কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৮

0
627

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৮
কারো কর্কশ কন্ঠ শুনে নিচে তাকাল ইরহা৷ এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোক। ইরহা নিচে আসতে, আসতে লোকটা চলে, যায়। ইরহা মনে মনে বলে,ইশশ সরি বলা হলো না। বাসার গেটে ঢুকবে তখন খেয়াল করে একটা ফাইল। ফাইলাটা হাতে উঠিয়ে নেয়। উপরে লেখা অবনী টেক্সটাইল গ্রুপ। ইরহা আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে উপরে চলে আসে৷ ফাইল রেখে কিচেন যেয়ে সবার জন্য নাস্তা বানায়। সবার জন্য নাস্তা বানানো শেষ করে টেবিলে সাজিয়ে রাখছে,এমন সময় নিশাত আসে ডাইনিং রুমে,নিশাত তাচ্ছিল্য সুরে বলে,বাহহহহ ভালোই হলো, তোমার পিছনে খাবার খরচটা ওয়েস্ট হবে না। তার বিন্দু তুমি সব কাজ করে দেবে।
‘নিজের বাসার কাজ করতে আবার এসবের কি আছে!
‘নিজের বাসা!তোমার বাসা কোথা থেকে আসলো? শুনো এটা তোমার বাপের বাড়ি, আর বিয়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়িতে কোন অধিকার থাকে না।
ইরহা কিছু,না বলে,নিজের রুমে চলে আসলো, নওশাবার ডায়পার চেঞ্জ করে দিয়ে,নিজের পুরোনো সার্টিফিকেট আর কিছু কাগজপত্র বের করলো। কাগজ পত্র ঘাটতে ঘাটতে হুট করে হাতে আসলো,পুরনো সেই চিঠিখানা। যা লিখা তো হয়েছে, কিন্তু প্রাপ্রোকের নিকট পৌঁছানো হয়নি। সাদা কাগজে কালো কলির লেখাগুলো কেমন পুরোনো হয়ে গেছে,চিঠির লেখাগুলোতে চোখ বুলাতে চেয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।মানুষ ভুলে যেতে যেতে মনে রেখে দেয়। স্মৃতি কি আর পুরোনো হয়? মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়ার মাঝে হারিয়ে যায়। আবার হুট করে তা তাজ হয়ে উঠে!যেনো সদ্য ফোটা কাটা যুক্ত গোলাপ। যার সৌন্দর্য আবিষ্ট করে রেখেছে কাটার বাহার৷ তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া যায়, তবে ছুঁতে গেলেই দুঃখ হয়ে যায়। পুরো চিঠিতে চোখ বোলাতে বোলাতে, দৃষ্টি আটকে গেলো শেষ কিছু লাইনে…..
‘তুমি আমার জীবনে প্রভাতের প্রথম আলোর মত এসেছিলে,আমার একাকি জীবনে, গুমেট মেঘ সরিয়ে আলোর ফুয়ারা জ্বালিয়েছিলে!
তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই, নেই কোন অভিমান। যে হাত সারাজীবনের জন্য ধরে রাখতে পারবো না। সে হাতের প্রতি তবু কেন এতো,টান?
যার জন্য চিঠিটা লেখা হয়েছিল, তাকে পাঠানো হয়নি!অভিমান, অভিযোগ এসে ভীড় করে চিঠিটা আর পৌঁছানো হয়নি। ইরহা আবার ভাজ করে চিঠিটা রেখে দিলো। মনে, মনে ভাবছে কি অদ্ভুত তাই না। যে আমাকে ভালোবেসেছিল,তাকে হারিয়ে যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম আজ আমি তাকেও হারালাম। আমার নাম ইরহা না হযে বিষাদ হওয়া দরকার ছিলো! এরমধ্যেই নাদিম রুমে আসলো,ইরহা বলে, ভাইয়া কিছু বলবে?হ্যা বলতাম তুই চাইলে আমার ফ্রেন্ড আবরারের অফিসে জবের জন্য এপ্লাই করতে পারিস। ওরা তো ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করে। তুই বললে, আমি কথা বলে,দেখবো।
‘না ভাইয়া।জব করলে অন্য কোন কোম্পানিতে করবো।পরিচিত কারো সহায়তা দরকার নেই। নিজের যোগ্যতায় কিছু করবো।
‘তোর যা ভালো মনে হয় কর।আর হ্যা জব করতেই হবে এমন কিন্তু নয়। তোর ভাই যতদিন বেঁচে আছে ততদিন কোন টেনশন নেই।
‘তা আমি জানি ভাইয়া।আচ্ছা ভাইয়া বেতন পেয়ে আমাকে সেলাই মেশিন, আর এম্বরোটারি,এই দুই, তিনটা মেশিন কিনে দিও।
‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি অফিসে যাচ্ছি।

নাদিম অফিসে চলে গেলো।
বাসায় সাবাই মিলে ভালোই সময় কাটাচ্ছিলো। ফরিদা বেগম, লাবিবা সবাই ইরহাকে খুশি রাকার চেষ্টা করছে। যত যাই করুক একটা মন দু’বার ভাঙ্গার যন্ত্রণা তো কম কথা না! নিজের হাতে সাজানো সংসার অন্য কেউ দখল করে নিলো। চোখের পলকে নিজের সব কিছু অন্যের হয়ে গেলো, এ শোক যে হৃদয় পোড়াচ্ছে। সে পোড়া গন্ধ কেউ পায় না৷ সে দগ্ধ হৃদয় কেউ দেখে না।
সবাই কথা বলছে এমন সময় কেউ একজন কলিং বেল বাজাচ্ছে। লাবিবা যেয়ে দরজা খুলতেই মধ্য বয়স্ক লোকটা বলে,এই মেয়ে তোমার জন্য আজ আমার এতো বড় লস হলো। এর দায়ভার কে নেবে?
‘লাবিবা চিৎকার দিয়ে বলে,মা গো পাগল এসেছে।
‘লোকটা ধমক দিয়ে বলে,নিজের বাবার বয়সী একজনকে পাগল বলছো?বেয়াদব মেয়ে।
ইরহা দরজার কাছে আসতেই একটু থমকে যেয়ে বলে,সরি।
‘ওহহ তারমানে তুমি আমার ক্ষতি করেছো?
‘আঙ্কেল ভেতরে আসুন, বিশ্বাস করেন ইচ্ছে করে করিনি।
‘তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছায় আমার কত বড় লস হচ্ছে।
‘কি হয়েছে আঙ্কেল?
‘তোমার জন্য আমার ফাইল খুঁজে পাইনি৷ আমার ডিল হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
ইরহা নিজের রুম থেকে ফাইল এনে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে এই নিন। এটাই তো?
‘হ্যা কিন্তু তুমি এটা কোথায় পেলে?
‘আমি আপনাকে সরি বলতে নিচে গিযেছিলাম। তখন দেখলাম নিচে পরে আছে।
‘লোকটা বলে এবার চলি।
‘চা খেয়ে যান।
‘না এখন সময় নেই।

বেশ কিছুদিন ধরে লসের উপর রবিনের কোম্পানি।একটার পর একটা ডিল ক্যানসেল হচ্ছে। একদিকে বাসার অশান্তি অপর দিকে অফিসের টেনশন পাগল হওয়ার যোগার।
রবিন কিছু নিয়ে চিন্তা করছিল, এমন সময় ম্যানেজার এসে বলে,স্যার ম্যাডাম আজ সতেরো লাখ টাকা উঠিয়েছে একাউন্ট থেকে।
রবিন বলে হোয়াট?
‘জ্বি স্যার।
‘ঠিক আছে আপনি যান আমি দেখছি। নিজের সেল ফোন থেকে কল করলো, লামাকে। দুইবার রিং হয়ে কেটে গেলো। তৃতীয় বার রিসিভ হতেই, বিরক্তি কন্ঠে লামা বলে,ম্যানারস জানোনা! এভাবে কল করছো কেন? আমি শপিংয়ে বিজি।
‘রাখ তোর শপিং, তুই এতো টাকা কেন তুলেছিস? আমার সংসারে পা দিয়েছিস সপ্তাহ পেড়োয়নি। আর তুই আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছিস।
‘নাইস জোক্স, তোমার সাথে আমার দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্ক।আর হ্যা যে স্বামী বউকে সুখে রাখতে পারে না। তার বউতো টাকা খরচ করে সুখ কিনে নেবেই। ছোট লোকের মত কথা বলবা না।
‘তুই কি ভেবেছিস তোকে ঘরে জায়গা দিয়েছি বলে যা খুশি তাই করবি?
‘তোমার বাজে কথা পরে শুনবো। এখন ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। বলেই ফোনটা কেটে দিলো। লামার সাথে ঝুমা নামের একটা মেয়ে। কিরে কি বলে তোর নাগর?
‘আর বলিস না। বিয়ে করার আগেই ভালো ছিলো কত টাকা দিতো হাত খরচ। আর আজ মাত্র সতেরো লাখ টাকা নিয়েছি এরজন্য রুড বিহেভিয়ার করলো৷
‘সতেরো লাখ তোর কাছে মাত্র মনে হয়?তুই ভুলে যাচ্ছিস মাত্র বিশ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতি!
‘সেসব অতীত। এখন বিশ হাজার টাকা আমার হাতের ময়লা। আজ ক্লাবে যাবো। তুইও চল৷

শেফালি বেগম এ ক’দিনেই বুঝতে পেরেছে,হিরে পা’য়ে টেলে কয়লাগে আপন করেছে।রবিন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলো।নিজের মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে,মা আমার বুল হয়েছে, আমার ইরহাকে আমার চাই। আমার রুবাবাকেও দেখিনা কতদিন।
শেফালী বেগম বলে,নিজেকে শান্ত কর আগামীকাল একবার যাবো ওই বাসায়। দেখি কি বলে।
‘যেভাবে হোক এনে দাও ইরহাকে। নয়তো আমি পাগল হয়ে যাবো।
রুবি পাশের রুম থেকে এসে বলে….. ‘যাকে পেয়ে যাবে? তাকে ক্ষনে, বিক্ষনে সংসারে নিত্যদিনে ভুলে যাবে।
কিন্তু যাকে পাবে না – সে সব সময় মনে রয়ে যাবে… ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে।
“মিলন ভুলিয়ে দেয়!বিরহ ভুলিতে দেয় না?
‘যারা পেয়েও অযত্নে,অবহেলায় হারিয়ে ফেলে,তারা নিজের অজান্তে নীল বি’ষ পান করে। যার যন্ত্রণা তাকে মরতেও দেয় না বাঁচতেও দেয় না!!
আর তুমি নিজেই নীল বি’ষ পান করেছো! এর জ্বালা তো তোমাকেই ভোগ করতে হবে৷
কথায় আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝেনা৷
এখন যত আফসোস করো যত কান্নাকাটি করো কি হবে?ফেরাতে পারবে! কখনো পারবে না।মেয়েরা নিজের হ্যাসবেন্ডের পাশে অন্য মেয়ের ছাঁয়া সহ্য করতে পারেনা। সেখানে দিনের পর দিন তুমি অন্য নারীতে আসক্ত ছিলে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে