#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬
ইরহার এক হাতে ব্যাগে অন্য হাতে রুবাবাকে আগলে নিয়ে বাড়ির চেনা রাস্তার দিকে আগাচ্ছে। কি অদ্ভুত তাইনা। সেই পরিচিত পথ আজ কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে। যেখানে আসলে শান্তি অনুভব হতো। আজ সে পথ ধরে যতটা এগোচ্ছো বুকের ভেতরটা ততই তোলপাড় হচ্ছে। আচ্ছা সমাজের মানুষ কি বলবে!সব দোষ তো তারা আমাকে দেবে। সবাই বলবে,কি মেয়ে স্বামির সংসার করতে পারলো না। মানুষ তো মাটি কামড়ে স্বামির ঘরে পরে থাকে, আর এই মেয়ে দেখে স্বামী ছেড়ে চলে আসছে। নাকি সবাই বলবে, ডিভোর্সি মেয়েদের সমাজে কোন সম্মান আছে নাকি! নাকি বলবে, মা বাবার সম্মান ডুবিয়ে চলে আসছে? সবাই কি আমাকে আড় চোখে দেখবে।যেই দৃষ্টিতে থাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য। আনমনে ভাবছে আর সরু গলিতে হাঁটছে।ইরহা রুবাবাকে আর একটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আচ্ছা এমন একটা মানুষ, যে রাতের পর রাত অন্য নারীতে মগ্নছিলো। দিনের পর দিন মিথ্যে বলে ধোঁকা দিয়েছে। তার সাথে কি সত্যি আপোষ করে থাকা উচিৎ ছিলো? যে মানুষটা এতো এতো অন্যায় করার পরও একবারের জন্য ও নিজের অন্যায় স্বীকার না করে বলে, দেখো আমার সমর্থ আছে, দুটো বউ চালানোর। তাই তুমি চাইলে থেকে যেতে পারো। তোমার কোন কিছুতে অভাব হবে না।
আচ্ছা আমাদের কি অভাবের জন্য বিয়ে দেয়া হয়! নাকি পরিবার খাবার দিতে পারে না তাই বিয়ে দেয়?
বিয়েটা কি শুধু শারীরিক অভাব দুর কারার জন্য! আমি তো জানতাম বিয়ে মানে, দুটো মানুষের মধ্যে ভালোবাসা,বিশ্বাস, শ্রদ্ধার সম্পর্ক। যেখানে মেয়েরা নিজের পছন্দের মানুষের পাশে দ্বিতীয়জনের ছায়া দেখতে পারে না। সেখানে নিজের লাইফ পার্টনারকে আরেকজনের সাথে শেয়ার করা কি এতোটাই সহজ?আর সারাজীবন আল্লাহ তায়ালার বিধানের সব হুকুম অমান্য করে, দ্বিতীয় বিয়ে জায়েজ বলে,যুক্তি দিয়ে দেবে!সাথে সবাই বলবে, বেডা মানুষ তো দুই বিয়ে করতেই পারে!
আচ্ছা ইসলাম কি এতো সহজ? দুই বিয়ে জায়েজ সেটা কত শর্ত সাপেক্ষে। সেসব না মেনে তো জায়েজ নয়। ইসলামের দোহাই দিলেই তো অযৌক্তিক কথা সঠিক হয়ে যাবে না।শত ভাবনা বাদ দিয়ে মেইন গেটের সামনে এসে থামলো ইরহা। বুকে দুরুদুরু করছে, ব্যাগটা নিচে রেখে আলতো হাতে কলিং বেল চাপ দিলো।
বিকেল গড়িয়ে কেবল আলো পড়তে শুরু করেছে আর আধঘন্টার মধ্যে হয়তো কালো মেঘে ছেয়ে যাবে ধরণী। ফরিদা বেগম চায়ে শেষ চুমুক দিবেন ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো। চায়ের শেষ চুমুক দিয়ে, গেট খুলতেই ইরহাকে দেখে বেশ চমকে যায়!
‘কিরে মা এই সন্ধ্যা বেলা তুই?
‘ভেতরে আসতে দাও মা। যার জীবনে অন্ধকার নামবে, তার জন্য তো আগে সন্ধ্যা আসবে-ই।
‘ভেতরে আয়, কি হয়েছে বল। ফরিদা বেগম রুবাবাকে কোলে নিয়ে বলে,বল কি হয়েছে?
‘মা,এক গ্লাস পানি দাও।
‘ফরিদা বেগম গলা ছেড়ে ডাক দিলো লাবিবা এদিকে আয় তাড়াতাড়ি।
লাবু নিজের রুম থেকে এসে বলে,কিরে আপু তুই! কখন আসলি বলে আসবি তো?
‘কথা কম বল আগে ইরহার জন্য এক গ্লাস পানি আন। আমার মনটা কেমন কু ডাকছে।
‘ইরহা বসে পানিটা এক শ্বাসে শেষ করে, বোরকাটা খুলে সোফার কোনায় রাখে।
ফরিদা বেগম মেয়ের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছেন বড় কিছু হয়েছে। মাথায় নানা প্রশ্ন এসে জট পাকাচ্ছে।
ইরহা শান্ত স্বরে ডাকলো মা’আমি সব শেষ করে চলে এসেছি।
‘কি শেষ করে চলে এসেছি?
‘একটা মেয়ের অস্তিত্ব কি মা?
‘তুই বল খুলে কি হয়েছে? এমন কেন করছিস?
নিশাত নিজের রুম থেকে বের হতে হতে বলে, হওয়ার আর কি বাকি রেখেছে! আমাদের মানসম্মান সব ডুবিয়ে এসেছেে।আপনার মেয়ে কোর্ট থেকে আসলো একদম ডিভোর্সী হয়ে। এখন আপনার মেয়ে ছাড়া নারী। সমাজে আর মুখ থাকবে না। জনে জনে বলে বেড়াবে ওই বাসার বড় মেয়েকে জামাই ছেড়ে দিয়েছে।
‘ফরিদা বেগম রাগী কন্ঠে বলল,নিশাত একদম বাজে কথা বলবেনা। আমার মেয়েকে আমার চেনা আছে।
‘তা কত জনের মুখ বন্ধ রাখবেন! আমাকে না হয় ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। আশেপাশের মানুষের মুখ কি দিয়া বন্ধ করবেন শুনি!
‘এক কথা বারবার বলবো না। তুমি নিজের রুমে যাও।আমার মেয়ে আমি বুঝে নেবো।
‘কি আর বোঝার বাকি আছে! এখন আমার বরের ঘাড়ের উপর বসে বসে খাবে।একা হলে তাও কথা ছিলো!সাথে আবার আরেকটা আছে। বলেই চলে গেলো নিশাত।
নিশাত চলে যেতেই, ফরিদা বেগম বলেন, এবার আমাকে বল মা কি হয়েছে?
‘ইরহা সবটা খুলে বলল। এবার তুমিই বলো আমি কি করে থাকবো ওই সংসারে। নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামী, নিজের সংসারে অন্য কারো রাজত্ব। মেয়ে হয়ে কি করে মেনে নেবো! তাই বাধ্য হয়ে এই পথ বেছে নিয়েছি৷
‘তুই এসব আগে কেন বলিস নি?
‘আমি চেষ্টা করেছিলাম মানিয়ে নিতে।ভেবেছিলাম সে পাল্টে যাবে ঠিক হয়ে যাবে।আসলে যার চরিত্র নষ্ট হয়ে যায়, সে-তো কখনো ঠিক হয় না।
‘যা রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। যা হওয়ার হয়েছে। ভাগ্যের সাথে কেউ লড়তে পারে না।
ইরহা রুমে চলে আসলো। সাথে লাবিবাও ইরহার সাথে রুমে আসলো।
ফরিদা বেগম ফ্রীজ থেকে দুধের বোতল বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন। রুবাবাকে খাওয়ানোর জন্য। ফরিদা বেগম রুবাবার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,এই মায়াবী মুখ যাকে আটকাতে পারলো না তাকে পৃথিবীর আর কেউ আটকে রাখতে পারবে না৷
✨
রবিন, রাগ নিয়ে লামার হাত ছাড়িয়ে বলে, কি দরকার ছিলো তোমার এসব করার! এসব করে কি পেলে?
‘বাহহ খুব ভালো বললে তো!তুমি গাছেরটাও চাও আবার তলার টাও লাগবে!এভাবে দু’নৌকোতে পা দিয়ে কতক্ষণ বলো। একটা না একটা তো বেছে নিতেই হতো। সেটা আজ হোক বা কাল।
‘আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম, স্ত্রীর অধিকার ছাড়া আমি তোমাকে সব দেবো। তোমার দেখা শোনা, তোমার যত খরচ সব।
‘আমার তো তোমার স্ত্রী এই ট্যাগটা চাই রবিন।নয়তো সমাজে আমার কি পরিচয় থাকতো রক্ষিতা।
আমি তো সেই ট্যাগ নেবো না। আর বাদ দাও বাবু যা হয়েছে ভুলে যাও আমরা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ সব কিছু নতুন করে শুরু করো। পুরনো অধ্যায় ছিড়ে ফেলো তো।
রবিনের বোন, রুবি বলল,শোন মেয়ে পুরোনো অধ্যায় ছিড়ে ফেলা যায় না।পুরোনো অধ্যায় থেকে নতুন অধ্যায় জন্ম নেয়। আর তোমার মত একটা মেয়ে, যে কিনা একটা ছেলে বিবাহিত জানার পরেও তার গলায় ঝুলে পরেছে, তার সাথে নতুন অধ্যায়! সো ফানি। আসলে কথায় আছে না, “নারীরাই নারীর শত্রু। এই কথাটা তোমাদের মত থার্ডক্লাস মেয়েদের জন্য। যারা অন্যের স্বামীকে ফুসলিয়ে নিজের করে নাও। তবে এটা ভুলে যাও,যে পুরুষ এক নারীতে আসক্ত হতে পারেনি, সে তোমাতেও আসক্ত হবে না৷
‘এসব কথা বলার মানে কি? আমি জানি রবিন কেমন।
‘শুনো আমার ভাইয়ের চোখে এখন রঙিন চশমা, তাই তোমাকে রঙিন লাগছে। তবে চশা তো সব সময় পরে থাকে না কেউ। যখন চশমা খুলে ফেলবে,তখন বুঝবা। অন্যের স্বামীকে কেড়ে নেয়ার শাস্তি।
‘আপনি কিছু বলবেন আপনার মেয়েকে, নাকি আমার বলতে হবে!
‘রুবি চুপ কর। আর ওই মেয়ে যত সহজ সরল সেজে থাকতো, সেরকম মোটেই না। যা হয়েছে ভালো হয়েছে।
‘বাহহহহ মা, তোমাকে তো এওয়ার্ড দেয়া উচিৎ! নিজে পছন্দ করে এনেছিলে। আর কি বললে যেরকম দেখতে সেরকম না। ঠিকি বলেছ ওই মেয়ে তো বোকা, তাই এভাবে চলে গেছে। আমি হলে তোমাদের মা ছেলেকে চৌদ্দ শিকের ভাত খাইয়ে ছাড়তাম।
রবিন বলে, রুবি তুই থামবি!
#চলবে