কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-৩০

0
650

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৩০

‘দ্বায়িত্ব শব্দের ওজন জানেন?এর ভার সহ্য করতে পারবেন? আমি যাকে প্রথম ভালোবেসে ছিলাম,তাকে নিয়ে হাজরো রঙিন স্বপ্ন দেখতাম, নতুন প্রেম, নুতন রঙ, সব কিছুই রঙিন লাগতো তখন, সে আমাকে বলতো তোমার ছোট, ছোট সব ইচ্ছেগুলো পূরণ করার দ্বায়িত্ব নিলাম,একদিন মা,আমাকে ডেকে নিয়ে বোঝালো এসব আমার আবেগ এসব কোন ভালোবাসা না!এই বয়সে এমন হয়েই থাকে। আমি মা’কে অনেক বোঝাতে চেয়েও ব্যার্থ হয়ে তাদের পছন্দের একজনকে বিয়ে করে নিলাম।আমার ভাই তার হাতে আমার হাত দিয়ে বলেছিল, আজকে থেকে আমার বোনের সব দ্বায়িত্ব তোমার। তারপর সে কেমন দ্বায়িত্ব পালন করেছে তাতো জানেন। তাই দ্বায়িত্ব নিতে চাই এই শব্দ বলবেননা৷
‘তাহলে ভালোবাসার সুযোগ দিন।
‘ভালোবাসতে ভয় করে এমন-না, বিষয়টা হলো ভালোবাসা শব্দ-টার উপর থেকে বিশ্বাস চলে গেছে।এই শব্দটা ছাড়াও জীবন চলে,জীবনে তেমন কোন ইম্পর্ট্যান্ট বস্তু না এটা!ভালো আছি, ঠোঁটে উচ্চারিত শব্দ মাত্র,আমি জানি রোজ কতটা লড়াই করে টিকে আছি। এই যে নিজের সাথে লড়াই এটার আঘাত কেউ দেখে না,শত কষ্ট লুকিয়ে বলি, আমি তো ভালো আছি।আমি নিজেকে একটু সামলে নিয়েছি এরপর ভেঙে পরলে আর মনোবল পাবো না।বারবার মেনে আর মানিয়ে নেয়া যায় না!কতবার একটা মানুষ ভেঙে নিজেকে গড়ার ক্ষমতা রাখে?
‘আমি বলবো না আমাকে বিশ্বাস করতে, বলবো না আমাকে ভরসা করতে, বলবো না আপনাদের দ্বায়িত্ব দিতে। আমি খুব সাধারণ তাই আমি সাধারণ ভাবে একটা কথা বলতে চাই, আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছিল, হসপিটালে বসে,প্রথম দেখায় ভালো লাগা। তারপর বাবা,মায়ের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতে, উঠতে বেশ সময় লেগেছে, আমি আপনাকে আর খুঁজে পাইনি৷ এরপরে বিয়ে করবো ভাবার পর আশেপাশের পরিস্থিতি দেখে ভাবলাম বিয়ে আমি করবো না।আমার লাইফে আমার ভাই আগে, যদি বিয়ের পর কোন কারণে তার থেকে আলাদা হতে হয়!এই ভয়ে বিয়ে করিনি আজ পর্যন্ত। কিন্তু আপনাকে দ্বিতীয় বার দেখে আবার ইচ্ছে জাগলো, শেষ বয়সে গল্প করার মত একজন সঙ্গী হিসেবে আপনাকে নিজের করে নিতে। বাকিটা আপনার ইচ্ছে।
‘ইরহা উঠতে, উঠতে বলে, আমি বাসায় যেয়ে জানাচ্ছি।
‘তবে শুনে রাখুন মিস আপনার উত্তর যেনো হ্যা হয়, নয়তো এই অধম আপনার পিছু ছাড়বে না। ওই যে গান আছে না, আমি পাগল হয়ে ঘুরবো তবু পিছু ছাড়বো না।

রেস্টুরেন্টে সবাই জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে৷
ইরহা আস্তে করে বলে,আপনি পাগল হয়ে গেছেন।
‘হু আর এই পাগলের চিকিৎসক আপনাকেই হতে হবে।

‘ইরহা বেরিয়ে এসে রিকশায় উঠলো,কোন ষোড়শী হলে এই প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করতে পারতো না। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা যে প্রতি পদে,পদে অনুভব করেছে তারজন্য এসব পাগলামি ছাড়া কিছুই না।

‘ইরহা বের হয়ে যেতেই জারিফ নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলো।

ইরহা বাসার সামনে এসে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে বাসার সামনে আসতেই অবাক হয়ে যায়।

জারিফ নওশাবাকে কোলে নিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলে, আমাদেরকে আপনার মনে জায়গা দেয়া যায়?
‘কি শুরু করেছেন প্রতিবেশিরা দেখছে।

‘কয়েকদিন পর যখন তোমার বর বেশে আসবো তখনও দেখবে,এতে আর এমন কি?
‘কি পাগলামো হচ্ছে এসব! বলেছি তো ভেবে জানাবো।
‘তুমি না বললেও হ্যা আর হ্যা বললেও হ্যা। মানে তোমাে সাথে আমাকে রাখতেই হবে। এই দেখো বাবাই তো সেটা চায়।আমার মেয়েটাকে বাবা ছাড়া করবে না প্লিজ।
‘ও আপনার মেয়ে কিভাবে হলো? যে ডাউনলোড দিলো সে তো পরিচয় দিলো না, আপনি উড়ে এসে জুড়ে বসছেন কেন?
‘তুমি সব সময় বেশি কথা বলো,জন্মদিলেই সবাই বাবা হয়ে যায় না। তোমার বাসায় যেদিন প্রথম এসেছি বাবাই আমার কোলে এসে একদম আমার সাথে মিশে ছিলো, তারমানে বুঝো তুমি!ও চায় আমাকে বাবা বানাতে আর তুমি ওর কথা ফেলতে পারো না৷ এখন বলো আমাকে বিয়ে করবে কবে?
‘ইরহা ফুল গুলো নিয়ে বলে,ভালো হয়ে যান। বলেই চলে গেলো।
‘জারিফ নওশাবার কপালে চুমু দিয়ে বলে,মামুনি অফিসিয়ালি তোমার বাবা হতে যাচ্ছি ফিলিংস লুঙ্গী ড্যান্স।
‘নওশাবাও জারিফের কথা শুনে আও, আও করে কিছু বললো।না নওশাবা জারিফের কথা বুঝলো না জারিফ নওশাবার কথা৷
জারিফ নওশাবাকে কোলে নিয়ে বাসায় আসলো৷


লাবিবা আর রাতুলের মধ্যে তুমুল ঝগড়া।লবিবা রাতুলকে বলেছে, আইডিতে পোস্ট করতে, আমি এক লাবিবাতে আসক্ত বাকি সব মেয়ে আমার জন্য বিষাক্ত। লাবিবা আর জান আমি লাবিবার প্রাণ৷
‘রাতুল বলেছে এমন নিব্বিদের মত পোস্ট সে করতে পারবে না। এ নিয়ে রাগারাগি কথা বন্ধ।চার ঘন্টা ধরে। চার ঘন্টা পর অনলাইনে এসে দেখে, রাতুল নিজের প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করেছে,সেখানে লাবিবা আর রাতুলের হাতের পিক দেয়া আর ক্যাপশন ছিলো…. “আমার একটা নিজের মানুষ আছে, একান্ত ব্যাক্তিগত নিজের মানুষ।ভবিষ্যতে কি হবে জানিনা!বর্তমানে সে একান্তই আমার প্রিয় মানুষ।
পোস্ট দেখে লাবিবা সাথে সাথে রাতুলকে ভিডিও কল করে বলে,বাবু আই লাভ ইউ। ক্যান আই কিস ইউ?
‘রাতুল বলে,তোমাদের মেয়েদের ঠিক বুঝিনা আমি, কখন আমাবস্যা আর কখন পূর্নিমা।
‘এন্সার দাও।
‘কিস করতে মানা করবে, এমন প্রেমিক এদেশে আছে?
‘সোজা কথার উত্তর সোজা ভাবে দাও।
‘আমি বাসার নিচে আসছি, দেখি কত কিস করতে পারো।
‘রাখো আসছি মানে? কিস দেবো মোবাইলে,সরাসরি পাবা বিয়ের পর। এই ঠোঁট-টা একটু স্কিনের সামনে আনো।
‘মানে?
‘আনো মানে আনো কিস করবো। আনরোমান্টিক ঢেঁড়স প্রেমিক, প্রেমও করতে জানেনা। জানো আমার বান্ধবীর বিএফরা কিভাবে প্রেম করে?
‘কিভাবে?
‘বলে, বাবু হা করো।তারপর আমার বান্ধবী বলে,এইতো বাবু হা করেছে, তারপর ওর বিএফ বলে এই নাও তোমার মুখে লোকমা তুলে দিলাম, খেয়ে বলে কেমন হয়েছে?
‘তোমার বান্ধবী আর তার বিএফের মাথায় সমস্যা আছে। আমি সুস্থ মানুষ তাই কিস করতে চাইলে কয়েকটা কিসি ইমোজি দাও।
‘তোমারে কোন কিসি দেবোই না, আনরোমান্টিক বেডা একটা। যাও প্রেমের ক্লাস করে আসো৷
‘ওরে আমার রোমান্টিক নিব্বি এই আমি আমার ঠোঁট মোবাইলের স্ক্রিনের একদম কাছে আনলাম।
‘এবার চোখ বন্ধ করো।
‘চোখ বন্ধ করলে রিপ্লাই দিবো কি করে?
‘বুঝেছি তুই কখনো রোমান্টিক হতেই পারবি না।তোকে বলছি বলতে তুই বলবি এই বন্ধ করলা।
‘আচ্ছা বাবু এই চোখ বন্ধ করলাম।
‘আমার এখন মুড নাই কিস করার।
‘রাতুল বলে,তোমাদের মুড বোঝার জন্য অবশ্যই ক্লাস করতে হবে।
‘ভালোবাসা থাকলেই মুড বোঝা যায়,কোন ক্লাস করা লাগে না। আমার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে সাথে আইসক্রিম চারটা নিয়ে বাসার নিচে আসো।
‘এখন রাত দুইটা বাজে বাবু এখন এসব কোথায় পাবো?
‘ওহহ এখন রাত দুটো বাজে সে কথা মনে পরলো, আর যখন চুমু খাওয়ার কথা শুনেছো তখন রাতের কথা মনে পরেনি!
‘সরি
‘কতবার বলেছি কথায়, কথায় সরি বলবে না, আমি কি পর নাকি যে সরি বলতে হবে! মিষ্টি করে জান বলে ডাকবা দেখবা সব রাগ ভ্যানিস।
‘ওকে মেরি জান।
‘লাভ ইউ
‘লাভ ইউ টু বেবি।
‘আচ্ছা তুমি কি খুশি আপির বিয়ে ভাইয়ার সাথে ঠিক হওয়াতে?
‘খুশি মানে অনেকককক খুশি,অবশেষে আমারও ভাবি হচ্ছে তাও তোমার বোন। মানে বুঝতে পারছো?
‘কি বুঝতে পারবো?
‘থাক বুঝতে হবে না।
‘বলো বলছি, না হলে কিন্তু রাগ করবো।
‘তারমানে ভবিষ্যতে আমার সাথে কিছু করলে,ভাবির কাছে বিচার দিয়ে তোমাকে বকা খাওয়াবো৷
‘আহা শখ কত, তোমার ভাবি থাকলে আমারও জিজু আছে, তার কাছে বিচার দিয়ে তোমাকো উত্তম মাধ্যম খাওয়াবো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে