কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২৭

0
660

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব_২৭

জারিফ একটার পর একটা মিষ্টি খাচ্ছে পরপর চারটা মিষ্টি খেয়ে থামলো।
‘ইরহা হেসে বলে,বেশ দারুণ খেতে কিন্তু লাল মরিচ দিয়ে শুটকি ভর্তাটা।
‘এতো ঝাল আগে বলবেন তো?
‘আমি কি করে বুঝবো যে খেতে বসেছে সে কচি খোকা এইটুকু ঝাল সহ্য করতে পারবে না!
‘দেখুন আমি আপনার চেয়ে সিনিয়র তাই রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলুন।
‘আসসালামু আলাইকুম ডিয়ার সিনিয়র আমি কি করে জানবো আপনি কচি খোকা ঝাল খেতে পারেননা।
‘আপনি মজা নিচ্ছেন?
‘মজা সেটা আবার কি ভাবে নেয়?
নিশাত জারিফের সামনে এক বাটি পায়েস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,ভাইয়া ঠান্ডা ঠান্ডা পায়েস খান ভালো লাগবে।
‘ভাবি আপনি অনেক সুইট।কিন্তু আপনার ননদ।
‘তা বিয়ে করবে আপনার ভাই ভাবিকে তেল দিলি দিবে রাতুল আপনি কেন দিচ্ছেন?
‘তো আমি কি বিয়ে করবো না?
‘সেটা আপনি জানেন তবে এবাড়িতে বিয়ের চান্স একটাই।
‘জারিফ পায়েস শেষ করে বাটি রেখে বলে,আজকে তাহলে উঠি ভাবি অন্য আরেকদিন আসবো।
‘আচ্ছা ভাইয়া নিজের বাসা মনে করবেন৷ যখন ইচ্ছে চলে আসবেন।
‘জারিফ চলে যেতে নিশাত বলে,ছেলেটা কি দারুণ আমার বোন থাকলে বোন জামাই বানাতাম।
‘ভাবি এরচেয়ে রাতুল বেশি দারুণ।
‘আচ্ছা চলো বারান্দায় আমি চা নিয়ে আসছি দুই ননদ ভাবী মিলে আড্ডা দিবো আজ।
‘ইরহা নিশাতের হাতটা ধরে বলে,ভাবি সব ঠিক থাকলে আমার জীবনটা অন্যরকম হতো তাই না?
‘যা হয় ভালোর জন্যই হয়। হুম এই ভালো হতে, হতে অনেকটা খারাপ সময় হয়তো পার করতে হয় কিন্তু শেষটা সুন্দর হবে দেখো। দেখো রবিনের মত একটা মানুষ থেকে মুক্তি পেয়েছো সেটা হলো ভালো দিক। আবার যে সংসার আর মানুষটাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছিলে সেটা ভেঙে গেলো সেটা খারাপ দিক। তবে এমন মানুষ যার চরিত্রে সমস্যা আছে তার সাথে সারাজীবন কাটানোর চেয়ে একা কাটানো ভালো।
‘আমি তো এমন একটা জীবন চাইনি! আমার সামান্য একটু চাওয়া ছিলো,মনের মত একজন জীবন সঙ্গী যার সাথে সুখে,দুঃখে হাত হাত রেখে কাটিয়ে দেবো। এই সামান্য চাওয়াটা অপূর্ণ রয়ে গেলো!
‘কিছু স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া ভালো। দেখবে বাস্তবে এমন কিছু হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে যে ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নের চেয়ে হাজার গুন ভালো। তুমি যাও আমি চা নিয়ে আসছি।

ইরাহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় চেয়ারে যেয়ে বসলো। নওশাবার দিকে তাকিয়ে বলে,আমার মিষ্টি মা’তোর কোন চিন্তে নেই তোর আম্মু তোর বাবা,মা দু’টোই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি তোকে আগলে রাখবো।তোর মা’ আছে মানে তোর সব আছে। অতীতের কোন কালো ছায়া তোক স্পর্শ করতে পারবে না।

লবিবা এসে বলে,এই আপু তোরা কি সত্যি আমার বিয়ে পাকা করছিস?
‘নাহহহ তোর বিয়ে টাইলস করেছি। পাকা তো সস্তা তাই ভাবলাম দামি টাইলস করি।
‘মজা নিচ্ছিস?
‘কই মজা এনেছিস দে খাই।
‘দূর ভাল্লাগে না। বলনা সত্যি টা কি।
‘এখনো তোর বিয়ে পাকা, টাইলস বা মোজাইক কোনটাই করা হয়নি তবে কথাবার্তা চলছে।
‘তোমার পছন্দ হয়েছে রাতুল কে?
‘এই তোর লজ্জা শরম নাই নাকি রে? বড় বোনের কাছে নিজের জামাইয়ের প্রসংশা শুনতে চাইছিস।
‘আরেহহহ প্রসংশা করার মত কিছু আছে নাকি ওর আস্ত এলোভেরার জুস কোন রস কষ নেই।
‘লাবু তোর রস কষ খুঁজতে হবে না যেয়ে পড়তে বস।
‘শোননা আমাদের ক্লাসের ওশমির কথা মনে আছে?
‘মনে থাকবে না কেন? তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ওশমি।
‘ভাবছি জারিফ ভাইয়ার সাথে ওর সেটিং করিয়ে দেবো।তারপর দুই ফ্রেন্ডের একি শ্বশুর বাড়ি আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
‘তোর মাথা ঠিক আছে! ওনার বয়স আর ওশমির বয়সে তফাৎ কত!
‘এ কোন ব্যাপার নাকি আমাদের ক্লাসের রিতুর বড় তো টাকলা আবার বয়সও কত বেশি রিতুর বার্থডে শাল আর ওর বরের এসএসসি সাল। চাকরি আর টাকা থাকলে বয়স কোন ব্যাপার না। আর জারিফ ভাইয়া তো রাতুলে চেয়ে হ্যান্ডসাম।
‘তুই নিজের চিন্তা কর,সর যা পড়তে বস।

✨জারিফ বাসায় আসতেই রাতুল বলে,ভাইয়া আমি অফিসে গেলাম তুমি কোথায় ছিলে?
‘আমার শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুর বাড়ির মানুষ সবাই এতো ভালো কিন্তু বউটা জুটেছে শেওরা গাছের পেত্নী।
‘ভাইয়া তুমি কিভাবে তোমার একমাত্র ভাইটাকে ছাড়া বিয়ে করতে পারলে? আমি তোমার কাছে এতোটাই পর হয়ে গেলাম।
‘কি মেয়েদের মত প্যানপ্যান করছিস। বিয়ে করলাম কবে? তবে আমার ভাগ্য আছে বল বউয়ের সাথে একটা বাচ্চা ও পাবো৷
‘আমার ভাতিজিও আছে! আর তুমি আমার থেকে তাকে লুকিয়ে রেখেছো।
‘চুপ কর আমার বিয়ে এখনো হয়নি যখন হবে তখন।
‘তাহলে?
‘তাহলে তোর ভাবিকে পটাতে হবে জানি কাজটা সহজ না কিন্তু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করকে হবে।
‘ভাইয়া বুঝিয়ে বলো।
‘মনে কর তোর ভবিষ্যত শ্বশুর বাড়ি আমারও শ্বশুর বাড়ি।
‘মানে তুমি ইরহা আপুকে বিয়ে করতে চাইছো?
‘হুম সেই কবে থেকেই।
‘কিন্তু আপুতো রাজি হবে না মনে হয়৷
‘জারিফ বলে,আমি পাথরে ফুল ফোটাবো শুধু ভালোবাসা দিয়ে।
‘পাথরে ফুল ফোটে না আর আপুও রাজি হবে না।
‘শোন সিরিয়াস কথা বলি,আমি ইরহার অতীত সম্পর্কে ভালোমত খোঁজ নিয়েছি। মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো একদম আমার মনের মত ঠিক যেমন মেয়ে আমি চাইতাম। তবে ওর সাথে যা হয়েছে তাতে ওরতো কোন দোষ নেই! তাই ওর জীবনে ঝড় এসে যেভাবে ওর জীবন অগোছালো করে দিয়ে গেছে, আমি ঠিক তারচেয়ে দ্বিগুণ যত্নে সেটা গুছিয়ে দেবো। ভালোবাসা দিয়ে,সম্মান দিয়ে,যত্ন দিয়ে আর নিজের সবটা দিয়ে আগলে রেখে।

✨আজ অন্তরার বার্থডে ছিলো সব ঠিকঠাক চলছে, কিন্তু অন্তরা আহনাফকে খেয়াল করেছে, আহনাফের চেহার উদাসীনতা অন্তরার দৃষ্টির আড়াল হয়নি৷ রাত প্রায় বারোটা বাজে আহনাফ বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে চোখ বন্ধ করে৷
অন্তরা বাচ্চাদের ঘুম পারিয়ে রেখে আহনাফের তাচে এসে বসলো,আহনাফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,তোমার যদি ইরহাতে শান্তি মিলে, তবে তুমি তার কাছে ফিরতে পারো আমি তোমাকে আটকাবো না। জানো তোমাকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করতে করতে দু’বাচ্চার মা হয়ে গেছি তবুও তোমার মন পেলাম না। তুমি প্রথমবার আমার সাথে মিলিত হওয়ার পর বলেছিলে,এটা শুধু শারীরিক চাহিদা। আমি তোমার শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে পারলেও মানুষিক চাহিদা কখনো পূরণ করতে পারবো না। শরীর ছোঁয়া সহজ মন ছোঁয়া সহজ না।আমার মন একজন ছুঁয়ে গেছে আর সেই আমার মন জুড়ে আছে কখন এই মন আর কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।
‘এরপরেও তোমার সাথে এতোগুলা বছর থেকে তোমার মনে জায়গা তৈরি করার বৃথা চেষ্টা করে গেলাম। তাই আজ তোমাকে মুক্তি দিলাম।
‘আহনাফ অন্তরার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসালো। অন্তারা ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলে,
‘তুমি কি ইরহা নামের মানবিকে চেনো?সে আমার দিকে দ্বিতীয় বার ফিরেও তাকাবে না৷ তুমি জানো ও এমন একটা মেয়ে না চাইলেও ওর প্রতি ভালোলাগা এসে পরে। যে মেয়েটা নিজের আগে সবার ভালো চিন্তা করে সে কেমন মনের বুঝতে পারছো। শুনো আজ ও না জেনে আমার অফিসে জয়েন হয়েছিল, কিন্তু যখন আমি বস এটা জানতে পারলো সাথে সাথে চলে গেছে। আমি বাঁধা দিতে চাইলে বলল,আমি যেমন একটা মেয়ে হয়ে কখনো মেনে নিবো না আমার হ্যাসবেন্ডের অফিসে তার এক্স জব করুক ঠিক আপনার ওয়াইফ ও মানবে না।আপনার পরিবার আছে সন্তান আছে তাদের নিয়ে ভালো থাকুন।
আমি জানি এসব কথা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে তবুও বলছি কারন তুমি বললে তার কাছে ফিরে যেতে। ফেরার রাস্তা থাকলে হয়তো ফিরতাম। তবে তোমার মায়া আমাকে বেঁধে রাখতো। এটা যেমন ঠিক তুমি ইরহার জায়গা নিতে পারোনি। তবে এটাও ঠিক তুমি নিজেই একটা জায়গা তৈরি করেছো। একজন ছেড়ে গেছে ভালো মত বেঁচে আছি। হয়তো কোন বিষন্ন বেলা তার কথা ভেবে মন খারাপ হয়। কিন্তু তুমি ছেড়ে গেলে আর বেঁচে থাকা হবে ভালো থাকা তোমার সাথে চলে যাবে আর জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত বিষন্নতায় ছেঁয়ে যাবে।
‘অন্তরা নিজের ঘাড়ে আহনাফের অশ্রু অনুভব করছে। পুরুষের চোখের পানি সহজে আসে না, তারা কঠিন মূহুর্ত হেসে পার করে। কিন্তু যদি কোন নারী তাদের অশ্রু দেখে তবে তারা মমের চেয়ে দ্রুত গলে যায়।

✨রবিন লামার ঠোঁট ছেড়ে ঘাড়ে স্পর্শ করলো, আস্তে আস্তে স্পর্শ গভীর হচ্ছে। রাতের নিরবতা সাথে দু’জন মানব মানবির শ্বাসের উর্ধ্ব গতির শব্দ।
লামা হারিয়ে যাচ্ছিলো রবিনের ভালোবাসয় ঠিক সেই মূহুর্তে হঠাৎ লামা চিৎকার দিয়ে উঠলো। তার চিৎকারের শব্দ ঢেউয়ের মত তার কানে এসে বাড়ি খেলো ।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে