খুশবু পর্ব-০৫

0
1594

#খুশবু
#পঞ্চম_পর্ব

খুশবু হাজার চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘরের কোনে চুপ মেরে বসে আছে।
হঠাৎ কপাট ঠেলে কেউ ভিতরে প্রবেশ করে।
চোখ তুলে তাকিয়েই দেখে পরান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
“_লতা তুই সত্যি কইরা একখান কথা ক তো। তোর ঘরে আমি ছাড়া আর কোনো পুরুষ আহে?
খুশবু লতা পরানের দিকে অবাক চাহনি তে তাকিয়ে রইল।যাকে এত ভালোবেসেছে সেও কিনা শেষ পর্যন্ত তাকে সন্দেহ করে?
আর কেউ জানুক আর না জানুক পরান তো জানে ওই খুশবুর ঘরে এসেছিলো। তবুও কেনো এই নিরবতা ?
“_কী অইলো আমার দিকে তাকায়া কী দেহোস ? একদিনের স*ঙ্গমে তুই কেমনে পোয়াতি (প্রেগন্যান্ট) হইলি? ক আমারে !

কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম টপ টপ করে ঝরছে। চোখের কোনে সামান্য পানি জমে আছে। খুশবু এখনো পরানের মুখ পানে আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে। সে যে বাক্যহীন ।
নিরবতা থাকতে দেখে সহসা পরান বিরক্ত বোধ করছিলো। রাগান্বিত কন্ঠে বার বার একই প্রশ্নের তীর ছুড়ছিলো খুশবুর দিকে।ব্যাচারী খুশবু সব নিরবে শুনছিলো। হাত উঁচিয়ে ইশারায় নানান ভঙ্গিতে পরান কে ভালোবাসি বুঝাতে চাচ্ছে বার বার। ” দুই দেহে একটাই প্রান” খুশবু বেশ ভালোই বুঝতে পারে।
কিন্তু পরান বুঝতে রাজি নয়। তার একটাই প্রশ্ন কার আকাম পেটে আইছে খুশবুর?

বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেছে পরান । লাফিয়ে উঠে খুশবুর বাহারি কালো কেশ ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে। খুশবু ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে। হাত দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলেই ব্যর্থ হচ্ছে বার বার।
“_ আইজ তোরে মাইরাই ফালামু। তোর মত কলঙ্কিনীরে আমার ঘরে রাখুমই না।
পরানের গর্জেনে সুফিয়া বানু ও সিমলা এদিক পানে ছুটে এসেছে।
“_ ওরে মাইর লাগা পরান তাইলেই সত্যি কথা বাইর হইয়া যাইবো ।
মায়ের কথায় পরান আরো দ্বী গুন উত্তেজিত হয়ে যায়। চুলের মু্ষ্ঠি শক্ত করে ধরে বার কয়েক ঝাকুনি দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। চড় থাপ্পড়ের শব্দে পুরো বাড়িটা উত্তল হয়ে পড়ে। চোখের পানিতে পুড়ো শরীর ভিজে গেছে মেয়েটার। কিন্তু মুখে এতটুকু রা করে নাই সেদিন।
মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে পরান। সুফিয়া বানু সুযোগের সৎ ব্যাবহার করতে ভুললেন না। হাতের কাছে যা পাইছে তাই পরানের দিকে এগিয়ে দিয়েছে মারার সুবিধার জন্য।
সিমলাও কম নয়, সতীন কে মারতে বর কে উৎসাহিত করে যাচ্ছে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থেকে।
মাটিতে পড়ে গলা কাটা মুরগির মত ছটফট করছে খুশবু। কে দেখে তার দূঃখের সময়ে ?
সবাই যখন নিজ নিজ ঘরে, খুশবু তখন উঠানে ক্ষত বিক্ষত শরীরে পড়ে ছটফট করছে।
আকাশ ঘনিয়ে কালো মেঘ উঁকি দিচ্ছে। মেঘের ডাকে ভীতু খুশবু। মাঝে মাঝে ভয়ংকর বিজলীর ঝলকানি। তবুও প্রেতাত্মার ন্যায় উঠানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল সে।

নিঝুম ধারায় বৃষ্টি নামলো, বান ডাকছে বার বার।
এই বারের বর্ষায় বন্যা হবে নিশ্চিত।
“_ খুশবু ভাবি বৃষ্টিতে ভিজতেছো ক্যান ?
ভারী পুরুষ কন্ঠ শুনে খুশবু ঘুরে তাকায়।দেখে পলাশ দাঁড়িয়ে আছে।
“_ চলো আমাগো বাড়িতে যাইবা। আম্মা একাই থাকে তার লগে ঘুমাইও আইজ রাইতে।
খুশবু ঘুরে পূর্বের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল। পলাশ হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। খুশবু না সূচক বার্তা দিচ্ছে তাকে। কিন্তু পলাশ নাছড় বান্দা নিয়ে যাবেই।
পলাশের মা খুশবু কে খাইয়ে দাইয়ে তার একখানা কাপড় পরতে দিলেন।
পরদিন সকালে পলাশের মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় সে।
“_ ঐ দ্যাখ তোর বউ কোন নাগরের লগে রাইত কাটাইয়া আইতাছে।
মায়ের কড়া কথায় পরান দৌড়ে খুশবুর দিকে যায়।
“_ কিরে তোর কোন নাগরের লগে রাইত কাটাইয়া আইলি?
খুশবুর নিরবতায় পরান বিক্ষোপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছে। শুরু হয় আরেক দফায় মার দেওয়া। এই শরীর আর সহ্য করতে পারে না । পরানের করা প্রতিটি আঘাতে খুশবুর অন্তর ফেটে যাচ্ছে।
ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত হাত চালানি দিতেই থাকে পরান। খুশবু ব্যাথিত অঙ্গে ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। সারা দিন কান্না কাটি করতে থাকে।
“_ পরান ভাই তুমি যহন খুশবু ভাবিরে সহ্য করতে নাই পারো। তাই কইতে ছিলাম ছাড়া ছাড়ি কইরা খুশবু ভাবিরে আমারে দিয়া দাও। তারে নিকা কইরা ভালো মত দেখ ভাল করুম নে।
পলাশের এমন প্রস্তাবে পরান রেগে আগুন হয়ে যায়। ঘার ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেয় পলাশ কে।
“_তুই আর এই বাড়ির চৌকাঠ ডেঙাবি না।
কড়া কন্ঠে ডজন খানেক কথা শুনিয়ে দেয় পরান।
রাতে খুশবু ঘুমাচ্ছিল। সেদিন অশান্ত মনটা দরজা লাগাতে ভুলে গেছিলো।
হঠাৎ ঘরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে লাফিয়ে উঠে।
কোনো পুরুষ ছায়া দেখা যাচ্ছে অস্পষ্ট ভাবে। হারিকেন জ্বালিয়ে দেখে পরান কামুক দৃষ্টিতে খুশবুর পানে তাকিয়ে আছে ।
পাশে আরেকটি পুরুষ ছায়ামূর্তি।এটাতো ব্যাপারি বাড়ির ছেলে।
“_আইজ থাইকা তোমার ধার দেনা মকুব কইরা দিলাম মন্সির পো।
ব্যাপারি বাড়ির ছেলে বিরক্তিকর হাসি হেসে বলে উঠে।
পাশে থাকা পরান তার দিকে বার বার মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মধন করছে।
ব্যাপারির ছেলেটা ধীরে ধীরে খুশবুর দিকে এগোতে থাকে। অন্ধকারে এমন ভাব দেখে খুশবু খানিকটা ঘাবড়ে গেছে।
হঠাৎ বুকে আপত্তিকর ভাবে হাত পড়তেই খুশবু বুঝতে পারে কী হতে যাচ্ছে। খুশবু যতই দূরে যাচ্ছে ততই এগিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারির ছেলে।
এক পর্যায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা খুশবুর উপরে। সব টুকু দিয়ে চেষ্টার পরও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছে না সে। নিজ পতির সামনে ধর্ষ* হয় খুশবু। খায়েশ মিটিয়ে ব্যাপারির ছেলে চলে যায়। পরান লোভনীয় দৃষ্টিতে দেখছে খুশবু কে। ব্যাথায় কাতরাচ্ছে খুশবু। পরান ধীরে ধীরে খুশবুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
খুশবু হাত জোড় করে চোখের জল ফেলছিলো।
কিন্তু কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নয় পরান ‌। খায়েশ মিটিয়ে খুশবুর পাশে ক্লান্ত শরীর হেলিয়ে দেয়। যন্ত্রনায় ছটফট করছে খুশবু লতা।

আর কত দিন নরক যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে তাকে?
নিজ সুরাক্ষার জন্য হাতের কাছেই বটি দা টা যত্নে রেখে দিয়েছে। আজ এটা ব্যাবহারের সময় এসেছে।
বিকট চিৎকারের আওয়াজে গায়ের অর্ধেক মানুষের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সুফিয়া বানু দৌড়ে গিয়ে দেখেন পরানের রক্ত মাখা নিথর দেহ পড়ে আছে মাটিতে।
পাশেই রক্ত মাখা দা হাতে বসে আছে খুশবু।

উকিলের মুখে খুশবুর ঘটনা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথায় হাত রাখেন মিস সাবরিনা।
“_মানুষ এমন হতে পারে? আমার মতে খুশবু যা করেছে সঠিক করেছে।
মিস সাবরিনা প্রানবন্ত কন্ঠে বলে উঠেন । কিন্তু তিনি এটাও জানেন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। আর তাই হয়তো শাস্তি পাবে নির্বাক মেয়েটা।

“_ আচ্ছা পলাশের কোনো খোঁজ পেলে?
কনস্টেবল সাথীর উদ্দেশ্য বলেন মিস সাবরিনা।

“_ জ্বী ম্যাম, পলাশ কাল হাই কোর্টে উপস্থিত হবে।
মিস সাবরিনা তার একজন বিশ্বস্ত উকিলের কাছে কেসটা নিয়ে যান ‌। তার প্রবল ইচ্ছা মেয়েটা কে বাঁচাবে।

হাইকোর্টের সময় অনুযায়ী রায় কার্যকর করার দিন চলে এসেছে।
“_সাথী পরানের বাড়ির লোকজনকে দেখছি না কেনো? আর পলাশ কোথায়?

চলবে__

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে