কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৭

0
632

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭

ইরহার পাশে রুবাবাকে কোলে নিয়ে বসে আছে নাদিম।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নাদিম বলে,তোর আরো আগে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ ছিলো!এবার যা হয়েছে ভুলে যা। নিজেকে গুঁছিয়ে নে। কথায় আছে দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।
‘ভাইয়া আমি ঠিক করেছি তো? আমার৷ জন্য এখন তোমাদেরও কথা শুনতে হবে।
‘শোন সমাজ আর সামাজের মানুষের কথা বাদ দিয়ে দে। জীবনটা আমাদের সমাজের না!তোর শ্বশুর বাড়ির মানুষ তোর হ্যাসবেন্ড যে এতো কিছু করলো।তুই যে এতো কিছু,সাফার করলি। সমাজ কি করেছে তোর জন্য। সমাজের দোহাই দিয়ে জুলুম সহ্য করার পক্ষে আমি নেই। তুই সমাজ আর সমাজের মানুষের কথা বাদ দে।তোর পরিবার তোর ভাই আছে তোর সাথে। তুই শুধু নিজেকে স্ট্রং কর। দেখিয়ে দে তুই চাইলে সব পারিস।
‘মানুষ হারালে, মানুষের জন্য শোক পালন করে দুঃখ বিলাস করে। মানুষ নামে পশু হারালেতো কোন শোক বা দুঃখ থাকে না ভাইয়া। আমি আমার জীবন আবার নতুন করে শুরু করবো।আমার মেয়ে আর আমি আমাদের পৃথিবী গড়ে তুলবো।
‘নিজের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,এইতো আমার লক্ষী বোন। শোন সব সময় মনে রাখবি তোর পাশে ছাঁয়ার মত তোর ভাই আছে। তাই নিজেকে এ লাড়াইয়ে একা ভাববি না। নে তোর পৃথিবী ঘুমিয়ে গেছে মামা আমার।
ইরহা রুবাবাকে কোলে নিয়ে বলে আজ থেকে ওর নাম নওশাবা তাজরিন নুহা। আমার নওশাবা বলেই চুমু খায়া নিজের মেয়ের কপালে।
‘নাদিম বলে মাশা আল্লাহ খুব সুন্দর নাম। একদম প্রিন্সেস নওশাবা।
নাদিম চলে, আসতেই ইরহা নওশাবাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মশারী টাঙ্গীয়ে দিলো।
নিজের পরিচিত রুমটায় কত দিন পরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে নজর দিলো। আয়নায় তাকিয়ে বলে,নিজেকে নিজে করেছি বিলীন,বিনিময়ে পেয়েছি কি? যে সংসার৷ বাঁচাতে সংগ্রাম করেছি, যে সংসার তিলে তিলে স্বপ্ন আর ভালোবাসা মিলিয়ে গড়ে তুলেছি, তা আজ মূহুর্তে বিলুপ্ত হয়ে গেলো। মানুষ ঠিক বলে, মেয়েদের সব হয়, শুধু নিজের একটা ঘর হয় না।পরের ঘর আর বাপের ঘর সময় পাল্টে গেলেই করে দেয় পর!
নিজের চোখের কোনের পানি টুকু বা হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে বলে,আমি গড়বো আমার ঘর। আমার জন্য না হোক আমার নওশাবার জন্য হলেও আমাকে পারতে হবে।ইরহা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু বিয়ের পর সংসারী হয়েছে। সব ইচ্ছে কে বানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে ভালো,বউ হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম। আজ সমাজের চোখে খারাপ মেয়ে,খারাপ বউ। তবে আমি ভালো মা হয়ে উঠবো।

লাবিবা এসে বলে,আপু তুই একদম মন খারাপ করিস না। তুই এক কাজ কর কাল থেকে জব খোঁজা শুরু কর। ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে এগিয়ে যা।
‘হুম তাই করবো। তোরা তো আছিস পাশে। একটা খারাপ অধ্যায় শেষ হয়েছে, এখন ভালো অধ্যায় শুরু হওয়ার পালা।


রবিন বেডের শুয়ে আছে, লামা এসে বলে,এই উঠে বসো,তোমার সাথে কথা আছে।
‘এখন শোনার মুড নেই পরে বইলো।
‘মুড নেই বললে তো হবে না। শুনতে হবে৷ উঠো।
‘রবিন উঠে বসতে, বসতে বলে,তোমার কি ঝামেলা করা ছাড়া আর কোন কাজ নেই! আসার পর থেকে একদিন ও শান্তিতে থাকতে দাওনি। সমস্যা কি তোমার? নিজে ভালো থাকো আমাকে ও থাকতে দাও।
‘এখনো আমি বিরক্তকর অসহ্য, আমি ঝামেলা করি, আর তোমার বোন কি করলো। আমাকে অপমান করলো!তুমি ওকে কিছু বললে না। বাহহহহ কেমন মেরুদন্ডহীন পুরুষ তুমি! তোমার সামনে তোমার বুকে তোমার ছোট বোন যা নয় তা বলে গেলো আর তুমি কোন প্রতিবাদ করলে না!
‘দেখো লামা এমন নাটক করছো,যেনো মনে হচ্ছে তোমাকে আমার পরিবারের লোক বিয়ে করিয়ে নিয়ে এসেছে। ভুলে যেওনা আমরা পরকীয়া প্রেমিক প্রেমিকা থেকে হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ হয়েছি, তাই কিছু কথা তো তোমাকে সহঢ করতেই হবে।
‘না না আমি তো সহ্য করবো না। আরেক বাসা থেকে এসে তোমার বোন আমাকে কথা শোনাবে আর তুমি বলবা বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি তাই সহ্য করতে হবে!এসব আমি মেনে নেবো না।
‘তাহলে তুমি কি চাইছো?
‘তোমার বোন এবাসায় আর আসতে পারবে না।
‘নিজের লিমিটেডের মধ্যে কথা বলো লামা। তোর বাপের বাসা না, এটা! এটা আমার বোনের বাসা। ওর যখন খুশি আসবে। তোর ভালো না লাগলে তুই বের হয়ে যা।
‘তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে তুই করে বলিস, কথাটা বলেই নিজের মোবাইল ছুড়ে ফেলে বলে,তুই আমাকে ইরহা ভাবিস না।
‘কি করবি তুই কর, দেখি কি করতে পারিস।
বেশ খানিকটা সময় ঝগড়াঝাটি করে,এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়ে যায়।
শেফালী বেগম কোনমত থামিয়ে নিজের ছেলেকে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।

লামা কর্কশ কন্ঠে বলে,আপনার ছেলেকে আমি ছেড়ে দেবো না৷ আমার গায়ে হাত তোলা! নারী নির্যাতন মামলায় কেস করবো।

রুবা বাসার রুমে বসে বসে মিটি মিটি হাসছে, আসলে তো এটা হওয়ারই ছিলো।একটা ভালো মেয়েকে কষ্ট দিয়ে বের করে দিয়ে একটা সয়তান ঘরে তুলে এনেছে। একটা ভালো মেয়ে যেমন সংসারকে সর্গ করে তুলতে পারে,ঠিক একটা চরিত্রহীন বাজে মেয়ে সংসারকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
রবিন একের পর এক সিগারেট শেষ করেই যাচ্ছে। কতদিন পর পুরনো আড্ডায়। রবিনের সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নেই। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে হুটহাট হয়তো কালে ভদ্রে খেয়েছে।কিন্তু নিয়মিত স্মোকার না। কিন্তু আজ এ পর্যন্ত তিন প্যাকেট শেষ করে ফেলেছে।
ইসমাইল, বলল রবিন তুই এভাবে সিগারেট খাচ্ছিস ব্যাপার কি?
‘ব্যাপার কিছু না। আজ তোর ভাবির সাথে ঝগড়া হয়েছে।
‘কি যে বলিস ভাবি আর ঝগড়া! ভাবিতো তোর সাথে উঁচু আওয়াজে কথাও বলেনা৷
‘রবিন অট্টহাসি দিয়ে বলে,সে তো আর নেই!
‘এই রবিন কি বলছিস মাতালের মত! তুই নেশাটেশা করিস নি তো? আবল তাবল বকছিস।
‘সত্যি বলছি, তোরা যাকে ভাবি হিসেবে চিনতি সে নেই। চলে গেছে।
‘হেয়ালি না করে বলতো কি হয়েছে?
‘রুবেল বল, ওর প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে, ওর সেক্রেটারি কে বিয়ে করেছে। বুঝিসই তো মেয়েটা কেমন হলে, বসের সংসার ভেঙে নিজে সংসার জুড়ে দেয়।
‘ইসমাইল অবাক হয়ে বলে,ইরহা ভাবির মত বউ পেয়ে কেউ ছাড়ে! তুই পদ্য ফুল রেখে গোবরে নামলি কেন?
‘রবিন কিছু না বলে চলে আসলো।
রুবেল বলে,বুঝবে শা’লা কি আ’গু’নে হাত দিয়েছে ওর জীবন এখন পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে।
‘তুই মেয়েটাকে আগে থেকে চিনিস?
‘এটা ওই মেয়েটা যাকে নিয়ে কক্সবাজার ট্যাুর দিয়ে আসলাম।
‘মানে শেষ এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলো রবিন!
‘ভেবেছিলাম কয়েকদিন মজ মাস্তি করে ছেড়ে দেবে।এসব মেয়েকে কেউ ঘরের বউ করে?
‘ইয়ার ইরহা ভাবির জন্য কষ্ট হচ্ছে, ভাবি আসলেই ভালো মেয়ে।
‘বাদ দে চল নিজেদের ঘর সামলাই পরের ঘরে কি হলো তাতে আমাদের কি। মাঝে মাঝে ফ্রীতে বিনোদন দেখবো।এই তো!
‘কি বলছিস শতহোক আমাদের ফ্রেন্ড।
রবিনের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দুটো বেজেছে। রুমে না যেয়ে বসার ঘরের সোফায় ঘুমিয়ে পরেছে।

✨একটা ভয়াবহ দিন তারপর দীর্ঘ এক কালো রাত শেষ করে, চারপাশ আলোকিত করে উঁকি দিচ্ছে নতুন দিন।
কথায় আছে, “দুঃখ একটা দীর্ঘ রাতের মত, যা শেষ হয়ে নতুন দিনের সূর্য উঠবেই।শুধু ধৈর্য নিয়ে সেই রাতটুকু পার করতে হবে।
সকালের মৃদু বাতাসে বাহিরে তাকিয়ে আছে ইরহা। ফজরের নামাজ পরে খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়েছে, মনটা কিছুটা হলেও ফুরফুরা। কেমন যেনো একটা প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে। প্রকৃতি দেখতে এতোই মগ্ন যে, হাতে থাকা চায়ের কাপ হাত থেকে নিচে পরে গেলো। যখন বিষটা খেয়াল করলো, তখন কর্কশ ভাষায় কেউ বলছে,কমন সেন্স নাই?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে