কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৯

0
605

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৯

লামা বাড়ি ফিরলো ভোর রাতের দিকে,পুরো,রাত নাইট ক্লাবে ম’দ আর জু’য়া খেলায় মত্ত ছিলো।রাতে এসে কলিং বেল বাজচ্ছে তো বাজাচ্ছে। শেফালী বেগম এসে দরজা খুলে দিলো।
লামা ভেতরে, ঢুকতেই শেফালী বেগম বলে,এটা ভদ্র বাড়ি। আর তুমি এবাড়ির বউ এভাবে সারা রাত বাহিরে কাটিয়ে কোন ভদ্র বাড়ির বউ বাড়ি ফেরে না নিশ্চয়ই?
‘বুড়ো মানুষ ভদ্রতা আর আধুনিকতার কি বুঝবেন!আর ভদ্র বাড়ি, কথাটা বলেই উচ্ছ স্বরে হেসে বলে,আপনার ছেলের সাথে তো আগে লেট নাইট পার্টি করতাম। আরো কত কি করতাম। তা তখন আপনার ছেলের কি মনে ছিলো না, সে ভদ্র বাড়ির ছেলে?
‘দেখো ছেলে মানুষ আর মেয়ে মানুষ এক না!
‘এসব বলে আপনি গেঁয়ো ইরহাকে বোঝাতে পারতেন, কিন্তু আমাকে এসব বুঝ দিলে হবেনা। ছেলেরা যা ইচ্ছে করতে পারে বলে,তাকে ছাড় দিবেন আর বউ,করলে দোষ!
রুবিও উঠে এসেছে তার মায়ের সাথে। শ্বশুর বাড়ি থেকে প্রায় ছ’মাস পরে এসেছিল। কিন্তু নিজের বাসার পরিস্থিতি দেখে ইচ্ছে করছে, এক্ষুনি চলে যেতে।
রুবি বলল,মা সুস্থ মানুষের সাথে কথা বলা যায়। অসুস্থ মানুষের সাথে না। এদের থেকে ভদ্রতা আশা করা বোকামি। আমি তো চলে যাবো কিন্তু সারাজীবন তোমার আর তোমার ছেলের এসব সহ্য করতে হবে।
‘লামা কোন কথার উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।
রবিন যদিও লামার আসার টের পেয়েছে তবুও চুপ করে রইলো এই মূহুর্তে লামার সাথে ঝামেলা করার মুড নেই। তাই একি ভাবে ঘুমের ভান ধরে পরে রইলো।

‘রুবি শেফালী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,মা’ জীবনে বড় একটা ভুল করলে,এই ভুল তোমার সুখের সংসারকে কোথায় নিয়ে যায় দেখো।একটা ভদ্র, ভালো মেয়ে যেমন পরিবার আর নিজের সংসারকে রাঙিয়ে তুলতে পারে। ঠিক একটা বাজে মেয়ে একটা পরিবার আর সংসারকে আমাবস্যার রাতের মত অন্ধকার করে তুলতে পারে। আর তুমি তো নিজের হাতে আলো কে তাড়িয়ে দিয়ে আঁধার ডেকে আনলে।
“আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। ঘরের লক্ষীকে পায়ে ঠেলে, কাল সা’প ঘরে তুলেছি। আমি ফিরিয়ে আনবো আমার ঘরের লক্ষীকে।
‘রুবি হেসে বলে,সময় থাকিতে যারে হেলায় হারিয়েছো। অবেলায় তার খোঁজ করা বোকামি ব-ই কিছুই না।


সন্ধ্যার পর থেকেই ইরহার মনটা বেশ খারাপ। আজকে প্রতিবেশীদের মধ্যে কিছু মহিলা বাসায় এসেছিলো। একজন বললো, তোমার মেয়েটার কপাল কত খারাপ দেখলে, যে এক স্বামীর ঘর করতে পারে না। সে আর কোন স্বামীর ঘরও করতে পারবে না। তোমার মেয়ের জীবনে আর সুখ নাই। আবার হইছে একটা মেয়ে। ছেলে হলেও বড় হয়ে নিজের মায়ের দেখাশোনা করতে পারতো। এখন তো উল্টো এই মেয়েকে লাখ, লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে হবে।এক ছেলের কামাইয়ের সংসার তোমাদের এখন দু’জনকে টানতে হবে।
আরেকজ বললো,স্বামীর ঘর করা কি এতো সহজ! আজকালের যুগের মেয়েরা, পান থেকে চুন খসলেই ডিভোর্স, ডিভোর্স করে।বাপু আমারা এতো বছর বছর সংসার করি ওসব তো কখনো মুখে আনিনি। কম তো ঝড়ঝাপটা পার করিনি জীবনে। শোন মেয়৷ ধৈর্য নিয়া স্বামীর ঘর করতে হয়। বেডা মানুষ একটু আধটু চরিত্রের দোষ থাকবোই। হেরে নিজের জালে বেঁধে রাখতে জানতে হয়। ছটফট করে ছেড়ে যে আসলা!নিজের আর নিজের মেয়ের ভবিষ্যতেে চিন্তা করলা না!
আরেকজন বলে,বাদ দেও আমাগো কি!নিজের ভুল যখন নিজে বুঝবো তখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া উপায় থাকবো না। ভাই ভাবির সংসারে থাকা কি এতো সোজা। দিন যাক পরে বুঝবো।
কথাগুলো বিষিয়ে তুলছে ভেতর থেকে ইরহাকে। আচ্ছা এখানে দোষটা কি ইরহার! সে কি ইচ্ছে করে নিজের সংসার ছেড়ে চলে এসেছে? আচ্ছা এই সমাজ আর সমাজের মানুষগুলো এমন কেন! তারা কোন মেয়ের ডিভোর্স হলে বা ধর্ষণ হলেও মেয়েটাকেই ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। অথচ তাদের সাথে যে-বা যারা অন্যায় করেছে তাদের দেখে না। এই উল্টো নিয়মে কতদিন চলবে মানুষ! কেউ কি বুঝবে না। মেয়েরা যদি মেয়েদের কষ্টটা না বোঝে তাহলে কে বুঝবে? নিজের সখের সংসার নিজের হাতে কে শেষ করতে চায়? ধৈর্যের নামে কি দিনের পর দিন সমাজের দোহাই দিয়ে মেয়েরা অত্যাচারিত হবে!কে দেবে এই সব উত্তর!আকাশের পাণে দৃষ্টি রেখে বলে,আল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্য দাও। আমার মেয়েটার জন্য আমাকে সব সহ্য করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যার কেউ নেই তারজন্য তুমি আছো খোদা।
এমন সময় ফরিদা বেগম নিজের মেয়ের কাঁদে হাত রাখলো।
ইরহা ঘুরে নিজের মা’কে দেখে জড়িয়ে ধরলো। কেঁদে কেঁদে বলে,আমি কি করতাম মা! ওই মানুষটা দিনের পর দিন আমার আড়ালে অন্য মেয়ের সাথে কাটিয়েছে। যেদিন আমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করে তার সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে ব্যাস্ত। তখন সে আমাকে সতীন উপহার দিলো। আমি কি করতাম বলো মা!
‘কাঁদিস না। লোকের কথা কানে তুলতে নেই, তুই জানিস তুই সঠিক কাজ করেছিস। কে কি বললো সেসব শোনার প্রয়োজন নেই। মানুষ আমাদের কষ্ট দেখে হাসবে,অথবা দূর থেকে করুণা করবে।কেউ সেই কষ্টের ভাগ নেবে না। তুই আমার মেয়ে আমি জানি তুই ঠিক কাজ করেছিস। তাই নিজেকে সামলে নে। এসব কথা শুনতে হবে। তবে এক কানে শুনবি,অন্য কান দিয়ে বের করে দিবি।এসব কথা মাড়িয়ে চলতে হয়। নিজেকে প্রমাণ কর মা।
‘ইরহা বললো, আমাকে যে পারতেই হবে!আমার প্রিন্সেসের জন্য। আর এরচেয়ে বড় বিষাদ কাটিয়ে উঠেছিলাম। এটাও পারবো।
“হয়তো আমাদের একটা ভুল ডিসিশনের জন্য তোর কপালে এ দুঃখ। সেদিন যদি….
এতোটুকু বলতেই, ইরহা বলে,বাদ দাও মা’পুরোনো কথা টেনে কি লাভ?আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে, এখানে কারো কোন দোষ নেই। ফরিদা বেগম বলেন, যাহহ নিজের প্রিন্সেসের পাশে শুয়ে ঘুমা। বাকি কথা আগামীকাল সকালে হবে।

ফরিদা বেগম চলে গেলেন। ইরহা নিজের বালিশে মাথা রেখে হুট করে সেই দিনের কথা ভাবতে লাগলো, যেদিন শেষ বারের মত টেক্সট এসেছিল ….

তুমি চলে যাওয়ার পর, আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি, ঠিক আগের মত। আগেও আমি ছিলাম শুধুই আমার।হুট করে তুমি এলে, একাকি জীবনে জোনাক জ্বেলে। আবার মিলিয়ে গেলে অন্ধকারে।
যতটুকু আলো জ্বেলেছিলে, ততটুকু আঁধার দিলে।
“আমি নিজেকে আবদ্ধ করে নিলাম, একলা আমি আমার মাঝে।

তারপর আর কোনদিন সেই চেনা,নাম্বার থেকে কোন খুদে বার্তা আসেনি৷ আর কখনো শোনা হয়নি সেই প্রিয় কন্ঠ। সময় দ্রুত পাল্টে যায়। চোখের পলখে নিজের মানুষ অন্যের হয়ে যায়। যাকে ছাড়া এক মূহুর্ত কল্পনা করা যেতো না, তাকে ছাড়াই জীবন পার করে দিতে। আমরা শিখে যাই নতুন করে বাঁচতে, নতুন করে ভালোবাসতে৷ কিন্তু কোথাও না কোথাও অতিতের সেই প্রিয় বিষাদ আমাদের সাথে থেকে যায়।সুখের সময় তার কথা মনে না আসলেও, হুট করে দুঃখ পেলে তার কথা মনে পরে যায়। মনে হয় ওই মানুষটা থাকলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো। হয়তো এই বিষাদগুলো আমাকে ছুঁয়ে দিতে পারতো না।
আসলে তো মানুষ নিতান্তই বোকা। তারা তো জানেইনা, যেখানে গভীর ভালোবাসা, সেখানেই বিষাদ।যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে বিষাদও নেই। আমরা বোঁধ হয় ভালো না বাসলেই, সুখে থাকতাম। অথচা আমরা ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতেও পারি না। আবার ভালোবাসা মানে নিজের সুখকে জিম্মি রাখা আরেকজনের কাছে।আমরা যেনো,বন্দী আছি নিজেদের প্রহেলিকায়। অবশেষে একটা কথাই মন বলে উঠে #কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর? ‘ঘর ছাড়া যে নারীর জীবন সমাজে বড্ড পর!!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে