধাবেলায় মিথিলা ফিরে আসে সাম্মি আর সে হসপিটালে এক সাথে থেকে গেলো,ইহানের কাছে থেকে নায়ার ব্যাপারে সব শুনেছে সাম্মি।
মানুষ এতো টা খারাপ হয় কি করে?
মিথিলার ভয়ের শেষ নেই ইভান কে নিয়ে ৭২ ঘন্টা পরে কি হয়? এই ভেবেই দিশেহারা অবস্থা মিথিলার কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বুঝতে দিচ্ছে না
উপরে উপরে খুব শক্ত ভাব প্রকাশ করলে ও ভিতরে ধুমড়ে মুচড়ে সব শেষ
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ?????? https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android
অনেক ভালো লাগছে এতদিন পর এই পর্বটা পেয়ে, কিন্তু দিদি এতদিন পর দিলেন কিন্তু মাত্র একটা পর্ব। পরের পর্ব গুলোও তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন