ক্যালেন্ডার! পর্ব: ০৯!

0
889

গল্প: ক্যালেন্ডার!
পর্ব: ০৯!
লেখক: তানভীর তুহিন!

ভার্সিটির ক্লাস শেষে সবাই ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সবাই টুকটাক এই স্যার! ওই স্যার! নিয়ে সমালোচনা করছে। আড্ডার এক পর্যায়ে সীমান্ত বলে, ” ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে ঠিক মজা পাওয়া যাচ্ছে না, আর ভার্সিটিতে আসতে আসতেও বোর হয়ে গেছি। চলনা সবাই মিলে দু-তিন দিনের জন্য কোথাও ট্রিপ মেরে আসি? ”
মিছিল মুবিনকে বাদাম ছুলে খাওয়াচ্ছিলো। না, মিছিলের কোনো ইচ্ছেই ছিলো মুবিনকে এতো আলহাদ করে বাদাম ছুলে খাওয়ানোর। কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়েই খাওয়াচ্ছে সে, মুবিন হচ্ছে জাতঠ্যাটা একদম। বলছে বাদাম ছুলে খাওয়াতে হবে, মানে খাওয়াতে হবেই। মিছিল কয়েকবার এই গোলমিটিং টাইপ আড্ডার আসর ছেড়ে উঠে যেতে চেয়েছে কিন্তু মুবিনের তাড়নায় পারেনি। বারবার হ্যাচকা টান মেরে বসিয়ে দেয়, এমন ভাবে বসায় যেনো মনে হয় মিছিল তার সবকথা শুনতে বাধ্য। মিছিলের ওপর তার অধিকার আমরণ, মিছিলের ওপর তার অধিকার আজন্ম এমন একটা ব্যাপার। মিছিল রাগে ক্ষোভে বিরক্তি নিয়ে কপাল কুচকে বাদাম ছুলে ছুলে মুবিনের হাতে দিচ্ছে, আর মুবিন টুক টুক করে খাচ্ছে। মিছিলের এমনিতেই বিরক্তির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এই অনিচ্ছাকৃত কামলা খাটাতে। তারউপরে সীমান্তর ট্রিপের প্ল্যান!

সীমান্তর ট্রিপের কথা শেষ হতে না হতেই মুবিন মুখে থাকা বাদামটুকু চিবিয়ে গিলে ফেলে সীমান্তকে বলে, ” ভালো কথা বলছস, এর জন্য তুই বখশিশ পাবি! ”
মুবিন সীমান্তর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মিছিলের দিকে লজ্বামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ” বলো মিছিল মনি কোথায় যেতে চাও তুমি? তুমি যেখানে বলবে সেখানেই যাবো! ”
গোল হয়ে বসে থাকা সব আড্ডা পোকাগুলো একসাথে, ” হোওওওওও! ” মতো শব্দ করে ওঠে। মিছিল কপাল কুচকে মুবিনকে একটু পরখ করতে চাচ্ছিলো। এতোগুলো পোলাপানের সামনে এই ন্যাকামি করার মানেটা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলো তার আগেই সব বেয়াদবগুলার এরকম আওয়াজে আক্কেলগুড়ুম হয়েছে মিছিলের। মুবিন আমায় জ্বালাতন করছে আর এরা কিনা মুবিনকে চিয়ার-আপ করছে? মুবিনকে উৎসাহ দিচ্ছে?
মিছিল প্রচন্ড রাগ আর বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে মুবিনের দিকে। মন চাচ্ছে এক্ষুনি মুবিনের এই ক্যাবলা হাসি ওয়ালা মুখটা ঘুষি মেরে ভচকায় দিতে। কিন্তু সে অপরাগ, কারন মুবিন এমনদৃষ্টে তাকিয়ে আছে যেনো সে বুঝেই ফেলেছে মিছিল মনে মনে ঠিক কী ভাবছে। আর সবটা বুঝেই সে এভাবে বেপাত্তাভাবে তাকিয়ে আছে, মিছিল তাকে মারুক, কাটুক, বকুক তাতে তার কিছুই যায় আসে না। সে এরকম করবেই!

মিছিলের রাগিদৃষ্টেও যখন মুবিনের কিছু এলো গেলো না তখন মিছিল একটু হতাশ হলো। হতাশ হলেও তার রাগ বা বিরক্তি কিছুই কমেনি। মিছিল তার কন্ঠে যথেষ্ট পরিমান তীব্র বিরক্তি মাখিয়ে ধুরছাই কন্ঠে বলে, ” আমার এসব ট্রিপ-ফ্রিপে ইন্ট্রেস্ট নাই। তোরাই যা! ”
– ” তুমিও না বাল। একটা রসকষহীন আইটেম, ট্রিপে কার ইন্ট্রেস্ট থাকে না? ”
মিছিল চোখ দুটো খানিক উপরে টেনে বলে, ” এইযে আমি! আমার ইন্ট্রেস্ট থাকে না! ”
– ” আচ্ছা ইন্ট্রেস্ট থাকা লাগবে না। আমাদের সাথে তো যাবা নাকি? ”
– ” ইন্ট্রেস্ট’ই যখন নাই তখন যাবো কেনো? তোমার চেদারাখান দেখতে? ”
মুবিন টিটকারি মেরে বলে, ” আমি জানি তো তুমি আমায় ভালোবাসো, আমার চেহারা তোমার অতিপ্রিয়, আমার চেহারাখানা না দেখে তুমি থাকতেই পারো না, আমার চেহারাখানা না দেখলে যে তোমার মনখারাপ থাকে সেটা জানিতো আমি। এসব সবার সামনে বলার দরকার আছে নাকি? এসব তো তোমার আর আমার ভেতরকার কথা, মোটেই এসব আর পাবলিকলি বলবা না! ”
মুবিনের কথায় সবাই হো হো শব্দে চারপাশ কাপিয়ে হেসে ওঠে। মিছিল পারছে না রাগে ক্ষোভে চিল্লিয়ে একটা দৌড় মারতে, একদম উসাইন বোল্টের মতো দৌড়। এই ছেলেটা কীভাবে পারে এতো জ্বালাতে, এতো বিরক্ত করতে? প্রত্যেকটা কথার কাউন্টার না করলেই কী হয় না? প্রত্যেকটা কথার পিঠে কথা তার তৈরী’ই থাকে। মুবিনের দিকে মুখ লাল করে তাকিয়ে এসব ভাবছে মিছিল।

মুবিন মিছিলের নাকের ডগার সামনে একটা তুড়ি মেরে বলে, ” এভাবে তাকায় আছো কেনো? বাদাম ছুলো, পরে দেইখো আমায়। আর কত দেখতে মনচায় তোমার? এতো দেখো, সারাদিন দেখো তবুও পেটভরে না তোমার? ”
মিছিলের রাগ এতক্ষন মাথায় ওঠা অবস্থায় ছিলো, মুবিনের কথা শুনে রাগ এখন দৌড়ে চুলের আগায় উঠে গেছে। চুলের আগা থেকে উড়ে এখন আকাশে প্রস্থানের পরিকল্পনা করছে মিছিলের রাগেরপাল। মিছিল মুবিনের বাহুতে নিজের কোদালের ন্যায় বড় নখ দিয়ে গায়ের সমস্ত জোর খাটিয়ে একটা চিমটি দিয়ে বলে, ” মুবিইন্না! তুই যদি আরেকবার এরকম ন্যাকামি মারাইছস তো দেখিস। লিমিট থাকে একটা, তুমি লিমিটের মা-বইন করে দিচ্ছিস একদম। ”

মুবিনে নিজের বাহুর যন্ত্রনায় কাতর। মুখ সরু করে ছোট ছোট, ” উহ! ” আওড়াতে আওড়াতে মুবিন বলে, ” জানু তুমি না দিন দিন খুব বেশিই নটি হয়ে যাচ্ছো। কালকে কামড় দিয়ে প্রায় মাংস উঠায় ফেললা, আর আজ এই মিলিটারি চিমটি। আমায় কী গিলে খেয়ে ফেলতে চাচ্ছো নাকি তুমি? ”
মিছিল কান-কর্তাল ফাটিয়ে বিকট চিৎকার দিয়ে বলে, ” মুবিইইইন্না! তুই চুপ করবি? নাকি আমি তোর খুন করে জেলে যাবো! ”
মুবিন খিটখিট করে হাসে। গোল হয়ে বসে থাকা সবাই বিনামূল্যের বিনোদন উপভোগ করছে, মজালুটে হেসে হেসে মাঠে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

সব গড়াগড়ি লড়ালড়ি’র পর ঠিক হলো সবাই মিলে পাঁচদিনের জন্য ‘জাফলং’ যাবে। মিছিলকেও রাজি করালো মুবিন, অবশ্য মুবিন একা রাজি করায়নি! সবাই মিলে মিছিলের কানের পাশে ” চল না মিছিল, চল না মিছিল! ” বলে মাছির মতো ভনভন করে মিছিলকে রাজি করিয়েছে। এতোগুলো মাছির ভনভনের শব্দে অতিষ্ঠ হয়েই মিছিল রাজি হয়েছে। পুরো ২১ জন মিলে তারা ট্রিপে যাবে, সবাই মিলে ঠিক করেছে চট্রগ্রাম থেকে সিলেট তারা ট্রেনে করেই যাবে। কারন ট্রেনভ্রমনের অভিজ্ঞতাটা সবারই অল্প, তাই তারা ট্রেনভ্রমনের স্বাদ নিতে চায়। আর তাছাড়া সড়কপথ ছাড়া রেলপথ অনেকটাই স্বস্তির। একদম যানজটহীন স্বস্তির ভ্রমন…!

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে!♥
” Tanvir’s Writings “

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে