#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪
নাদিম বাসায়, ফিরে আসতেই, ফরিদা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, কিরে আমার মেয়েটা কেমন আছে? ও সুস্থ আছে তো?
নাদিম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দেয়, আমরা মনে হয় ইরহাকে বিয়েটা বেশ তাড়াহুড়ো করে দিয়ে ফেলেছি?
‘কেন কি হয়েছে?
‘রবিনের মা’ আন্টি ব্যাবার প্রচন্ড রুড। আমাদের সাথে এমন বিহেভিয়ার করলে, না জানি ইরহার সাথে কেমন ব্যাবহার করে৷
‘ভাবছি বেয়াইনের সাথে কথা বলে, ইরহাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো।শেষ কয়েকটা দিন এখানে থাকবে৷ বাচ্চা মেয়েটা একা একা সব সামলাতে পারবে না
‘তোমার মেয়ে আসতে চাইবে তো! যদি রাজি হয় তাহলে নিয়ে এসো।
নিশাত দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো। নাদিম নিজের ঘরে ঠুকতেই নিশাত দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলা শুরু করে, তোমার বোনকে বাসায় নিয়ে আসবা মানে! আমাকে কি চাকর মনে হয়? সরাদিন এতো খাটি আরো খাটানোর ধান্দা। তুমি তোমার মাকে বলে দাও
ইরহাকে এখানে আনার দরকার নেই৷
‘তুমি ব্যাগপত্র গুঁছিয়ে রাখো, ইরহা আসলে তোমাকে রেখে আসবো, তোমাদের বাসায়।ইরহা যে ক’মাস এ বাড়িতে থাকবে, তুমি ও বাড়িতে থাকবে।
‘ঠিক আছে, আমি আজই চলে যাবো। করবো না তোমার সংসার৷ সব সময় নিজের মা,আর বেনদের কথা ভাবো। কখন আমার কথা ভাবো না। একটা প্রেগন্যান্ট মানুষ বাসায় থাকলে কত কাজ বেড়ে যাবে।তারপর তার পিছেনে খরচ হবে কত টাকা। আমি কিছু বললেই দোষ। সব ঠিক কথা তোমার মা, বোন বলে।
‘তোমার বাজে কথা বন্ধ করো। থাকতে ইচ্ছে না হলে চলে যাও। আর কাজ তুমি একা করো না। একজন হেল্প হ্যান্ড আছে৷ আর আমার বোনদের আমি ছাড়া কেউ নেই। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ওদের ভালো রাখার। বাড়ি, ব্যাবসা সব আমার একার নাকি! এগুলো বাবার রেখে যাওয়া,ওদেরও অধিকার আছে। যদি এসব মেনে ভালো ব্যাবহার করে থাকতে পারো, তাহলে থাকো। নয়তো আজই চলে যাবে৷
নিশাত চুপ হয়ে গেলো। নাদিম নিশাতের পাশে বসে বলে,দেখো নিশাত আমি আমা মা, বোন, আর তোমাকে ভালোবাসি।বর্তমানে আমার পৃথিবী জুড়ে তোমরা তিনজন। তাই তোমাদের ভালো খারাপ সবটা দেখার দ্বায়িত্ব আমার৷ আমি কারো জন্য কাউকে কষ্ট দিতে পারবো না৷ লবুর বয়স যখন আটমাস তখন বাবা আমাদের ছেড়ে যায়। মা একা হাতে আমাদের সামলেছে। তাই মায়ের কথার অবাধ্য হওয়ার প্রশ্নই উঠে না৷ আর আমার বোনরা কেমন আমি জানি৷ তাই তুমি একটু মানিয়ে নাও।তোমার জায়গা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমন ভাবে তাদের জায়গাও। একটু ভেবে দেখো তোমার সাথে তোমার ভাবি এমন করলে, কেমন লাগবে তোমার?
নিশাত কিছু না বলে,নাদিমকে জড়িয়ে ধরলো। নিম্ন স্বরে বলল,সরি।
নাদিম আলতো করে কপালে চুমু দিয়ে বলে, এইতো লক্ষী বউ আমার৷
✨
রবিন সুস্থ হলো,ভালোই কাটছিলো দিন। তবে দিনগুলোর সাথে সাথে সন্দেহ বাড়তে থাকে। ইরহার ডেলিভারি ডেট খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
ফরিদা বেগম,শত বলেও মেয়েকে রাজী করাতে পারেনি। ও বাসায় যাওয়ার জন্য। তাই লাবিবার পরিক্ষা শেষ হতেই লাবিবাকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
লাবিবা প্রায় খেয়াল করে ইরহার উদাসীনতা। বার কয়েক জিজ্ঞেস ও করেছে, কিরে আপি তোর কি হয়েছে৷ সেরকম কোন উত্তর পায়নি৷
✨কাজী অফিসে বসে আছে রবিন আর লামা। ওইদিকে ইরহাকে হসপিটালের এডমিট করা হয়েছে। রবিন অনেকবার বলেছে,লামা বিয়েটা অন্যদিন করি, আজ আমাকে দরকার ইরহার৷
‘লামা কিছুতেই মানবে না।তার৷ একি কথা তোমার সন্তান পৃথিবীতে আসার আগে আমাকে বিয়ে করতে হবে। অবশেষে তাই করতে হচ্ছে। কাজী অফিসে লামাকে বিয়ে করে। সাথে সাথে হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হয়ে যায়।রবিনের কোন ইচ্ছে ছিলো না লামাকে বিয়ে করার৷ হুট করে সে লামার ফাঁদে আটকে যায়। আস্তে আস্তে রবিন লামাকে অপছন্দ করা শুরু করেছিল। কিন্তু আজকে লামা ব্ল্যাকমেইল করে, বিয়েটা সম্পন্ন করলো। লামা নিজের মুঠোফোনে নিজের আর লামার অন্তরঙ্গ মূহুর্তের বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপ রেখে দিয়েছে। যার ফলে নিরুপায় হয়ে বিয়েটা করতে হলো রবিনের।
রবিন হসপিটালে পৌঁছে শুনতে পায় তার মেয়ে হয়েছে। রবিন খুশি হয়ে ছুটে আসে, শেফালী বেগমের কোল থেকে নিজের কোলে তুলে নেয় বাচ্চাটাকে। সাথে সাথে ওর চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে। বুকের বা পাশে হুট করে কেমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। মেয়াটার কপালে আলতো করে চুমু খায়। রবিনের চোখের জল গড়িয়ে ছোট রুবাবার গাল পরে। মেয়েকে মায়ের কাছে দিয়ে ইরহার খোঁজ নেয়। শেফালী বেগম বলেন তুই এখনি দেখা করতে পারবি না আরো আধঘন্টা পর দেখা করিস৷ যাহহহ এখন মিষ্টি কিনে নিয়ে আয়৷
লাবু, নাদিম, ফরিদা বেগম সবাই হসপিটালে উপস্থিত। বাবুর নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। ইরহা সুস্থ আছে কিন্তু বেশ দূর্বল।
এভাবে হাসি আনন্দে কাটছিলো দিনগুলো। রবিন আবার আগের মত হয়ে গেছে। তা দেখে ইরহাও নিচের ভেতর থেকে সব সন্দেহ সরিয়ে ফেলেছিল।
আর রবিনের রুবাবার প্রতি ভালোবাসা দেখে, ইরহার বুঝতে বাকি নেই। রবিন ভালো বাবা হবে।
রুবাবার বয়স যখন চারমাস। তখন থেকে আবার রবিন পাল্টে যেতে শুরু করে, আবার আগের মত লেট করে বাড়ি ফেরা৷ প্রায় প্রায় বাহিরে রাত কাটানো শুরু করে।
প্রায় দু’দিন পর রবিন বাড়ি ফিরে আসলো। ইরহা রুবাবাকে বেডে শুয়ে দিয়,রবিনের সামনে এসে বলে, সমস্যা কি তোমার?
রবিন সিঙ্গেল সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে,কিসের সমস্যা?
‘কোথায় থাকো ইদানীং। মেয়েটাকেও সময় দাওনা আজকাল৷
‘দয়া করে এখন শুরু হয়ে যেও না। একদম মুড নেই তোমার সাথে তর্ক করার। পারলে খাবার দাও নয়তো চুপ থাকো।
ইরহা কিচেন থেকে খাবার এনে রুমে দিলো। খাবার দিয়ে বলে,শোন আমি কখনো তোমার কথার অবাধ্য হইনি, কারণ ছাড়া তর্ক করিনি, তোমার কাছে বিশেষ কোন আবদারও করিনি। তবে আজ মাস খানেক ধরে,তোমাকে নিজের হ্যাসবেন্ড না। অন্য মানুষ মনে হচ্ছে।
রবিন খাবার মুখে তোলার আগে বলে,তাহলে তাই মনে করো। তবুও প্যারা দিও না৷
‘একটা প্রবাদ আছে, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে হয়। যখন দাঁত থাকবে না শত আফসোস করেও ফিরে পাবে না। আমাকে খুব সহজ পেয়েছো। তাই এমন অবহেলা করো।
‘অবহেলা কখন করলাম?
‘আচ্ছা বলো তো,লাস্ট কবে আমরা একসাথে বসে নিজেদের মধ্যে একটু প্রেম ভালোবাসার কথা বলেছি? শেষ কবে তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে গেছো বা আমাকে কিছু গিফট করেছো?শেষবার কবে জিজ্ঞেস করেছ, ইরহা তোমার কিছু লাগবে?
‘দোখো তোমার এসব ন্যাকামি ছাড়াও আমার বাহিরে হাজারটা কাজ থাকে। তোমার কাছে এটিএম কার্ড আছে, বিকাশ আছে যা লাগবে নিজের ইচ্ছে মত খরচ করবে। আমি তো বাঁধা দেইনি।
‘তাইতো টাকাকে বিয়ে করেছি, রাতে টাকার সাথে বাসর করবো, টাকার সাথে প্রেম আলাপ করবো।মেয়েকে বলবো,টাকাই তোর বাবা।
‘তোমার সমস্যাটা কি ইরহা? আগে তো কখনো এমন বিহেভ করোনি! আজ হঠাৎ এমন উদ্ভট আচরণ?
‘কিছু না খেয়ে নাও। সময় আর মানুষ দু’টোই পাল্টে যায়। সময় পাল্টাতে তাও সেকেন্ডের কা’টা লাগে।তবে মানুষ পাল্টাতে কিছুই লাগে না।
‘তুমি বলতে কি চাইছো?
‘যে বুঝদার তাকে কোন ভাবে বোঝানো যায় না৷ তবে অবহেলা বাড়তে থাকলে সম্পর্ক শেষ হতে থাকে। সম্পর্ক যেটাই হোক গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন। গুরুত্ব হীন সম্পর্ক লবণহীন তরকারির মত।
#চলবে