ক্যালেন্ডার! পর্ব: ১০!

0
828

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ১০!
লেখক: তানভীর তুহিন!

সকাল সাড়ে আটটা বাজে, সবাই প্ল্যাটফর্মে বসে চা খাচ্ছে আর পাহাড়িকার অপেক্ষা করছে। ‘পাহাড়িকা এক্সপ্রেস’ সকাল নয়টায় চট্রগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মিছিল চায়ে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে আর প্ল্যাটফর্মের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে চারপাশটা দেখে নিচ্ছে। সে সারাজীবনেও কখনও ট্রেনে চড়েনি, এমনকি রেলস্টেশন নামক যায়গাটাও সে শুধু মাত্র টিভিতেই দেখেছে। আজ প্রথমই এলো রেলস্টেশন, আর সে আজই প্রথম ট্রেনে চড়বে। তাও তার বাবাকে ছাড়া! ভাবতেই মিছিলের মন আকাশে খানিক মন খারাপের দমকা হাওয়া বয়ে গেলো। সে তার সারাজীবনে তার বাবাকে ছাড়া দূরে কোথাও ঘুরতে যায়িনি, তার বাবা’ই তাকে ঘুরতে নিয়ে যায়। বাবার সাথে বিদেশও ঘুরতে গেছে সে, কিন্তু বাবাকে রেখে একা কখনও কোথাও ঘুরতে যায়নি। মিছিল মনখারাপের মধ্যেই একটু ফিক করে হেসে দিলো, গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেছে তার।

গতকাল রাতে মিছিল নাকিকান্না কেদে কেদে তার বাবাকে বলছে, ” আব্বু দাও না যেতে। মাত্র পাচটা দিনই তো। আর আমার সাথে আরো ৪-৫ জন মেয়ে যাচ্ছে কিচ্ছু হবে না। দাও না! ”
– ” না! একদমই না! এর আগে তুই কখনই একা কোথাও যাসনি। আমি তোকে একা ছেড়ে এখানে চিন্তা করে করে মরতে পারবো না। তোর জাফলং ঘুরতে ইচ্ছে করছে তো? সামনের মাসে আমি তোকে নিয়ে যাবো। কিন্তু এই ট্রি-ফ্রিপে তোর যাওয়া হবে না। ”
– ” হু আসছে উনি! আমায় সামনের মাসে নিয়ে যাবে। সামনের মাসে কী আমার ফ্রেন্ডরা আবার যাবে নাকি? ”
– ” আবার যাবে কেনো? ওদের এখন যেতে না করে দে, সামনের মাসে সবাইকে আমি নিয়ে যাবো। সবার সব খরচ দিয়ে আমি নিয়ে যাবো! ”
– ” ধুর! ধুর! লাগবে না। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে আমি ওদের সাথে কাল ট্রিপে যাবো। এখন যদি এসব বলি তাহলে ওরা আমায় ক্ষ্যাপাইতে ক্ষ্যাপাইতে আমার গুষ্টি উদ্ধার করে দিবে। ওরা বলবে, আমি এখনও ল্যাদা বাচ্চা! তাই তুমি আমায় একা যেতে দাও না। ”
– ” হু ক্ষ্যাপাক! তবুও তুই যাবি না। ব্যাস শেষ! ”
নাক দিয়ে ‘হুউহু! উহুহু’ আওয়াজ করে মিছিল বলে, ” আব্বু তোমায় ছাড়া ট্রাভেল করার একটা অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য হলেও যেতে দাও প্লিয! ”
– ” আচ্ছা তোকে নাহয় যেতে দিলাম। ধর তোর ফোন বন্ধ থাকলো, তখন আমার কী অবস্থা হবে? আমার ঠিক কতটা চিন্তা হবে তুই ভেবে দেখেছিস? ”
– ” থাকবে না আমার ফোন অফ। ইহজিন্দিগিতে আমার ফোন কখনও বন্ধ ছিলো নাকি? আচ্ছা তবুও বাই এনি চান্স যদি অফ থাকে তাহলে এই নাও তুমি এই নাম্বারে ফোন দিও। আমি তোমার ফোনে সেইভ করে দিচ্ছি! ”
বলেই মিছিল মুবিনের নাম্বারটা তার বাবা ফোনে সেইভ করে দিলো। সে কেন মুবিনের নাম্বারটা দিলো সেটা সে জানে না। তবে তার মনে হয়েছে ট্রিপে সে সারাক্ষন মুবিনের সঙ্গেই থাকবে। তাই মুবিনের নাম্বারটাই দিয়েছে। বাবার ফোনে নাম্বারটা সেইভ’ও করেছে মুবিন নাম দিয়ে। মিছিলের বাবা ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে নাম দেখেই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় মিছিলের দিকে। তারপর ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে, ” এই মুবিনটা কে? আগে তো কখনও এর নাম বলিসনি! ”
মিছিলের মুখটা কাচুমাচু হয়ে যায়। সে তো চৈতির নাম্বারটাও দিতে পারতো, ঐ হাবলাটার নাম্বার দিতে গেলো কেনো? এখন খাও কেইস!, মিছিল মনে মনে নিজেকে গালমন্দ করে, আমতানো স্বরে তার বাবাকে বলে, ” মুবিন বন্ধু হয় আমার। কোনোদিন ওর কথা ওঠেনি তাই বলা হয়নি! ”
মিছিলের বাবা হালকা কর্কশ গলায় বলে, ” বন্ধু নাকি প্রেমিক? ”
মিছিল ঝাঝালো কন্ঠে তার বাবাকে ধমকে বলে, ” বললাম না বন্ধু? তুমি আবার প্রেমিক টেনে আনছো কেনো? শুধুই বন্ধু হয়! বন্ধু মানে বন্ধুই! ”
মিছিলের বাবা বেচারা মেয়ের ধমকে থতমত খেয়ে যায়। তার আর তার মেয়ের সম্পর্ক অতি মিষ্টি-মধুর। তাই সচরাচর’ই তাকে তার মেয়ের কাছ থেকে এমন ধমক শুনতে হয়, আর সে ধমকগুলো হাসিমুখে হজমও করে নেয়। মিছিলের বাবা ঠোট চওড়া করে ভেচকে আশপাশে চোখ ঘোরায়। মিছিল তার বাবার দিকে ভ্রুকুটিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। মিছিলের বাবা রসিক সুরে বলে, ” যা সিমরান! জ্যিলে আপন্যি জিন্দেগি। ”
মিছিল চোখটা বা দিকে ঘুরিয়ে বলে, ” সিমরান না, মিছিল হবে। যা মিছিল জ্যিলে আপন্যি জিন্দেগি! ”
বলেই মিছিল খিটখিট করে হেসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তার বাবাও মেয়ের ইচ্ছেপুরন করতে পেরে বিজয়ের হাসি হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

এসব ভাবছিলো আর আনমনে মুচকি হাসছিলো মিছিল। মুবিনের তুড়ির শব্দে হুশে ফিরে চমকে ওঠে মিছিল। মিছিল এতক্ষন অর্ধেক কাপ চা হাতে নিয়েই আনমনে এসব ভাবছিলো। মুবিন মিছিলের হাতের চায়ের কাপের দিকে ইশারা করে বলে, ” চায়ের কাপটা এদিকে দাও। চা খাবো! ”
মিছিল নাক দিয়ে মুবিনের চায়ের কাপের দিকে ইশারা করে বলে, ” তোমার কাপে চা থাকতেও আমারটা চাইছো কেনো? খেতে ইচ্ছে করলে আরেক কাপ নাও! ”
– ” ধুরু আনরোমান্টিক কোথাকার! আমি তোমার চুমু লাগা কাপ থেকে চা খেতে চাইছি। নাও তুমি আমার কাপের চা খাও, আমি তোমারটা খাচ্ছি! ”
মিছিল মুখ কুচকে বলে, ” আমি তোমায় রোমান্টিকতা দেখাতে যাবো কেনো? আর তোমার মুখ লাগানো কাপ থেকে আমি চা ই বা খাবো কেনো? ”
– ” আচ্ছা তোমার খাওয়া লাগবে না। তোমারটা আমায় দাও, আমি খাবো! ”
মিছিল নাক-মুখ ছিটকে বলে, ” কোনোমতেই না! ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন – ছাইরঙা ফেস্টুন

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে