খেলাঘর পর্ব-১০
লেখা-সুলতানা ইতি
সাম্মি- চলে গেলো গানের তালে ডান্স করতে
ইহান গেলো না তাই অরনি ও যায়নি
অরনি- ইহান তুই এভাবে ভেঙে পড়ছিস কেনো বল,দেখ জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,যাস্ট মুভ অন, ডিয়ার
ইহান মৃদু হেসে বল্লো
– ঠিক ই বলছিস জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,আবার জীবনে একা পথ চলতে ও কেউ পারে না, তুই দেখনা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ একা থাকে,তার পর জীবনের বিশেষ সময় গুলো দুজনে মিলে কাটায়
অরনি- আমি বলবো তোর সেই সময় এখন ও আসেনি ইহান
ইহান- তুই আমাকে ইহান বলছিস কবে থেকে?
অরনি বিব্রত বোদ করে ইহানের কথা শুনে
ইহান- তোরা আমাকে ইহু বলিস,ইহান বলে ডাকার দরকার নেই,
অরনি কিছু বল্লো না
ইহান- দোস্ত আমি এখন উঠি রে ভালো লাগছে না কিছু
অরনি- এখন ই যাবি?
ইহান- হুম
অরনি- ঠিক আছে সাবধানে যেও
ইহান নিঃশব্দে হেসে বেরিয়ে পড়ে গাড়ি নিয়ে
ইহানের হাসি অরনি দেখতে পায়নি,দেখলতে হয়তো বুঝতো হাসিটার কারন
মিথিলা খাবার টেবিলে বসে আছে, খাওয়ার প্রতি তার মন নেই
মাসুম ফারুকি- তো মিথিলা মা,কোন কলেজে ভর্তি হতে চাস তুই
মিথিলা- বাবা কাছে কোন কলেজে ভর্তি হয়ে যাবো,,
নির্ঝরিণী – তা হলে আপি তুই ভুঁইয়া একাডেমী কলেজে ভর্তি হয়ে যা,, বাড়ি থেকে হেটে ও যেতে পারবি
মিথিলা- হুম ঠিক বলেছিস
মাসুম ফারুকি- তা হলে ফাইনালি ভুঁইয়া একাডেমী কলেজে ভর্তি হবি তাই তো
মিথিলা- হুম বাবা,কালকেই যাবো ভাবছি
আয়ান- আপু তুমি একা ভর্তি হবে তোমরা ফ্রেন্ডসদের ফেলে? একা হয়ে যাবে না
মিথিলা – জানি না,, হয়তো ওরা অন্য কোন নামী কলেজে ভর্তি হবে,,আমার ওতো নামী কলেজে যাওয়ার দরকার নেই
ফাতেমা বেগম- ঠিক বলেছে মিথি,,সামর্থ্য নিয়ে কথা,
খাবার শেষ করে মিথিলা স্টাডি রুমে গেলো,, ক্লাস শুরু হয়ে গেলে এই বই গুলো আর পড়া যাবে না, তাই আবার বই নিয়ে বসলো
পরদিন মিথিলা কলেজে ভর্তি হয়ে ফিরে এলো,, ক্লাস শুরু হতে কয়েকদিন লাগবে
নির্ঝরিণী আজ স্কুলে যায়নি,পড়া চুরি করা তো ওর নৃত্য দিনের কাজ আজ ও তাই হলো
মিথিলা জানালার পাশে বসে আছে বই নিয়ে
নির্ঝরিণী – আপি সারা দিন বই পড়তে ভালো লাগে বল
মিথিলা- প্যাঁচাল না ফেড়ে কি বলতে আসছিস বলে চলে যা
নির্ঝরিণী – ওকে.শুনো আপি পরিক্ষা শেষ করে তুমি কোথায় ও বেড়াতে যাওনি,,এখন তোমার কলেজে ক্লাস শুরু হতে ও সময় লাগবে, চল না বড় আন্টিদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি
মিথিলা- আমার ইচ্ছে নেই তুই যা
নির্ঝরিণী – আমাকে যেতে দিলেই তো যেতাম,কিন্তু আপু আব্বু আম্মু তোমার কোন কথা ফেলেনা তুমি বললে ই রাজি হয়ে যাবে
মিথিলা- তারা তো আমাকে যেতে দিবে এতে তোর লাভ কি?
নির্ঝরিণী – দূর তুমি কিচ্ছু বুঝো না, তুমি বলবে নির্ঝর কে সাথে নিতে চাই, তা হলে মা আর নিষেধ করতে পারবে না
মিথিলা কিছুক্ষন চুপ থেকে ভাবলো,
– সত্যি ভালো লাগছে না, বই তো শুধু সবাইকে দেখানোর জন্য সামনে নিয়ে বসে থাকি,মূলত বইয়ের মধ্যে আমার মন বসাতে পারছি না,,কোথায় থেকে বেড়িয়ে আসলে যদি ভালো লাগে
নির্ঝরিণী ভাবছে
– আপু চুপ করে আছে কেনো নিশ্চই এটা ঝড়ের পর্বাশ, আমি নিরবে কেটে পড়ি,নির্ঝরিণী পিছু হাটতে থাকে
মিথিলা- ঠিক বলেছিস নির্ঝরিণী, চল আন্টিদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি অনেক দিন কোথায় ও যাওয়া হয়নি
নির্ঝরিণী থমকে দাড়ালো চোখ বড় বড় করে ফেল্লো,মিথিলা এতো সহযে রাজি হবে এটা নির্ঝরিণী ভাবতেই পারেনি
মিথিলা- কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা আমার আর তোর জামা কাপড় গুছিয়ে নে,আমি মা কে বলে আসি
নির্ঝরিণী – ওকে আপু
মিথিলারা তার বড় আন্টির বাসায় রওনা হলো
পুরো সাতদিন থেকে আজ তারা নিজের বাড়ি ফিরে যাবে
মিথিলার আন্টি রাহেলা বেগম কিছুতে ই বোনঝি দের যেতে দিতে চায় না,তার একটা ই কথা মিথিলা বাড়িতে গিয়ে ডুকলেই আর আসবে না, তাই আর ও কয়দিন দিন থাকতেই হবে
নির্ঝরিণী ও খুশি আন্টির কথা শুনে,মনে মনে বলছে আল্লাহ আপু যেন রাজি হয় আর ও কয়দিন থাকার জন্য
কিন্তু মিথিলা থাকবে না
– আন্টি কলেজ বন্ধ হলে অবশ্যই আসবো,আর তা ছাড়া নির্ঝরিণীর পড়া বন্ধ আজ কতো দিন,এমনিতে ও পড়তে চায় না তার উপর এতো ছাড় দিলে তো মটেও পড়বে না ও
অবশেষে রাহেলা বেগম রাজি হলো,,মিথিলারা চলে এলো বাড়িতে,
মিথিলা কলেজে যেয়ে বড় একটা শকড খেলে যাদের এড়িয়ে চলার জন্য আলাদা কলেজে ভর্তি হয়েছে তারা ও সেই কলেজে
ক্লাসে ডুকে অরনি আর ইহান কে দেখে চমকে উঠলো
অরনি- কিরে মিথি কেমন আছিস,তোকে ফোন করলে ফোন তুলিস না,তার পর কলেজে ও আসিসনি কোথায় ছিলি
মিথিলা- বড় আন্টির বাড়িতে বেড়াতে গেছি,
ইহান- কিরে মিথি তুই কি আমাকে দেখিস নি নাকি, অন্ধের মতো আমাকে ফেরিয়ে অন্য ব্যাঞ্চের দিকে গেলি
মিথিলা- দেখেছি কিন্তু কি বলবো বল,,তোরা এই কলেজে ভর্তি হবি আমি ভাবতে পারিনি
ইহান- তোর মতো টেলেন্টেড মেয়ে যদি এই কলেজে পড়তে পারে তা হলে আমরা কেনো নয়
মিথিলা- বাই দ্যা য়ে, সাম্মি রাহি ওরা কোথায়
অরনি- ওরা দুজন, রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়েছে
মিথিলা- এতো দূরে কেনো
অরনি- বলতে পারছি না
মিথিলা – ও,
মিথিলা আর কথা বলেনি,তাই সবাই চুপ
ক্লাস শেষে মিথিলা সবার আগে বেরিয়ে গেলো
অরনি- ইহান তোর এই কলেজে ভর্তি হওয়া ঠিক হয়নি
ইহান অবাক চোখে অরনির দিকে তাকায়
– তুই এই কথা বলছিস অরু, তুই তো সবার আগে আমাকে সাপোর্ট দেয়ার কথা
অরনি- স্যরি, মিথিলা তোকে এভয়েট করছে,ব্যাপার টা আমি সহ্য করতে পারছি না তাই বললাম
ইহান- এভয়েট করছে আমাকে কষ্ট হচ্ছে তোর?
অরনি- স্যরি, এমনি বলেছি
ইহান- আমি জানি অরু মিথিলা আমাকে এভয়েট করবে তবুও আমি এক ই কলেজে কেন ভর্তি হয়েছি জানিস,,একটিবার ওকে চোখের দেখা দেখবো বলে, কথা না বল্লে কি হবে দেখতে তো পাবো তাকে,আর আমার বিশ্বাস একদিন সে আমার ভালোবাসা বুঝবে
অরনি আর কিছু বলেনি,, যে যার বাসায় চলে এলো
এভাবেই মান অভিমানের মাঝে, কলেজের ফাষ্ট ইয়ার শেষ হলো
মিথিলা কখনোই নিজে থেকে ইহানের সাথে কথা বলেনি, যত টা সম্ভব এড়িয়ে গেছে সব কিছু,
এই রকম ই এক বিকেলে কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে অভ্যাস বসত বই নিয়ে বসে,এমন সময় মিথিলার পাশে এসে দাড়ালো তার মা ফাতেমা বেগম
মিথিলা বই থেকে চোখ না সরিয়ে বল্লো,কিছু বলবে মা
ফাতেমা বেগম- হুম,, কিন্তু তুই তো পড়ছিস
মিথিলা বই বন্ধ করে বল্লো,এবার বলো কি বলবে
ফাতেমা বেগম- তুই যে তোর বড় আন্টির বাসায় কয়দিন আগে বেড়াতে গেলি না
মিথিলা ফাতেমা বেগমের কথার মাঝখানে বল্লো
– কয়দিন আগে বলছো কেনো মা প্রায় নয় দশ মাস হবে
ফাতেমা বেগম- ঐ এক ই হলো, একটু থেমে ফাতেমা বেগম আবার শুরু করলেন
– তোর আন্টিদের পাশের বাসার যে ভদ্র মহিলা আছে না,তার বোন তখন বোনের বাসায় বেড়াতে এসে তোকে দেখে পছন্দ করেছে তার ছেলের জন্য,
তুই তো চলে এলি,মহিলার স্বামি ও তখন দেশে ছিলো না গত মাসে এসেছিলো,তার পর তোর আন্টির থেকে কলেজের ঠিকানা যেনে কলেজে যাওয়ার পথে তোকে দেখেছে ভদ্র মহিলার স্বামি
ভদ্র মহিলার মতো তার স্বামির ও তোকে পছন্দ হয়েছে, তারা কাল তাদের ছেলে কে নিয়ে তোকে দেখতে আসতে চায়,তোর বাবা আসতে বলে দিয়েছে তাদের,,তাই বলছি কাল তুই কলেজে যাস না,
লম্বা কথা শেষ করে থামলো,মিসেস ফাতেমা
মিথিলা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো
মা আমি তো এখন পড়াশুনা করছি বলো,
ফাতেমা বেগম-দেখতে এলেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি, আসুক না দেখতে,আমরা ও তাদের ছেলে কে দেখি তার পর না বুঝতে পারবো,তুই এখন ই এতো টেনশন করিস না মা
মিথিলা- ওকে তোমাদের যেমন ইচ্ছে
to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন