ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১৪!

0
714

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১৪!
লেখক: তানভীর তুহিন!

সকাল সাতটা বাজে। দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভাঙে মিছিলের। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে গিয়ে দড়জা খোলে মিছিল। দড়জা খুলতেই দেখতে পায় চেনামুখ মুবিনকে। দড়জা খুলে মুবিনকে দেখে মিছিল হেটে গিয়ে আবার ধুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। মুবিন রুমে ঢুকে বলে, ” বের হবো একটু পরে। আবার শুয়ে পড়লা কেনো? ”
মিছিল গুঙিয়ে বলে, ” ঘুম পাচ্ছে খুব! ”
– ” পেট ঠিক হয়েছে? ”
মিছিল কিছু না বলে শোয়া অবস্থাতেই মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মুবিন গিয়ে খাটে মিছিলের পাশে একহাঁটু ভাজ করে বসে। মিছিলের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে, মিছিলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মিছিল কিছু বলে না, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার ফলে তার বেশ আরাম অনুভব হচ্ছিলো তাই। মুবিন মিছিলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, ” কাল রাতে তুমি ঘুমিয়ে যাবার পরে তোমার ঠোটে চুমু খেয়েছিলাম। তোমার ঠোটদুটো এতো সফট আর সুইট ক্যান? ”
মিছিলের ঘুম দৌড়ে পালায়। কী শুনছে সে এসব? সে ঘুমিয়ে যাবার পর মুবিন তাকে চুমু খেয়েছে? তাও আবার তার ঠোটে? মিছিল হকচকিয়ে উঠে বসে। চোখদুটো মার্বেলের ন্যায় গোলাকার আর বড় করে মিছিল বলে, ” তুমি সত্যিই আমি ঘুমিয়ে যাবার পর লিপকিস করছো? ”
মুবিনের স্বাভাবিক উত্তর, ” হু! ”
মিছিল চুপচাপ বসে আছে। সে এটা আশাই করেনি। সে তো মুবিনের প্রতি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করেছিলো, আর এই সময়েই মুবিন এভাবে বিশ্বাস ভাঙলো? মিছিলের চেহারায় মনখারাপ এবং আশাভঙ্গের ছাপ স্পষ্ট।
মুবিন একটু গুরুতর ভঙ্গিতে বলে, ” আসলে তুমি ঘুমিয়ে যাবার পর চলেই যাচ্ছিলাম। উঠতে যাবো তখনই ঠোটদুটোর দিকে চোখ পড়ে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম, নিজেকে অনেক বুঝিয়েও ছিলাম। যে এটা অন্যায়, করা ঠিক হবে না। কিন্তু কন্ট্রোল করতে পারিনি। তবে হ্যা শুধু লিপকিস’ই করেছি, আর কিছু না। ”
মিছিল নিশ্চুপভাবে বসে আছে। চোখদুটো মেঝের দিকে স্থির। মুবিন হো হো করে হেসে উঠে বলে, ” তুমি এতো আপসেট কেনো হয়ে গেলে? আমি চুমু টুমু খাইনি। তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই তোমায় ওঠানোর জন্য বলেছি যে আমি চুমু খেয়েছিলাম। চীলল! তুমি ঘুমিয়ে যাবার পর আমি তোমায় সেভাবে ছুয়েও দেখিনি! ”
মিছিল মাথা উঠিয়ে মুবিনের দিকে তাকায়। মুবিন মিছিলের কাছাকাছি এসে আদ্রকন্ঠে বলে, ” তুমি জেগে থাকতেই যখন তোমায় চুমু খেতে পারি। সেখানে তুমি ঘুমিয়ে যাবার পরে কাপুরুষের মতো তোমার সুযোগ নিতে যাবো কেনো? ”
মিছিলের বুকে একদল শীতল বাতাস বয়ে গেলো মুবিনের কথাটা শুনতেই। চেহারা থেকে মনখারাপের মেঘটাও উড়ে অন্য আকাশে চলে গেছে। মুবিন আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিছিল একটা বালিশ নিয়ে মুবিনের মুখ বরাবর ছুড়ে মারে। উঠে দাঁড়িয়ে দাত খিটে বলে, ” আমার কেমন লাগছিলো জানিস তুই? এরকম সেন্সিটিভ বিষয় নিয়ে মজা করার কোনো মানে হয় না! ”
মুবিন বালিশটা মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে বলে, ” কিস আবার কবে থেকে সেন্সিটিভ ইস্যু হলো? ”
– ” তোর কাছে তো সবই হেলাফেলা মনে হয়! ”
– ” এই ক্যাঁচক্যাঁচানির স্বভাবটা বাদ দাও তো জাদুসোনা। সব বিষয়ে ফ্যাচফ্যাচ না করলেই হয়না তোমার? তাইনা? ”
– ” আহাহা! কী ন্যাকা নাম জাদুসোনা। এত্তো ন্যাকামি তুই কোত্থুকে পাস? সারাদিন তোর ফ্ল্যার্টিং মুডটা অন’ই থাকে তাইনা? ”
– ” অনলি ফর ইউ বেব! ”
বলেই চোখ মারে মুবিন। মিছিল চেঁচিয়ে মুবিনকে কথা শোনাতে যাবে তার আগেই মুবিন বলে, ” আমরা এভাবে এখানে শুয়ে বসে প্রেম করতে থাকলে আজ আর ঘুরতে যাওয়া হবে না। তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো, যাও। আর ফ্যাচফ্যাচ কইরো না! ”
মিছিল চোখ সরু করে মুখ ভেংচে বাথরুমে চলে যায়।

সবাই মিলে চা বাগান ঘুরতে এসেছে। মাথার পেছনে ঝাপির মতো কিছু একটা বেধে চা পাতা সংগ্রহের কাজ করছে কিছু মানুষ। চারপাশটা সব সবুজে ঢেকে আছে, চা বাগানের মাঝখানের মানুষজনকে দেখে মনে হচ্ছে সবাই এই সবুজ রঙের মাঝে হারিয়ে গেছে। আর বুঝি বেরই হতে পারবে না এই সবুজরঙের মায়াজাল থেকে। এতোটাই বিস্তৃত এই সবুজ রঙের মায়াজাল। সবাই চা বাগানের ভেতরে ঢুকে ঘুরে ঘুরে দেখছে, কেউ কেউ ছবি তুলছে, কেউ পাতা ছিড়ে দেখছে, কেউ আবার পাতা ছিড়ে শুকছে। শাওন দুটো পাতা ছিড়ে একসাথে মুখে দিয়ে চিবানো শুরু করে। নিজেকে ডিসকভারি চ্যানেলের বিয়ার গ্রিলের মতো এডভেঞ্চেরাস বোঝানোর জন্য। কিন্তু দু-তিনটে চিবোন দেবার পরেই থু! থু! করে সব ফেলে দেয়। বেচারার মুখটা একদম কুচকে কুচুকুচু হয়ে গেছে। পাতাদুটো বোধহয় ভীষন তেতো ছিলো। চৈতি শাওনের দশা দেখে শাওনের সামনে গিয়ে বলে, ” কীরে বিয়ার গ্রিলের দাদার নাতি চা পাতা খাচ্ছিস কেনো? এনাকোন্ডা’র হালুয়া এনে দেই খাওয়ার জন্য, ওই হালুয়া খা। ”
পাশে দাঁড়িয়ে সীমান্ত, মুবিন, মিছিল হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শাওন বেচারা এমনিতেই মুখের তিক্তস্বাদ নিয়ে বিরক্ত ছিলো, মিছিলের কথা শুনতেই বেচারার মেজাজ গরম হয়ে যায়। শাওন কোনো কথা না বলে চৈতির মুখ চেপে ধরে কয়েকটা পাতা চৈতির মুখে ঢুকিয়ে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে চৈতিও শাওনের মতো মুখ কুচকে কুচুকুচু করে থু! থু! শব্দ করে ওঠে।

সবাই চা বাগানের সৌন্দর্য ভেদ করে হাটছে আর দেখছে চারপাশ। চারপাশটা একদম সতেজ এবং স্নিগ্ধ। প্রত্যেকটা নিঃশ্বাসের সঙ্গে যেনো একযুগ জীবন ঢুকছে এমন মনে হচ্ছে। চারপাশটা সব সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে। চা বাগানের সরু আইল ধরে চা বাগানের মধ্যে হাটছে মিছিল, মিছিলের পেছনেই হাটছে মুবিন। দুজনে তেমন কোনো কথা বলছে না, দুজনেই চা বাগান দেখতে ব্যাস্ত। হঠাৎ মিছিল মুবিনকে জিজ্ঞেস করে, ” আচ্ছা আমি যে তোমায় রিলেশনশিপের জন্য হ্যা বলি না, এতে তোমার ইগো হার্ট হয় না? মনে হয় না যে আর ঘুরবো না ছেড়ে দেই? মন খারাপ হয় না তোমার? ”
– ” সাডেন এই কথা বলছো? তুমি আমায় হ্যা বলছো না এজন্য কী তোমার মন খারাপ হচ্ছে নাকি? ”
– ” উফ! একদম সব কথায় মস্কারি না করলে ভালো লাগে না তোমার, তাইনা? ”
– ” মস্কারি কোথায় করছি? তুমি প্রশ্ন করলে, আমিও প্রশ্ন করলাম! ”
– ” না তোমার প্রশ্ন করা লাগবে না। আমার প্রশ্নের আন্সার করো! ”
– ” দেখো তুমি যে আমায় এক-আধটু পছন্দ করো সেটা আমি জানি! ” বলেই মুবিন চুপ হয়ে যায়। মিছিল কিছু বলবে তা ভেবে। কিন্তু মিছিল কিছুই বলে না। মুবিন আবার বলে, ” সো তুমি যখন আমায় পছন্দ করো, আমি তোমার পিছনে ঘুরছি সেটাকে এপ্রিশিয়েটও করো সেখানে আর তোমার হ্যা বলা লাগে নাকি? মুখের শোনা হ্যা এর থেকে মনের অনুভব করা হ্যা অনেকটা প্রাপ্তির এবং সুখের। তাছাড়াও প্রেমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মধুর মুহুর্ত হলো যখন দুজন দুজনকে পছন্দ করে, ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলে না। বলে দিলেই তো সব শেষ, মধুর মুহুর্তটাও শেষ। আর তাছাড়া প্রেম শুরু হলে প্রেমের শুরুর দিকে অনেক কম্পিলিকেশন’স তৈরী হয় প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং বদলে যায়, অনেক ফিলিংস বদলে যায়, ব্যাক্তিস্বাধিনতার অভাববোধ হয়, অনেকক্ষেত্রে মেন্টালিটি সিঙ্ক করে না। আর এসব প্রেম শুরু হলেই আবিষ্কার করে তারা। আবিষ্কার করতে করতে বিপরীত পাশের মানুষটা হতে পারে সে ছেলে কিংবা মেয়ে, যার মন দুর্বল! আরকি যে ইমোশনাল ফুল সে কম্প্রোমাইজ করে ফেলে। একবার কম্প্রোমাইজ করায় তার কম্প্রোমাইজেশন এর অভ্যাস হয়ে যায়। তারপর নানান ঝামেলার সৃষ্টি হয় দ্যান শেষমেশ গিয়ে ব্রেকাপ হয়ে যায়। এই প্রেমের চেয়ে, অপ্রকাশ্য প্রেমই বেটার। যখন দুজন দুজনকে পুরোপুরিভাবে বুঝে নেবে, আবিষ্কার করে নেবে তখন প্রেম শুরু করা উচিত। সেজন্যই তুমি হ্যা নাবলাতে আমার অসুবিধা হচ্ছে না। ”
– ” তুমি এতোসবকিছু জানো কী করে? কয় লাখ প্রেম করছো এই অবধি? ”
– ” লাখ না কয়েক কোটি হবে! ”
– ” আলুর দরের চরিত্র! ”
মিছিলের কথায় মুবিন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

খুব ভালোভাবে সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে ওরা ওদের ট্রাভেল ট্রিপের ইতি টানে। পাচদিন ট্রিপের পর সবাই মিলে চট্রগ্রাম চলে আসে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে