কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৫

0
656

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫
এখন কি খাবার খেতে দিবা না! আসার পর থেকে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছো।
‘ইরহা উঠে বাবুর পাশে শুয়ে পরলো। রুবাবার চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,কি আছে রে তোর কপালে!তোকে কি আমি অবহেলায় রাখবো! তোর জন্য লড়াই করবো।দরকার পরলে আমরা নিজেদের জন্য একটা পৃথিবী বানাবো। তোর আর আমার পৃথিবী। আর কাউকে দরকার নেই। যেখানে গুরুত্ব নেই সেখানে পরে থাকা অর্থহীন।
রবিন পেছনে দাঁড়িয়ে বলে,মেয়ে মানুষ নাকি অনেক ধৈর্যশীল থাকে।
‘ধৈর্যের দোহাই দিয়ে,পুরুষ মানুষ তাদের শোশন করবে? ভুলে যেও না প্রত্যেকটা জিনিসের নির্দিষ্ট একটা সীমা থাকে। সীমা পার করে ফেললে তারপর কেউ আর চুপ থাকে না!
‘তোমার সাথে অযথা তর্ক করার সময় বা ইচ্ছে কোনটাই নেই। আমি খুব টায়ার্ড। আর শুনো কালকে লামা আসবে, ওর বাসায় কেউ নেই তাই কিছুদিন আমাদের বাসায় থাকবে। তোমার তো কোন আপত্তি নেই।
‘যদি বলি আছে!
‘তাহলে বলবো অযৌক্তিক কথা বলছো।
‘শুনো লামা সেই মেয়েটা, প্রথমবার তোমার ওয়েলেটে যার ছবি পাই, লামা সেই মেয়েটা, তোমাকে আর তাকে আপত্তিকর অবস্থায় নিজের চোখে দেখেছিলাম। আমার মনে হচ্ছে লামা নামটা আমার জীবনে তুফান।
‘আমি ভাবতে পারছি না ইরহা! তোমার মত একটা লো মেন্টালিটির মেয়ে আমার ওয়াইফ!সামান্য কথাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো!
‘প্রতিটি অসামান্য কথাই সামান্য কথা দিয়ে শুরু হয়।
নাদিম বালিশ নিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগে বলে,তোমাদের মত মেয়েদের জন্যই স্বামীরা অন্য নারীর কাছে সুখ খুঁজতে যায়।
‘যে পুরুষের সুখ অন্য নারীর কাছে,তার কাছে গরের নারী বি’ষ।
‘তুমি থাকো একা আমি গেস্ট রুমে যাচ্ছি।
‘শুনো আমি সব সময় তোমাকে সরি বলি, আমি ভুল করি বা তুমি করো। আমি তোমার রাগ, তোমার মায়ের রাগ, তোমার বোনদের রাগ। সব কিছু সহ্য করি। কখনো মুখফুটে কিছু বলিনা। সহ্য করি তোমার জন্য। আজ আমার সামান্য কথার উত্তর না দিয়ে তুমি রুম ছেড়ে চলে যেতে যাইছো!আজ তোমাকে আটকাবো না, জড়িয়ে ধরে বলবো না। সব ভুল আমার, তুমি রেগে থেকো না। তোমার ঠোঁটে আলতো ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলবোনা ভালোবাসি। কারণ আজ আমার উত্তর চাই। শুধু একটা না এবার অনেকগুলো উত্তর চাই।
এই যে তোমার ফোন এবার বলো মাই হার্ট লিখে সেভ করা নাম্বারটা কার। এইযে তোমার সিক্রেট গ্যালারি। এবার বলো এই মেয়ের সাথে তোমার আপত্তিকর ছবিগুলো কোথা থেকে এলো। এই যে তোমার সিক্রেট ভিডিও ফোল্টার, এবার বলো আমি কোন অংশে কম! আমাকে রেখে তোমার পরনারীর কাছে কেন যেতে হলো নোংরামি করতে? এবার উত্তর দাও তারপর তুমি কেন যাবে,আমি চলে যাবো।

রবিনের কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে, পা থেমে গেছে। আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহার দিকে? এসব হাইড করা জিনিস গুলো সামনে আসলো কি করে? এই পাসওয়ার্ডগুলো শুধুমাত্র লামা আর আমি ছাড়া কারো জানার কথা না।

রবিনের অবস্থা দেখে ইরহা বলে, বেশ অবাক হলে, তাইতো! আমি এসব কি করে জানলাম!
কিছু সময় পূর্বের ঘটনা……
রবিনের খাবার প্লেট, বাটি কিচেনে রেখে আসার সময় ইরহার ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। তারপর বিপরীত পাশের একজন বলে, আপনার হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছে এক্ষুনি চেক করুন। তাহলে আপনার হ্যাসবেন্ডের সত্যিটা জানতে পারবেন।
ইরহা নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করতেই কিছু টেক্সট, কিছু পিক আর রবিনের গোপন পাসওয়ার্ড সব ইরহার হাতে চলে আসে। রুমে এসে কিছু না বলে, কথার ফাঁকে সবটা চেক করে নেয়। রবিন নিজের মধ্যে এতোটা ব্যাস্ত সে ভাবতেই পারেনি ইরহা কি করছে? একবার অবশ্য সে খেয়াল করেছে তার মোবাইল ইরহার হাতে কিন্তু সে তো জানতো না। ইরহার কাছে গোপন পাসওয়ার্ডগুলো আছে।

এবার বুঝলে তো, কিভাবে জানতে পারলাম সত্যিটা। ধোঁকা,আপনি আমাকে এতোদিন ধরে ধোঁকা দিচ্ছিলেন! আমি কি বোকা আর আপনি কি নিখুঁত অভিনেতা!আপনাকে অভিনয়ে চান্স দিলে শাহরুখ খানও আপনার পিছনে থাকতো। দূর কিসের সাথে কি জোড়া দিচ্ছি। শাহরুখ খান তাও বাস্তব জীবনে এক নারীতে আসক্ত। আর আপনি তো চরিত্রহীন।

নিজের রুমে বসে অট্টহাসিতে ফেটে পরছে লামা। এতোদিনে একটা মনের মত কাজ করেছে৷ লামার পাশেই তার বোন লিজা বসা। লিজা বললো, তুমি কি কাজটা ঠিক করলে আপু! একটা মেয়ের সংসার ভেঙে দিলে।
‘এই সংসার না ভাঙ্গলে আমার সংসার গড়বো কিভাবে!নিজের জন্য স্বার্থপর হতে হয় মাঝে মাঝে।
‘কিন্তু তাই বলে, অন্যজনের সংসার ভেঙে নিজেেসংসার গড়বে! কারো ভাঙা জিনিসে তার রুহের হায় থাকবে।তার দীর্ঘশ্বাস তোমাকে ভালো থাকতে দিবে তো?
‘তুই চুপ থাকতো। বেশি বুঝিস না। আমাদের বাবা নেই, এতো বড়লোক ছেলে আমরা পাবো! ঢাকাতে বাড়ি আছে। একমাত্র ছেলে, দুই বোন তাও বিবাহিত শ্বশুর বাড়ি, বুঝতে পারছিস পুরো বাড়ি জুড়ে আমার রাজত্ব।
‘কারো রাজ্য ধ্বংস করে নিজে রাজত্ব দখল করে টিকিয়ে রাখতে পারবে তো?
‘তুই ছোট সবে সতেরো বছর, তুই কি বুঝবি! দেখিস কত আয়েসে জীবন কাটাবো আমরা।
‘আমি তোমার ছোট কিন্তু অবুঝ নই। লোভ মানুষতে ধ্বংস করে দেয়৷
‘এই তুই যা তো রুম থেকে বের হ, আজকে মায়ের রুমে ঘুমা। আমারটা আমি বুঝে নেবো৷

লিজা মন খারাপ করে মায়ের রুমে এসে মায়ের পাশে শুয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
লতা বেগম বলেন, কিরে মা তুই কাঁদছিস কেন কিছু লাগবে তোর। আর পাঁচদিন পর গার্মেন্টসে বেতন দেবে।বল কি লাগবে তখন তোকে কিনে দিবো৷
‘আমার কিছু লাগবে না মা৷ আমার ভয় হচ্ছে আপুর জন্য।
‘কেন লামাকে নিয়ে কিসের ভয়!
‘তুমি তো সারাদিন কাজে থাকো এদিকে আপু কি করেছে জানো। লিজা সবটা বললো, লতা বেগমকে৷ লতা বেগম মনে হয় এসব শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেননা। স্বামীর মৃত্যুর পর অভাবের সংসার নিজে চালিয়ে মেয়ে দু’টোকে মানুষ করেছে। আর সেই মেয়ে এমন জঘন্য একটা কাজ করলো। লতা বেগম বিছানা ছেড়ে সোজা লামার রুমে আসলো। লামা তার মা’কে দেখে বুঝে গেছে কি হতে পারে, লামা আগেই বলে,লেকচার দিবানা। কি দিয়েছো তুমি জীবনে? সব সময় টানাটানি আর হিসেব করে চলেছি। এখন যদি আমার আমার সুখ, আমার ভালো থাকা খুঁজে নেই তাতে তোমাদের এতো সমস্যা কেন হচ্ছে! এখন তো মনে হচ্ছে তোমরাই আমার আসল শত্রু।
লামা আর কিছু বলার আগে লতা বেগম ঠাটিয়ে ছড় বসিয়ে দিলো লতার গালে।
‘লতা চিৎকার করে বলে মা’তুমি আমার গায়ে হাত তুললে৷
‘তোর ওই মুখে আমাকে মা ডাকবি না৷ তোর মত মেয়ের মা হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। তোর বুক কাঁপলো না এতো বড় সর্বনাশ করার আগে?
‘লতা নিজের সামনে থাকা বেডের উপরের বালিশ বেড কাভার ছুড়ে ফেলে বলে,আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিওনা৷ আমি কত ভয়ংকর তুমি তা জানোনা।
‘জেনে গেছি। শোন তোকে জন্ম দিয়েছে তাই এই রাতে বের করে দিতে পারছিনা। আগামীকাল সকালের আলো ফোটার আগে চলে যাবি। তোর মত মেয়ে আমার জন্য মরে গেছে।
‘ভুল করছো তুমি আমার সঙ্গ দাও তোমার জীবন সুখে ভরিয়ে দিবো।
‘অন্যের সুখ কেড়ে নিয়ে কেউ সুখি হতে পারে না। আর আমরা সুখেই আছি।বলেই চলে গেলো লতা বেগম।

✨ইরহা বলে,বিয়েটা করেছো তাও আমার মেয়ের বার্থডের দিন। এটা কিভাবে পারলে, আমি মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি, আর তুমি বিয়ে করছো। বাহহহ।
‘আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি। আর কিছু বলতে হবে না।
বাকিটা শুধু দেখবে।
রিকশা ওয়ালা মামা বলল,আপা আইসা পরছি নামবেননা।
রিকশা ওয়ালার কথা শুনে নিজের ভাবনা থেকে বের হয় ইরহা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে