#খুশবু
#চতুর্থ_পর্ব
খুশবু আমি তোমায় নিকা করমু। যদি রাজি থাকো।
অচেনা কন্ঠে এমন কথা শুনে ঘুমন্ত খুশবু জেগে উঠে। সামনে তাকিয়ে দেখে পরানের চাচাতো ভাই পলাশ দাঁড়িয়ে আছে বিনয় দৃষ্টিতে।
__ শুনবার পারো নাই কী কইলাম? আমি তোমায় নিকা করতে চাই।
কথাটা আবার বললো পলাশ। খুশবু পলাশের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পলাশ তৎক্ষণাৎ খুশবুর হাত ধরে ফেলে।
___ ফিরাইয়া দিও না খুশবু । আমি তোমায় সত্যি কইরাই ভালোবাসি ।
করুন কন্ঠে একই কথা বার বার বলছিল পলাশ। খুশবু বিরক্ত হয়ে হাতটা ছাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়। পলাশ পেছন থেকে বার কয়েক ডাক দিয়েও খুশবু ফিরে নি।
বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরে পলাশ।ওপর দিকে খুশবু সাড়ারাত্রি ভর পলাশের কথা ভাবছে । পলাশের চোখের ভাষায় বুঝা যায় সত্যিই সে খুশবু কে ভালোবাসে।
__ দরজা খোল কথা আছে।
নিজ পতির কন্ঠে ডাক শুনে তরিঘরি উঠে রান্না ঘরের দরজা টা খুলে দেয় খুশবু। এতদিনে কী পরানের খুশবুর প্রতি মায়া জন্মেছে ?
কপাট জোড়া ধাক্কা দিয়ে একটু রাগি সুরে বলে উঠে __ দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে?
খুশবু আপাতদৃষ্টিতে মায়াবী চাহনির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আজ পরান কে মনে হয় একটু বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে। পরান হাসিময় মুখ নিয়ে খুশবুর পাশে বসে। খুশবু একখানা অর্ধ ছেড়া শাড়ি পরে পরানের সামনে একটু লজ্জা বোধই করছিলো।
__ তোমারে মেলা কষ্ট দিছি আমি খুশবু।
করুন কন্ঠে পরানকে আরো মায়াবী লাগছে। পরানের শ্বাস প্রশ্বাসে ঝড় উঠেছে আজ। খুশবুর মাথায় হাত দিয়ে চুল গুচ্ছ খুলে দিয়ে কাছে টেনে নেয়।
পরানের সংস্পর্শে এসে খুশবুর সাড়া শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। এ যেনো কাল বৈশাখির ঝড়।
দুজনে মিশে যায় একে অপরের সাথে। এই সুখ খুশবু জিবনে পায়নি।
পরদিন সকালে শাশুড়ির ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় খুশবুর ।
উঠে দেখে পাশে পরান নেই, হয়তো কাজে গেছে। খুশবু ঘোর কাটিয়ে উঠে বসে।
সারা অঙ্গে ব্যাথা অনুভব করছে ।
__ এই মালায়ওনের বেডি এতো বেলা ঘুমাইলে বাড়ির কাজ করবো কেডা শুনি?
খুশবু চুপচাপ অসহ্যব্যাথা নিয়েও বাড়ির সব কাজ চুপ চাপ করে নিচ্ছে। পরান আর খুশবুর দিকে তাকায়ও না। হয়তো সেই রাতে নেশায় পরে খুশবু কে কাছে টেনে নিয়েছিলো । এতে বিন্দুমাত্র দূঃখ নেই খুশবুর।
__ আফা এইদিক পানে আইসো তো একবার।
সিমলার কথা ডাকে খুশবু ঘুরে তাকায়। কাছে যেতেই এক বালতি ময়লা কাপড় চোপড় হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে সেগুলো কেচে আনতে। বেচারি খুশবু টু শব্দটি না করে বালতি হাতে ধরে পুকুর পাড়ে চলে যায়।
কিছুদিন কাটার পর একদিন হঠাৎ করেই পুকুর পাড়ে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় খুশবু । পাড়ার মহিলারা দৌড়ে এসে খুশবুকে ধরে মাথায় পানি ঢালছে।
___ ওমায়গো ছেড়িডারে মনে হয় ভুতে পায়ছে। খুলা চুলে পুকুর পাড়ে আইছে ক্যান এমন তো অইবোই।
নানান জনের নানান মত শুনে সুফিয়া বানু পাশের এলাকার আষান কবিরাজ কে নিয়ে আশে।
উঠানে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় বেঁধে রেখেছে খুশবুকে । লোকে বলছে ভুত গায়ে ভর করছে তাই বেঁধে রেখেছে। পরান একপাশে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
__ তোর নাম কী ? কোথায় থাকিস? বল, নাইলে জুতা পিটা কইরা তারামু কইলাম।
আষান কবিরাজ বারবার একই কথা বলছিল। কিন্তু খুশবু শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।
হঠাৎ কারো ধমকে পুরো বাড়িটা শান্ত হয়ে যায়। পলাশ এমন কর্মকাণ্ড দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি।
আষান কবিরাজ কে দৌড়ানি দিয়ে ভাগালো সেখান থেকে।
__ চাচি এইডা কী করতাছো , খুশবু ভাবির হয়তো অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে। ডাক্তারের কাছে লইয়া যাও, ভন্ড কবিরাজ বাদ দাও।
পলাশের কথা শেষ হতেই পেছন থেকে সাঈদ ডাক্তার কাশি দিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে।
খুশবু কে অনেকক্ষন পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন তিনি।
__ চাচি মিষ্টির বায়না দাও, আমাগো মিষ্টি খাওয়াও । তুমি তো দাদি ডাক শুনতে যায়তেছো ।
সাঈদ ডাক্তারের কথা শুনে সুফিয়া বানু আকাশ থেকে পড়ে। রক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খুশবুর দিকে।
__ এই মুখ পুড়ি ক এইডা কার আকামের ফসল? আমার ছেড়ায় তো তোরে ছুইয়াও দেহে নাই। তাইলে তোর পেডের বাচ্চাডা কার?
শাশুড়ির কথায় উপস্থিত থাকা সবাই অবাক হয়ে যায়। পরান সেখানে উপস্থিত ছিলো না। থাকলেই কী? সে তো তার মায়ের কথাতেই অটুল সব সময়।
__ চাচি তুমি এইডা কী কইতাছো?
পলাশের এমন সদাচরণ ভাব সুফিয়া বানু কে কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে।
__ এই ছেড়া তোর ওর লাইগা এত দরদ ক্যা রে। তুই ওর লগে আকাম করতে গিয়া পুকুর পাড়ে ধরা খাইছিলি মনে নাই। আবার এটা নয়তো এই আকাম তুই করছোস ওর লগে।
পলাশ বিষ্ময়ের সহিত সুফিয়া বানুর মুখ পানে তাকিয়ে রইল। কিন্তু কিছু বলার সাহস পেলো না সে।
লোকজন জড়ো করে সুফিয়া বানু সালিশ বসাইলো। কারন টা হলো খুশবু লতা আর পলাশের পরকিয়া প্রেমের ।
অথচ এই বাচ্চাটা পরানেরই। পলাশ কে তো খুশবু সব সময় এড়িয়ে চলেছে ।
__ কথা একডাই এই মাইয়ারে ১০০ ঘা বেতের আঘাত কইরা পলাশের লগে নিকা দেওয়া হোক।
মাতবরের এমন নির্দেশ শুনে পলাশ লাফিয়ে উঠে।
__ দেখেন মাতবর সাব, খুশবু রে আমি পছন্দ করি ঠিক আছে তবে সে তো পরান কে ভালোবাসে। তাই এই মিথ্যা অপবাদ দিবেন না দয়া কইরা। আমার লগে খুশবুর কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই, না হয়েছে খারাপ কিছু।
পলাশের কোনো কথা শুনতে নারাজ এলাকা বাসী। পরান নিশ্চুপ হয়ে একপাশে গুটি শুটি মেরে বসে আছে। তার মুখ আগেই বন্ধ করে দিয়েছে তার মা।
__ আচ্ছা আমরা আরেকটু খুতিয়ে দেহি আসল ব্যাপারটা কী।
সবাই যার যার বাড়িতে ফিরে যায়। খুশবু হাজার চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘরের কোনে চুপ মেরে বসে আছে।
হঠাৎ কপাট ঠেলে কেউ ভিতরে প্রবেশ করে।
চোখ তুলে তাকিয়েই দেখে পরান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে ____