কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৯

0
671

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৯

নাস্তার টেবিলে নাস্তা সাজানো, প্রতিদিন এখানে আন্তরাও থাকে আজ নেই। আহনাফ অন্তরার রুমে এসে দেখে অন্তরা নিজের মেয়েরা মাথার চুল বেঁধে দিচ্ছি।
‘তুমি তো কখন এসময় ব্যাস্ত থাকো না। তাহলে আজ কি হলো আন্তরা।
‘আন্তরা নিজের মেয়েকে কোলে করে নিয়ে এসে এক সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে বলে,ওকে নাস্তা করিয়ে দাও৷
তারপর আবার রুমে আসলো, আহনাফ অন্তরার হাত ধরে বলে,কি হয়েছে তোমার? তোমাকে বেশ অশান্ত মনে হচ্ছে। চলো পাহাড় অথবা সমুদ্র থেকে ঘুরে আসি, তোমার একটু প্রশান্তি দরকার।

‘অন্তরা আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে………
‘যে সম্পর্কে ভালোবাসা নেই, সেখানে প্রশান্তি আসবে কোথা থেকে?ভালোবাসা মানে হলো প্রশান্তি,আমরা যাকে ভালোবাসি তার দিকে তাকালে বা তার সাথে এক মিনিট কথা বললেও হৃদয়ে প্রশান্তি ছেয়ে যায়।নিজেও জানিনা কোন পরিস্থিতি আছি,আর অন্য কাউকে বোঝাতে পারা তো বিলাসিতা! জানো আমার মনে হয়, তোমার বউ না হয়ে,যদি তোমার প্রেয়সী হতাম তাহলেই হয়তো ভালো হতো!যুগে, যুগে প্রমানিত বউয়ের চেয়ে প্রেয়সীর স্থান পুরুষের মনে বেশী। দেখো আমি সারাজীবন চেষ্টা করেও তোমার প্রেয়সীর জায়গা নিতে পারবো না। তবে সে সারাজীবন তোমার মনে নিজের স্থান বহাল রাখতে সক্ষম, যদিও তোমাদের মাঝে এক আলোকবর্ষ দূরত্ব ও থাকে!
‘আহনাফ অন্তরাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে, কানের কাছে আস্তে করে বলে,না হওয়া প্রেয়সী মানে দীর্ঘশ্বাস। আর আমি তো তোমাকে মিথ্যে বলতে পারবো না যে,আমি ভুলেগেছি বা ভুলে যাবো তাকে, যার জন্য জীবনের প্রথম অনূভুতি জাগ্রত হয়েছিল, জীবনের প্রথম মধুর স্বপ্নগুলো যাকে ঘিরে জাল বুনেছিল। চাইলেও সেসব ভুলে যাওয়া সম্ভব না৷ যদিও কেউ বলে,প্রথম ভালোবাসা আর প্রথম প্রেম ভুলে গেছে,তবে মনে রেখো সেখানে কখন ভালোবাসা ছিলো না। যা ছিলো সাময়িক এটেনশন।
এই সব কথার ভিড়ে আসল কথাটা কি জানো?তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তবে স্বপ্ন পূরণ তোমার হাত ধরে হয়েছে,যেমন ধরো আজ আমি খাবার টেবিলে বসেও নাস্তা করতে পারলাম না। তোমার অনুপস্থিতি আমাকে পিড়া দিলো, এই সামান্য কাজটাই তোমাকে ছাড়া শূন্য মনে হচ্ছে, তারমানে বুঝতে পারছো তোমার স্থান কোথায়? তুমি আমার জীবনে কেমন করে মিশে গেছো!
‘অন্তরা শক্ত করে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি আমার মানষিক শান্তির কারণ, তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।
‘আহনাফ অন্তরার কপালে চুমু দিয়ে বলে,মৃত্যু ছাড়া বিচ্ছেদ সম্ভব না। একজনে হারিয়েছি তোমাকে আর হারাতে দেবো না।

ইরহা শান্ত স্বরে বলল,হ্যা লামা আর রবিনের সাথে গতকাল রাতে আমার কথা হয়েছে, লামা আমাকে রাত দশটার দিকে কল করে, আমার কাছে ক্ষমা চায়। ওকে খুব ডিস্টার্ব লাগছিলো তাই ধৈর্য ধরে ওর কথা শুনেছিলাম। তবে মাত্র তিন মিনিটের কনভারসন।
‘একজন ইরহার ফোনটা নিয়ে চেক করে দেখ ইরহার কথাটা ঠিক।

‘একজন লেডি অফিসার বলে,কিভাবে মানবো আপনি সত্যি বলছেন?
‘ইরহা বলে কল রেকর্ড চেক করলে পেয়ে যাবেন৷ আমি রেকর্ড করে রেখেছি৷
‘তাররপর বলুন রবিনের সাথে শেষ কথা কি বলেছেন
‘ও কল করেছিল রাত তিনটে বাজে, আপনি রেকর্ড অন করুন।
রেকর্ড অন করলো,……….

প্লিজ ইরহা কল কেটো না, আজকের পর আর কখনো তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। কিন্তু এখন আমার কল কাটলে আমি কতজনকে খু’ন করবো জানা নেই।
‘আপনার পাগলামি অন্য কোথাও দেখান মাঝরাতে এতো বারবার কল করে ডিস্টার্ব করছেন কেন?আর এটা কার নাম্বার।
‘এটা নতুন কিনেছি কাল, এই দেখে লামার দেহটা আমার সামনে পরে আছে, দেখো মনে হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত চোখ দু’টো দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওরমত মেয়েদের এমন-ই হওয়া উচিৎ।
‘কি সব বাজে কথা বলছেন? ফোন রাখলাম আমি।
‘উঁহু রাখবে না, রাখলে আমি শেষ করে দেবো সবাইকে আমার শেষ কথা শুনো আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।কনভারসন শেষ হতেই পুলিশ অফিসার বলে,’সরি ম্যাম ডিস্টার্ব করার জন্য, আসলে জেলেদের জালে লামা মেয়েটার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গেছে৷ আর আগামী কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওর ভিডিও এতো ভাইরাল ছিলো যে,ওর লাশ চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়নি। ধন্যবাদ আমাদেরকে সঠিক ইনফরমেশন দেয়ার জন্য। ম্যাম আপনাকে আরো একটা হেল্প করতে হবে।
‘জ্বি
‘যে নাম্বার থেকে কল এসেছিল ওই নাম্বারে কল দিয়ে বলুন, তুমি কি একবার আমাদের বাসায় আসবে? নওশাবাকে দেখতে?
‘ইরহা কল করলো, সাথে সাথে রিসিভ।
ওপাশ থেকে বলল, আমি জানতাম তুমি আমাকে কল করবে, অবাক হচ্ছো আমি কিভাবে বুঝে গেলাম!
‘লাশটা যখন পাওয়া গেছে তখনই বুঝে গেছি। আমি নিজেকে নিজেই শেষ করে দেবো। কোন পুলিশ আমাকে শাস্তি দিতে পারবে না। তোমার ফোনের অপেক্ষা ছিলাম। আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি,সম্মান করতে পারিনি, আমি ছিলাম পঁচা শামুক। তাই আমাকে আর কখনো মনে করবে না জানি। তবুও বলবো পারলে ক্ষমা করে দিও।আর একটা অনুরোধ আমার মৃত্যুর পর কোনদিন আমার মেয়ের কাছে আমার সত্যিটা বলবে না। আমি চাইনা আমার মেয়ে জানুক তার জন্মদাতা পিতা কতটা জঘন্য ছিলো। এই ইরহা এই কথাটা রাখবে তো?
‘হ্যা রাখবো তবে শর্ত আছে। বাকি কথা বলার আগেই,
‘ওপাশ থেকে বিকট একটা শব্দ হলো।
‘ওখানকার পুলিশ পৌছনোর আগেই রবিন নিজেই নিজের গলায় ধারালো ছু’ড়ির আঘাতে খণ্ডিত করে দিয়েছে।

‘ইরহা হ্যালো হ্যালো করছে,কিন্তু আর কোন শব্দ আসলো না গোঙানির শব্দ ছাড়া।
‘ওখানের পুলিশ জানালো,স্পট ডেথ।
‘ইরহা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। কখনো এটা চায়নি এমন নির্মম পরিণতি। কিন্তু কথায় আছে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।প্রথমে মানুষ একটা ভুল করে আস্তে আস্তে ভুলের পাহাড় গড়ে তোলে, একটা সময় ঠিক ভুলের মধ্যে পার্থক্য ভুলে যায়। তারপর পরিণতি হয় ভয়াবহ।

পুলিশ চলে গেলে, ফরিদা বেগম বলে,ছেলটা একটা ভুল শুধরাতে আরো কতগুলো ভুল করলো৷
‘নাদিম বলে বাদ দাও তো মা’কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল।ও নিজে না মরলে জেলখানায় ধুঁকে ধুঁকে মরতো।
‘নিশাত ইরহার কাঁধে হাত রেখে বলে,যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
‘ইরহা কিছু না বলে সবার মধ্য থেকে উঠে চলে আসলো। আসলে ইরহা শকড,পরশু যে মানুষটাকে একদম সুস্থ সবল দেখলো সেই মানুষটা আর নেই!ইরহার রাগ, ক্ষোভ সব আছে তাই বলে, এভাবে তার অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে? ওয়াশরুমে এসে নিজের চোখে মুখে পানি দিলো।আয়নায় তাকিয়ে বলে,জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো!তবে জীবনতো আর উপন্যাসের পাতা বা সিনেমার স্ক্রিপ্ট নয়! যে সবকিছু সাজানো গোছানো থাকবে।

✨ এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েকমাস। এই কয়েকমাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নওশাবাও বড় হয়েছে কিছুটা এখন হাঁটতে শিখেছে আধো আধো বুলি আওড়াতে শিখেছে।সবার জীবন বেশ স্বাভাবিক।
লাবিবা আর রাতুলের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।
নিশাত প্রেগন্যান্ট। সব মিলিয়ে ওদের জীবনটা ভালোই চলছে।

ইরহা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে, তার মুখোমুখি বসে আছে জারিফ। ইরহাই আগে কথা শুরু করে, আমি আগেই জানতাম আপনার মাথায় সমস্যা আছে। আর এখন এতে কোন সন্দেহ নেই। আপনি যা চান তা কখনো হবে না৷ কাউকে আবার ভালোবাসা, আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা এসব আর সম্ভব না। আমি ক্লান্ত তাই প্লিজ আপনি বাসায় মানা করে দিন।
‘জারিফ কোল্ড কফিতে চুমুক দিয়ে বলে,আমি কি বলেছি, আমাকে ভালোবাসতে? নাকি বলেছি স্বপ্ন দেখতে? আমি শুধু আপনার আর প্রিন্সেসের দ্বায়িত্ব নিতে চাই।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে