#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৫
রবিন এমন ভাবে লামার মুখ চে’পে ধরেছে যে র’ক্ত বের হতে লাগলো৷
লামা মুখ দিয়ে কোন কথা বের করতে পারছে না ব্যাথায় চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো৷
এমন সময় রবিনের ফোনটা বেজে উঠলো, রবিনের ফোনের রিংটোনের আওয়াজ কানে যেতে রবিন লামার মুখ থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বেড সাইড টেবিল থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বোন দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে কল৷ রবিন মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখে বিছানায় বসলো৷ কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে আসে লামার কাছে৷ লামার গালে চুমু দিয়ে বলে, জান তোমাকে কতবার বলেছি আমার সামনে ওই মেয়ের নাম মুখে আনবা না৷ তবুও কেন আনো। টিস্যু দিয়ে র’ক্ত মুছিয়ে দিয়ে বলে,আমি আইসক্রিম আনিয়ে দিচ্ছি তোমার ভালো লাগবে।
‘লামার ভেতরে কেমন অজানা একটা ভয় ঢুকলো। আজানা ভয় হুট করে লামার অন্তরটাকে আবৃত্ত করে নিলো। রবিন বাহিরে চলে যেতেই লামা নিজের ফোন থেকে নিজের ছোট বোনকে কল করলো, লিজা প্রথমে কল রিসিভ করলো না। কয়েকবার কল দেয়ার পর রিসিভ করে বলে,তোমার জীবন তো শেষ করেছো এখন আমাদের জীবন কেন নষ্ট করতে চাইছো? নিজের মত থাকো আমাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না।
লামা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,লিজা একবার আমার কথাটা শুনবি?
‘আর কি বলার আছে তোমার?তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষণ ঝুলে পরতো। তুমি দেখে বেঁচে আছো।
‘লামা আর কিছু না বলে,কল কেটে দিলো।পৃথিবীতে যত আপন আর নিজের মানুষ ই থাকুক না কেন,কারো পাপের ভাড় কেউ নেয়না। বরং সবাই নিজেকে সরিয়ে নেয়। লামার ইচ্ছে করছে কাউকে কিছু বলতে কিন্তু তার কথা শোনার মত আজ কেউ নেই। কত পুরুষকে নিজের রুপের জাদুতে তৃপ্তি দিয়েছে আর আজ তার রুপই তার জন্য কাল হলো।
✨
কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক্সারসাইজ করতে বের হয়েছিল জারিফ৷ পাশের পার্কে অনেক সময় এক্সারসাইজ করে একটা ওয়াটার পট থেকে নিজের চোখে মুখে পানি দিয়ে নিজে কিছুটা পানি পান করলো। পার্কের একটা বেঞ্চে বসতেই খেয়াল করলো, একজন বয়স্ক লোক মন মরা হয়ে বসে আছে।
জারিফ একটু সামনে এগিয়ে বলে,আঙ্কেল কিছু নিয়ে চিন্তিত?
‘কি বলবে রে বাবা, আমার তিনটা ছেলে সব চাকরির জিবি। তোমার আন্টিও নাই সে আমাকে একা রেখে অনেক আগেই চলে গেছে। এখন কোন ছেলের বাসায় আমার ঠাই নাই। এবাসায় গেলে ওরা বলে,আমাদের বাসায় সমস্যা হয়। ও বাসায় গেলে বলে,সব সময় কি এক ছেলের ঘাড়েই বসে খাবেন! আর ছোট ছেলের বউ বলে,আমি একটা পুরুষ মানুষের সাথে একি বাসা শেয়ার করতে পারবোনা।
নিজের ছেলেদের কাছে বোঝা এখন আমি। অথচ আমি দিনরাত কত পরিশ্রম করে এদের মানুষ করেছি। সারাদিন অফিস করতাম রাতে পাইকারি ফলের ব্যাবসা করতাম। নিজে কোনদিন ভালো একটা শার্ট কিনে পরি নাই।অথচ ছেলেদের কোন শখ অপূর্ণ রাখি নাই। এহন মনচায় না কোন ছেলের বাসায় যাই। তিন বেলার দুই বেলা খাই।সেই খাবারও যদি চোখমুখ কালা কইরা দেয়। তহন আর গলা দিয়া নামে না। এই বয়সে কই যামু কি করবো!
‘আঙ্কেল কিছু মনে না করলে আমাদের বাসায় যাবেন? আমার বাবা,মা কেউ নেই। আমরা দুই ভাই আমাদের সাথে থাকবেন?
‘না,বাবা আজকে একলা আছো তাই নিতে চাইছো, কাল যখন বিয়েশাদি করবা, তোমাগো বউদের কষ্ট হয়ে যাবে।দেখি এই ঠেলাঠেলি করতে করতে কয়দিন বাঁচি।ছোট পোলার বউ যেখানে বলে, একটা পুরুষ মানুষের সাথে কিভাবে থাকবে,তারপর আর বেঁচে থাকা না থাকা সমান। আমার ছেলের বউ মানে আমার মেয়ে। বাপেরে কেউ এমন কথা বলতে পারে?
‘আঙ্কেল চলুন আমার সাথে। দেখা যাক কি হয়।
✨ইরহা নাস্তা বানিয়ে,নাওশাবাকে খাবার খাইয়ে,নিজে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো।অফিস ঢুকতেই প্রথমে বিথীর সাথে দেখা। বিথী বলে আজ অফিস হাফ ডে হবে।
‘কেন?
‘আজ স্যারের ওয়াইফের বার্থডে তাই দুপুরের পর ছুটি আর সন্ধ্যা গেটটুগেদারের আয়োজন করেছে। আমি তো সন্ধ্যায় আসতে পারবো না৷ আমার ছোট মেয়ে আছে৷
‘তুমি বিবাহিতা?
‘নাহহ ডিভোর্সি।
‘ওহহহ, বর্তমানে ডিভোর্স এতো বেড়েছে!সে-সব ছাড়ো তোমাকে দেখলে কিন্তু বোঝা যায় না।
‘চলো কাজে মনোযোগ দেই।
ইরহা কাজ করছিলো, এমন সময় সবাই গুড মর্নিং স্যার বলে, দাঁড়িয়ে গেলো। ইরহাও দাঁড়ালো কিন্তু সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। আহনাফ নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে, অবাক দৃষ্টিতে ইরহার দিকে তাকিয়ে আছে। অফিসে নতুন একজন জয়েন হয়েছে সেটার খবর ছিলো কিন্তু সেি একজন যে ইরহা সেটা কল্পনাও করেনি।
আহনাফ দ্রুত নিজের কেবিনে যেয়ে ল্যান্ড লাইনে কল করে, ইরহাকে নিজের কেবিনে ডেকে পাঠালো৷
ইরহা ভেতরে ঢুকতেই আহনাফ বলে,সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না,তুমি আমার অফিসে!
‘যদি জানতাম এটার ওনার আপনি তাহলে হয়তো আসতাম না।
‘এভাবে কেন বলছো! পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ ভিন্ন।এখানে এসব মিক্সড করার দরকার নেই৷
‘আমি জলন্ত অগ্নি শিখাকেও বিশ্বাস করবো তবুও কোন পুরুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আসবে না৷ হ্যা আমি এটাও মানি সব পুরুষ খারাপ না। কিন্তু আবার এটাও জানি যে দু’দিন আগেও বলেছে তোমাকে এখনো ভুলতে পারিনি, তার আশেপাশে থাকতে আমার অস্বস্তি হবে।তাই আগামীকাল পদত্যাগপত্র পেয়ে যাবেন।
‘ইরহা আমি মানছি, এটা আমি এখনো তোমাকে ভুলতে পারিনি, জীবন হয়তো পারবোও না৷ প্রথম ভালোবাসা, প্রথম অনুভূতি কখনো ভুলার মত না। কিন্তু তারমানে এটাও না আমি আমার ওয়াইফকে ভালোবাসি না! আমার বাচ্চা আছে সংসার আছে আর আমার ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট তোমাকে দিতে হবে না। তুমি জানো আমি কেমন?
‘সবটাই জানি, তবে এটাও জানি আমি যেমন মেয়ে হিসেবে কখনো মানতে পারতাম না, আমার হ্যাসবেন্ডের এক্স তার-ই অফিসে জব করে, ঠিক আপনার ওয়াইফও পারবে না এটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে। জানেন তো আমরা মেয়েরা নিজের স্বামীর পাশে মাঝে,মাঝে নিজের ছাঁয়াও সহ্য করতে পারি না৷ তাই আমাকে আটকাবেন না আশাকরি।
ইরহা অফিস শেষ করে বের হলো। তখন দুপুর তিনটা বাজে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য।
হুট করে ইরহার সামনে একটা গাড়ী থামলো, জারিফ গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে ম্যাম কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে হেল্প করতে চাই।
‘আমি কি আপনার কাছে কোনরকম হেল্প চেয়েছি?
‘নিজের মানুষের কাছে চাইতে হয়না৷ চেয়ে তো নিবেন অন্যদের থেকে আমি যেহেতু নিজের মানুষ তাই স্ব-ইচ্ছেতে দিতে চাইছি৷
‘দেখুন আপনার কি মনে হয় আমি কোন ষোল, সতেরো বছরের নিব্বি? আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর তাই এসব কথা বলে,নিজেকে ব্যাক্তিত্ব হীন করবেন না।
‘আহা বিয়াইন সাহেবা আপনার আমার সম্পর্কই মজার সম্পর্ক।আচ্ছা সরি মজা করার জন্য। চলুন এবার আপনার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে কথা আছে৷
‘আপনি সুস্থ কথাও বলতে পারেন?
‘গতকালকের আগে কখনো,অসুস্থ কথা বলেছি এই কথাটা শুনতে হয়নি।
‘ইরহা গাড়ীতে বসলো, পাশের সিটে জারিফ। ড্রাইভার গাড়ী ড্রাইভ করছে।
‘আপনি কি বলতে চাইছিলেন?
‘লাবিবা এতো ছোট, বিয়েটা এখন ঠিক করে রাখি ওর এইচএসসি পর না হয়।
‘হ্যা এটা আমরাও ভেবে রেখেছিলাম।
‘আপনার বেবিটা অনেক কিউট।
‘ধন্যবাদ, কিন্তু আপনি কোন কথার মধ্যে কোন কথা নিয়ে আসছেন!
‘সরি, হুট করে মনে আসলো বেবির কথা, তাই বলে ফেললাম।
#চলবে
#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২৬
আপনার মন কখন কি বলে, আপনি জানেন-না?
‘আসলে ব্যাচালার মানুষ তো তাই মনের কথা শুনে চলি। বলিয়াছেন কবি, যেদিন বিয়ে হবে মনের কথা সব জলে যাবে, বউয়ের কথাই তোর বটে পরে রবে।
‘তা এই আজাইরা কথা কোন কবি বলেছে?
‘এই যে কবি জারিফ আহসান। ফান করলাম বিয়াইন সাহবে।আচ্ছা আপনার মন খারাপ কেন?
‘আমার মন খারাপ না হয়তো আমার সময়টা খারাপ যাচ্ছে নয়তো আমি সময়ের সাথে তাল মেলাতে পারছি না। যা হচ্ছে তা চাইছি না যা চাইছি তা হচ্ছে না।
‘এটাই তো জীবন৷ দেখুন এখন পর্যন্ত বিয়ে তো দূরে থাক প্রেমও করতে পারলাম না। অথচ বাড়িতে একজন সংসারী বউ দরকার ছিলো৷
‘কেন আপনার বাসায় কোন মেয়ে মানুষ নেই।
‘নাহহ।
‘ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেলুন
‘এতোদিন পর একটা ভালো মেয়ে পেয়েছি কিন্তু সে বিবাহিতা বাচ্চাও আছে তার৷
‘ইরহা হেসে দিয়ে বলে,আপনি আর আপনার জোক্স। এতো মেয়ে থাকতে শেষে বাচ্চার মা’কে পছন্দ হলো!আমি এবার নিশ্চিত আপনার মাথায় সমস্যা আছে।পাবনা চলে যান।
‘আপনি সাথে থাকলে পাবনা কেন,উগান্ডা ও যেতে রাজি।
‘চলুন বাসায় চা খেয়ে খাবেন।
‘না থাক একবার যে চা খাইয়েছেন এরপর আর চা খাওয়ার শখ নেই৷
‘এবার স্পেশাল ক্যারামেল চা খাওয়াব এরপর যতবার আসবেন এই চা’খাওয়ার বায়না ধরবেন৷
‘আপনাকে কি দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করা যায়?
‘দ্বিতীয় জিনিসটা কঠিন তবে বিশ্বাস করতে পারেন৷
‘কঠিন কেন?
‘প্রথমবার বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সহ্য করে নেয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার বিশ্বাস ভাঙ্গলে বিশ্বাস বলতে কিছু আর জীবনে থাকে না৷
‘সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলে,নওশাবার আম্মু আপনার বয়স কত?
‘ধরে নিন পঁচিশ।
‘আমার আটাশ শেষ হয়ে উনত্রিশ ছুঁইছুঁই।
‘আপনার বয়স আমি জিজ্ঞেস করেছি?
‘নাহহহ জিজ্ঞেস করেননি আমি নিজেই বললাম।
‘আপনি কি জানেন না মেয়েদের বয়স আর ছেলেদের স্যালারি জিজ্ঞেস করতে নেই! আপনার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। বিয়ে করুন হয়ে যাবে কারণ বউয়ের দেয়া মূল শিক্ষা এখনো বাকি আপনার৷
‘এহহহ এটা এবার কি কথা।
‘আপনার মত ফানি কথা। ইরহা ঘরে ঢুকেই দেখে নওশাবা হামাগুড়ি দিচ্ছে। ইরহা দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,আমার আম্মুটা কইরে?
নওশাবা নিজের মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে ছুটতে লাগলো। ইরহা নওশাবাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।
‘ফরিদা বেগম জারিফকে দেখে বলে,বাবা তুমি?
‘জ্বি আন্টি ওইদিনের জাপানি চা খুব টেস্টি ছিলো তাই আবার টেস্ট করতে চলে আসলাম।
‘বসো বাবা৷ দুপুরের খাবার খেয়েছো?
‘নাহহ আন্টি আজ সময় পাইনি৷
যাও টেবিলে বসো তোমাদের দু’জনকে একসাথে খেতে দিচ্ছি।
ফরিদা বেগম ডাকলেন,নিশাত এদিকে এসো তো।
‘জ্বি আম্মা কিছু লাগবে?
‘খাবার গরম করো দেখো কে এসেছে আমি নওশাবাকে রাখছি ইরহাও তো ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবে।
‘আচ্ছা আম্মা আপনার চিন্তা করতে হবে না আমি খাবার রেডি করছি৷
নিশাত কিচেনে যাওয়ার সময়, জারিফকে দেখে বলে,আসসালামু আলাইকুম।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না!
‘আত্মীয় যখন হচ্ছি আস্তে আস্তে চেনা জানা সব হবে। আমি লাবিবার ভাবি৷
‘কেমন আছেন ভাবি?
‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
‘আমি আলহামদুলিল্লাহ অলওয়েজ ভালো থাকি।
‘আচ্ছা আপনার ফ্রেশ হওয়ার দরকার পরলে হাতের ডানপাশে গেস্ট রুমে চলে যাবেন।
‘জ্বি ভাবি দরকার হলে অবশ্য যাবো।
✨
রবিন ফিরে আসলো রাত বারোটার পরে, লামা রবিনকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না। অজানা ভয় ভেতর থেকে চেপে ধরেছে।
রবিন এসে লামার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,রেডি হয়ে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
‘লামা বলে,কি আছে এতে?
‘খুলে দেখো।
লামা প্যাকেটটা খুলে দেখে, একটা হালকা বেবি পিংক কালারের শাড়ী সাথে মেচিং অর্নামেন্টস। লামা বলে,আজকে কি কোন বিশেষ দিন?
‘রেডি হও এখন বিচে যাবো। একদম পরির মত সাজবে।
‘লামা শাড়ী পরে সুন্দর করে সাজলো। বের হওয়ায় আগে একটা মাক্স দিয়ে মুখ ঢাকতে চাইলে, রবিন বলে,এতো সুন্দর রূপবতী বউকে কি ঢেকে রাখবো নাকি! সবাই দেখবে আর জ্বলবে। ইশশশ আমার বউ আগুন সুন্দরী। যে কোন পুরুষের মাথা নষ্ট করে দিতে সক্ষম।
‘মানুষ তো নিজের বউকে লুকিয়ে রাখতে চায়৷
‘রবিন হেসে বলে,তোমার আর লুকোনোর কি আছে বেবি। ওইদিন রুবেল বলল,ভাবিকে এক রাতের জন্য দে যত টাকা লাগে দিবো।
‘রবিন তুমি এসব কি বলছো?
‘যাস্ট ফান বেবি চলো তো। সৌন্দর্য তো প্রদর্শন করার জন্যই। মনে নেই তুমিই তো বলেছিলে আমি তোমাকে শর্ট স্কার্ট পরতে মানা করেছিলাম বলে।
‘আচ্ছা এখন কি কথাই বলবে নাকি বাহির হবে।কিন্তু এতো রাতে আমরা বিচে কেন যাচ্ছি?
‘চাঁদনি রাত মেরি বাহো ম্যা তুম অর ইয়ে ওয়াক্ত।
‘সেটা তো রুমেও হবে।
‘উত্তাল সমুদ্র সাথে মাথা নষ্ট করা রূপবতী বউ এই কম্বিনেশন মিস করতে চাইছি না। চলো তো বাবু।
‘লামার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসলো, বাইকে করে এখন সমুদ্রের তীরে যাবে এতে আনন্দিত হওয়ার কথা হলেও লামার মনে আনন্দ নেই কেমন আজানা ভয় কাজ করছে।মিনিট পনেরো লাগলো সমুদ্রের তীরে আসতে। মেইন পয়েন্ট থেকে বেশ খানিকটা দূরে ঝাউবনের শো শো বাতাস আর সমুদ্রের কলতান ছাড়া কোন আওয়াজ কানে আসছে না। লামার চুল খোলা বাতাসে উড়ছে,পূর্ন চাঁদের আলো অসম্ভব সুন্দর প্রকৃতি হলেও সব মিলিয়ে কেমন ভূতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
লামা রবিনের হাত শক্ত করে ধরে আছে। রবিন লামার শাড়ী ভেতর দিয়ে হাত গলিয়ে লামার উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রাখলো। রবিনের হাতের শীতল স্পর্শে ঈষৎ কেঁপে উঠলো লামা। লামার মনে ভয় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মনে মনে বলছে, এখানে কোন অশুভ ছায়া নেই তো! অথবা যে নিয়ে এসেছে সে নিজেই এই মূহুর্তে আমার জন্য অশুভ! হুট করে লামা বলল,তোমার মোবাইল কোথায রবিন?
‘জান ডিস্টার্ব করো না-তো উপভোগ করো,আমাদের মিড নাইট রোমান্স। শুনশান নীরবতা সাথে সমুদ্র কলতান, ঝাউ বনের শো শো বাতাস আর আমার মাতাল করা স্পর্শ।
‘আমার কেমন ভয় করছে, এমন মধ্যে রাতে এতো দূরে কেন আসলাম। মেইন পয়েন্টে থাকতে পারতাম।
‘রবিন লামার চুল সরিয়ে লামার ঘাড়ে গভির চুমু দিয়ে বলে,সেখানে সারারাত-ই মানুষ থাকে। এই সাইডে রাতে কেউ আসে না। শুধু তুমি আর আমি আর এই নীরব রাত। লামা আর কিছু বলবে, তার আগেই রবিন লামাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
✨
রুবি শেফালী বেগমকে বলল,মা আমার মন বলছে তোমার ছেলে বড় রকমের কোন ক্রাইম করবে! মা ও আবার ইরহা ভাবিকে খু’ন করবে না-তো?
‘কি বলছিস অলুক্ষণে কথা! ও কখনো ইরার ক্ষতি করবে না। আমার মন বলছে,ছেলেটা নিজের সাথে কিছু করে বসবে। তুই আবার কল দে আমার মন কু ডাকছে।
‘তোমার ছেলে তোমার নাম্বার আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলে রেখেছে। আর তোমার জামাইয়ের ফোন থেকে কল করাও যাবে না,জানোই তো সে পছন্দ করে না ভাইকে। যদিও পছন্দ না করার অনেক কারণ আছে।
‘শেফালী বেগম নিজের রুমে চলে আসলেন।
✨খেতে বসে জারিফ দেখলো প্রায় খাবারই তার অপছন্দের। যেমন করলা দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোল। যদিও তার মায়ের পছন্দের খাবার ছিলো গরমে এটা তাদের বাসায় ও রান্না হতো। চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর লতি চচ্চড়ি। বেগুন ভাজা, ইলিশ ভাজা। লাউ শাক ভাজি,শুটকি ভর্তা। জারিফ তো শুটকির ঘ্রাণ ও সহ্য করতে পারে না। অবশ্য তার খাওয়ার মত,দেশি মুরগীর রেজালা আর ডাল আছে।
‘ইরহা বলল,আপনি এসব খান তো?আসলে আজ সব আমার পছন্দের আইটেম রান্না হয়েছে।
‘এগুলো আপনার পছন্দ?
‘হ্যা ভিষন এই যে শুটকি ভর্তা টা দিয়ে গরম, গরম ভাত মুখে দিন মনে হবে অমৃত।
‘না থাক আমি মুরগী মাংস দিয়ে ট্রাই করি।
‘ইরহা হেসে বলে, সবাই তো আর টেস্ট বুঝে না ব্যাপার না৷
‘জারিফ নিজেই শুটকি ভর্তা নিয়ে বলে,টেস্ট না করলে তো টেস্ট বুঝবো না তাই আজ টেস্ট করবো।ভাবি, সব রকমের আইটেম থেকে একটু, একটু করে দাও তো?
‘নিশাত বেশ অবাক হলো। প্রথমবার কেউ এমন করে!একটু বেশিই মিশুক হয়তো।
‘এদিকে যে আরেকজনকে পিরিতের পেত্নী-তে ধরেছে যার ফলে হুশ ভুলে বেহুশের মত বিহেভিয়ার করছে। তার খবর তো আর নিশাতের কাছে নেই।
#চলবে