কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৮

0
652

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৮

লামা কোনমতে বলে,রবিন তুমি কি করছো!
‘তোমাকে শেষবারের মত ভালোবাসা দিচ্ছি জান। একটু কষ্ট হবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
‘প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও আর কিছু বলার আগেই পরপর কয়েকটা আঘাত করলো ধারালো যন্ত্রটা দিয়ে। শেষবারের মত লামার হৃদয়বিদারক চিৎকার ভেসে আসলো। সেই চিৎকারে মিশে ছিলো বেঁচে থাকার আকুতি আর নিজের ভুলের দীর্ঘ শ্বাস।
চাঁদের আলো যেনো আরো বেড়ে গেছে সাদা বালিতে টকটকে লাল রক্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রবিনের সামনেই পরে আছে লামার নিথর দেহ।চোখ দুটো খোলা মনে হচ্ছে এখনো চোখে লেগে আছে, রবিন আমাকে বাঁচতে দাও। রবিন লামার চোখের দিকে তাকিয়ে ছু’ড়িটা নিয়ে পরপর দুইবার দু’চোখে আঘাত করলো। লামার লাশের পাশে বসেই পাগলের মত হাসছে আর বলছে,তোকে আমি হয়তো ক্ষমা করতাম, যদি তুই শুধু আমার জীবন নষ্ট করতি, কিন্তু তুইতো ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পরছিলি! কত ছেলে লাগে তোর তুই কিভাবে আমার বন্ধু থেকে শুরু করে আমার পার্টনারদের সাথে ও বলেই এক দলা থুথু লামার গায়ে নিক্ষেপ করলো৷ তোর আরো ভয়াবহ মৃত্যু দরকার ছিলো, তুই কি ভেবেছিলি এতো কিছুর পরেও তোকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো!তোকে এবার সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দেবো কেউ জানবে না তুই বেঁচে আছিস নাকি মরে গেছিস। রবিন লামার লাশটা টেনে সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিলো। ঢেউয়ের সাথে সাথে লাশটা রবিনের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো। এই ঝাউ বন আর সুনসান নীরবতা কেমন গা ছমছমে পরিবেশ এবার রবিনের ভয় লাগতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পরপর ঝাউ গাছের শো শো বাতাসের শব্দ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ যেনো আরো ভূতুড়ে করে তুলেছে পরিবেশ। সমুদ্র থেকে হাতে কিছুটা পানি নিয়ে নিজের চোখেমুখে ছিটা দিলো। সামনে ফিরতেই মনে হলো লামা ওইভাবে শুয়ে তাকিয়ে আছে রবিনের দিকে।


লামার মা রাবেয়া বেগম হুট করে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন চিৎকার করে বলেন,লামা।
লিজার ও ঘুম ভেঙ্গে গেলো তার মায়ের চিৎকার শুনে। উঠে বলে,কি হয়েছে মা’তোমার কি শরীর খারাপ?
‘লিজা তুই লামাকে একটা কল দে তো, আমার মন কেমন কু’ ডাকছে।
‘মা তুমি তোমার ওই মেয়ের খোঁজ নিতে বলছো!যে নিজের সম্মান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।
‘তুই বুঝবি না, নয় মাস এই শরীরে রেখে দুনিয়ায় আনছি, যতই ভুল করুক, খু’নি হোক বা পতিতা জন্ম তো আমিই দিয়েছি তাই আমার মন তো পুড়বেই। একটা কল কর আর কখনো বলবো না।
‘লিজা বিরক্ত হলেও নিজের মায়ের আকুতি দেখে কল করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।
কয়েকবার কল করার পর লিজা বলে,মা মনে হয় ঘুমাচ্ছে সকালে আমি কথা বলিয়ে দেবো। এখন তুমি শান্ত হও। রাতের ন’টা বাজে আমাকে কল করেছিল, তখন কথা হয়েছে এতো চিন্তা করার কিছু হয়নি।
‘তুই যাই বলিস আমার মনটা কেমন যেনো করছে।
‘সারাদিন টেনশন করো তাই এমন লাগছে।
‘তুই ঘুমা আমি নামাজ পড়বো।
‘এখন কিসের নামাহ পড়বা! মাত্র তিনটা বাজে।
‘তাহাজ্জুদ পরবো তুই ঘুমা৷

✨রাতুল লাবিবার সাথে দীর্ঘ সময় কথা বললো,শেষে একটা ছোট কথায় ঝগড়া বেঁধে গেলো।
লাবিবা, আচ্ছা বলতো আমাকে কোন রঙে বেশি মানাবে?
‘তুমি যেটা পরবে সেটাই মানাবে।
‘যদি টিয়া কালার পরি কেমন লাগবে?
‘সো বিউটিফুল লাগবে জান।
‘চুপ থাক তুই। আমি আগেই বুঝেছি তুই আমাকে ভালোবাসিস না।
‘কি আজাইরা কথা বলো জান!
‘এখন আমি আজাইরা কথা বলি! এখন আমার কথা তো ভালো লাগবেই না।
‘এসব কি বলছো আমি কখন বললাম।
‘এটাই তো সমস্যা তুই তো কিছুই বলিস না।
‘পাগলের মত বিহেভিয়ার কেন করছো?এরজন্য বাচ্চা মেয়েদের সাথে প্রেম করতে হয় না, নিব্বিদের মত আচরণ করে।
‘এখন আমি পাগল, নিব্বি আর কি বাকি আছে।
‘এখন এই মূহুর্তে ব্রেকআপ যা বুড়ি খুঁজে প্রেম কর।
‘জাননন এমন করছো কেন? আমি কি এমন বলছি।
‘না না আপনি তো কিছু বলতেই পারেননা সব বলছি আমি সব দোষ আমার আমি নিব্বি আমার সাথে কিসের কথা জনাব বুইড়া খাটাশ।
‘কি সব বলছো এসব! জান আমার ভুল হয়েছে এবারের মত ক্ষমা করে দাও। (মনে মনে রাতুল ভাবছে কোন ভুলের জন্য সরি বলছি সেটাই বুঝতে পারছি না। আসলে মেয়েদের মুড যে কখন পূর্নিমা আর কখন আমাবস্যা সেটা এজন্মে কোন পুরুষের মনে হয় না বোধগম্য হবে!
‘সরি বললেও কাজ হবে না।
‘জান সরি, জান লাভ ইউ,সাথে অনেকগুলো কিস ইমোজি। জানননন….
‘একদম গলানোর চেষ্টা করবে না, আমি আজ গলবো না।
‘আরো অনেকগুলো কিস ইমোজি দিয়ে বলে,জাননন সরি।
‘আচ্ছা যাও এবারের মত মাফ আর যদি এমন ভুল হয় তো খবর আছে।
‘রাতুল মনে মনে বলে এযাত্রায় বেঁচে গেলাম।আচ্ছা জান শুভরাত্রি।

✨সকালের মিঠা রোদ জানালার পর্দা ভেদ করে,ইরহার চোখেমুখে খেলা করছে। মিটিমিটি করে চোখ খুলে নিজের পাশে নওশাবাকে দেখেই ইরহার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। আলতো করে নওশাবার কপালে চুমু খেয়ে বেড ছাড়লো।
ফ্রেশ হয়ে প্রতিদিনের মত কিচেনে যেয়ে তো আবাক! লাবিবা নাস্তা বানানোর চেষ্টা করছে,পুরো রান্না ঘরে আটা ছড়িয়ে আছে। আটায় পানি বেশি দেয়াতে হাতে লেগে আছে। যাতা অবস্থা লাবিবার।
ইরহা খিলখিল করে হেসে বলে,কি করে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিস! সামান্য রুটি বানাতেই নিজের নাজেহাল অবস্থা বাকি সব কি করে করবি?
‘আপু শিখিয়ে দাওনা। ওদের বাসায় কোন মেয়ে নেই, সব সময় সার্ভেন্ট হাতের রান্না খায় আর নয়তো হোটেল থেকে কিনিয়ে আনে।
‘এহহ আমার বুড়ি আচ্ছা দূরে সরে দাঁড়া আমি কিভাবে করি দেখ।
‘নাহহহ তুমি বলো,আমি করি।
‘এগুলো সাইডে রাখ,এবার একটা পাতিলে পানি বসা৷
ইরহা বলে দিলো আর লাবিবা নিজ হাতে সবটা করলো,নাস্তা বানানো শেষ করে একটা টিফিন বক্সে কিছুটা তুলে রাখলো।
‘সবাই নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে বসেছে,ইরহা বলে ভাইয়া আজকের নাস্তা কিন্তু আমাদের লাবু বানিয়েছে,পরোটা,ভাজি, অমলেট,সুজির হালুয়া, চা।
‘সত্যি এসব লাবিবা বানিয়েছে?
‘হুম সত্যি।
‘লাবু এদিকে আয়।
‘লাবু ধীর পায়ে নাদিমের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো, নাদিম নিজের পকেট থেকে চারখানা কচকচে পাঁচশো টাকার নোট বের করে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে,এটা তোর বখশিশ।
‘ইরহার চোখ ভরে উঠলো,তার বাবাও তাকে এভাবে বকশিস দিয়ে বলেছিল,মেয়েরা যত ভালো পড়ালেখা জানুক সাথে কিন্তু ভালো রান্নাও জানতে হয়। যে মেয়ের রান্নায় যত জাদু সে মেয়ে সংসারে সবার তত প্রিয়।
‘নাদিম বুঝতে পরে বলে,আমাদের ইরহাকে এই বকশিস বাবা, দিয়েছিলো আর বাবার অনুপস্থিতিতে তোকে আমি দিচ্ছি। আমরা তিন ভাই বোন একসাথে থাকলে কোন দুঃখ আমাদের স্পর্শ করতে পারেনা।
‘নিশাত নওশাবাকে কোলে নিয়ে এসে বলে,মামুনি তুই আর আমি হলাম এবাসার পর আমাদের আমরা আছি চিন্তা করিস না।
‘ফরিদা বেগম নিশাতকে জড়িয়ে ধরে, তোমরা ছাড়া তো আমরা সবাই অসম্পূর্ণ তোমাদের নিয়েই আমরা পূর্ণ।
‘ইরহা বলে,এবার কি সবাই কথাই বলবে নাকি খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে আমাদের পিচ্চির রান্না?
এতো সুন্দর মূহুর্তে হঠাৎ করে থমথমে হয়ে গেলো।
সবার মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। সামনে তিনজন পুলিশ বসে আছে। কারো মুখে তোন কথা নেই!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে