গল্পঃ ক্যারিয়ার ( চতুর্থ পর্ব )
শুভ ও মুনের ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করার ঠিক আগ মুহূর্তে তুলির কল আসে। শুভ কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা সাইডে রেখে দেয়।
মুন আবার তার ঠোঁট এগিয়ে দেয় শুভর ঠোঁটের কাছে, কি একটা অবস্থা! আবহাওয়া প্রায় বৈরী।
হঠাৎ শুভ পেছনে সরে যায়। মুন অবাক হয়ে বলে,– কি হলো আপনার?
শুভ বললো,– দাঁড়াও দাঁড়াও। আমরা না আজ রাতের খাবার বিরিয়ানি খেয়েছি!
: হ্যা, তো কি হয়েছে?
: এখন কিস খাওয়া যাবেনা মুন।
: মানে! চুমুর সাথে বিরিয়ানির কি সম্পর্ক?
: আছে মুন আছে, এই মূহুর্তে চুমু খেলে বদ হজম হতে পারে।
: হা হা হা, কিসব হাস্যকর কথা বলছেন শুভ!
: আরে হাস্যকর নয়, মারাত্মক সিরিয়াস।
: যেমন!
: ধরো পেটের বিরিয়ানি এখনও পুরোপুরি হজম হয়নি, এই অবস্থায় চুমু খেলে মন অন্য বিষয় নিয়ে এক্সাইটেড হয়ে পড়বে, মন আর বিরিয়ানি হজমের দিকে মনোনিবেশ করতে পারবে না। চুমু খেয়ে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাবে, ব্লাডের দ্রুত চলাচল, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করবে। তখন পাকস্থলী ডিস্টার্ব হয়ে হজমে গন্ডগোল বাঁধাবে। বুঝতেই পারছো পরবর্তী বিষয়টা বেদনার!
: হা হা হা, কিন্তু এরকম তো কোনো ডাক্তার কখনও বলেনি!
: আরে পাগল যেমন গানে আছে– সব কথা বলেনা হৃদয়। ঠিক তেমন সব কথা বলেনা ডাক্তার, নিজেদেরও হুঁশ হয়ে চলতে হয়, তবেই জীবন আনন্দময়।
: শুভ, আপনার কি মনে হয় আমি ফিডার খাই?!
: একদম না, ফিডার খাবার বয়স তোমার নেই, তুমি নিজেই তো বিয়ে-শাদি করে বেবিদের খাওয়াবা।
: হা হা হা, হাউ ফানি!
: আরও একটা মারাত্মক বিষয় আছে মুন!
: কি সেটা?
: আমাদের গল্পের দুষ্ট মিষ্টি পাঠক পাঠিকা!
: তারা আবার কি করলো?
: আরে আমরা চুমু খাবার আগেই তারা গুজব ছড়ায় শুভ বজ্জাত, লুচ্চা, বউ রেখে মুনকে কিস করসে, পরোকিয়া করসে। আর চুমু যদি খেতাম তাহলে তো বলতো শুভর কিস খেয়ে মুন গর্ভবতী! কিএক্টা অবস্থা। ভাবা যায় এগুলা!
: হা হা হা, আপনার কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না!
: আরে হাসো কাঁদো যা-ই করো, কিস খেতে চেয়োনা আর।
: শুভ, এতকিছু না বলে আসল কথাটা বললেই তো হয়, তুলির কথা মনে পড়েছে তাই না?!
শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর নীরব হয়ে রইলো।
মুন বললো,– আরে আবার কী হলো?
শুভ আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– মনে ঘরেই যার বসবাস তাকে মনে পড়ার কি আছে মুন! সে তো মনের ঘরেই বিচরণ করছে সারাক্ষণ, ক্ষনে ক্ষনে জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি। মুন, দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক যুবতী পাশাপাশি থাকলে সেখানে একজন শয়তান উপস্থিত হয়ে তাদের মধ্যে খারাপ কিছু ঘটানোর চেষ্টা করে, এই চুমু, শারীরিক মেলামেশা এসব। কয়েক মিনিটের শারীরিক চাহিদা মিটে শরীর ক্লান্ত হবার পরেই সবাই উপলব্ধি করতে পারে কাজটা ঠিক হয়নি, কারণ এটা অবৈধ। তুমি তোমার শরীর মেলে ধরলে আমার সামনে, আমিও মেতে উঠলাম তোমার শরীরের মোহে, তারপর সারাজীবন মনের মধ্যে এই অবৈধ মেলামেশার একটা অপরাধবোধ কাজ করবে। তোমার শরীর তোমার স্বামীর হক, সেটা নষ্ট করলে যখন স্বামীর সাথে একান্ত মূহুর্ত কাটাবে, তখন তোমার মনেও অপরাধ বোধ কাজ করবে। তোমার মনে হবে এই শরীর অন্য কেউ ছুঁয়েছিল, তার মানে তোমার স্বামী তার অজান্তেই ঠকেছে।
মুন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুভর কথা শুনছে।
শুভ আবার বলতে লাগলো,– মুন বিশ্বাস করো তোমার প্রতি আমি একটুও আকর্ষণ বোধ করিনা, যতটা তুলির প্রতি আমি দূর্বল। শয়তানের ধোঁকায় পড়লেও আমার বিবেক বাঁধা দিচ্ছিল। তুলির স্পর্শে যে ভালোলাগা, যে সুখানুভূতি কাজ করে, সেটা হয়তো অন্য কারো বেলায় সম্ভব না, সম্ভব হলেও চাইনা, আমার সবকিছু তুলিতে অভস্ত্য, ঐ তুলি দিয়ে আমি আমার মনের ক্যানভাসে স্বপ্ন সাজাই, সেটা অন্য কাউকে দিয়ে সম্ভব না। এ আমার বিশ্বাস, নয় ধারণা।
মুন বললো,– এতই যখন মিস করছেন তাহলে যাচ্ছেন না কেন তুলির কাছে?
শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– মন তো এমনিতেই সারাক্ষণ ছুটে যায় তার কাছে, পড়ে থাকে তার উঠোনে।
: তাহলে যাচ্ছেন না কেন তার কাছে, নিজেকে কষ্ট কেন দিচ্ছেন?
: মুন ভালোবাসার মানুষটার দেয়া অল্প আঘাতও শতগুণ হয়ে কলিজায় লাগে।
: হ্যাঁ, তা তো ঠিক।
: তুলি আমার সাথে যে ব্যবহার করলো সেটা আমি মানতে পারছি না, ওর ক্যারিয়ার ওর অহংকার আমাকে তুমি থেকে তুইতে নামালো। তারপর এতগুলো দিন অতিবাহিত হলো একবার স্যরি বলার প্রয়োজন মনে করলো না। আমার এতটাও খারাপ দিন আসেনি যে তুলির অহঙ্কারের সামনে মাথা নত করতে হবে। সে যদি ভাবে তাকে প্রচুর ভালোবাসার টানে আমি ছোট হয়ে তার কাছে ফিরবো, তবে সেটা ভুল। সে যদি তার অহংকার বজায় রাখে, তবে তার প্রতি আমার সকল ভালোবাসাও আমি লক করে মনের ঘরে যত্নে রেখে দেবো, প্রকাশ করতে যাবো না। গেলেই তার অহংকার তার কাছে আরও প্রশ্রয় পেয়ে যাবে।
সবকিছু শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুন বললো,– আসলে মজনুর মুখে আপনার সম্পর্কে সবকিছু শুনে মায়ায় পড়ে যাই, তুলির প্রতি আপনার ভালোবাসার কথা শুনে ভীষণ মুগ্ধ হই। আবার তুলির দেয়া আঘাতে আপনাকে ছটফট করতে দেখে ভাবতে থাকি আপনার মতো একজন মানুষ পাওয়া প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন, কিন্তু তুলি আপনাকে পেয়েও কেন বুঝলো না! আপনাকে নিয়ে দিনরাত ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই আপনার প্রেমে পড়ে যাই। আসলে সিনেমায় কোন প্রিয় চরিত্রের প্রেমে পড়লে আমরা যেমন নিজেকে সেই চরিত্রে ভাবতে ভালোবাসি, তুলির প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখে নিজেকে ভুল করে তুলির স্থানে ভেবেছিলাম, এই আর কি।
শুভ মিষ্টি হেসে বললো,– তুমি আমার চেয়েও অনেক বেশি ভালো কাউকে পাবে, আমি তো সেকেন্ড হ্যান্ড মাল!
শুভর কথা শুনে মুন হেসে ফেলে বললো,– সেকেন্ড হ্যান্ড মাল হলেও আপনি এমন একজন মানুষ, সবার প্রথম চয়েস হয়ে থাকবেন। আচ্ছা যা-ই হোক, তুলি কল দিয়েছিল ব্যাক করে দেখেন হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্যরি বলতে চাইছে।
শুভ মোবাইল হাতে নিয়ে তুলির নাম্বারে কল দিলো, রিসিভ করে ওপাশ থেকে তুলির মা মানে শুভর শাশুড়ী বললো,– বাবা তুলির ফোন আমার কাছেই, কি যে একটা অবস্থা, তোমাদের টেনশনে আমার রাতের ঘুম শেষ, তোমাদের এই ঝামেলা এত মারাত্মক আকার ধারণ করবে ভাবিনি! তুমি সকালে বাসায় এসো কিন্তু।
শুভ বললো,– তুলি কোথায়?
শ্বাশুড়ি বললো,– বাসায় আছে, কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে না।
কথা শেষে ফোন রেখে দিলো।
মুন পাশের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো, শুভর আর ঘুম হলো না।
সকাল হতেই শুভ তড়িঘড়ি করে রওয়ানা হয়ে তুলির বাবার বাসায় এসে দরজায় নক করলো…
চলবে…
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।