গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ২৪!
লেখক: তানভীর তুহিন!
অস্ট্রেলিয়ার এয়ারপোর্টে নামতেই সীমান্ত মুবিনকে বলে, ” তোর জন্য বাইরে একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। চল! ”
মুবিন বলে, ” কীসের সারপ্রাইজ? ”
– ” চল না। ”
এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোতেই মুবিন দেখতে পায় গর্জিয়াস রেড কালারের একটা রুফলেস জীপ। জীপগাড়ির খুব শখ মুবিনের। সীমান্ত বলে, ” এই হলো তোর সারপ্রাইজ। ট্রাভেল এজেন্টকে বলে বহু কষ্টে ম্যানেজ করিয়েছি। যতদিন এখানে আছি আমরা ততদিন এটা আমাদের আর এটা তুই চালাবি! ”
মুবিন দেরী না করে জীপে উঠে পড়ে। তারপর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় জীপ চালাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য প্রচুর মনোযোগের প্রয়োজন তাই গাড়ি চালাতেই মনোযোগী মুবিন। মুবিন কিঞ্চিত স্বাভাবিক জীবনকে উপভোগ করছে, মুবিনকে এইভাবে দেখে শাওন-সীমান্ত বেশ স্বস্তি অনুভব করছে।
অস্ট্রেলিয়ায় যাবার পরেরদিন সন্ধ্যাবেলা। শাওন-সীমান্ত হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখছে। বাইরে বেশ ঠান্ডা। রাতের দিকে এদিকে তুষারপাতও হয়। ওরা অস্ট্রেলিয়ার যে জায়গায় আছে সেটা হলো ‘কুইন্সল্যান্ড’। কুইন্সল্যান্ডে বেশ কিছু পাহাড় রয়েছে। প্রত্যেকটা পাহাড়ের উচ্চতা যেমন আলাদা ঠিক তেমনি রুপও আলাদা। আর এই সন্ধ্যায় পাহাড়ের পেছনে সুর্যের লুকিয়ে যাবার দৃশ্য! সত্যিই অপরুপ। সেই অপরুপ দৃশ্য নিজেদের চোখকে দেখিয়ে নিজেদের চোখকে সার্থক করছে শাওন-সীমান্ত। মুবিনও এতোক্ষন পাহাড় দেখছিলো। হঠাৎ করে প্যান্ট শার্ট পড়ে শাওন-সীমান্তকে মুবিন বলে, ” আমার দুই-তিনটা জ্যাকেট কিনতে হবে রে। যে একটা জ্যাকেট এনেছি ওটার জিপার কাজ করছে না। তাই শপিং মলে যাচ্ছি! ”
শাওন বলে, ” তুই একা যাবি নাকি? আমরাও যাবো! ”
– ” না। একটু একা যাবো। একা একটু পাহাড়ি রাস্তায় লং ড্রাইভ ইঞ্জয় করতে চাই! ”
মুবিন এমন করুন গলায় কথাটা বলে যে শাওন-সীমান্ত আর আটকায় না। সন্ধ্যাবেলা একটা অফ গ্রে কালারের প্যান্ট, ব্রাইট হোয়াইট কালারের ভারী শার্ট আর গলায় একটা কালো মাফলার পেচিয়ে জীপ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে মুবিন।
সবে মাত্র সন্ধ্যার আধারে ঢেকে গেছে চারপাশ। জীপের হেডলাইটের আলোতে রাস্তার আকবাক সামলে গাড়ি চালাচ্ছে মুবিন। জীপের মিউজিক সিস্টেমের সাথে ফোন কানেক্ট করে গান শুনছে মুবিন। জীপে ছাদ না থাকায় বেশ বেশিই ঠান্ডা বাতাসের সাথে বার্তালাপ হচ্ছে মুবিনের। গান শুনতে শুনতে আর বাতাসের সাথে বার্তালাপ করতে করতেই মুবিন শপিং মলে এসে পৌছায়। জীপ পার্কিংয়ে পার্ক করে শপিং মলে ঢুকে পড়ে মুবিন। এস্কেলেটর বেয়ে ফার্স্ট ফ্লোরে উঠে হঠাৎ করে পেছনে তাকাতেই কঠিন ভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় মুবিন, থমকে যায় মুবিনের আশপাশ চারপাশ, শরীরের রক্তের প্রবাহও যেনো থেমে গেছে, সাথে রক্ত হিম হয়ে শরীরটাও যেনো বরফে পরিনত হয়েছে, আর হৃদপিন্ডটা যেনো স্পন্দনের তালও হারিয়ে ফেলেছে। চোখের সামনে সে কী দেখছে এটা? আদৌ কী বাস্তব কিছু দেখছে সে? নাকি সবটাই ভ্রম? মিছিল!? এস্কেলেটর বেয়ে মিছিল উপরে উঠছে? সামনের অবয়বটাও যেনো কেমন অবাকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনের দিকে। তাহলে কী সত্যিই এটা মিছিল? এস্কেলেটরের অবয়বটা ধীরে ধীরে মুবিনের দিকে উঠে আসছে আর মুবিন চরমভাবে বিস্মিত হচ্ছে। চোখটাকে একবার বুজে আবার পুনরায় খুলে নেয় মুবিন। না! সামনের অবয়ব টা ঠিকই আছে। এটা মিছিলই! আকস্মিক বিস্ময়ের ফলে জ্ঞান হারিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে মুবিন।
প্রায় ১৫ মিনিট পরে চোখ খুলে নিজেকে শপিংমলের ফ্লোরে আবিষ্কার করে মুবিন। মাথা থেকে শুরু করে পা অবধি গোল হয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের চেহারা খুটিয়ে বারবার দেখছে মুবিন। না, এখানে তো মিছিল নেই। তাহলে কী সে ভুল দেখেছে? সে কী এতোটাই ভুল দেখেছে যে সে ভুলের ফলে সে বেহুশ হয়ে পড়লো? কই এই কয়মাসে তো একবারও এমন ভুল সে দেখেনি। এই গোলকধাঁধার উত্তর খুজছিলো মুবিনের স্পর্ষকাতর মন এবং কৌতুহলি মস্তিষ্ক। ঠিক তখনই মাথার পাশে বসে থাকা বিদেশিনী তরুণী মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” আর ইউ অলরাইট মিউবিন? ”
চমকে যায় মুবিন। এই বিদেশি মেয়ে তার নাম জানলো কীভাবে? তীব্র শকের ফলে মুবিনের আবার বেহুশ হবার উপক্রম। তখনই বিদেশি মেয়েটা আবার প্রশ্ন করে মুবিনকে, ” আর ইউ ফিলিং বেটার মিউবিন? ”
মুবিন পাথরের মুর্তির ন্যায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই বলে, ” ইয়াহ আম ফাইন। বাট হাউ ডু ইউ নৌ মাই নেইম? ”
– ” মেছিল টোল্ড মী! ”
কথাটা শুনতেই কিছুক্ষন আগের মতো আবারও কঠিনভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় মুবিন। বুকের ভেতরটা যেনো এক অসহ্য ব্যাথায় দুমড়ে-মুচড়ে ওঠে। মুবিনের চোখ দুটো নোনাজলে ভরে ওঠে। বিদেশি মেয়েটা মুবিনকে প্রশ্ন করে, ” হোয়াট আর ইউ ক্রায়িং? ”
মুবিন ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে করুন স্বরে বিদেশি মেয়েটাকে বলে, ” ডু ইউ নৌ মিছিল? প্লিজ টুক মি টু মিছিল। প্লিজ!, আই ওয়ান্ট টু মীট হার। প্লিজ! প্লিজ! আই বেগ ইউ, প্লিজ! ”
– ” হেই! হেই! কুল ডাউন। আই ডোন্ট নৌ হার পার্সোনালি। বাট ইউ ক্যান মীট হার, শী লেফট এ এড্রেস নোট ফর ইউ। ” বলেই বিদেশি মেয়েটা মুবিনের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেয়। মুবিন চিঠিটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে মুবিন বিদেশি মেয়েটাকে বলে, ” থ্যাংকস এ লট! টেল মী ওয়ান থিং হাউ লং হ্যাভ আই বিন আনকনসিয়াস হিয়ার? ”
– ” এরাউন্ড টুয়েলভ টু ফিফটিন মিনিটস! ”
মুবিন আর এক মুহুর্তও দেরী না করে ঠিকানাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শপিং মল থেকে। এড্রেস নোট দেখে ফোনের গুগল ম্যাপে ডেস্টিনেশন সেট করে গাড়ি চালাতে শুরু করে মুবিন। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যেই গন্তব্যে পৌছে যায় মুবিন।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “