গল্পঃ ক্যারিয়ার। ( দ্বিতীয় পর্ব )
সকালে শুভর ঘুম ভাঙতেই তুলির ঠোঁটে চুমু খেয়ে ঘুমন্ত তুলিকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে বারান্দায় এসে দাড়ালো, তুলির চোখে রোদ পড়তেই ঘুম ভাঙলো। কোলে বসেই তুলি বললো,– প্রতিদিন বউকে রোদে দিতে হবে! বজ্জাত স্বামী একটা।
শুভ মুচকি হেসে বললো,– রোদে দিয়ে তরতাজা রাখি আরকি, সকালের মিষ্টি রোদ আমার মিষ্টি বউটা মিস কেন করবে। বউ রেখে সার্থপরের মতো আমি একলা কেন উপভোগ করবো বলো।
তুলি মিষ্টি হেসে শুভর বুকে একটা চুমু খেয়ে বললো,– ভাই এমন একটা সুইট জামাই পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার, আমি সত্যিই ভাগ্যবতী।
শুভ তুলিকে কোল থেকে নামিয়ে বললো,– ভাই সেটা এতবছর পরে অনুভব করলা?
তুলি শুভর গালে চুমু খেয়ে বললো,– বুঝছি প্রথম থেকেই বস, মুখে না বলে ভালোবাসা দিয়ে প্রকাশ করে গেছি।
এই যে শুভ তুলির এতএত ভালোবাসা, এই ভালোবাসা নষ্ট হবার একটা মারাত্মক বিষয় হলো তুলির বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। বিয়ের পরে শুভ বারবার বাচ্চা নিতে চাইলেও তুলি চায়নি। ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে বিয়ের পর অনেক বছর পেরিয়ে গেল। আসলে বিয়ের পরপর একটা মেয়ের গর্ভধারনের ক্ষমতা যতটা বেশি থাকে, বিয়ের পরে দীর্ঘদিন জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি গ্রহনের কারণে ধীরে ধীরে সেই ক্ষমতা হারায়। বেশি দেরি করলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তুলির ক্ষেত্রে এটাই সমস্যা।
যা-ই হোক। শুভ তুলিকে বললো,– যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, আমি নাস্তা রেডি করছি, আপনার অফিস যেতে হবে তো ম্যাম।
তুলি মিষ্টি হেসে বললো,– এর জন্যই এখন আর আমার নিজেকে নিয়ে ভাবতে হয়না, তুমি আছো বলে, ভাবতে হবেনা তুমি থাকবে বলে কিউট জামাই আমার।
ফ্রেশ হয়ে দুজনে সকালের নাস্তা করে রেডি হলো, যে যার অফিস যাবে।
প্রতিদিনের নিয়মে অফিসে যাবার পূর্বে দুজন দুজনকে চুমু খেলো।
হঠাৎ শুভর ফোনে কল আসলো, রিসিভ করতেই শুভর মা বললো,– শুভ মিলির ছেলে সন্তান হয়েছে, তুই মামা হয়েছিস, ওরা হাসপাতালেই আছে, তুই তাড়াতাড়ি বউমাকে নিয়ে আয়।
মিলি হচ্ছে শুভর ছোট বোন।
বোনের সন্তানের খবর শুনে শুভ যতটা আনন্দিত হয়েছে, আবার নিজে আজও একটা সন্তানের বাবা হতে না পারার হতাশায় ঠিক ততটাই ভেঙে পড়েছে।
নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে শুভ তুলিকে বলেই ফেললো,– ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে সবকিছু বরবাদ করে দিলে, সবকিছুর যোগ্যতা আছে কিন্তু ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটে নিজে মা হবার যোগ্যতা হারালে, সাথে আমাকেও বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত করলে, ক্যারিয়ার নিয়ে হ্যাপি তো এবার।
তুলি ভ্রু কুঁচকে বললো,– শুভ তোমার কথামতো তখন বাচ্চা নিলে আজ হয়তো আমি এতদূর পর্যন্ত আসতে পারতাম না, আর এই যে এত এত ভালোবাসা দেখাচ্ছো এটা আমার ক্যারিয়ার দেখেই, সুতরাং কথা বাড়ানোর চেষ্টা করোনা।
তুলির কথায় মনে ভীষণ আঘাত পেলো শুভ, অনিচ্ছাকৃত হেসে শুভ বললো,– বাহ! সত্যটা তাহলে প্রকাশ পেলো। তোমার মনে হয় তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা তোমার জব দেখে, ভালো বেতন দেখে, বাহ! তুলি বাহ! তাহলে তোমার চাকরি হবার আগে যেটা ছিল সেটা কি ভালোবাসা মনে হয়নি? নাকি তুমি একদিন অনেক বড়ো চাকরি করবে সেটা ভেবে তখনও তোমাকে ভালোবাসার অভিনয় করেছি। আরে বাচ্চা হবার পরেও তো কতশত মেয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে, অসংখ্য প্রমান আছে তার, শুধু তোমার ক্ষেত্রেই বাচ্চা তোমার ক্যারিয়ারে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতো তাই না? যত্তসব ফালতু লজিক। যে মেয়ের মনে হয় তার স্বামী তাকে তার ক্যারিয়ার দেখে ভালোবাসে, সেই অহংকারী মেয়েকে জীবনসঙ্গী করাটাই জীবনের বড়ো ভুল।
তুলি মেজাজ গরম করে বলে ফেললো,– আর তোর মতো ছোটখাটো অফিসার ফাইলপত্র নিয়ে সিরিয়াল ধরে আমার অফিসের সামনে রোজ। তোকে ভালোবেসে আগলে রেখেছি এটাই তোর ভাগ্য, কথাটা মনে রাখিস, আমি অহংকারী মেয়ে তাই না!
শুভ ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– বাহ! তোমার ক্যারিয়ার আমাকে তুমি থেকে টেনে তুইতে নামিয়ে আনলো কত সহজে! তোমার অহংকার আর ক্যারিয়ার নিয়ে সংসার করো। আমি আমার রাস্তা দেখে নেবো।
কথা শেষে শুভ হনহন করে হেটে চলে গেল। তুলিও চলে গেল তার অফিসে।
তুলি বাসায় ফেরেনি, সোজা বাপের বাড়ি, ফোন বন্ধ। শুভও আর খোঁজ করেনি। যে যার মতো। বিয়ের পরে থেকে একটা রাতও শুভ তুলিকে ছাড়া থাকেনি, তবে কি এবার বাড়বে দূরত্ব দুজনার?
চলবে…
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।